নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: 10/04/2019
মা মারা যাওয়ার প্রায় তিনবছর পরে রাফসানের বাবা একরকম পরিবারের চাপেই আবার বিয়ে করতে বাধ্য হয়। বাবা, দাদীর ভয় ছিল যে ১২ বছরের রাফসান না জানি ব্যাপারটা কীভাবে নেবে। এদিকে রাফসানের বন্ধুরাও তাকে খোঁচাতে শুরু করলো যে, ‘সেকি, তোর নতুন মা আসছে বাসায়? তোকে তো তোর সৎ মা কখনোই ভালোভাবে নেবে না!’ রাফসান মন খারাপ করলো, নতুন মাকে সে কিছুতেই মেনে নিতে পারলো না। নতুন মা সংসারে এলে সন্তানেরা কখনোই সেটা ভালোভাবে নিতে চায় না। দ্বিতীয় স্ত্রীও আগের পক্ষের সন্তানদের প্রতি পুরোপুরি ইতিবাচক হয় না। সৎ মা মানেই ডাইনি হয়? না, সৎ মা এর চেয়েও অনেক ভালোকিছু হতে পারে।
পৃথিবীর সব থেকে মধুর শব্দ হচ্ছে ‘মা’ আর সৎ অর্থ ভালো। এই ভালো দুটি শব্দ মিলে যখন সৎমা হয় তখনই ভীতির শেষ থাকে না। এই শব্দটি মানেই আতঙ্ক। সাধারণত মা চলে গেলে বা মারা গেলে সংসারে সৎমা আসে। সংসারের প্রয়োজনেই একজন বাবাকে আবার বিয়ের চিন্তা করতে হয়।
এর ব্যতিক্রমও তো ঘটে। সেক্ষেত্রে সন্তানও সৎ মায়ের কাছে খুব বেশি থাকে না। আর যে সংসারে ছোট অবুঝ শিশুটির কথা চিন্তা করেই সৎমাকে আনা সেখানের চিত্র সুখকর হওয়ার কথা। কিন্তু আমাদের ধারণা বা বাস্তবতায় এমন দৃশ্য না থাকার মতোই। আমাদের কাছে সৎমা শব্দটির সঙ্গে যেন মিশে আছে অশান্তির ছায়া। সৎমা মানে সে অনিরাপদ, কখনোবা সৎমা মানেই হলো ডাইনি।
এর মূল কারণ, মাঝেমধ্যেই সৎমায়ের নিষ্ঠুর আচরণের কথা আমরা এদিকসেদিক দিয়ে শুনিই। আর মায়ের আগে সৎ বিশেষণটি আমাদের কাছে একটি ভীতিকর শব্দ। অথচ এর উল্টোটাই হওয়ার কথা ছিল, হতে পারতোও। শাব্দিক অর্থ বিশ্লেষণ করলে দাঁড়ায়, সৎ যে মা তিনিই সৎমা। আর সৎ মানে ভালো। তাহলে সৎমা হবেন সবার চেয়ে ভালো। সে হবে নিরাপদ, ভরসার স্থান। কিন্তু তা না হয়ে হয় উল্টো। সৎমা বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই আগের পক্ষের সন্তানদের ভালোভাবে নেয় না। তাদের সঙ্গে রেষারেষি, নিজের সন্তানদের সঙ্গে ভেদাভেদ করা, সংসার থেকে বের করা, শারীরিক এবং মানসিক অত্যাচার করার ঘটনা আমরা শুনি।
আবার অনেক সন্তানও কোনোভাবেই সংসারে তাদের দ্বিতীয় মাকে মেনে নিতে পারে না। তাদের কাছে সৎমা মানেই খারাপ। তারা কখনো ভালোবাসতে পারে না, সবসময় বকাঝকা করে, মারধর করে, মঙ্গল কামনা করে না। ফলে এই সম্পর্কটা ভালো তো হয়ই না, তিক্ত থেকে তিক্ততর হতে থাকে। ফলাফল অবশ্যই খারাপ, একটা ধারণার জন্মই হয় যে সৎমা অবশ্যই ভালো না। তারা কেবল দূরেই থাকে।
ব্যতিক্রম আছে, ব্যতিক্রম হওয়াই যায়। অনেক সৎমাই নাকি নিজ গর্ভে সন্তান ধারণ করেন না ওই শিশুটির ভবিষ্যতের কথা ভেবে। সিনেমা নাটকে নয়, বাস্তবেও এমন উদারহণ কম নয়। আবার নিজের সন্তানগুলোর সঙ্গেই তাদেরকেও বেড়ে তোলেন আপনের মতো করেই। অনেক সময় নিজের ভালোমন্দ ত্যাগ করেও সে চেষ্টা করে সবকিছু ভালো রাখার।
মা-ই সন্তানের প্রথম স্কুল। সন্তানকে শিক্ষিত করার প্রথম ভিতটা মা-ই তৈরি করেন। সেটা হোক গর্ভধারিণী মা কিংবা সৎ মা। এই মা যদি সঠিক আদর্শের ভিত গড়ে দিতে পারেন তাহলে সন্তান কখনোই চিন্তার কারণ হবে না। একথা চিন্তা করলে মায়ের কোনো পার্থক্য থাকে না। পার্থক্য থাকে না সন্তানের মধ্যেও। সৎমা যদি একটু সৎ থাকেন তাহলেই পার্থক্যগুলো ক্রমে মুছে যাবে। কেটে যাবে ভীতি। সন্তানগুলো থাকবে নির্ভয়ে, নির্ভার। বোঝা না হয়ে সম্পদে পরিণত হবে। আমরা অনেকের বখে যাওয়ার কারণ খুঁজতে গিয়ে সৎমায়ের অসহযোগিতা খুঁজে পাই। কিন্তু তার তো হওয়ার কথা ছিল প্রথম সহযোগী। প্রথম ভরসার স্থান।
এজন্য সবার আগে এগোতে হবে মাকেই। তাকে আগে প্রমাণ করতে হবে সে পরিবারের একজন সদস্য। তারপর সন্তানদের বোঝাতে হবে সে তাদের মা, অনেকটা বন্ধুর মতোই। তার জায়গাটা আগে থেকেই বিশাল করে নিতে হবে। তবে জোর করে নয়, সন্তানদের সাইকোলজি বুঝে। তারা কেমন মানুষ পছন্দ করে, তাদের চাওয়াপাওয়ার সঙ্গে নিজেকে মিলিয়ে নিন। বিপদে আপদে মাথায় হাত রাখুন, ভরসা দিন। পুরোপুরি মায়ের জায়গা নিতে পারবেন কি পারবেন না সেটা না ভেবে বন্ধুর জায়গাটা নিন। সংসারে আসার আগেই সব বুঝেশুনে প্রস্তুত হয়ে আসুন। কর্তৃত্ব নয়, বন্ধুত্বের হাত বাড়িয়ে দিন।
আবার সন্তানদেরও এ বিষয়ে সচেতন থাকতে হবে। সংসারে একজন নতুন মা আসা মানে তো সেটা আশীর্বাদও হতে পারে। তাকে আগেই খারাপভাবে না নিয়ে ভালোভাবে নিতে চেষ্টা করতে হবে। তাকে মা বলে ডাকার অভ্যাস করতে হবে। কারণ মা ডাকটাই এমন যে এটা একজন নারীকে মুহূর্তেই দুর্বল করে দিতে পারে। সুখ-দুঃখের সব ঘটনায় তার সঙ্গে অভ্যস্ত হতে চেষ্টা করতে হবে। এক্ষেত্রে বাবা এবং পরিবারের অন্য সদস্যদেরও ভূমিকা জরুরি। পারিবারিক পরিবেশ গড়ে তুলতে হবে আগে, তারপর অন্যকিছু।
সৎ মা সবসময় ডাইনিই হবে, এই প্রথা ভেঙে চাইলেই বেরিয়ে আসা সম্ভব। সেজন্য দরকার মানসিকতার পরিবর্তন।
বাংলা ইনসাইডার/এসএইচ
প্রধান সম্পাদকঃ সৈয়দ বোরহান কবীর
ক্রিয়েটিভ মিডিয়া লিমিটেডের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান
বার্তা এবং বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ২/৩ , ব্লক - ডি , লালমাটিয়া , ঢাকা -১২০৭
নিবন্ধিত ঠিকানাঃ বাড়ি# ৪৩ (লেভেল-৫) , রোড#১৬ নতুন (পুরাতন ২৭) , ধানমন্ডি , ঢাকা- ১২০৯
ফোনঃ +৮৮-০২৯১২৩৬৭৭