ইনসাইড আর্টিকেল

রাষ্ট্রনায়ক থেকে বিশ্বনেতা

নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রকাশ: 17/05/2019


Thumbnail

গত ২৩ জানুয়ারি দেশের সব মিডিয়াগুলো প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার অর্জন নিয়ে মুখর হয়ে উঠলো। সারা দেশের মানুষ জানলো, যুক্তরাষ্ট্রের প্রভাবশালী সাময়িকী ‘দ্য ফরেন পলিসি’ বিশ্বের সেরা চিন্তাবিদদের যে তালিকা করেছে সেখানে শক্তিধর সব দেশের রাষ্ট্রনেতাদের সঙ্গে উঠে এসেছে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীর নামও। অবশ্য এটা নতুন কিছু নয়, সাম্প্রতিক বছরগুলোতে ফোর্বস, টাইমস থেকে শুরু করে বিশ্বের নানা প্রান্তের সাময়িকী বা সংস্থা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে বিশ্বসেরা নেতাদের তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করছে।   

ফোর্বসের সর্বশেষ তালিকায় এশিয়ার দ্বিতীয় সেরা নারী রাষ্ট্রনেতা হিসেবে উঠে এসেছে শেখ হাসিনার নাম। টাইম ম্যাগাজিনেও বিশ্বের সবচেয়ে প্রভাবশালী নেতা হিসেবে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প, ফ্রান্সের ইমানুয়েল ম্যাখোঁ, কানাডার জাস্টিন ট্রুডো কিংবা চীনের শি জিনপিংদের সঙ্গে শেখ হাসিনার নামও এসেছে। ২০১৭ সালে যুক্তরাজ্যের টেলিভিশন ‘চ্যানেল ফোর’ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে ‘মাদার অব হিউম্যানিটি’ আখ্যা দেয়। জাতিসংঘ পর্যন্ত শেখ হাসিনার চিন্তাধারা এবং তার জনগণের ক্ষমতায়ন দর্শনের স্বীকৃতি দিয়েছে।

বিশ্বের শক্তিধর কোনো দেশের নেতা না হয়েও বিশ্বজুড়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার যে জয়জয়কার, এটা কেন হচ্ছে? একটু পেছনে ফিরে তাকালেই দেখা যাবে যে, শেখ হাসিনা ১৯৯৬ সালে ক্ষমতায় আসার পর থেকেই দারিদ্র্যপীড়িত বাংলাদেশকে শক্রিধর দেশগুলোর সঙ্গে প্রতিযোগিতার অবস্থানে নিয়ে গেছেন। ২০০১ সালে এর ছেদ পড়ে। কিন্তু ২০০৯ সালে দ্বিতীয় মেয়াদে ক্ষমতায় এসে প্রধানমন্ত্রী নতুন উদ্যমে তার কাজ শুরু করেন। গত ১০ বছরে তিনি বাংলাদেশকে বিশ্বের বিস্ময়ে পরিনত করেছেন। শুধু দেশের সমস্যা নিয়েই তিনি ভাবেননি, বরং আন্তর্জাতিক বিভিন্ন ইস্যু যেমন- জঙ্গিবাদ, শরনার্থী সংকট, জলবায়ু পরিবর্তনের মতো বিষয়েও তিনি সরব হয়েছেন।

জঙ্গিবাদ নিয়ে যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্যসহ বিশ্বের শক্তিধর দেশগুলোর নেতারা যখন ভয়ে দিশেহারা তখন শেখ নিজ দেশকে জঙ্গিমুক্ত করে দেখিয়েছেন। বিশ্বের নানা প্রান্তে যখন জঙ্গি হামলা হচ্ছে, তখন বাংলাদেশের মানুষ নিশ্চিন্তে দিন কাটাচ্ছে। শুধুমাত্র শেখ হাসিনার দূরদর্শী পদক্ষেপের কারণেই এটা সম্ভব হয়েছে। ভারত, শ্রীলঙ্কাসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশ এখন জঙ্গিবাদ দমনে শেখ হাসিনার দেখানো মডেল অনুসরণ করছে। 

শুধু জঙ্গিবাদ দমনই নয় মানবিকতার ক্ষেত্রেও বিশ্বে অনন্য নজির স্থাপন করেছেন প্রধানমন্ত্রী। গণহত্যা ও নির্যাতনের শিকার হয়ে ২০১৭ সালে মিয়ানমার থেকে পালিয়ে আসা রোহিঙ্গাদের আশ্রয় দিয়েছেন তিনি। দ্য ফরেন পলিসি সাময়িকী শেখ হাসিনা সম্পর্কে বলেছে, শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বাংলাদেশ সরকার নিরাপত্তার ক্ষেত্রে অন্যতম বড় চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করেছে। মিয়ানমার সেনাবাহিনী দেশটির রোহিঙ্গাদের ওপর নির্যাতন ও গণহত্যা চালানোয় ৭ লাখের বেশি রোহিঙ্গা পালিয়ে বাংলাদেশে পাড়ি জমিয়েছে। রোহিঙ্গাদের নিজ দেশে আশ্রয় দিয়ে বিশ্ব নেতৃত্বের দৃষ্টি কেড়েছেন তিনি। এখন তিনি রোহিঙ্গাদের নিজ দেশে ফেরত পাঠাতে তৎপরতা শুরু করেছেন। নিরাপত্তার কারণে জাতিসংঘ ও মানবাধিকার পক্ষগুলো রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসনের বিরোধিতা করছে। তা সত্ত্বেও শেখ হাসিনার সরকার লাখো রোহিঙ্গাকে দেশে ফেরার পথ তৈরি করতে কাজ করে যাচ্ছে।

২০১০ সালে নিউইয়র্ক টাইমস সাময়িকীর অনলাইন জরিপে বিশ্বের সেরা ১০ ক্ষমতাধর নারীর মধ্যে ষষ্ঠ স্থানের অধিকারী ছিলেন বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ফোর্বস শেখ হাসিনাকে ‘লেডি অব ঢাকা’ আখ্যা দিয়েছিল। প্রধানমন্ত্রীকে নিয়ে  ফোর্বসে বলা হয়েছিল, তিনি মিয়ানমার থেকে পালিয়ে আসা রোহিঙ্গাদের সহায়তার অঙ্গীকার করেছেন এবং তাদের জন্য ২০০০ একর জমি বরাদ্দ দিয়েছেন, যা মিয়ানমারের স্টেট কাউন্সেলর অং সান সু চির অবস্থানের পরিষ্কার বিপরীত।

প্রধানমন্ত্রী যে কেবল নির্যাতিত রোহিঙ্গাদের পাশে দাঁড়িয়েছেন তা নয়। ১৯৯৭ সালে পার্বত্য চট্টগ্রামে শান্তিচুক্তি করে ইতিহাস রচনা করেছিলেন তিনি। এর জন্য ১৯৯৮ সালে ইউনেসকো তাকে ‘হুপে-বোয়ানি’ শান্তি পুরস্কারে ভূষিত করেছিল। ভারতের সঙ্গে ছিটমহল বিনিময় চুক্তি বাস্তবায়ন এবং সমুদ্রসীমা বিরোধও নিস্পন্ন হয়েছে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে। প্রতিবেশি দেশগুলোর সঙ্গে কীভাবে বন্ধুত্ব রক্ষা করে বিভিন্ন বিরোধ মীমাংসা করা যায়, তারও দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন শেখ হাসিনা।

১৯৯৭ সাল থেকে এ পর্যন্ত আন্তর্জাতিক পর্যায়ে তিনি ৩০টির অধিক পুরস্কার ও পদক অর্জন করেছেন। যুক্তরাষ্ট্রের বোস্টন ইউনিভার্সিটি, ব্রিজপোর্ট বিশ্ববিদ্যালয় এবং ব্যারি বিশ্ববিদ্যালয়, জাপানের ওয়াসেদা বিশ্ববিদ্যালয়, স্কটল্যান্ডের অ্যাবারটে বিশ্ববিদ্যালয়, ভারতের বিশ্বভারতী এবং ত্রিপুরা বিশ্ববিদ্যালয়, অস্ট্রেলিয়ার ন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি, ব্রাসেলসের বিশ্ববিখ্যাত ক্যাথলিক বিশ্ববিদ্যালয়, রাশিয়ার পিপলস ফ্রেন্ডশিপ বিশ্ববিদ্যালয় এবং স্টেট ইউনিভার্সিটি অব পিটার্সবার্গ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এবং বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় তাকে সম্মানসূচক ডক্টরেট ডিগ্রি প্রদান করে। সর্বভারতীয় শান্তিসংঘ শেখ হাসিনাকে ১৯৯৮ সালে ‘মাদার তেরেসা’ পদক প্রদান করে। ২০০৯ সালে ভারতের ইন্দিরা গান্ধী মেমোরিয়াল ট্রাস্ট শান্তি ও গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠায় অসামান্য ভূমিকা পালনের জন্য শেখ হাসিনাকে ইন্দিরা গান্ধী পুরস্কারে ভূষিত করে। এ ছাড়া ২০১৪ সালে ইউনেসকো কর্তৃক তিনি ‘শান্তির বৃক্ষ’ পুরস্কারে ভূষিত হয়েছেন। জাতিসংঘ পরিবেশ উন্নয়ন কর্মসূচি দেশে এবং আন্তর্জাতিক পর্যায়ে পরিবেশ এবং টেকসই উন্নয়নে অসামান্য অবদান রাখার জন্য লিডারশিপ ক্যাটাগরিতে শেখ হাসিনাকে তাদের সর্বোচ্চ পুরস্কার ‘চ্যাম্পিয়নস অব দ্য আর্থ-২০১৫’ পুরস্কারে ভূষিত করেছে।

বিশ্বের বিশিষ্ট ব্যক্তিরাও শেখ হাসিনার প্রশংসা করছেন। অক্সফোর্ড ইউনিভার্সিটির রাজনীতি এবং আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের দুজন শিক্ষাবিদ ড. লিজ কারমাইকেল এবং ড. অ্যান্ড্রু গোসলার বলেন, বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী যেভাবে নির্যাতিত রোহিঙ্গাদের আশ্রয় দিয়েছেন, তা সারাবিশ্বের জন্য এক অনুকরণীয় বার্তা।

হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক হেম্পটনের মতে, রোহিঙ্গা ইস্যুতে শেখ হাসিনার নেতৃত্বে মানবতার প্রশ্নে এক নতুন মাত্রা দিয়েছে। কেবল শান্তির প্রয়োজনে বাংলাদেশ চরম অর্থনৈতিক ঝুঁকি নিয়েছে। এতগুলো শরণার্থীকে আশ্রয় দেওয়ার জন্য মানবিক হৃদয় লাগে। জার্মানি যা করতে পারেনি; শেখ হাসিনা তা করে দেখিয়েছেন। অস্ট্রেলিয়ান ন্যাশনাল ‘পিস অ্যান্ড রিসার্চ ইনস্টিটিউট’ প্রধান ড. হেনরিক উরডাল মনে করেন, বিশ্বশান্তি প্রতিষ্ঠায় অবদানের জন্য শেখ হাসিনাকেই বিশ্বশান্তির নেতার মর্যাদা দেওয়া উচিত।

কলাম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের পিস স্টাডিজ বিভাগের তিন অধ্যাপক যৌথভাবে শেখ হাসিনাকে বিশ্বশান্তির দূত হিসেবে চিহ্নিত করেছেন। তাদের মতে, সু চি মানবতার চরম সীমা লঙ্ঘনকারী মিয়ানমারের সামরিক জান্তাদের রোহিঙ্গা মুসলিমদের ওপর চালানো পৈশাচিকতাকে প্রশ্রয় দিয়েছেন। পক্ষান্তরে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দেশের অর্থনীতি এবং নিরাপত্তার চরম ঝুঁকির মধ্যেও রোহিঙ্গাদের আশ্রয় দিয়েছেন।

শান্তি প্রতিষ্ঠা, গণতন্ত্রকে প্রাতিষ্ঠানিক রূপদান এবং আর্থ-সামাজিক উন্নয়নে অসামান্য অবদান রাখার জন্য বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এখন দেশের গন্ডি পেরিয়ে আজ বিশ্বপরিমন্ডলে জায়গা করে নিয়েছেন। এজন্যই তিনি আজ শুধু বাংলাদেশের নেতা নন, বরং একজন বিশ্বনেতা।

বাংলা ইনসাইডার/এএইচসি



প্রধান সম্পাদকঃ সৈয়দ বোরহান কবীর
ক্রিয়েটিভ মিডিয়া লিমিটেডের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান

বার্তা এবং বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ২/৩ , ব্লক - ডি , লালমাটিয়া , ঢাকা -১২০৭
নিবন্ধিত ঠিকানাঃ বাড়ি# ৪৩ (লেভেল-৫) , রোড#১৬ নতুন (পুরাতন ২৭) , ধানমন্ডি , ঢাকা- ১২০৯
ফোনঃ +৮৮-০২৯১২৩৬৭৭