ওয়ার্ল্ড ইনসাইড

ভারতে লাল ঝাণ্ডার চির অবসান?

নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রকাশ: 19/05/2019


Thumbnail

ভারতে লাল ঝাণ্ডা তথা বাম দলগুলোর আধিপত্য নাকি যুক্তরাষ্ট্রের বুকেও কাঁপন ধরাতো। প্রতাপশালী ভারতীয় নেতাদের নাম বলতে শুরু করলেও চলে আসতো এক ঝাঁক কমিউনিস্ট নেতার নাম। পশ্চিমবঙ্গেই টানা ৩০ বছর ক্ষমতায় ছিল বামফ্রন্ট। বিহার, ত্রিপুরাসহ আরো বেশকিছু রাজ্য ছিল বামদের দখলে। শোনা যায়, যুক্তরাষ্ট্র যে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্তানকে সমর্থন দিয়েছিল এর একটি বড় কারণ ছিল ভারতের বাম রাজত্ব। মার্কিনিরা ভাবতো, পশ্চিমবঙ্গের লাগোয়া বাংলাদেশ যদি স্বাধীন হয় তাহলে পুরো অঞ্চলটিই কমিউনিস্টদের আখড়ায় পরিনত হবে। ফলে দক্ষিণ এশিয়ায় রাশিয়া কিংবা চীনের আধিপত্য বাড়বে। এই ভয়েই নাকি পাকিস্তানকে সাহায্য দিয়ে যাচ্ছিল যুক্তরাষ্ট্র। এরপর পেরিয়ে গেছে কয়েক দশক। কিন্তু কোথায় সেই লাল ঝাণ্ডার আধিপত্য?

ত্রিপুরা কিংবা বিহারের মতো বাম দুর্গগুলোতে এখন কমিউনিস্টদের প্রভাব-প্রতাপের ছিটেফোঁটাও নেই। আর পশ্চিমবঙ্গে একসময়কার মহীরুহ বামফ্রন্ট ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র হতে হতে এখন বলতে গেলে হাওয়ায় মিলিয়ে গেছে। এবারের লোকসভা নির্বাচনে বামেরা সেখানে একটি আসনও পাবে না বলেই আভাস মিলছে। ভারতে বর্তমানে কেরালা ছাড়া আর কোনো রাজ্যেই বামরা ক্ষমতায় নেই। কমিউনিস্টদের সবেধন নীলমনি সেই কেরালাও কি এবার হাতছাড়া হতে বসেছে?

অনেক ভেবেচিন্তেই কেরালার ওয়েনাদে এবার প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছেন কংগ্রেসের সভাপতি রাহুল গান্ধি। ভাইয়ের সমর্থনে বোন প্রিয়াঙ্কাও এখানে বেশ কয়েকটি জনসভা করে গেছেন। কংগ্রেস যে এখানে বেশ হিসেব-নিকেশ করেই রাহুলকে ওয়েনাদে প্রার্থী করেছে তা বলার অপেক্ষা রাখে না। রাহুলের প্রার্থী হওয়া এবং প্রিয়াঙ্কার প্রচারণায় শুধু যে ওয়েনাদেই কংগ্রেসের জনপ্রিয়তা বেড়েছে তা নয়, বরং গোটা কেরালাতেই কংগ্রেস শক্তিশালী হয়েছে। বিজেপিও ছোট বড় সব রাজ্যে তাদের শক্তি বাড়াতে আদাজল খেয়ে লেগেছে। সেখানে এবার ২০ আসনের কেরালায় বামদের ভাগ্যে ৫টা আসন জোটে কিনা তা নিয়েও সংশয় দেখা দিয়েছে। সব মিলিয়ে এখন একটাই প্রশ্ন ঘুরপাক খাচ্ছে যে, ভারতবর্ষে কি লাল ঝান্ডার চির বিদায়ই হতে যাচ্ছে? ভারতে তাদের হারানো শক্তি কি আর কখনও ফিরে পাবে কমিউনিস্টরা?

বিশ্লেষকরা বলছেন, ভোটের রাজনীতির ঘূর্ণিপাকে বামরা নিজেদের আদর্শই হারিয়ে ফেলেছে। বর্তমানে জনবিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে তারা। এদের মধ্যে একদল আছেন যারা গণতান্ত্রিক বিপ্লবের স্বপ্ন দেখছেন। আর একদল আছেন যারা বিপ্লব টিপ্লব কিছু নয়, শুধু ক্ষমতার নাগাল পেতে চাইছেন। তারা মধ্যবিত্ত কিংবা খেটে খাওয়া কোনো শ্রেণীকেই আকৃষ্ট করতে পারছেন না। এই সুযোগটাই নিচ্ছে কংগ্রেস আর বিজেপি। তারা গরিবদের না হলেও মধ্যবিত্ত আর উচ্চবিত্তদের দল হয়ে উঠতে পেরেছে।

কমিউনিস্টদের পতনের আরেকটি বড় কারণ হিসেবে দেখা হচ্ছে ভাঙনকে। ১৯৬৪ সালে সিপিআই ভেঙে তৈরি হয় সিপিআইএম। এরপর ১৯৬৯ এ সিপিআইএম ভেঙে তৈরি হয় সিপিআই-এমএল। ১৯৭২ সালের পর আবারও সিপিআই (এমএল) অনেকগুলো টুকরোয় ভেঙে আরও বেশ কয়েকটি দল তৈরি হয়। ভাঙনের এই পরম্পরার ধরেই সিপিআই(এমএল) থেকে তৈরি হয় সিপিআই -পিপিলস ওয়ার গ্রুপ। এখানেই শেষ নয়। ২০০৪ এ সিপিআই পিপলস ওয়ার গ্রুপ আর ভারতের মাওবাদী কমিউনিস্ট সেন্টার মিলে তৈরি হয় ভারতের কমিউনিস্ট পার্টি (মাওবাদী) বা সিপিআই (মাওবাদী)। এতবার টুকরো টুকরো হওয়ার পর বামদের অস্তিত্বটুকু যে টিকে আছে সেটাই এক বিস্ময়।

বামদের নিয়ে যারা এখনো আশাবাদী তারা বলছেন, বামপন্থিরা বারবার যেমন টুকরো হতে পারে। তেমনি তারা একত্রিতও হতে পারে। তাই এবারের নির্বাচনে তারা কয়টি আসন পেল তা মুখ্য বিষয় নয়। বরং নতুন সরকারের ত্রুটি-বিচ্যুতিগুলো নিয়ে তারা কতটা সোচ্চার হবে তার ওপরই নির্ভর করছে তাদের টিকে থাকা কিংবা মিলিয়ে যাওয়া।

বাংলা ইনসাইডার/এএইচসি



প্রধান সম্পাদকঃ সৈয়দ বোরহান কবীর
ক্রিয়েটিভ মিডিয়া লিমিটেডের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান

বার্তা এবং বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ২/৩ , ব্লক - ডি , লালমাটিয়া , ঢাকা -১২০৭
নিবন্ধিত ঠিকানাঃ বাড়ি# ৪৩ (লেভেল-৫) , রোড#১৬ নতুন (পুরাতন ২৭) , ধানমন্ডি , ঢাকা- ১২০৯
ফোনঃ +৮৮-০২৯১২৩৬৭৭