ইনসাইড আর্টিকেল

কবে বিচার হবে?

নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রকাশ: 12/04/2019


Thumbnail

দেশে একটা বড় নির্যাতন, নিপীড়ন আর খুনের ঘটনা ঘটে, আমরা দুঃখিত হই। আন্দোলন, মানববন্ধন হয়। মামলা হয়, বিচারের সুদীর্ঘ প্রক্রিয়া চলে। সবপক্ষই বিচারের দাবিতে দৃঢ় হয়। কিন্ত সময় গড়াতে গড়াতে ঘটনাটা মুছে যেতে থাকে। তখন আবার কোনো একটি ঘটনা ঘটে যায়। এটা যেন একটা চক্র। গণমাধ্যমে খুন, হত্যা, নারী নিপীড়নের খবর দেখতে দেখতে আমরা যারপরনাই ক্লান্ত। সাম্প্রতিক সময়ে এমন অসংখ্য নিপীড়নের ঘটনা আমাদের মনে দাগ কেটে রয়েছে, যার কোনো সমাধান আমরা জানি না এখনো।    

প্রথমে আসি নোয়াখালীর সুবর্ণচরের ঘটনায়। ৩০ ডিসেম্বর জাতীয় সংসদ নির্বাচনের দিন বিরোধী পক্ষকে ভোট দেওয়ায় ওইদিন দিবাগত রাতে ক্ষমতাসীন নেতার নির্দেশে এক গৃহবধুকে তাঁর স্বামী সন্তানের সামনেই সংঘবদ্ধ নিপীড়ন চালায় দুর্বত্তরা৷  শুরুতে ওই ঘটনায় পুলিশ মামলা নিতে এবং আসামিদের আটকে নানা টালবাহানা করলেও শেষ পর্যন্ত ব্যাপক সমালোচনার মুখে তৎপর হয়৷ প্রধান আসামিসহ অন্যান্যরা এখন কারাগারে। সম্প্রতি প্রধান আসামির জামিন হলেও তা বাতিল হওয়ায় সে কারাগার থেকে বের হতে পারেনি৷ তবে মামলায় এখনো চার্জশিট দেওয়া হয়নি৷ অপরাধী কে বা কারা সেটা সবাই জানাশোনার পরে হয়নি কোনো বিচার, সেই বিচার কার্যকর তো বহুদূরের কথা।

কিছুদিন আগেও নিপীড়নের প্রতিবাদ ও জড়িতদের বিচারের দাবিতে মানববন্ধন ও সমাবেশ হয়েছে। কিন্তু সুফল এখনো হয়নি।

এরপর তিন মাসের মাথায় উপজেলা নির্বাচনে ভোট দেওয়াকে কেন্দ্র করে আবার একই ঘটনা ঘটে৷ উপজেলা নির্বাচনের দিন ওই এলাকায় আরও একজন গৃহবধু সংঘবদ্ধ নির্যাতনের শিকার হন৷ ওইদিন উপজেলা নির্বাচনে ভাইস চেয়ারম্যান পদে ভোট দেওয়াকে কেন্দ্র করে প্রতিপক্ষের সমর্থকরা তাঁকে নির্যাতন করে। এই দুই ঘটনার আসামিরা ধরাছোঁয়ার বাইরে তো বটেই, মামলা তুলে নিতে বা মামলা বন্ধ করতে রীতিমত পুরো পরিবারকে হুমকির মুখে রাখা হয়েছে।

দুইবছর আগে ২০১৭ সালের ২৮ মার্চ বনানীর রেইনট্রি হোটেলে দুই শিক্ষার্থী নিপীড়ন মামলার রায়ের বিচারের দিকে তাকাই, সেটা এখনো ঝুলছে। এই মাসের ৮ তারিখে মামলার ভিকটিম আদালতে হাজিরা দিলেও তাদের সাক্ষ্যগ্রহণ করা হয়নি। আসামিপক্ষের সিনিয়র আইনজীবী অসুস্থ থাকায় সাক্ষ্যগ্রহণ পেছানোর আবেদন করেন অন্য আইনজীবী। এরপর বিচারক আবেদন মঞ্জুর করে ৬ মে পরবর্তী দিন ধার্য করেন। এ নিয়ে ১০-১২ বার আদালতে আসতে হয়েছে ভিকটিমদের। কিন্তু কোনো সুরাহা তো হয়নি।

অভিযোগপত্রে আসামি সাফাত আহমেদ ও নাঈম আশরাফ ওরফে এইচ এম হালিমের বিরুদ্ধে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনের ৯(১) ধারায় নিপীড়নের অভিযোগ করা হয়েছে। অপর আসামি সাফাত আহমেদের বন্ধু সাদমান সাকিফ, দেহরক্ষী রহমত আলী ও গাড়িচালক বিল্লাল হোসেনের বিরুদ্ধে ওই আইনের ৩০ ধারায় নিপীড়নে সহযোগিতার অভিযোগ করা হয়েছে। এত প্রক্রিয়ার মাঝে বিচার ঝুলছেই, সুফলের কোনো নাম নেই।

এর আগের বছর অর্থাৎ ২০১৬ এর দিকে একবার তাকাই। কুমিল্লার ভিক্টোরিয়া সরকারি কলেজের ইতিহাস বিভাগের শিক্ষার্থী ও নাট্যকর্মী সোহাগী জাহান তনু হত্যা মামলার তদন্ত তিন বছরেও শেষ হয়নি। এমনকি এ মামলার আসামিও শনাক্ত হয়নি। তনুর পরিবারের অভিযোগ, গত এক বছর তদন্তকাজ স্থবির হয়ে আছে। তদন্তকারী সংস্থা পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি) তাদের সঙ্গে মামলার বিষয়ে যোগাযোগ করছে না। চাঞ্চল্যকর এই হত্যাকাণ্ডের কোনো সুরাহা এখনো আমরা পাইনি, আসামি কারা আমরা তাও জানি না।

সর্বশেষ আসি নুসরাত জাহান রাফির ঘটনায়। গত ৬ এপ্রিল সকাল ৯টার দিকে আলিম পর্যায়ের আরবি প্রথম পত্র পরীক্ষা দিতে সোনাগাজীর ইসলামিয়া সিনিয়র ফাজিল মাদ্রাসা কেন্দ্রে যায় নুসরাত। এরপর কৌশলে তাকে পাশের ভবনের ছাদে ডেকে নেওয়া হয়। সেখানে ৪/৫ জন বোরকা পরা ব্যক্তি ওই ছাত্রীর শরীরে কেরোসিন ঢেলে আগুন ধরিয়ে দেয়। এতে তার শরীরের ৮০ শতাংশ পুড়ে যায়। গত মঙ্গলবার সিঙ্গাপুরের চিকিৎসকদের পরামর্শে তার অস্ত্রোপচারও করা হয়। কিন্তু শেষপর্যন্ত তাকে বাঁচানো সম্ভব হয়নি। লাশ নিয়ে বাড়ি ফিরেছে তার পরিবার।

ঘটনার মূলহোতা ফেনীর সোনাগাজীর ইসলামিয়া ফাজিল মাদ্রাসার অধ্যক্ষ সিরাজ উদ দৌলা। তার বিরুদ্ধে অভিযোগ অনেক। ছাত্রীদের শ্লীলতাহানি, আর্থিক দুর্নীতি এবং নাশকতা ও পুলিশের ওপর হামলা মামলায় তিনি তিন দফা কারাবরণও করেন। কিন্তু কারো সাহস নেই তার বিরুদ্ধে একটা কথা বলার। স্থানীয়ভাবে শক্তিশালী একটি বলয় তৈরি করে মাদ্রাসার নিয়ন্ত্রণ শক্তভাবে নিজের হাতে রাখেন অধ্যক্ষ। আর এই চক্রে রয়েছেন ১০ থেকে ১২ জন। তিনি নুসরাতকে জোরপূর্বক শ্লীলতাহানি করেন। তিনি এবং তার চক্রের মধ্যে নিহত নুসরাত জাহান রাফির ভাইয়ের মামলায় আসামি হন পাঁচজন। তাঁরা হলেন আফছার উদ্দিন, মাকসুদ আলম, আবদুল কাদের, নুর উদ্দিন ও শাহাদাত হোসেন ওরফে শামীম। পুলিশ এর মধ্যে অভিযান চালিয়ে শুধু আফছার উদ্দিনকে গ্রেপ্তার করতে পেরেছে। বাকি সদস্যরা গা ঢাকা দিয়েছেন।

ন্যায়বিচার না হওয়ায় এবং প্রশাসনের কর্তাদের সঙ্গে অপরাধীদের সখ্যতা থাকায় এসব জঘন্য ঘটনার পুনরাবৃত্তি হচ্ছে। ফলে অত্যন্ত কঠোর আইন থাকা সত্ত্বেও ধর্ষণের ঘটনা প্রতিনিয়ত ঘটেই চলেছে।

এ মাসে নরসিংদীতে মা–মেয়ে ধর্ষণ ও কুমিল্লার চৌদ্দগ্রামে তৃতীয় শ্রেণির এক ছাত্রীকে ধর্ষণের পর হত্যাসহ বেশ কয়েকটি ধর্ষণের খবর প্রকাশিত হয়েছে। মাত্র দুদিন আগেই নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জে এক গৃহবধূ ধর্ষণে অভিযুক্ত কবিরাজ লাল চান বাবুকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে, কিন্তু বিচারের কোনো নামগন্ধ পাওয়া যায়নি। চকলেটের প্রলোভন দেখিয়ে শিশু নিপীড়ন, চলন্ত বাসে নারী নির্যাতনের ঘটনা ঘটেই যাচ্ছে। বিচারহীনতার কারণে অধিকাংশ ধর্ষণের ঘটনায় বাদীপক্ষ মামলা চালিয়ে যেতে নিরুৎসাহী হয়ে যায়। মামলা ঝুলেই থাকে। আসামিরা সবার সামনে দিয়ে ঘুরে বেড়ায়। আমরা জানি না এর সমাধান কবে হবে।

বাংলা ইনসাইডার

 



প্রধান সম্পাদকঃ সৈয়দ বোরহান কবীর
ক্রিয়েটিভ মিডিয়া লিমিটেডের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান

বার্তা এবং বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ২/৩ , ব্লক - ডি , লালমাটিয়া , ঢাকা -১২০৭
নিবন্ধিত ঠিকানাঃ বাড়ি# ৪৩ (লেভেল-৫) , রোড#১৬ নতুন (পুরাতন ২৭) , ধানমন্ডি , ঢাকা- ১২০৯
ফোনঃ +৮৮-০২৯১২৩৬৭৭