ইনসাইড আর্টিকেল

নাৎসি বিলুপ্তির ১৬ মে

নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রকাশ: 16/05/2019


Thumbnail

প্রথম বিশ্বযুদ্ধে জার্মানী হেরে যাওয়ার পর,ড্রেক্সলার এবং অন্যান্য জাতীয়তাবাদী নেতারা `ভার্সাই চুক্তি`র তীব্র বিরোধিতা করে। এরই সূত্রে ১৯১৯ খ্রিষ্টাব্দের ৫ জানুয়ারিতে তিনি একটি দল গঠন করেন এবং নাম দেন -"German Socialist Worker`s Party" (জার্মান সমাজতান্ত্রিক শ্রমিক দল)।

১৯২০ খ্রিষ্টাব্দের শুরুর দিকে অ্যান্টন ড্রেক্সলারের সমর্থনে হিটলার এই দলের প্রচারণার দায়িত্ব পান। এই কাজটি হিটলার  অসাধারণ কৃতিত্বের সাথে সম্পন্ন করেন। দলের প্রচারণার জন্য তিনি গণসংযোগ এবং লিফলেট এবং জনসভার ব্যবস্থা করেন। এই বৎসরের ২৪ ফেব্রুয়ারিতে ২০০০ লোকের সভা অনুষ্ঠিত করতে সক্ষম হন। এ দলটি পুজিবাদ এবং গণতন্ত্রের বিরুদ্ধে সোচ্চার হয়ে উঠে। যদিও সমাজতন্ত্রের কথা এই দলের মূল বক্তব্য ছিল,কিন্তু মার্ক্সবাদের অনুকূলে তা ছিল না। এই সূত্রে ফেব্রুয়ারি মাসের শেষের দিকে এই দলের নতুন নাম দেওয়া হয়। Nationalsozialistische Deutsche Arbeiterpartei (National Socialist German  Workers Party – NSDAP)।

১৯২১ খ্রিষ্টাব্দে তিনি মিউনিখে প্রায় ৬০০০ লোকের জনসভায় ভাষণ দিয়ে জনগণকে উজ্জীবিত করেন। ১৯২১ খ্রিষ্টাব্দের জুন মাসে তিনি এবং তাঁর রাজনৈতিক গুরু এখার্ট (Eckart) দলের জন্য তহবিল-উন্নয়নে উদ্যোগ গ্রহণ করেন। তাঁদের এই কার্যক্রম শুরু হয় বার্লিন থেকে। এই সময় দলের কিছু পরিচালক German Socialist Party (DSP)-এর সাথে তাঁদের দলকে একত্রিত করার উদ্যোগ নেন। ১১ই জুলাই হিটলার মিউনিখে ফিরে,এর তীব্র বিরোধিতা করেন এবং দলত্যাগ করেন। ইতিমধ্যে দলের ভিতর হিটলারের জনপ্রিয়তা এতটাই বৃদ্ধি পয়েছিল যে,সে সময় হিটলার দলত্যাগের কারণে মূল দলই ধ্বংস হয়ে যাওয়ার উপক্রম হয়।

ফলে হিটলারের কাছে দলত্যাগের সিদ্ধান্ত প্রত্যাহার করার জন্য দলের পক্ষ থেকে বলা হয়। হিটলার এক ঘোষণায় জানান যে দলের চেয়ারম্যান ড্রেক্সলার (Drexler)-কে পদত্যাগ করতে হবে এবং মিউনিখে দলের প্রধান কার্যালয় হিসেবে ঘোষণা দিতে হবে। হিটলারের এই প্রস্তাবে দলের পরিচালক পরিষদ রাজি হলে,তিনি ২৬ জুলাই পুনরায় দলে যোগদান করেন

২৮ জুলাইয়ে দলের নির্বাচনে দলের চেয়ারম্যান পদে নির্বাচনে তিনি অবিশ্বাস্য ভোটে জয় লাভ করেন। উল্লেখ্য এই নির্বাচনে তাঁর বিরুদ্ধে মাত্র এক ভোট পড়েছিল। এরপর থেকে নিয়মিত ভাষণ এবং জনসংযোগ করে দলের সদস্য সংখ্যা বৃদ্ধি করে দলকে শক্তিশালী করার উদ্যোগ নেন। দলের ভিতর একমাত্র জনপ্রিয় নেতা হয়ে উঠার সূত্রে তিনি ফুয়েরার (Führer,দলনেতা) নামে অভিহিত হন। 

১৯২১ খ্রিষ্টাব্দের ভিতরে হিটলারের নেতৃত্বে এই দলটি একটি আক্রমণাত্মক দলে পরিণত হয়। এই সময় বিপক্ষ দলগুলোকে বাক্যের দ্বারা আঘাতের পাশাপাশি দৈহিক আক্রমণ চালানো শুরু করে। একই সাথে জার্মান জাতি এবং আর্যজাতিসত্তার রক্ষার জন্য এই দলটি সক্রিয় হয়ে উঠে। একই সাথে এই দল ইহুদী-বিদ্বেষী মনোভাব তীব্রভাবে ব্যক্ত করা শুরু করে। ১৯২২ খ্রিষ্টাব্দের ভিতর এই দলটি জার্মানির উল্লেখযোগ্য দলে পরিণত হয়। এই সময় জার্মানির উইলহেম কুনো (Wilhelm Cuno)-র সরকার পদত্যাগ করে, এই সময় জার্মান কমুনিষ্ট পার্টি ক্ষমতা দখলের চেষ্টা করে। এর ফলে নাৎসি পার্টির জনপ্রিয়তা বৃদ্ধি পায়। এই সময় এই দলের নিবন্ধনকৃত সদস্যের সংখ্যা দাঁড়ায় ২০,০০০। এই সময় এই দল সামরিক অভ্যুত্থানের মাধ্যমে ক্ষমতা দখলের উদ্যোগ নেয় । ৮ই নভেম্বর একটি দেশপ্রেমী শোভাযাত্রার মধ্য দিয়ে মিউনিখে এই অভ্যুত্থানের সূচনা করে। এই অভ্যুত্থানকে `বিয়ার হল অভ্যুত্থান` (Beer Hall Putsch) নামে অভিহিত করা হয়।

এই অভ্যুত্থানের সময় জার্মানির প্রাক্তন যোদ্ধাদলের Reichswehr স্থানীয় সেনাদল তাদের সমর্থন প্রত্যাহার করে। এর ফলে অভ্যত্থানটি সফলতা লাভে ব্যর্থ হয়। ৯ নভেম্বর নাৎসি দলের শোভাযাত্রা শুরু হলে,সেনাবাহিনী গুলি চালায় এবং ১৬ জন নাৎসি কর্মী নিহত হন। এই সময় হিটলার, জেনারেল এনরিখ লুডেনডর্ফ এবং এর সাথে যুক্ত বহু নেতাকর্মীকে গ্রেফতার করা হয়। ১৯২৪ খ্রিষ্টাব্দের মে মাসে অনুষ্ঠিত জার্মান জাতীয় সংসদ নির্বাচনে নাৎসি পার্টি ৩২টি আসন লাভ করে। ১৯,১৮,৩০০ ভোটের মাত্র ৬.৫% ভোট লাভ করেছিল এই দল।

১৯২৪ খ্রিষ্টাব্দের ডিসেম্বর পর্যন্ত হিটলার বন্দী থাকেন। এই সময় তিনি জেলে বসে রচনা করেন মেইন ক্যাম্প (Mein Kampf ) নামক গ্রন্থ।

১৯২৪ খ্রিষ্টাব্দের ডিসেম্বর মাসে হিটলার জেল থেকে মুক্তিলাভ করেন। ডিসেম্বর মাসে জার্মানির জাতীয় নির্বাচন হয়। এই নির্বাচনে নাৎসি দল মাত্র ১৪টি আসন পায়। সে সময় হিটলারই ছিলেন দলের সর্বময় ক্ষমতার অধিকারী। এর পরের সারিতে ছিলেন হিমলার,গোয়েবলস এবং গোয়েরিং।

১৯২৭ খ্রিষ্টাব্দের ২০শে আগষ্ট নুরেমবার্গে দলের তৃতীয় কংগ্রেস উপলক্ষে শোভাযাত্রা হয়। এই শোভাযাত্রায় বিপুল মানুষের সাড়া পাওয়া গিয়েছিল। তারপরেও ১৯২৮ খ্রিষ্টাব্দের জাতীয় নির্বাচন নাৎসি দল ৪৯১টি আসনের মধ্যে মাত্র ১২টি আসন লাভ করে। এরপর এই দলের জনপ্রিয়তা বৃদ্ধির জন্য হিটলার উদ্যোগ নেন। ১৯২৯ খ্রিষ্টাব্দে দলের সদস্য সংখ্যা দাঁড়ায় ১,৩০,০০০। এই বৎসরে নুরেমবার্গে অনুষ্ঠিত হয় দলের চতুর্থ কংগ্রেস। এই কংগ্রেস উপলক্ষে শোভাযাত্রা অনুষ্ঠিত হয়।

১৯৩০ খ্রিষ্টাব্দের ভিতরে জার্মানির অর্থনীতি বিধ্বস্ত দশায় পৌঁছায়। এই অর্থনৈতিক বিপর্যয়ের কারণ হিসেবে নাৎসি দল ইহুদিদের দায়ী করে প্রচারণা চালায়। এই বৎসরের জুলাই মাসের জাতীয় নির্বাচনে নাৎসি দল ১০৭টি আসন লাভ করে। ১৯৩১-৩২ খ্রিষ্টাব্দের ভিতরে জার্মানির রাজনৈতিক সঙ্কট তীব্র আকার ধারণ করে। ১৯৩২ খ্রিষ্টাব্দের ২০ জুলাই প্রুশিয়ান সরকারের বিরুদ্ধে অভ্যুত্থান ঘটে। আর এর কয়েকদিন পরে জার্মানের জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। এই নির্বাচনে নাৎসি এবং কেডিপি দল ৫২% ভোট পায়। এর ভিতরে নাৎসি দল পায় ৩৭.৪% ভোট। ফলে নাৎসি দল নিজেদেরকে শক্তিশালী দল হিসেবে আত্মপ্রকাশ করতে সক্ষম হয়।

১৯৪৫ খ্রিষ্টাব্দে ১৬মে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে জার্মানির আত্মসমর্পণের পর,এই দল নিষিদ্ধ হয়ে যায়।



প্রধান সম্পাদকঃ সৈয়দ বোরহান কবীর
ক্রিয়েটিভ মিডিয়া লিমিটেডের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান

বার্তা এবং বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ২/৩ , ব্লক - ডি , লালমাটিয়া , ঢাকা -১২০৭
নিবন্ধিত ঠিকানাঃ বাড়ি# ৪৩ (লেভেল-৫) , রোড#১৬ নতুন (পুরাতন ২৭) , ধানমন্ডি , ঢাকা- ১২০৯
ফোনঃ +৮৮-০২৯১২৩৬৭৭