ইনসাইড থট

২০ দলীয় জোটে কেন ভাঙ্গনের জোয়ার!

নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রকাশ: 08/05/2019


Thumbnail

দেশের রাজনীতিতে ঝাঁকে ঝাঁকে শীতের পাখি আসা যাওয়ার একটা পরিবেশ লক্ষ্য করা যাচ্ছে। শীত আসলেই ভালো খাবার আর নিরাপদ আশ্রয়ের খোঁজে যেমন ঝাঁকে ঝাঁকে পরিযায়ী পাখিরা আসে আমাদের দেশে। আবার শীত চলে গেলে যেমন তাঁরা ফিরে যায় নিজ গৃহে। বাংলাদেশের রাজনীতিতে ২০ দলীয় জোটের দুনিয়ায় এখন দীর্ঘস্থায়ী তুষারপাতের পূর্বাভাষ। তাই পরিযায়ী পাখির মত নিজেদের অবস্থান পরিবর্তন করছেন ছোট ছোট সুবিধাবাদী দলের নেতারা যাতে একটু উষ্ণতা পাওয়া যায়।     

রাজনীতিতে নিজেকে ওলি দাবিদার কর্নেল অলি ২০ দলীয় জোট ছাড়লেন। এর আগে জেপি (মঞ্জুর) আন্দালিব পার্থ ২০ দলীয় জোট ছেড়েছেন। লেবার পার্টির চেয়ারম্যান ডা. মুস্তাফিজুর রহমান ইরাণ আলটিমেটাম দিয়েছেন ২৩শে মে পর্যন্ত। বলেছেন ২০ দলীয় জোট ঐক্যফ্রন্টের সাথে সম্পর্কের বিচ্ছেদ না ঘটালে ২৪ মে তারিখে খেলা শেষ। জোট পরিত্যাগের ঘোষণা আসবে। কল্যণ পার্টির নেতা নিজের কল্যাণের (!) কোন সম্ভাবনা না দেখতে পেয়ে জেনারেল ইবাহিম বলেছেন ঐক্যফ্রন্টের সাথে ল্যাপ্টালেপ্টি সম্পর্কের কারণেই তাঁর দল ২০ দলীয় জোট ছাড়তে যাচ্ছেন। অন্যদিকে বিএনপি’র কিছু বাঘা বাঘা নেতা তারেক জিয়াকে চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দিয়ে এখনো বিএনপি করছেন। এর মধ্যে আছেন স্বাধীনতা বিরোধীদের প্রধান পৃষ্ঠপোষক বাবু গয়েশ্বর রায় ছাড়াও আরও অনেকে। বিরোধিতার এই অবস্থা একটু ঘোলাটে ঘোলাটে মনে হচ্ছে। তারেক জিয়া বা খালেদা জিয়াকে চ্যালেঞ্জ করে বিএনপি করা মানে তো অন্য খেলা বাবু গয়েশ্বর রায়েরা খেলছেন বলে মনে হয়। বাবু গয়েশ্বর রায়ের বেয়াই বাবু নিতায় রায় তো অনেক ঘাটের পানি খেয়ে এসে এখন বিএনপিতে থিতু হয়ে চাচ্ছেন, তাই তো তাঁর কন্যা জননী এতো বিপ্লবী।               

১৪ দলীয় জোটের শরিকদের অনেকে যারা জীবনেই সাংসদ হতে পারতেন কি না সন্দেহ তারা শেখ হাসিনার বদন্যতায় মন্ত্রীও হয়েছিলেন। আল্লাহ খোদায় অবিশ্বাসী তাঁরা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে খুশি করতে ধবধবে সাদা কাপড়ে হজ্বে গিয়েছেন। কিন্তু এবার মন্ত্রি না হতে পেরে খুব নাখোশ। আবার তাঁরা আল্লাহ খোদায় অবিশ্বাসী হয়েছেন, সত্য মিথ্যার বাছ বিচার বালাই নেই। মুখ খুলতে শুরু করেছেন। ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি ও সাবেক মন্ত্রী রাশেদ খান মেনন প্রথম আলোর সঙ্গে সাক্ষাৎকারে বলেছেন, তাঁর বাক্‌স্বাধীনতাও ঝুঁকিতে (গোপনে বলিঃ অকৃতজ্ঞতার লিমিট কোন পর্যায়ে থাকলে মানুষ এমন হয়)! তিনি উপজেলা নির্বাচনের অভিজ্ঞতা বর্ণনা করতে গিয়ে জানান, উপজেলা নির্বাচনে শুধু কারচুপি হয়নি, তাঁদের কর্মীরা সেখানে দাঁড়াতেই পারেনি (সাবাস, এই না হলে তিন ভাই বোন তিন দলে যায়!)। অপর এক অনুষ্ঠানে এই নেতা বলেছেন, ‘আমাদের এই রাষ্ট্রটি একেবারে লুটেরা পুঁজিপতিদের রাষ্ট্র হয়ে গেছে (১০০ তে ১০৫ পেতে পারেন)।’  জোটের আরেক শরিক জাসদ সভাপতি ও সাবেক মন্ত্রী হাসানুল হক ইনু ক্ষোভের সঙ্গে বলেছেন, ‘সংসদে কোন দল বিরোধী দলে আসবে, সেটি আওয়ামী লীগ ঠিক করে দিতে পারে না।’ তিনি সত্যিকার বিরোধী দল চান, ফরমায়েশি বিরোধী দল নয়। তাঁর কথা শুনে বুঝা যায় যে ইনি মন্ত্রি হতে পারেন নি এবার তাই খুব কষ্টে আছেন, কিন্তু হতে চান, শেখ হাসিনার নেক নজরে আসতে চান। নাকি বাবু গয়েশ্বর রায়ের মত অন্য খেলায় মত্ত, আসলে কিছু পেতে চান, বুঝা যাচ্ছে না।    

বাংলাদেশের রাজনীতির অবস্থা এখন খুব নাজুক অবস্থায়। এরশাদ সাহেবের জাতীয় পার্টির টান উঠেছে, যেমনটি হয় অনেক মানুষের মৃত্যুর আগে। জাতীয় পার্টির লক্ষণ তেমন, এরশাদ সাহেবের মৃত্যুর সাথে সাথেই জাতীয় পার্টির অস্তিত্ব কোথায় যাবে তা অনুমান করার জন্য রাজনৈতিক বিশ্লেষক হবার প্রয়োজন পড়ে না। বরং এরশাদ সাহেবের মৃত্যুর পর তাঁর রেখে যাওয়া সম্পত্তি নিয়ে কী হবে তা নিয়েই কিছু চিন্তা করার সুযোগ আছে।   

যে তারেক জিয়া ভোট বিপ্লবের মাধ্যমে ক্ষমতা দখলের মাধ্যমে শেখ হাসিনার রাজনৈতিক কবর রচনার সব আয়োজন শেষ করেছিলেন সেই তারেক জিয়াই এখন শেখ হাসিনার অনুকম্পা ভিখারী বলে সবার কাছেই প্রতীয়মান। তা না হলে গোপনে তিনি তাঁর দলের নির্বাচিত এমপি সাহেবদের শপথ পড়াতে এত নাটক করতেন না। তারেক জিয়া এমন আতংকে আছেন যে, দলের কিছু নেতাকে বলছেন, শপথ নেওয়া যাবে না, আবার নির্বাচিত এমপি সাহেবদের বলছেন শপথ নাও। তাই এমপি সাহেবগন সংসদে গিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার গুণগানে মুখে ফেনা তুলে ফেলছেন। আসলে বিএনপি’র রাজনীতি এখন শুধুই নমিনেশন বানিজ্যের দল। আর কয়েক বছর পরেই মুসলীম লীগে পরিণত হবে, তাঁর লক্ষণ সুস্পষ্ট। নমিনেশন বানিজ্যের বখরায় বা ইজারার ভাগ নিতে (ধানের শীষ প্রতীক বরাদ্দের ক্ষমতা) এখন মরিয়া হয়ে উঠেছেন বাবু গয়েশ্বর রায় গ্রুপ, মীর্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের গ্রুপ আর জিয়া পরিবারের ঘনিষ্ঠ বা তাঁদের আত্মীয়দের গ্রুপ। অনেকেই নিশ্চিত যে তারেক জিয়া, তাঁর স্ত্রী কিংবা ছোট ভাই কোকোর স্ত্রীও দেশে আসতে পারছেন না মামলার কারণে। তাঁরা কেউ ভোট করতেও আসবেন না, সংরক্ষিত মহিলা আসনে কিংবা ফখরুলের ছাড়া আসনের উপনির্বাচনে। মুলতঃ বিএনপি এখন মোটামুটি তিন ভাগে বিভিক্ত। তিন গ্রুপেরই লক্ষ্য নিমিনেশন বাণিজ্য আর লোক দেখানো সরকার বিরোধিতার নামে সরকারের উন্নয়নের কাজে পরোক্ষ সহায়তা করা; যেমনটি করা হয় সিঙ্গাপুরে, করা হয়েছে মালয়েশিয়ায়।   

পুরো ব্যাপারটি আঁচ করতে পেরে ২০ দলীয় জোটে এখন ভাঙ্গনের জোয়ার। কোন দল আগে সরকারের কাছে গিয়ে তাঁদের গুণগান করে কিছু সুবিধা নেবে সেই প্রতিযোগীতায় মত্ত জামায়াত বাদে ২০ দলীয় জোটের বেশিরভাগ শরিকেরা। সত্য প্রকাশে বেশি সময় লাগবে না, কারণ এটা আইটির যুগ। তবে সত্যকার বরোধী দলের এই শূন্যতা পুরণ করতে নতুন মুখের নতুন একটা জোট বা দল আসতে একটু সময় নেবে হয়তো, কিন্তু তাঁরা আসবে তা অনুমান করা যায় মানুষের প্রত্যাশা দেখে।  

 



প্রধান সম্পাদকঃ সৈয়দ বোরহান কবীর
ক্রিয়েটিভ মিডিয়া লিমিটেডের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান

বার্তা এবং বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ২/৩ , ব্লক - ডি , লালমাটিয়া , ঢাকা -১২০৭
নিবন্ধিত ঠিকানাঃ বাড়ি# ৪৩ (লেভেল-৫) , রোড#১৬ নতুন (পুরাতন ২৭) , ধানমন্ডি , ঢাকা- ১২০৯
ফোনঃ +৮৮-০২৯১২৩৬৭৭