লিভিং ইনসাইড

৫০ এর পর যত সমস্যা

নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রকাশ: 23/04/2019


Thumbnail

গতমাসেই ৫৩ বছর পার করেছেন আজিম সাহেব। ছেলেমেয়েরা বেশ আয়োজন করেই পালন করলেন জন্মদিন। কিন্তু বিষয় হলো, কোনো বিষয়েই এখন আর তিনি মজা বা আনন্দ পান না। নিজের জন্মদিনটাও কেমন যেন পানসে মুখে পালন করলেন। অফিসেও তেমন একটা ভালো লাগে না, স্ত্রীর সঙ্গে বনিবনা কম হচ্ছে, দূরত্ব বাড়ছে। সন্তানরাও কেমন দূরে সরে যাচ্ছে, ওদিকে অসুখ-বিসুখগুলোও মাথাচাড়া দিয়ে উঠছে। মোটামুটি সংকট আর অতৃপ্তি নিয়েই দিন কেটে যাচ্ছে।

মধ্যবয়সের সমস্যাকে সংকট বলাই ভালো। মনোবিজ্ঞানীরা এর নাম দিয়েছেন মধ্যবয়সের সংকট বা মিডএজ ক্রাইসিস। মধ্যবয়স বলতে ঠিক কোন বয়সটাকে বোঝায় সেটাও প্রশ্ন। কেউ বলে ৪০ থেকে ৫০–এর মধ্যেই, আবার গড়আয়ু বেড়ে যাওয়ায় মধ্যবয়সটা ৫৫ এমনকি ৬০ পর্যন্ত চলে গেছে বলে অনেকের ধারণা। এই বয়সের সংকট, ঠাট্টা করে যাকে অনেকে বলেন ‘ভীমরতি’। এর কারণ সম্পর্কে নানা ব্যাখ্যা দেন মনোবিজ্ঞানীরা। কম বয়সে মানুষের জৈবিক সত্তা থাকে প্রখর, ধীরে ধীরে তা কমতে থাকে—এটা হতাশার একটা কারণ। মেয়েদের ক্ষেত্রে মেনোপজ বা ঋতুচক্র বন্ধ হওয়ার ফলে মনস্তাত্ত্বিক পরিবর্তন ঘটতে থাকে। দেহে পড়ে ভাটার টান পরস্পরের কাছে যেন বৈচিত্র্যহীন হয়ে পড়ে সঙ্গীজীবন, পরিবারজীবন।

এই সময়ে মানুষগুলো একধরনের মানসিক সংকটাবস্থা পার করেন। শরীর-মনে পরিবর্তনের পাশাপাশি সুস্থতা বা ফিটনেস কমতে থাকে। রোগবালাইয়ের আক্রমণও বাড়ে। বিভিন্ন সামাজিক সম্পর্কের সমীকরণ পাল্টাতে থাকে। কাজকর্ম ও পেশাজীবন নিয়ে অনেক সময় অসন্তুষ্টি তৈরি হয়। চাওয়া আর পাওয়ার হিসাব মেলাতে গিয়ে দানা বাঁধে অভিমান, অনুশোচনা। সম্পর্কগুলো কেমন যেন ছাড়া ছাড়া হতে থাকে। এসবের নেতিবাচক প্রভাব শরীরেও পড়ে।

এ সময়ই রক্তচাপ, ডায়াবেটিস, হৃদরোগ ইত্যাদির আক্রমণ বাড়তে থাকে। অনেকে মোটা হতে থাকেন, অনেকের রক্তে চর্বি বেড়ে যায়। ফলে মানসিক সংকট আরও যেন বাড়ে। এই পরিবর্তনকে অনেকে ভালোভাবে গ্রহণ করতে পারেন না। কারো কাছে মনে হয় সৌন্দর্য আর ফিটনেস বুঝি নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। নারীদের মেনোপজের সময়ে বিভিন্ন সমস্যা দেখা যেতে থাক। এটা অনেকে স্বাভাবিকভাবে নিতে পারেন না। সব মিলিয়ে মাঝবয়সে বিষণ্নতায় আক্রান্ত হওয়ার সমস্যা বেশ কঠিনই হয়। তবে কিছুক্ষেত্রে নারীদের বেশি হয়, কিছুক্ষেত্রে পুরুষের।

এই সময়ে কর্মজীবন

বার্ধক্য ছুঁইছুঁই সময়ে কিছুই ভালো লাগে না। কর্মজীবনেও একঘেয়েমি চলে আসতে পারে। সহকর্মী, কাজের চাপ, প্রতিদিন একই পরিবেশ কেমন যেন অসহ্য হয়ে উঠতে থাকে। এই সময়ে মেজাজ-মর্জিও নিজের নিয়ন্ত্রণে থাকে না, খিটমিটে ভাব হতে থাকে। তাই অফিসিয়াল জটিল কাজ, কর্মপরিবেশ নিয়েও মানসিক দ্বন্দ্ব তৈরি হতে থাকে।

এই সময়ে দাম্পত্য

এই সময়টাতে দাম্পত্যের সম্পর্কেও অনেক সময়ে সংকট দেখা দিতে পারে। এই সময়টাতে হয়ত কেউ হাঁপিয়ে ওঠে, সবকিছুর প্রতি কেমন বিতৃষ্ণাবোধ চলে আসে। কিছুই ভালো লাগে না- এই রোগ একেবারে পেয়ে বসে। স্ত্রীর সঙ্গে স্বামীর সম্পর্কটা যেন শুধু সামাজিকতার খাতিরেই থেকে যায়, একছাদের নিচে থেকেও যেন মনে হয় কত দূরত্ব।

মনোবিজ্ঞানীরা এই বিষয়ে কিছু মত দিয়েছেন। তারা বলছেন, নিজেদের মধ্যে সম্পর্ক জটিলতার কারণ বের করতে হবে দম্পতিকেই। সঙ্গীকে অবহেলা করা যাবে না, অভিযোগপ্রবণ হওয়া যাবে না। দাম্পত্য সম্পর্কের মধ্যে নতুনত্ব খুঁজে নিতে হবে। বুড়ো হচ্ছি ভেবে হতাশ না হয়ে ইতিবাচক থাকতে হবে। স্বামী স্ত্রীর বয়সের পার্থক্যের উপরেও এই সময়ে অনেককিছু নির্ভর করে। স্বামী স্ত্রী সমবয়সী হলে দেখা যায় ৫০ পেরিয়েও স্বামীর মধ্যে তারুণ্যের ভাব থাকে, উল্টো স্ত্রী বার্ধক্যের ভারে নুয়ে পড়তে থাকে এই সময়েই। আবার স্ত্রী বয়সে বেশি ছোট হলে এই সময়ে তার মধ্যে তারুণ্য ভরপুর থাকে। এই পরিস্থিতিগুলোতে চলে আসে দূরত্ব আর টানাপোড়েন।

আবার এই বয়সটাতে এসেই পরকীয়ার ঘটনাটি বেশি ঘটে। একজন বা দুজন যেই চাকরিজীবী হোক না কেন, কাউকে দেওয়ার মতো পর্যাপ্ত সময় কারো নেই। ফলে বাইরে, অফিসে অন্যকে সময় দেওয়া হয় বেশি। এর ফলে পরকীয়া, বিবাহবহির্ভূত সম্পর্কগুলো ডালপালা মেলতে থাকে। অন্যের দুনিয়াটাকে তখন বিশাল মনে হয়, নিজের ঘরটাকে ঝিমানো মনে হয়। ফলে মন তো অন্যদিকে যাবেই।

এগুলো না ভেবে সমাজহিতকর নানা কাজে ব্যস্ত হওয়া যায়। মনে রাখতে হবে, সব বয়সেরই সৌন্দর্য আছে। নিজেকে সুন্দর ভাবুন। বাহ্যিক আচরণে সচেতন থাকুন। মায়া-মমতার বন্ধন দিয়ে ঘাটতি পূরণ সম্ভব, এটা ভাবুন। প্রয়োজন হলে মনোচিকিৎসকের শরণাপন্ন হন।

কিছু পরামর্শ

সবার আগে নিজের শরীরের সুস্থতার দিকে নজর দিন। বয়স ৪০ পার হলেই নিয়মিত স্বাস্থ্য পরীক্ষা বা চেকআপ করান। চিকিৎসকের পরামর্শে প্রতিদিন হাঁটাহাঁটি আর ব্যায়ামের অভ্যাস করুন। পুরনো বন্ধুবান্ধব বা সহকর্মীদের সঙ্গে যোগাযোগ বাড়ান, মাঝে মাঝে তাদের সঙ্গে দেখা করুন, আড্ডা দিন। সন্তানদের খোঁজখবর নিন, তাদের বন্ধু হতে চেষ্টা করবেন। আগের কোনো শখ- গান শোনা, ছবি আঁকা বা সেলাইয়ের চর্চা আবার শুরু করুন। বেড়ানোর ইচ্ছে হলে পরিবার-পরিজন নিয়ে ঘুরে আসুন। উৎপাদনশীল কোনো কাজে মন বসান, সুস্থ থাকার চেষ্টা করুন।

 

বাংলা ইনসাইডার/এসএইচ

 

 

 

 



প্রধান সম্পাদকঃ সৈয়দ বোরহান কবীর
ক্রিয়েটিভ মিডিয়া লিমিটেডের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান

বার্তা এবং বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ২/৩ , ব্লক - ডি , লালমাটিয়া , ঢাকা -১২০৭
নিবন্ধিত ঠিকানাঃ বাড়ি# ৪৩ (লেভেল-৫) , রোড#১৬ নতুন (পুরাতন ২৭) , ধানমন্ডি , ঢাকা- ১২০৯
ফোনঃ +৮৮-০২৯১২৩৬৭৭