ইনসাইড থট

বাংলাদেশের শিশু হ্যাকারদের গল্প

নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রকাশ: 04/04/2019


Thumbnail

আমরা অনেকেই হ্যাকার কথাটা শুনেছি কিন্তু অনেকে ক্র‌্যাকার কী তা কি আমরা সবাই জানি? আমরা শুনে হতবাক হতে পারি যে আমাদের দেশেও অনেক হ্যাকার তো আছেই, আছে ক্র‌্যাকাররাও। ক্র‌্যাকাররাও হ্যাকার আবার অন্য ভাষায় বলা যায় এরা হ্যাকারদের গুরু। আমি ১২ বছর বয়সী বাংলাদেশী এক ক্র্যাকারের গল্প বলতে চাই। তার সবার আগে হ্যাকার আর ক্র্যাকারের পার্থক্যটা আমাদের জেনে নিতে হবে।    

হ্যাকার শব্দটি আমাদের কাছে খুব পরিচিত কারণ সোশ্যাল মিডিয়ায় বন্ধুদের প্রায়ই কারো না কারো ফেসবুক একাউন্ট হ্যাক হবার দৌলতে। কিছুদিন আগেও আমরা দেখেছি যে ‘পাক-ভারত যুদ্ধ যুদ্ধ খেলায়’ দুই দেশে অনেক অয়েব সাইট হ্যাক হয়েছে। যা হোক মিডিয়ার বিভিন্ন তথ্য ঘেটে দেখা যায় যে, হ্যাকার হচ্ছে কিছু প্রতিভাবান মানুষ, যারা সব সময় আমাদের তৈরি বিভিন্ন ওয়েবসাইট ও ওয়েবে থাকা তথ্য নষ্ট করার পাঁয়তারা করে। তবে ভালো হ্যাকারের কথাও জানা যায়। তাই বলা যায়, ‘হ্যাকার হচ্ছে এমন ব্যক্তি বা গোষ্ঠী, যারা কম্পিউটারের ব্যবস্থার ব্যাপারে সাধারণের চেয়ে বেশি আগ্রহী এবং তারা একটি কম্পিউটার ব্যবস্থার খুঁটিনাটি সব জানতে চায়। তারা সাধারণ মানুষের চেয়ে একটু ভিন্নভাবে একটি কম্পিউটার ব্যবস্থাকে চিন্তা করে। মূলত তারা কম্পিউটার প্রোগ্রামার। তারা অপারেটিং সিস্টেম বা প্রোগ্রামিং ভাষার ব্যাপারে অন্যদের চেয়ে অনেক বেশি জানে। একটি কম্পিউটার ব্যবস্থা বা নেটওয়ার্কের কোথাও কোনো ফাঁক আছে কি না তারা তার খোঁজ করে। সিস্টেম বা নেটওয়ার্কটির ব্যাপারে বিস্তারিত জানে এবং সংশ্লিষ্টদের সেই সিস্টেমের ত্রুটির ব্যাপারে জানায় এবং এ ত্রুটি কেন হয়, কীভাবে তা বন্ধ করা যায় তাও বের করে। তারা তাদের সংগৃহীত জ্ঞান সবার জন্য মুক্ত করে দেয়। হ্যাকাররা এসব কাজ কোনো অর্থনৈতিক লাভের আশায় করে না’। নিউ হ্যাকারস ডিকশনারি (এমআইটি প্রেস ১৯৯৬) বইয়ে এরিক এস রাইমন্ড হ্যাকারদের সংজ্ঞা দেন এভাবে− ‘হ্যাকার হচ্ছে এমন জ্ঞানপিপাসু ব্যক্তি, যে বিভিন্ন প্রোগ্রামেবল সিস্টেমে ঘুরে বেড়াতে পছন্দ করে।’ হ্যাকাররা যে শুধু কম্পিউটার সিস্টেমেই ঘুরে বেড়ায় তা নয়, তারা বিভিন্ন সফটওয়্যারের ত্রুটি বের করে সফটওয়্যার প্রতিষ্ঠানকে জানায়। হ্যাকারদের অনেক সময় একালের রবিনহুডও বলা হয়ে থাকে। কারণ, তারা তাদের জ্ঞানের পিপাসা মেটানোর জন্য একটি কম্পিউটার ব্যবস্থায় অনুপ্রবেশকরে এবং এর দুর্বলতা ঠিক করতে সাহায্য করে। পৃথিবীর বিভিন্ন দেশের রাষ্ট্রীয় সংস্থাও হ্যাকারদের কাজে লাগায় তাদের অনলাইন নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে। যুক্তরাষ্ট্রের গোয়েন্দা সংস্থা সিআইএ, এফবিআই, কিংবা এপল, গুগল, ইত্যাদি প্রতিষ্ঠানের নিজস্ব হ্যাকার আছে, যারা তাদের সিস্টেমকে বাইরের আঘাত থেকে রক্ষা করে।  

হ্যাকারদের সাধারণত তিন ভাগে ভাগ করা হয়ে থাকে। যেমনঃ সাদা টুপি হ্যাকার-এরা কম্পিউটার তথা সাইবার ওয়ার্ল্ডের নিরাপত্তা প্রদান করে। এরা কখনও অপরের ক্ষতি সাধন করে না। এদেরকে ইথিকাল হ্যাকারও বলা হয়ে থাকে। ধূসর টুপি হ্যাকার- এরা এমন একধরনের হ্যাকার যারা সাদা টুপি ও কালো টুপিদের মধ্যবর্তী স্থানে অবস্থান করে। এরা ইচ্ছে করলে কারও ক্ষতি সাধনও করতে পারে আবার উপকারও করতে পারে। কালো টুপি হ্যাকার- হ্যাকার বলতে সাধারনত কালো টুপি হ্যাকারদেরই বুঝায়।  এরা সবসময়ই কোন না কোন ভাবে অপরের ক্ষতি সাধন করে। সাইবার ওয়ার্ল্ডে এরা সবসময়ই ঘৃনিত হয়ে থাকে।   

এবার আসি ক্র্যাকারের কথায়। ক্র‌্যাকাররাও একধরনের হ্যাকার। এরা বিভিন্ন সিস্টেমে ঢুকে সেটির অনেক কিছু পরিবর্তন করে কম্পিউটার ভাইরাস দিয়ে সব তথ্য মুছে দেয়। অনেক সময় বিভিন্ন ওয়েবসাইট হ্যাক করে তার বিনিময়ে টাকা দাবি করে। এ ধরনের হ্যাকারকে ক্র‌্যাকার বলা হয়। পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে যেসব সাইবার আইন করা হয়েছে, তা মূলত এসব ক্র‌্যাকারের জন্যই করা হয়েছে। ক্র‌্যাকাররা বিভিন্নভাবে কাজ করে। তারা অনেক সময় একটি সিস্টেমে ঢুকে তার সব তথ্য চুরি করে বেরিয়ে আসে, আবার অনেক সময় পুরো সিস্টেমটি ধ্বংস করে দেয়। বিভিন্ন ব্যাংক বা ই-কমার্স সাইট থেকে ক্রেডিট কার্ড চুরি করে তা চোরাই বাজারে এরাই বিক্রি করে। ক্র‌্যাকারদের দুই শ্রেণীতে ভাগ করা যায়। একশ্রেণীর ক্র‌্যাকার আছে, যারা বিভিন্ন প্রোগ্রাম লিখে বা বিভিন্ন কৌশলে একটি সাইট বা সিস্টেমকে আক্রমণ করে অপর দিকে অন্য আরেক দল ক্র‌্যাকার আছে, যারা বিভিন্ন সফটওয়্যার বা টুলের মাধ্যমে একটি সিস্টেমে অবৈধভাবে প্রবেশ করে। এদের ধরার জন্য বিভিন্ন দেশে সাইবার পুলিশ রয়েছে।      

এবার আসি বাংলাদেশি হ্যাকার-ক্র্যাকারদের কথায়। একজন বাবা নিত্য দিনের মতোই বাসায় ফিরে খাবার শেষে তার ছেলের সাথে কিছু কথা শেষ করে নেয়। পড়াশুনায় কোন সাহায্য লাগবে কি না তাও জেনে নেয়। তখন দেখে ছেলে খুব মনোযোগ দিয়ে অংক করছে। এই ফাঁকে সেই বাবা তার মেয়ের সাথে ফোনে কথা বলতে বলতে থাকে। বাবা বলছিলেন যে, ‘তোমার ভাই কম্পিউটারে খুব ভালো, তবে তার এক বন্ধু কম্পিটারে এতো ভালো যে, তাকে হ্যাকার বলে অনেকে’। ছেলেটি তার বাবার মুখের কথা কেড়ে নিয়ে ইংরেজী বাংলা মিশিয়ে যা বলল তা এমনঃ ইংরেজী মাধ্যমে পড়া তার বন্ধু ১৩ বছর বয়সী ‘ক’ (নাম বলতে চাই না) ১২ বছর বয়স থেকেই ইউরোপ অ্যামেরিকার সব বড় বড় সেলিব্রেটিদের ভেরিফাইড ফেসবুকে ঢুঁকে পড়তে পারে। সেখানে গিয়ে সে এমন বিতর্কিত কথা লিখে পোষ্ট দেয় যে তা নিয়ে শুরু হতে পারে তুমুল বিতর্ক যদি ঐ সেলিব্রেটি তা না ডিলিট করেন। এমন দুই চারটি ঘটনা ঘটেনি তা নয়। এটা তার নেশা। এছাড়া একই সার্ভিস প্রভাইডারের মধ্যে থাকলে সে বন্ধুদের কম্পিউটারে ঢুঁকে তাদের হোম ওয়ার্ক চুরি করে, করে। নিজের মোডিফাই করা সফটওয়্যার দিয়ে দূরে বসেই বন্ধুদের কম্পিউটারের কী বোর্ড নিজের দখলে নিয়ে নিতে পারে। ফলে তার বন্ধু কম্পিউটারে কি করছে তা সে জানতে পারে। তার আরেক বন্ধু আছে যে কম্পিউটার গেমের সাইটগুলোতে ঢুঁকে বিনা পয়সায় গেম ডাউনলোড করে নেয়, বাজার থেকে সে গেম কেনে না। এটাই তার নেশা। কম্পিউটার গেমের সাইটগুলোর পাস ওয়ার্ড ভাঙ্গতে নাকি কয়েক মিলিয়ন টাইম তাকে হিট করতে হয়। বাবা হতবাক হয়ে শোনে সাথে শোনে ছেলেটির বোন। ছেলেটি তার বাবাকে জানায় যে, বাংলাদেশের ঢাকা শহরেই আছে এমন অনেক ট্যালেন্টেড শিশু যারা বিভিন্ন সময় এমন অনেক অবাক করার মত ঘটনা ঘটানর ক্ষমতা রাখে। তাই আমরা বাংলাদেশেও বিভিন্ন সফটওয়্যারের ক্র্যাক ভার্সন বাজারে দেখতে পাই। বাংলাদেশের বিভিন্ন ব্যাংক বা আর্থিক প্রতিষ্ঠানেও এদের মত অনেককে নিয়োগ দেয় নিজেদের সাইবার নিরাপত্তার জন্য।          

জর্জ হটজ হলেন প্রথম ব্যক্তি, যিনি আইফোন অপারেটিং সিস্টেমের নিরাপত্তা বলয় ভাঙতে পেরেছিলেন। ২০০৭ সালে মাত্র ১৭ বছর বয়সে আইফোন অপারেটিং সিস্টেম আনলক করে চমকে দিয়েছিলেন তিনি। মাত্র ২৬ বছর বয়সেই আন্তর্জাতিক তারকা স্টেটাস অর্জন করে ফেলেছেন জর্জ হটজ। হ্যাকার হিসেবে শুরু করে শেষ পর্যন্ত চালকবিহীন গাড়ি তৈরির প্রযুক্তি আবিষ্কার করে সাড়া ফেলে দিয়েছেন এই তরুণ।

ছোটবেলা থেকেই প্রযুক্তির প্রতি অদ্ভুত আকর্ষণ জর্জের। ১৪ বছর বয়সে আন্তর্জাতিক ইন্টেল সায়েন্স ও ইঞ্জিনিয়ারিং মেলায় আশ্চর্য রোবট তৈরি করে তিনি প্রতিযোগিতার চূড়ান্ত রাউন্ডে পৌঁছেছিলেন। একটি ঘর স্ক্যান করে তার যথাযথ পরিমাপ কষে ফেলতে সক্ষম হয়েছিল সেই রোবট। বিভিন্ন সংবাদ চ্যানেলের অনুষ্ঠানে তাকে আমন্ত্রণ জানানো হয়। পাশাপাশি তার আনলক করা দ্বিতীয় ৮ জিবি আইফোনটির বদলে সার্টিসেল সংস্থার প্রতিষ্ঠাতা টেরি ডাইডোনের থেকে পান একটি নিশান ৩৫০ জেড স্পোর্টসকার ও ৩টি ৮ জিবি আইফোন। ২০০৯ সালে জর্জ বাজারে আনেন জেলব্রেক টুল।

হ্যাকিং জগতের রবিনহুড খ্যাত হ্যাকার হামজা বেনডেল্লাজ হ্যাকিং বিশ্বে "BX1" নামে পরিচিত। হামজা বেনডেল্লাজ কি একজন হ্যাকিং জগতের নায়ক নাকি শুধুই একজন সাইবার অপরাধী তা নিয়ে মতভেদ আছে।

হামজা বেনডেল্লাজ এবং রাশিয়ান কোডফেন্ডেট কে SpyEye কম্পিউটার ভাইরাস ব্যবহার এবং অমেরিকান ব্যাংক হতে মিলিয়ন ডলার চুরি করার জন্য দণ্ডিত করা হয়। তাকে ২০১৩ সালে থাইল্যান্ডে একটি এয়ারপোর্ট থেকে গ্রেফতার হয়।

২৭ বছর বয়সী আলজেরিয়ার কম্পিউটার বিজ্ঞানে এ স্নাতকের বিরুদ্ধে ২১৭ টির বেশী আমেরিকান ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান থেকে টাকা চুরি করার অভিযোগ করা হয়। ব্যাংক জালিয়াতি, এবং অন্যান্য অভিযোগের জন্য তিনি ১৭ বছরের কারাদণ্ড এবং এবং ২৪ মিলিয়ন ডলার জরিমানার সম্মুখীন হয়েছিলেন। তাঁর হ্যাক কৃত অর্থের পরিমাণ টাকার অংকে হিসাব করলে ১০০ মিলিয়ন ডলার বলে অনুমান করা হয়। হ্যাক কৃত সব অর্থ তিনি নাকি অসহায় দরিদ্র ফিলিস্তিনদের বিলিয়ে দেন। দুনিয়া জুড়ে বেশিরভাগ হ্যাকার বা ক্র্যাকারই শিশু বা কিশোর কিশোরী। 

তথ্যঋণঃ নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক শিশু, সোশ্যাল মিডিয়া, অন্যান্য

বাংলা ইনসাইডার



প্রধান সম্পাদকঃ সৈয়দ বোরহান কবীর
ক্রিয়েটিভ মিডিয়া লিমিটেডের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান

বার্তা এবং বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ২/৩ , ব্লক - ডি , লালমাটিয়া , ঢাকা -১২০৭
নিবন্ধিত ঠিকানাঃ বাড়ি# ৪৩ (লেভেল-৫) , রোড#১৬ নতুন (পুরাতন ২৭) , ধানমন্ডি , ঢাকা- ১২০৯
ফোনঃ +৮৮-০২৯১২৩৬৭৭