ইনসাইড আর্টিকেল

বিদায় ১৪২৫

নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রকাশ: 13/04/2019


Thumbnail

বাংলা চলতি বছরের শেষ সূর্যোদয় ছিল আজ। সন্ধ্যায় সূর্যাস্তের মাধ্যমে বিদায় নেবে আরও একটি বছর। আর আগামীকাল সূর্যোদয়ের সঙ্গে সঙ্গে গান আর সুরে সুরে আবাহন করা হবে বাংলা নতুন বছর ১৪২৬। বিদায় নিলো ১৪২৫। পুরনো সব হতাশা, গ্লানি আর জরাজীর্ণতা ধুয়ে মুছে গেলো চৈত্রের শেষ সূর্য ডুবির সঙ্গে সঙ্গে। ভোরের সূর্যোদয়ের সঙ্গে সঙ্গে সূচনা হবে নতুন একটি বছরের। সেই সঙ্গে বোনা হবে নতুন নতুন স্বপ্নের।

পুরনো বছরের সব জঞ্জাল দূরে ঠেলে প্রীতি ও ভালোবাসার বন্ধনে আবদ্ধ হতে এরই মধ্যে বর্ষবরণে প্রস্তুত রমনা বটমূল। মঙ্গল শোভাযাত্রার আনুষঙ্গিক উপকরণ তৈরির কাজও শেষ দিকে। গান আর সুরে নতুন বছর ১৪২৬ কে স্বাগত জানানোর সব প্রস্তুতি সম্পন্ন করেছে ছায়ানট। শেষ মুহূর্তের প্রস্তুতিও আজকের মধ্যেই শেষ হবে। এখন শুধু অপেক্ষা নতুন বছরের প্রথম প্রভাতের।

এদিকে, বর্ষবরণের প্রধান আকর্ষণ মঙ্গল শোভাযাত্রার প্রস্তুতিও শেষ দিকে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলার শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের দিন-রাতের পরিশ্রমের পূর্ণতা পেয়েছে বিভিন্ন মোটিফ। রংবেরঙের লোকজ ঐতিহ্যের প্রতিরূপ নিয়ে সকালে শুরু হবে মঙ্গল শোভাযাত্রা। শোভাযাত্রার মাধ্যমে সব অমঙ্গলকে বিদায় জানিয়ে স্বাগত জানানো হবে সুন্দরকে। ধর্ম, বর্ণ, নির্বিশেষে সবাই আসবে মঙ্গল শোভাযাত্রায়, আনন্দটুকু ভাগ করে নেবে সবাই।

সময়ের ব্যবধানে দেশ পেরিয়ে বৈশ্বিক স্বীকৃতি পাওয়া সার্বজনীন এ উৎসব এখন দেশের সবচেয়ে বড় আনন্দ আয়োজন। কারণ পয়লা বৈশাখকে ঘিরে মানুষের যতটা উচ্ছ্বাস, অন্য কোনো অনুষ্ঠান কিংবা দিবসকে ঘিরে মানুষের এতটা উচ্ছ্বাস নেই।

বাঙালি সংস্কৃতিতে বহুকাল ধরে নতুন বছরকে স্বাগত জানানোর আগে পুরনো বছরের শেষ দিনটিকে আনুষ্ঠানিকভাবে বিদায় জানানো হয়। এজন্যেও আয়োজন করা হয় নানা অনুষ্ঠানের। চলে চৈত্র সংক্রান্তির উৎসব। চৈত্র থেকে বর্ষার প্রারম্ভ পর্যন্ত সূর্যের যখন প্রচন্ড উত্তাপ থাকে তখন সূর্যের তেজ প্রশমন ও বৃষ্টি লাভের আশায় কৃষিজীবী সমাজ বহু অতীতে চৈত্র সংক্রান্তির উদ্ভাবন করেছিল।

এদেশে জমিদারির খাজনা আদায়ের লক্ষ্যে বৈশাখী মেলার গোড়াপত্তন ঘটে। হিন্দু পঞ্জিকামতে, দিনটিকে মহাবিষুর সংক্রান্তি নামে গণ্য করা হয়। ব্যবসায়ী সম্প্রদায় এ দিন বর্ষ বিদায় উৎসব পালন করে। দোকানপাট ধুয়ে-মুছে বিদায়ী বছরের জঞ্জাল, অশুচিতা দূর করা হয়।

চৈত্র সংক্রান্তি এক সময় গ্রামীণ জনপদের প্রধান উৎসব হলেও কালের প্রবাহে একসময় নাগরিক জীবনেও স্থান করে নেয় । এ উপলক্ষে দেশজুড়ে এখনও চলে নানা ধরনের মেলা, উৎসব। হালখাতার জন্য ব্যবসা প্রতিষ্ঠান সাজানো, লাঠিখেলা, গান, আবৃত্তি, সঙযাত্রা, রায়বেশে নৃত্য, শোভাযাত্রাসহ নানা অনুষ্ঠান। ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে আয়োজন করা হয় শুভ হালখাতার।

বছরের শেষ এ দিনটি বিশেষভাবে উদযাপন করেন শাঁখারীবাজারের সনাতন ধর্মাবলম্বীরা। পুরান ঢাকার এ অঞ্চলটিতে একদল শিব-পার্বতী সেজে খোল-কর্তাল, মন্দিরার তালে তালে কীর্তন করে ছুটে চলেন এক মহল্লা থেকে আরেক মহল্লায়।

এদিকে রাজধানী ঢাকাতেও চৈত্র সংক্রান্তি উপলক্ষে আয়োজিত হয় অনেককিছু। বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমি ছাড়াও বিভিন্ন সামাজিক সাংস্কৃতিক সংগঠন নানা আয়োজনের মধ্যদিয়ে চৈত্র সংক্রান্তি পালন করবে। এসব অনুষ্ঠানের মধ্যে রয়েছে ঘুড়ি উৎসব, রকমারি সব ঘুড়ির প্রদর্শনী, গ্রাম বাংলার জনপ্রিয় লাঠি খেলা। এছাড়া থাকছে পুঁথি পাঠ, পুতুলনাট্য, পালাগান, গম্ভীরা ও রায়বেশের মতো লোকসংস্কৃতির নানা আয়োজন।

শুধু একদিনের বাঙালিয়ানা নয়, বর্ষবরণের নানা অনুষ্ঠান আর আয়োজন দূর করবে সমাজের সকল অসঙ্গতি। শান্তি আর সম্প্রীতির বন্ধনে দৃঢ় হবে মানুষের সম্পর্ক।



প্রধান সম্পাদকঃ সৈয়দ বোরহান কবীর
ক্রিয়েটিভ মিডিয়া লিমিটেডের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান

বার্তা এবং বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ২/৩ , ব্লক - ডি , লালমাটিয়া , ঢাকা -১২০৭
নিবন্ধিত ঠিকানাঃ বাড়ি# ৪৩ (লেভেল-৫) , রোড#১৬ নতুন (পুরাতন ২৭) , ধানমন্ডি , ঢাকা- ১২০৯
ফোনঃ +৮৮-০২৯১২৩৬৭৭