ইনসাইড বাংলাদেশ

বৈশাখের উৎসবে কতটা নিরাপদ নারী?

নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রকাশ: 13/04/2019


Thumbnail

প্রাণের নববর্ষ এসে গেছে। কত পরিকল্পনা, সাজগোজ, খাওয়াদাওয়া, ঘোরাঘুরির চিন্তা। এই দিনটিকে ঘিরে আমাদের নারীদের পরিকল্পনাই যেন বেশি থাকে। তাঁতে বোনা শাড়ি, হাতে বাহারি চুড়ি আর মাথায় ফুলের মুকুট দিয়ে মঙ্গল শোভাযাত্রা, বৈশাখী মেলায় না গেলে নববর্ষ পরিপূর্ণ মনে হয় না। কিন্তু সাম্প্রতিক প্রেক্ষাপটে এই উৎসবে নারী কি নির্বিঘ্নে বের হতে পারে? উত্তর অবশ্যই না। নারীকে এই উৎসবেও নিগৃহীত হতে হয়।

শহর বা গ্রামে উৎসব আয়োজন উপলক্ষ্যে ভিড়কেই লক্ষ্য করে নিপীড়নকারীরা। মনে পড়ে ২০১৫ সালের ১৪ এপ্রিলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস। টিএসসি সংলগ্ন সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের ফটকের সামনে কিছু যুবক বাংলা নববর্ষের উৎসবে আসা মেয়েদের শরীরে হাত দিতে থাকে। তখনও চারপাশে বিকেলের আলো ছিল, গেটের ভেতর-বাইরে হাজারো মানুষ। সেদিনের প্রত্যক্ষদর্শীদের বর্ণনায়- অনেক নারীকে নিপীড়নের নামে চূড়ান্ত অপমান করা হয়। অসংখ্য মানুষের ভীড়ের ভেতর হারিয়ে যেতে থাকে আক্রান্ত মেয়েদের সাহায্যের আকুতি, চিৎকার। সেদিনের একের পর এক যৌন হামলাকে অনেকেই নজিরবিহীন বলেছেন।

সে কথা গেলো। প্রশাসন কি করছিল সেগুলো দেখে। ওই ঘটনার পর তাৎক্ষণিকভাবে পুলিশরা আক্রান্ত নারীদের সহায়তা দিতে পারেননি বলেও অভিযোগ রয়েছে। অবাক করা বিষয় ঘটনার পর পুলিশের দায়িত্বশীল কর্তাব্যক্তিরা বলেছিলেন, ‘এটি কতিপয় দুষ্টু ছেলের কাজ’। সঙ্গে সঙ্গে ব্যবস্থা না নিয়ে সমালোচনার শিকার হয় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনও। তাহলে ভরসা কাকে করবো আমরা?

রাজধানী শহরের মতো এত আধুনিক বড় শহরে হামলা, নৈরাজ্যের ফলে নারীরা সবসময় একধরনের নিরাপত্তহীনতায় ভুগছে। আর দোষিরা শাস্তি না পাওয়ায় সেই বোধ আরও ঘনীভূত হচ্ছে। মনে হচ্ছে এমন ঘটনা তো আবার যেকোনো সময়ে ঘটতে পারে। প্রাণের এই উৎসবের আমেজটাই বুঝি নষ্ট হয়ে যাবে।

বড়সড় নিপীড়নের ঘটনাগুলো হয়ত গণমাধ্যমে আসে বলে আমাদের কানে পৌঁছায়। কিন্তু বর্ষবরণ উৎসবে নারীদের ওপর খারাপ অশালীন মন্তব্য, কৌশলে গায়ে হাত দেওয়ার চেষ্টা হয় সারা দেশজুড়েই। সঙ্গে হচ্ছে চুরি, ছিনতাইয়ের ঘটনাও। এমন অভিজ্ঞতা অনেকেরই হয়, হচ্ছেও। বিশাল ভিড়ভাট্টার মধ্যে এমন কাজ করা বেশ সহজ বলে কিছু পুরুষ এর ফায়দা লুটে নিতে ভুল করছে না। এ কারণে অনেকে এ ধরনের ভিড়ে নিজের নিরাপত্তা নিয়ে আশ্বস্ত হতে পারছেন না।

নারীদের পরিবার তাকে নিয়ে সবসময়েই বেশি দুশ্চিন্তা করে। বিশেষ করে বিশেষ কোনোদিনে তাকে বাড়ির বাইরে যেতে দিতে। তারচেয়ে বড় কথা, নারী নিজেই নিজেকে নিয়ে ভীত। বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন শিক্ষার্থী জানান, তার বাড়ির লোকও চায় না তারা বাইরে যায়। কেননা পয়লা বৈশাখের হামলার ঘটনায় স্বামীকে রিকশা থেকে টেনে নামিয়ে স্ত্রীকে হয়রানি করা হয়েছে। সেখানে তাদের নিরাপত্তা কে দেবে, তার প্রশ্ন ছিল এটাই।

আবার বাসা থেকে বলে কোনো পুরুষের সঙ্গে যেতে। এটাও তো নিরাপদ নয়। সেই পুরুষটির সামনেই তো অপমান অপদস্তের চূড়ান্তটা ঘটছে। তাহলে অবশ্যই নারীর নিরাপত্তা প্রশ্নের মুখে। নারীদের কাছে পয়লা বৈশাখ মানে কয়েকজন যুবকের কালো হাত। যে হাত তাদের দেহে হিংস্র আঘাত হেনেছে। বাঁচার জন্য তারা চিৎকার দিয়েছিলেন। কিন্তু তাদের চিৎকার যাতে শোনা না যায়, সে জন্য ওই যুবকেরা উচ্চস্বরে ভুভুজেলা বাজিয়েছেন। কী ভয়ানক! কত আয়োজন করেই না তাঁরা এই যৌন হয়রানির ঘটনা ঘটিয়েছেন।

টিএসসি মোড়ে যেসব নারী, কিশোরী ও মেয়েশিশুর ওপর এই যৌন নিপীড়ন চালানো হয়েছিল তাঁদের কাছে বর্ষবরণ উৎসব নিশ্চয়ই এখন এক বিভীষিকার নাম। তাঁরা কি আর কখনো বাঙালির প্রাণের উৎসবে যেতে চাইবেন কেন সেটা আমাদেরও প্রশ্ন।

নারীর ক্ষমতায়নের বিশাল এক টার্গেট নিয়ে বাংলাদেশ যখন এত চেষ্টা করছে এগোনোর, তখন পুরুষ এমন উৎসবে তাদের এভাবে টার্গেট করে কীভাবে লাভবান হচ্ছে সেটা জানা নেই। নারী যেখানেই যান না কেন, সে বার বার নিগ্রহের শিকার হচ্ছে। সবারই মনে হয়, ভিড়ের মধ্যে কেউ গায়ে হাত দিয়ে বসলে কিছু করার বা বলার থাকে না।

এই যে পহেলা বৈশাখের মত উৎসবে নারীদের ব্যাপক অংশগ্রহণ উৎসবকে আরও বেশি সুন্দর আর মনোরম করে তুলছে। এটা শুধু নারীদের উপর আক্রমণ নয়, এটা আমাদের সংস্কৃতি বা ঐতিহ্যের উপর আক্রমণ। আবার অনেকে চাইছেন না তাদের মেয়ে, স্ত্রী বা বোন এই ধরনের অনুষ্ঠানে যাক। কারণ নিরাপত্তার বিষয়টি নিয়ে তারা নিশ্চিন্ত হতে পারছেন না।

 

বাংলা ইনসাইডার/এসএইচ



প্রধান সম্পাদকঃ সৈয়দ বোরহান কবীর
ক্রিয়েটিভ মিডিয়া লিমিটেডের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান

বার্তা এবং বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ২/৩ , ব্লক - ডি , লালমাটিয়া , ঢাকা -১২০৭
নিবন্ধিত ঠিকানাঃ বাড়ি# ৪৩ (লেভেল-৫) , রোড#১৬ নতুন (পুরাতন ২৭) , ধানমন্ডি , ঢাকা- ১২০৯
ফোনঃ +৮৮-০২৯১২৩৬৭৭