ইনসাইড থট

ধারাবাহিক আগুনে এবার নাশকতার তত্ত্ব!

নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রকাশ: 30/03/2019


Thumbnail

দুর্ঘটনার দায় এবার পৌছে গেলো ‘নাশকতার’ ঘাড়ে। রাজধানীর চকবাজারের চুড়িহাট্টা, বনানীর এফআর টাওয়ার আর আজ শনিবার সকালে গুলশানের ডিএনসিসি মার্কেটে আগুন লাগার পর ঢাকা দক্ষিণের মেয়র সাঈদ খোকন এনেছেন নাশকতার তত্ত্ব। তিনি  জানিয়েছেন একের পর এক অগ্নিকান্ড নিয়ে নতুন করে ভাবতে হবে, নাশকতা কি না , তা জানতে কার্যকর উদ্যোগ নিতে হবে। মেয়র সাঈদ খোকন বলেছেন, ‘গোয়েন্দা সংস্থা ও পুলিশের সমন্বয়ে তদন্ত কমিটি গঠন করতে হবে। আজকের ঘটনা এবং অন্যান্য আগের কয়েকটি নিছক দুর্ঘটনা, নাকি অন্য কোনো কারণও থাকতে পারে, একেবারে সব কিছুকে বাদ দিয়ে আমরা চিন্তা করতে চাই না।’ বিষয়টিকে উড়িয়ে দিতে চাই না, অবশ্যই হঠাৎ করে রাজধানীতে আগুনের ঘটনা বেড়ে যাওয়ার বিষয়টি তদন্ত হতেই পারে। তবে পুরনো আর্কাইভ দেখতে গিয়ে চোখে পড়লো ২০১৭ সালে একই রকমভাবে নাশকতার আশংকা করেছিলেন জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান এইচ এম এরশাদ। তখন গুলশান মার্কেটেই আগুনের ঘটনা ঘটেছিল,আর আগুনে ক্ষতিগ্রস্ত ব্যবসায়ীদের সান্ত্বনা দিতে এসে এইচএম এরশাদও বলেছিলেন নাশকতার কথাই। যদিও তার সতর্ক মন্তব্য ছিল, ‘অনেকেই বলছেন এটা নাশকতা, আমি জানি না, তদন্ত করলে বোঝা যাবে।’ এখন প্রমাণ করতেই হয় ২০১৭ সালের গুলশান মার্কেটের অগ্নিকান্ডের ঘটনায় গঠিত তদন্ত কমিটি কোনো রিপোর্ট দিয়েছিল কি না? বা সেই তদন্ত কমিটির অনুসন্ধানে কি তথ্য পাওয়া গিয়েছিল? যদিও আজ গুলশানের আগুন নেভানোর পর ফায়ার সার্ভিসের পরিচালক শাকিল নেওয়াজ অনেকটা অভিযোগের সুরেই বলেছেন যে আগুনে ক্ষতিগ্রস্ত মার্কেটে নিজেদের আগুন প্রতিরোধের প্রাথমিক কোনো ব্যবস্থাই ছিল না। থাকলে আগুনের ভয়াবহতা এতটা হতো না। ফায়ার সার্ভিসের অন্য একজন কর্মকর্তা বলেছেন, ২০১৭ সালের অগ্নিকাণ্ডের পর যে সব সুপারিশ করা হয়েছিল, তা বাস্তবায়ন করা হয়নি।

অল্পদিনের ব্যবধানে চকবাজারের চুড়িহাট্টা এবং বনানীর এফআর টাওয়ারের ভয়াবহ আগুনের তুলনায় গুলশান মার্কেটের ভয়াবহতা খানিকটা কম এই অর্থে যে এখানে কোনো মানুষ মারা যায়নি। আড়াইশ ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীর দোকানের মালামাল পুরোটাই ভষ্মীভূত হয়েছে। এদের অনেকেই যে পথে বসবেন সে ব্যাপারে কোনো সন্দেহ নাই। কিন্তু এখন ঘটনাটা আমাদের আবারো চোখে আঙ্গুল দিয়ে দেখিয়ে দিল যে কোনো ঘটনা থেকেই আমরা কোনো শিক্ষা নেই না। তা না হলে মাত্র দুই বছর আগে যেখানে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ড ঘটলো সেখানে নতুন করে দোকান চালু হলেও আগুন নেভানোর প্রাথমিক কোনো ব্যবস্থা ছিল না।

২০১৭ সালের জানুয়ারি মাসে গুলশানের মার্কেটে আগুন নেভানোর সময় পানির সমস্যা দেখা দিয়েছিল। গত বৃহস্পতিবার বনানীর আগুন নেভানোর সময়ও পানির অভাব দেখা দিয়েছিল। গুলশানে আজ আগুন নেভানোর দায়িত্বে নিয়োজিত মেজর শাকিল নেওয়াজ বলেছেন মার্কেটে প্রাথমিকভাবে আগুন নেভানোর কোনো ব্যবস্থা ছিল না। ২০১৭ সালেও তিনি গুলশানে এসে টেলিভিশনের ক্যামেরায় একই কথা বলেছেন। তাহলে প্রশ্ন যেসব দোকানীরা ২০১৭ সালে আগুনে সব হারিয়ে নিঃস্ব হয়েছিলেন, তারা নতুন করে ব্যবসা দাঁড় করালেও, আবারো আগুন লাগতে পারে, সে সম্ভাব্য বিপদের বিষয়টি আমলে নেননি। ফলে একটি ফায়ার এক্সিংগুইসার বা পুরোনো আমলের মত বালির বালতি রাখার মত ব্যবস্থা তারা নেননি। আর এটাও ঠিক যে এই মার্কেটে অনেক কসমেটিকস দোকানও আছে ,যেগুলোতে বডি স্প্রে’র মত রাসয়ানিক দ্রব্য থাকে যা, দাহ্য পদার্থ হিসেবেই চিহ্নিত।

আর্কাইভে পুরনো রিপোর্ট দেখতে গিয়ে জানলাম যে গুলশানের আগের আগুনের সময়ও উৎসুক জনতা সামলাতে হিমশিম খেয়েছিল পুলিশ। বাধ্য হয়ে পুলিশ মাইকিং করে উপস্থিত জনতাকে দূরে সরে যেতে বলছে। এমনকি স্বয়ং পুলিশ কমিশনার আছাদুজ্জামানকেও অ্যাকশনে যাওয়ার ছবিও পেলাম। একই ধরনের ঘটনা আমরা দেখেছি বনানীতে। আমার মনে আছে বসুন্ধরা সিটি এবং এনটিভি টেলিভিশনে আগুন লাগার সময়ও জরুরী আগুন নেভানোর সময় উৎসাহী মানুষের ভীড় বাধা হয়ে দাড়িয়েছিল। আরো অবাক হলাম যে ২০১০ সালে নিমতলীর আগুন লাগার পর স্বরাষ্ট্র মন্ত্রনালয়ের তদন্ত কমিটি যে সুপারিশ করেছিল, তার মধ্যে একটি হলো, ‘উৎসক জনতা নিয়ন্ত্রণে আরও তৎপর হওয়ার পরিকল্পনা করা দরকার’।

 

বাংলা ইনসাইডার/এমআর



প্রধান সম্পাদকঃ সৈয়দ বোরহান কবীর
ক্রিয়েটিভ মিডিয়া লিমিটেডের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান

বার্তা এবং বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ২/৩ , ব্লক - ডি , লালমাটিয়া , ঢাকা -১২০৭
নিবন্ধিত ঠিকানাঃ বাড়ি# ৪৩ (লেভেল-৫) , রোড#১৬ নতুন (পুরাতন ২৭) , ধানমন্ডি , ঢাকা- ১২০৯
ফোনঃ +৮৮-০২৯১২৩৬৭৭