সোশ্যাল থট

গর্জিয়াস ডাক্তারের ব্যাখ্যা দিলেন তুষার

নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রকাশ: 08/05/2019


Thumbnail

আব্দুন নূর তুষার। বিতর্ক, অনুষ্ঠান উপস্থাপনা, লেখালিখিসহ ক্রিয়েটিভ নানা অঙ্গনে যার পরিচয়। পড়াশোনা করেছেন ঢাকা রেসিডেন্সিয়াল মডেল স্কুল অ্যান্ড কলেজে এবং ঢাকা মেডিকেল কলেজে। নিয়েছেন মানসিক চিকিৎসায় উচ্চতর শিক্ষা। জনসাধারণকে স্বাস্থ্য সচেতন করতেও লিখেছেন তিনি। সম্প্রতি সংসদ সদস্য ও জাতীয় ক্রিকেট দলের অধিনায়ক মাশরাফি বিন মর্তুজা হসপিটালে গিয়ে তাণ্ডব চালায়। যা রীতিমতো ভাইরাল ও সাধারণের কাছে প্রশংসা পায়। তবে চিকিৎসকরা এর সমালোচনা করেন। তুষারও মাশরাফিকে নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে কথা বলে সমালোচনার মুখে পড়েন। আজ তুষার নতুন বার্তা দিয়েছেন। যেখানে তিনি বলেন,‘সিম্পল এমবিবিএস? এ প্রশ্ন বা উক্তিটি সকল নবীন ডাক্তারের শুনতে হয়। ভাই , সে তো মাতৃগর্ভ থেকে এফ সি পি এস, এম ডি হয়ে জন্মায় না। এজন্য তাকে পড়তে হয়।

গর্জিয়াস এমবিবিএস কে? আপনিও তো সিম্পল গ্র্যাজুয়েট, সিম্পল মাস্টার্স। পিএইচডি করেন নাই কেন? এটা কিন্তু আপনাকে শুনতে হয় না।

আপনি যখন পাতলা পায়খানার জন্য গ্যাস্ট্রো এন্টেরোলজিস্ট বা সর্দি কাশির জন্য রেসপিরেটরী মেডিসিন এর প্রফেসর অথবা পেট জ্বলাকে বুক জ্বলা মনে করে কার্ডিওলজিস্ট এর কাছে যান, তখন তার মনে হয় এমবিবিএস মূল্যহীন।

যখন স্যাকমো নামের সামনে ডাক্তার লেখে, সে হতাশায় নিমজ্জিত হয়, ভাবে যতো দ্রুততার সাথে সম্ভব তাকে এবিসিডি নামের পেছনে লাগাতেই হবে। এখন নাকি তারা এসএসসি র পরে ৪ বছর পড়ে। তাই তারা ডা. ।কি মজা তাই না? কি পড়ে? কোন কোন বই? জানেন?

ডাক্তারী পড়ায় খালি পড়লেই হয় না, ট্রেনিং লাগে। লাগে জানা বিদ্যার বারবার অনুশীলন। যন্ত্রপাতি ও উপকরণ বিহীন ইউনিয়ন ও উপজেলায় সে থাকতে চায় না কারন তার এই চাকুরী উচ্চশিক্ষায় ট্রেনিং হিসেবে বিবেচিত হয় না।

অথচ চাচা মামার জোরে কেউ কেউ ভালো পোস্টিং পেয়ে এমন কোথাও কাজ করে যেখানে বিদ্যা শিক্ষার সুযোগ থাকে।

এমনিতেই ৬ বছর এমবিবিএস , বিসিএস হলে ৩ বছর গ্রামে বাস, তারপর যদি ভাগ্যক্রমে ট্রেনিং ভর্তি সব হয় তবে এম ডি তে আরো ৫ বছর ।

১৪ বছর পরে সে স্পেশালিস্ট। এরকম হয় ১০% এর । বাকিদের ১৭ থেকে ২২ বছর লাগে। অর্থাৎ ৯০% চিকিৎসকের জন্য ৩৫ থেকে ৪০ বছরে উচ্চ শিক্ষা সম্পন্ন হয়।

সকলের উচ্চ শিক্ষা হয় না।

কিন্তু আপনারা মনে করেন তারা সিম্পল এম বি বি এস। বিশেষজ্ঞের চেম্বারে যান অকারণে। দলে দলে ভীড় জমিয়ে বলেন, ডাক্তার কসাই। এত রোগী কেন দেখে?

বাংলাদেশে ১০০০০ লোকের জন্য ১.২ জন ডাক্তার আর .৫২ জন নার্স। বিশেষজ্ঞ আরো কম। ১০০০০ এর জন্য .১২ । তাহলে এত লোক সব বিশেষজ্ঞের কাছে গেলে, ১ মাস পর ১০ মিনিটের জন্য সিরিয়াল পাওয়াই তো স্বাভাবিক।

সরকারী হাসপাতাল ৬০০ এর কিছু বেশী , বেসরকারী ৫২০০ এর বেশী। সরকারী হাসপাতালে পদ খালি গত বছরে ছিল প্রায় ১৪০০০। তিনভাগের একভাগ ডাক্তার কম আর নার্স কম ৭০%। অথচ রোগী ভর্তি হয় তিনগুন।

তার মানে একজন ডাক্তার সাড়ে তিনজন ডাক্তারের সমান কাজ করতে হয়। আর নার্স রা করে ৯ জন এর কাজ। কারন নার্স লাগে ডাক্তারের তিনগুন।

উপকরণ নাই, লোকবল নাই, উচ্চশিক্ষার নিশ্চয়তা নাই। হাসপাতাল তো ভবন না , চালাতে দক্ষ জনবল দরকারী।

একা ডাক্তার কি করবে?

এর মধ্যে ডাক্তার রোগী মরলে মার খায়। না মরলেও গালি খায়।

ডাক্তার মারলে কোন সাজা হয় না, বিচার নাই।

গার্মেন্টস শ্রমিকের ন্যূনতম বেতন আছে। এমবিবিএস ডাক্তার বেসরকারী ক্লিনিকে ১২ হাজার থেকে ১৮ হাজারে চাকুরী করে। তার কোন ন্যুনতম বেতন নাই। উবার চালকের আয় তার চেয়ে বেশী।

অধিকাংশ বেসরকারী ক্লিনিকের মালিক কিন্তু নন মেডিক্যাল বিনিয়োগকারী। কারণ ডাক্তারের পূঁজি হতে হতে তার বয়স ৫০। তখন খুব কম ডাক্তারই ব্যবসাতে বিনিয়োগ করতে আগ্রহী থাকেন।

হেলথ সিস্টেম তো ব্যবস্থাপনার বিষয়। এটা তো ডাক্তার পারে না।

সিম্পল এর কাছে যাবেন না, আবার গর্জিয়াস যদি ১৫০০ টাকা নেয় তাতেও মাইন্ড করবেন। কে বলে ১৫০০ দিতে, সরকারী হাসপাতালে যান, আউটডোরে দেখান । সেখানে ২০ টাকা মাত্র।

কিন্তু সরকারী হাসপাতালে যেতে ভালো লাগে না, ময়লা, গন্ধ, ভীড়।

ডাক্তারতো আপনাকে কোলে করে চেম্বারে নেয় না। কেন যান কসাইয়ের কাছে ?

যে ডাক্তারের লম্বা সিরিয়াল লাগে না, তাকে আপনারা ভালো বলেন না, আবার লম্বা সিরিয়াল হলে লোভী কসাই বলেন।

টেস্ট দিলে বলেন , কমিশন খায়, না দিলে বলেন , টেস্ট না করেই বললো আমার এটা কিছু না? চর্বির দলা, লাইপোমা?

ভাই কেউ কমিশন খায় জানলে তাকে বর্জন করেন। যে ডায়াগনস্টিক সেন্টার কমিশন দেয়, তার বিরুদ্ধে দুদকে অভিযোগ করেন। ৯৩০০০ ডাক্তার। সবাই কি কমিশন খায়? আপনি নিজের চোখে যদি কাউকে কমিশন খেতে দেখেন তার নাম সবাইকে জানান।

ঢালাওভাবে বলেন কেন? কেন সরকারী হাসপাতালে পরীক্ষা করান না? কেন চকচকে মাল্টিকালার খামে এক্সরে রিপোর্ট না পেলে আপনার ভালো লাগে না? খামের পেছনে ২৫ টাকা লাগে, জানেন সেটা?

২০০ টাকার মুরগীর আটভাগের একভাগ দিয়ে বার্গার বানালে আলুভাজির সাথে খাবেন তাই ৩৯৫ টাকা দেন, আর ওইটা খাওয়ার পর পেট জলা আলসার থেকে ডাক্তার আপনার জীবনকে বাঁচালে তাকে বলেন ৩০০ নিতে। ডাক্তারের দাম মুরগীর আটভাগের একভাগের বার্গারের চেয়েও কম?

এজন্যই ডাক্তার আর সিম্পল এম বি বি এস হবার লজ্জা পেতে চায় না।

সে সিম্পলের মধ্যে গর্জিয়াস হতে চায়। এসি ওয়ালা চেম্বার চায়। নাহলে তাকে আপনার সিম্পল মনে হয়?

তাকে আপনি বলেন, আপনি কিসের ডাক্তার? আপনার অবশ্য স্পেশালিস্ট না হলে তাকে ডাক্তার মনে হয় না। সব ডাক্তারই মানুষের ডাক্তার। কসাই হলে অবশ্য গরু ছাগলের ডাক্তার বলা যেতে পারে। সেক্ষেত্রে কসাইয়ের কাছে যারা যায় তারা ..............

গ্রামের পোস্টিংকে ট্রেনিং হিসেবে বিবেচনা করেন। যোগ্যতার ভিত্তিতে পদ দেন, পোস্টিং দেন। দলবাজি বন্ধ করে পেশাকে সম্মান দেন।

তারপর ডাক্তার গ্রামে না গেলে তার উপযুক্ত বিহিত করেন।

২% থেকে ৫% ডাক্তার অসৎ হতে পারে। সেটা কোন পেশায় নাই? এই যে ব্যাংকের এমডির ৩৫ কোটি টাকা পাওয়া গেল, এজন্য কি সকল ব্যাংকারকে চোর বলবেন? তাহলে সকল ডাক্তার কি করে কসাই হয়?

তাহলে এমডিজির স্বাস্থ্য খাতের অর্জনের জন্য ২টি পুরস্কার কি ভুতের কাজ?

গড় আয়ু বাড়লো কেমনে ? বার্গার খেয়ে?

ডাক্তার দেবতা না, সে মানুষ। তার মেধাকে মূল্যায়ন করেন।

তার হতাশা দুর করেন।

সেবা পাবেন। আরো বেশী। 


বাংলা ইনসাইডার/এমআরএইচ 



প্রধান সম্পাদকঃ সৈয়দ বোরহান কবীর
ক্রিয়েটিভ মিডিয়া লিমিটেডের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান

বার্তা এবং বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ২/৩ , ব্লক - ডি , লালমাটিয়া , ঢাকা -১২০৭
নিবন্ধিত ঠিকানাঃ বাড়ি# ৪৩ (লেভেল-৫) , রোড#১৬ নতুন (পুরাতন ২৭) , ধানমন্ডি , ঢাকা- ১২০৯
ফোনঃ +৮৮-০২৯১২৩৬৭৭