ইনসাইড থট

আগুন ছড়িয়ে পড়ুক সবখানে!

নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রকাশ: 11/04/2019


Thumbnail

আমি অবাক হয়ে দেখছি আমার ফেসবুকের কিছু বন্ধু হঠাৎ করেই কবিতা লেখা শুরু করেছে গতকাল বুধবার রাত থেকে। কবিতায় গভীর নিমজ্জিত উনারা এখন; রাতারাতি বড় বড় কবি হয়ে গেছেন। এই কবিরাই গত কয়দিন ধরে নিশার `গা ঘেঁষে দাঁড়াবেন না` গেঞ্জি পরা মডেলের গেঞ্জির কোনা ধরে টানছিল অবিরাম। যাতে সেটা ছিড়ে যায়, আর অন্তত তাঁরা গেঞ্জীর নীচের কিছু মাংসল পিন্ড দেখতে পায় সেই লালসায়। এর মাঝেই তাঁরা একত্রিত হয়েছিলো দলমত নির্বিশেষে তাদের দেবতার মুক্তির দাবির মিছিলে। কিন্তু বাধ সেধেছে আমাদের মেয়ে নুসরাত জাহান রাফি, তাঁদের দেওয়া আগুনে পুড়ে ম’রে গতকাল রাতে।

কোর্টে তারা তাদের আদর্শিক বাপ সিরাজউদ্দৌলার পক্ষে উকিল হয়ে লড়ছে যাদের মধ্যে এ্যাডঃ ইউসুফ আলমগীর ও এ্যাডঃ ফরিদ উদ্দিন নয়ন, ইসলামপন্থী দল বিএনপি’র নেতা। ইসলামের সল এজেন্ট বলে খ্যাত জামায়াতে ইসলামীর নেতা জামায়াতের এ্যাডঃ বেলায়েত হোসেন আর নিজ দল থেকে সদ্য বহিষ্কৃত নেতা এ্যাডঃ বুলবুল আহমেদ সোহাগ। এ্যাডঃ বুলবুল আহমেদ সোহাগ (ইউপি চেয়ারম্যান) কাজিরবার ইউনিয়ন আওয়ামীলীগ সভাপতি ছিল। এদের মত অনেক কবির জন্ম হয়েছে মেঘের পেটে যাদের একমাত্র আদর্শিক পিতা সয়ং সিরাজউদ্দৌলা যে সোনাগাজী ফাজিল মাদ্রাসার প্রিন্সিপ্যাল। সিরাজউদ্দৌলার খুব ইচ্ছা হয়েছিলো আমাদের মেয়ে আলীম পরীক্ষার্থী নুসরাত জাহান রাফির গর্ভে এমন উকিল আর কবি সাহিত্যিকের জন্ম দিয়ে দোজাহানের অশেষ নেকির সোল এজেন্ট করে দিতে নুসরাতকে। সে রাজী হয় নি, রাজী হয়নি তাঁর বাবা মা। তাই গত ২৭শে মে ২০১৯ তারিখে থানায় মামলা করেন এসব উকিলদের আদর্শিক বাপ সিরাজউদ্দৌলার বিরুদ্ধে।

আইন প্রয়োগকারী সংস্থার প্রতিনিধিরা নুসরাতের জবানবন্দি নিয়েছিল। সেখানে নুসরাত মুখ ধেকে কেঁদে কেঁদে তাঁর উপর নির্যাতনের বর্ণনা দিয়েছে। সেই ভিডিও এখন সোশ্যাল মিডিয়ায়। নুসরাত তাঁর ঘনিষ্ঠ দুই বন্ধুকেও এসব জানিয়েছিলো, যা মিডিয়ায় এসেছে। এসব কথা আশেপাশের মানুষের অজানা থাকার কথা না। এসব দেখেই ক্ষিপ্ত হয়ে ৬ই এপ্রিল সকালে পরীক্ষা দিতে গেলে নুসরাত জাহান রাফিকে ছাঁদে ডেকে নিয়ে গিয়ে হাত পা বেঁধে গায়ে কেরোসিন ঢেলে আগুনে পুড়িয়ে মেরে ফেলতে চেষ্টা করে মানুষরূপী পশু সিরাজউদ্দৌলা ও তার সহযোগীরা।

এসব ঘটনা জানার পরেও মানুষরূপী কিছু পশু তাদের আদর্শিক বাপ সিরাজউদ্দৌলার পক্ষে মুক্তির জন্য মানব বন্ধন করেছে। এটার নাম কী গণতন্ত্র! আমার মেয়েকে ধর্ষণের চেষ্টার দায়ে তোমাকে গ্রেফতার করলে তোমার মুক্তির জন্য মানব বন্ধন যদি গণতন্ত্র হয় তাহলে সেই গণতন্ত্রের মুখে আমরা লাত্থি মারি। ঐ গনতন্ত্রে আমাদের কাজ নেই।

আমি নিজে চোখে ৫২ দেখিনি, দেখেছি ছবিতে। সেখানে দেখেছি আমাদের মেয়েরা, মায়েরা অগ্নি শপথ নিয়ে রাস্তায় নেমেছে। আমি ৭১ এ দেখেছি শত প্রতিকূলতার মাঝেও আমার বনেরা, মেয়েরা মায়েরা অস্ত্র ধরেছে সিরাজউদ্দৌলার বাপ পাকি হানাদারদের বিরুদ্ধে। সেই চেতনা কোথায় আজ? কেন তাঁরা ঘরে বসে থাকে। কেন তারা ঐ সব পশু সিরাজউদ্দৌলার পক্ষের উকিল, মানববন্ধনকারীদের চেতনার শিবিরে আগুন জ্বালিয়ে দেয় না! আর নুসরাতের বাবা, চাচা, ভাইয়েরা কী নপুংসক! তাঁরা কেনে প্রতিবাদের আগুনে সব জ্বালিয়ে দেন না!

অনেকে বলেন অধিকাংশ ক্ষেত্রেই মেয়েরা মৃত্যুর আগের দিন পর্যন্ত মা-বাবার মেয়ে থেকে যায়। সেই তুলনায় ছেলেদের মধ্যে এই হার অনেক কম। তাই বাবার সাধ্যের মধ্যে থেকে লেখাপড়া শিখে একটু সুন্দর জীবনের স্বপ্ন দেখেছিল সে আমাদের মেয়ে নুসরাত জাহান রাফি। মানুষরূপী পশু আর তাদের সহযোগীদের দেওয়া আগুনে পুড়ে অঙ্গার হয়ে অবশেষে সব্বাইকে মুক্তি দিয়ে পরপারে পাড়ি জমিয়েছে আমাদের মেয়ে নুসরাত বুধবার রাতে। কিন্তু আমরা কী মুক্তি পেয়েছি! আগুন জ্বলছে নুসরাত জাহান রাফির বাবা, চাচা, ভাইদের বুকে। সেই আগুনে পুড়ে ছাই হয়ে যাক না সিরাজউদ্দৌলা আর তার সহযোগীদের সাধের বালাখানা। জলুক না সেই চেতনার আগুন এবার সারাদেশের সবখানে!

বাংলা ইনসাইডার/এমআরএইচ



প্রধান সম্পাদকঃ সৈয়দ বোরহান কবীর
ক্রিয়েটিভ মিডিয়া লিমিটেডের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান

বার্তা এবং বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ২/৩ , ব্লক - ডি , লালমাটিয়া , ঢাকা -১২০৭
নিবন্ধিত ঠিকানাঃ বাড়ি# ৪৩ (লেভেল-৫) , রোড#১৬ নতুন (পুরাতন ২৭) , ধানমন্ডি , ঢাকা- ১২০৯
ফোনঃ +৮৮-০২৯১২৩৬৭৭