ইনসাইড থট

মাশরাফি, মৌমিতা ও দাদীমার গল্প

নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রকাশ: 30/04/2019


Thumbnail

একই ঘটনার একাধিক দর্শক ভিন্ন ভিন্ন আঙ্গিকে বা নিজের মত করে ঘটনার বিচার বিশ্লেষণ করেন বা গ্রহন করেন যা তাঁর মন মানসিকতা, রাজনৈতিক, সামাজিক, ধর্মীয়, পেশাগত বিশ্বাস, ইত্যাদি তাতে প্রভাব ফেলে।

ইন্টারনেটে গত কয়দিন ধরে জনাব মাশরাফি বিন মুর্তজার নিজ এলাকার হাসপাতালে ঝটিকা সফরের ভিডিও নিয়ে নানা ধরণের প্রিতিক্রিয়া দেখা যাচ্ছে, সেটাই স্বাভাবিক। জনাব মাশরাফি সম্প্রতি নিজ এলাকা নড়াইলে গিয়ে সাধারণ জনগণের খোঁজখবর নেওয়া শুরু করেন, আর দশজন এমপি’র মত করেই তিনি বিভিন্ন সরকারী প্রতিষ্ঠানে কাজের খবর নিতে যান। এরই অংশ হিসেবে ২৫ এপ্রিল বিকেলে নবীন এমপি মাশরাফি নড়াইল আধুনিক সদর হাসপাতাল সফর করেন। হাসপাতালে মাশরাফি প্রথমে বিভিন্ন ওয়ার্ডের রোগীদের সঙ্গে কথা বলেন। এরপর পুরো হাসপাতালে অব্যবস্থাপনা দেখে চরম ক্ষুব্ধ হন। যেহেতু তিনি জনপ্রতিনিধি তাই তাঁর আচরণে জণমতের প্রতিফলন ঘটে।     

হাসপাতালে ঐ দিন একজন মাত্র ডাক্তার ও কয়েকজন নার্স দায়িত্ব পালন করছিলেন। তিনি খোঁজ নিয়ে জানতে পারেন হাসপাতালে পর্যাপ্ত নার্স থাকলেও প্রতিদিন দুয়েকজন নার্স দিয়েই বিভিন্ন ওয়ার্ড পরিচালিত হচ্ছে। এ সময় তিনি নার্সদের কক্ষে তালা দেখতে পেয়ে টোলিফোনে দায়িত্বপ্রাপ্তদের সঙ্গে যোগাযোগ করার চেষ্টা করেও তাদের পাননি।

এছাড়া পুরো হাসপাতালে একজন চিকিৎসকের দায়িত্ব পালনের দৃশ্য দেখে তিনি অনেক বেশি ক্ষুব্ধ হন। জানতে পারেন, ছুটি ছাড়াই একজন চিকিৎসক তিন দিন অনুপস্থিত রয়েছেন। মাশরাফি রোগী সেজে ওই চিকিৎসককে ফোন করেন। তিনি মাশরাফিকে রোববার হাসপাতালে এসে চিকিৎসা নিতে বলেন। পরে নিজের পরিচয় দিয়ে মাশরাফি চিকিৎসককে বলেন, “এখন যদি হাসপাতালে অপারেশন দরকার হয় তাহলে সেই রোগী কী করবেন? চুপ করে আছেন কেন? আপনি কি ফাইজলামি করেন? চাকরি করলে নিয়ম মেনেই করবেন।” এরপর পরে এটা নিয়ে পানি অনেকদুর গড়িয়েছে, যা সবার জানা।  

যা হোক, এটাই ছিল ঘটনার সংক্ষিপ্ত বিবরণ। এবার এটা নিয়ে নানা জনের নানা মন্তব্যের মধ্যে একজন ডাক্তার আগ বাড়িয়ে খুব নোংরা কথার অবতারণা করেছেন যার পিতা বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের একজন খুব বড় নেতা এবং মন্ত্রী ছিলেন। যিনি ২০০৭-২০০৮ এ পল্টি খেয়ে শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে গিয়ে নেত্রীকে মাইনাস করাদের দলে ভিড়ে যান। কিন্তু পরে শেখ হাসিনাকে ক্ষমতাচ্যুত বা দেশ ত্যাগে বাধ্য করতে না পেরে পরে তিনি তাঁর ছেলে মেয়েদের সাথে নিয়ে এসে ক্ষমা চান, স্ত্রী সন্তানের দেখ-ভালের ভার জননেত্রী শেখ হাসিনার উপর দিয়ে যান।     

এটা চরম সত্য যে, পরিবেশ দ্বারা মানুষ প্রভাবিত হন। আসলে মাশরাফি যে পরিবেশে থাকেন সেই পরিবেশ তাঁকে প্রভাবিত করেছে। মাশরাফির কথায় ডাক্তার সম্পর্কে বা হাসপাতাল সম্পর্কে আমাদের দেশের মানুষের মনের কথা জানা যায়। সেটা কতটুকু সত্য বা ন্যায় তাঁর বিচার আলাদা। আমরা সবাই জানি যে আমাদের চিকিৎসা ব্যবস্থা উন্নত না। তাই বড় বড় নেতাদের বিদেশে চিকিৎসা নিতে যেতে হয়। তবুও বাংলাদেশের সরকার তাঁর সামর্থ্যের মধ্যে যা দেয় তাও জনগনের দোর গোঁড়ায় পৌঁছায় না, সেটা দিবালোকের মত সত্য। মাশরাফি জানেন এবং বিশ্বাস করেন যে, কাজ না করে টাকা নেওয়া অন্যায়। তিনি যাদের এমপি তাঁদের সুখ দুঃখে তাঁদের সুখে পাশে দাঁড়ানো তাঁর দায়িত্ব। তাই আবেগের বশে মাশরাফি যে কথা বলেছেন তাতে অনেকে আহত হয়েছেন ভেবে তাঁর জন্য তিনি ক্ষমাও চেয়েছেন। মাশরাফি যা করেছে তা এক যোগ্য নেতার মতোই করেছেন।        

অন্যদিকে তাঁকে বিশ্রী ভাষায় গালি দিয়ে সোশ্যাল মিডিয়ায় পোস্ট দিয়েছেন বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক মরহুম আব্দুল জলিল (১৯৩৯-২০১৩)সাহেবের মেয়ে। যে ভাষায় তিনি গালি দিয়েছেন বা কথা বলেছেন তাতে তাঁর বংশ পরিচয় বা তাঁর পরিবারের সংস্কৃতি নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে, উঠতেই পারে। বাবা মারা যাবার সময় তাঁর ভাইয়ের বয়স ২৫ এর অনেক কম ছিল বলে উপ-নির্বাচণে তিনি ভোটে দাড়াতে পারেন নি। এবার এমপি হয়েছেন। একজন এমপি’র বোন, সাবেক মন্ত্রি ও একজন জাতীয় নেতার মেয়ের মুখের ভাষা এমন হলে তো সবাই তাঁর অতীত নিয়ে ঘাটাঘাটি করবেন! এই কথা কি মরহুম জলিল সাহেবের মেয়ে মৌমিতা জলিল জানেন না? তিনি তো পেশায় ডাক্তার, তিনি কী কাজ না করে বেতন চান! তিনি এটা করে পুরো ডাক্তার সমাজকে হেয় প্রতিপন্ন করেছেন, তা কি উনি বোঝেন? উনার তো তা বোঝা উচিৎ।  তিনি যা বলেছেণ তা কী তাঁর জীনে বা রক্তে মিশে থাকার কথা? এই প্রশ্ন আসবেই, আসবে উনার বাসার বা পারিবারিক পরিবেশের কথা, এমন গালি উনার তো শোনার কথা না বা শুনলেও মুখ দিয়ে উচ্চারণ হবার কথা না। নাকি এমন পরিবেশেই তিনি মানুষ হয়েছেন! এসব কথা উঠার আগেই মাশরাফির মত করে মৌমিতা জলিলের ক্ষমা চেয়ে ইস্যুটি ধামা চাপা দেওয়া উচিৎ। তা না হলে তাঁর বাবার বিরোধীরা তাঁদের নিয়ে নোংরা কথা বলতে ছাড়বেন না।             

একটা কথা মনে পড়ে। আমরা শৈশবে যদি কখনো যাদের মাংস খাওয়া হারাম তাঁদের নাম মুখে উচ্চারণ করতাম তখনি আমাদের দাদীমা এসে জোর করে আমাদের ৭ বার কুলি করিয়ে তৌবা পড়াতেন। বলতেন তোমার মুখ অপবিত্র হয়ে গেছে। ঐ মুখে কোন কিছু উচ্চারণ করে ইবাদত হবে না। এখনো এমন গালি শুনলে দাদিমার কথা মনে পড়ে। আমার সন্তারা কেউ এমন গালি দেবার সাহস রাখে না। এমন গালি তারা শুনেছে, কিন্তু উচ্চারণের সাহস তাদের নেই। আমি মনে করি জলিল সাহেবের পারিবারিক কালচারও হয়তো এমন ছিল, কিন্তু তাঁর মেয়ে হয়ে একজন এমপি সম্পর্কে এমন শব্দের উচ্চারণ উনি করলেন কীভাবে?


বাংলা ইনসাইডার/এমআরএইচ 

 

 



প্রধান সম্পাদকঃ সৈয়দ বোরহান কবীর
ক্রিয়েটিভ মিডিয়া লিমিটেডের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান

বার্তা এবং বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ২/৩ , ব্লক - ডি , লালমাটিয়া , ঢাকা -১২০৭
নিবন্ধিত ঠিকানাঃ বাড়ি# ৪৩ (লেভেল-৫) , রোড#১৬ নতুন (পুরাতন ২৭) , ধানমন্ডি , ঢাকা- ১২০৯
ফোনঃ +৮৮-০২৯১২৩৬৭৭