লিভিং ইনসাইড

শিশুর শৈশব হোক বইয়ের মাঝে

নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রকাশ: 18/04/2019


Thumbnail

ছেলে রক্তিমকে নিয়ে বাবা-মায়ের বিশাল চিন্তা। মূল অভিযোগ একটাই- ছেলে কিছুতেই পড়তে চায় না। গত জন্মদিনে শখ করে কতগুলো গল্পের, রং করার রঙিন বই কিনে দিলেন। কিন্তু ছেলে সেগুলো নিয়ে বসেও না। সারাদিন হাতে ফোন, কম্পিউটার আর টেলিভিশন নিয়ে বসে থাকে। সামনের বছর স্কুলে পাঠাবে, কিন্তু পড়ার অভ্যাস যদি না থাকে তাহলে স্কুলে ভালো করবে কীভাবে?

এমন প্রশ্ন অনেক বাবা-মায়েরই। পড়ার অভ্যাস যেন আজকাল চলেই যাচ্ছে। কিন্তু ছেলেবেলা থেকে যদি শিশুদের বইপড়া অভ্যাস গড়ে তোলা যায়, সেটা পরবর্তীতে সত্যিকারের মানুষ হিসেবে গড়ে তুলতে তাদের বিশেষ ভূমিকা রাখতে পারবে। 

কীভাবে করবেন পড়ার অভ্যাস

বই পড়ার আগে জরুরি খুব ভালোভাবে অক্ষরকে আয়ত্ত্বে নিয়ে আসা। আজকাল তো বাবা-মায়েরা শিশুকে খুব দ্রুতই স্কুলে ভর্তি করে দেয়। স্কুলে পাঠানোর আগেই বাড়িতে খেলার ছলে বর্ণমালা সম্পর্কে ধারণা দিন। এতে স্কুলে ভর্তির পর তার দক্ষতা ভালো হবে। তার আত্মবিশ্বাসও বাড়বে, স্কুলভীতি কমবে, সব ধরনের পড়াশুনার প্রতি ঝোঁক বাড়বে।

আর শিশুকে স্কুলে ভর্তির আগে তাকে নার্সারি লেভেলের ছড়াগুলো শিখিয়ে দিন নিজে থেকেই। এতে সে শিখবে, পাশাপাশি পড়ায় কিছুটা এগিয়েও থাকবে। প্রয়োজনে আপনি ছড়াগুলো অভিনয় করে পড়ান। সেই সঙ্গে তাদেরও অভিনয় করে আবৃত্তি করতে বলুন। দেখবেন প্রথম স্কুলে তার আর তেমন কোনো ভয় বা আশঙ্কা কাজ করবে না। সবার চেয়ে সে এগিয়ে থাকবে।

আপনার শিশুকে প্রতিদিন পড়ানোর অভ্যাস করুন। একদিন বাদ দিয়ে একদিন পড়ালে তার মধ্যে পড়ার ঝোঁক থাকবে না। নিজেও তাদের সঙ্গে পড়ুন। পড়ার জন্য মজার কোনো বিষয় বেছে নিন যাতে আপনাদের দুইজনেরই ভালো লাগে। হোক সহজ কবিতা, ছোট কোনো গল্প বা রূপকথা, মজার কোনো কার্টুন চরিত্রের বইও হতে পারে।

আপনি পারিবারিকভাবে বাড়িতে বই পড়ার একটি পরিবেশ বজায় রাখুন অবশ্যই। ঘরে খুব দামি বই না রেখে বিভিন্ন রকমের বইয়ের সংগ্রহ রাখুন আপনার ঘরে। আপনার সংগ্রহে ছোট-বড় সবার উপযোগী ধরনের বই রাখুন। বইয়ের জন্য আলাদা ঘর রাখতে না পারলে বসার বা শোবার ঘরের এককোণে একটি লাইব্রেরি বানিয়ে ফেলতে পারেন।

প্রযুক্তির যুগে তো এখন প্রতিটি শিশুর হাতেও কম্পিউটার, স্মার্টফোন আর ইন্টারনেট পৌঁছে গেছে। এতে তারা বেশ আকৃষ্টও। কিন্তু তার বদলে চেষ্টা করুন তার হাতে বই তুলে দিতে। বইয়ের মধ্যে তাকে ডুবিয়ে দিতে চেষ্টা করুন। শিশুর পড়ার জন্য একটি নির্দিষ্ট সময় বেঁধে দিন। তাদের বলুন দিনের এই সময়টাতে অন্তত পছন্দের বই নিয়ে বসতে। উৎসাহিত করতে শিশুকে ছোটখাটো পুরষ্কারও দিতে পারেন। প্রথম প্রথম বইয়ের প্রতি আকৃষ্ট করতে শিশুর পছন্দের চরিত্রকে নিয়ে লেখা বই বা কমিক কিনে দিতে পারেন। রঙচঙে বই শিশুদের বেশি আকর্ষণ করে।

শিশুরা সবসময়েই বড়দের অনুকরণ করতে পছন্দ করে। তাই আপনি নিজেও নিয়ম করে একটা সময় বই পড়ার জন্য রাখুন। আর শিশু কী বিষয়ে পড়তে উৎসাহবোধ করে বা আপনি তাকে কোন বিষয়গুলো পড়ালে সে খুশি হয় তা বোঝার চেষ্টা করবেন। সে যদি পড়ার মধ্যে আনন্দ পেয়ে যায়, আপনার জন্য তা অনেক বড় একটি প্রাপ্তি হবে।

শুধু ঘরে বসেই নয়, বাইরেও পড়ার জন্য ব্যবস্থা করে দিন তাদের। পাবলিক লাইব্রেরি, বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্র ইত্যাদির সদস্য বানিয়ে দিন আপনার শিশুদের। এতে নিয়মিত পড়তে যাওয়া বা বাসায় বই এনে পড়ার অভ্যাস হবে। ঠিক সময়ে বই ফেরত দিতে হবে- এই মানসিকতার ফলে সময়মত বই পড়ার আগ্রহ হবে তাদের। আর বাংলা সাহিত্য এবং অনুবাদের পাশাপাশি টুকটাক করে ইংরেজি পড়ানোরও অভ্যাস করে দিন। কোনো কোর্সেও ভর্তি করিয়ে দিতে পারেন। দেশে প্রতিবছর বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন বইমেলা অনুষ্ঠিত হয়। সেখানে তাদের অবশ্যই নিয়ে যান, পছন্দমত বই কিনে দিন।

কারণে অকারণে পরিবারের শিশুটিকে তো কত উপহারই না দিতে হয়। শুধু খেলনা, রংপেনসিল, চকলেট দিয়ে উপহার তো দেবেনই, সঙ্গে বইও দিন সাধ্যমত। বই উপহার দেওয়াটা একটা অভ্যাস। এই অভ্যাসটা ছড়িয়ে দিন। দেখবেন আপনার সন্তানও এই বই উপহার দেওয়ার অভ্যাসটা শিখে যাবে।

শুধু পড়লেই তো হলো না। শিশু সন্তানকে একটু একটু করে পড়ার অভ্যাসও পড়ার পাশাপাশি তাদের লিখতেও উৎসাহ দিন। তাকে নিজের থেকে ছড়া কিংবা আজ স্কুলে সে কী কী করল তা লিখতে বলুন। এতে করে তার সৃজনশীলতা বৃদ্ধি পাবে। তার লেখায় অনেক ভুল থাকবে, সেটাই স্বাভাবিক। তাকে সবার আগে চমৎকার লেখার জন্য প্রশংসা করে ভুলগুলো ধীরে ধীরে শুধরে দিন।

বাংলা ইনসাইডার/এসএইচ



প্রধান সম্পাদকঃ সৈয়দ বোরহান কবীর
ক্রিয়েটিভ মিডিয়া লিমিটেডের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান

বার্তা এবং বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ২/৩ , ব্লক - ডি , লালমাটিয়া , ঢাকা -১২০৭
নিবন্ধিত ঠিকানাঃ বাড়ি# ৪৩ (লেভেল-৫) , রোড#১৬ নতুন (পুরাতন ২৭) , ধানমন্ডি , ঢাকা- ১২০৯
ফোনঃ +৮৮-০২৯১২৩৬৭৭