ইনসাইড আর্টিকেল

আমেরিকা আবিষ্কারকের মৃত্যু হয়েছিল জীর্ণশীর্ণ এক কুটিরে!

নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রকাশ: 20/05/2019


Thumbnail

১৯৩৭ সাল থেকে ১২ অক্টোবর আমেরিকায় সরকারিভাবে ‘কলম্বাস দিবস’ পালিত হচ্ছে। এ দিন সরকারি আমেরিকায় ছুটি। এ দিবসটি পালন শুরু হয় ১৮৬৯ সালে ইতালিয় বংশোদ্ভূত আমেরিকানদের উদ্যোগে সানফ্র্যান্সিস্কো নগরে।

কিন্তু ধীরে ধীরে আমেরিকানরা কলম্বাসের এই কৃতিত্বকে অস্বীকার করা শুরু করেছে। বর্তমানে এই ১২অক্টোবর-কলম্বাস দিবস, রূপ নিচ্ছে আদিবাসী দিবস হিশেবে। আমেরিকান স্কুল শিক্ষার্থীরা পর্যন্ত কলম্বাসকে আমেরিকার আবিষ্কারক হিসেবে মানতে নারাজ। তাদের মতে আমেরিকায় যদি আগেই জনবসতি থেকে থাকে তাহলে কলম্বাস কী করে আবিষ্কারক হয়। 

এছাড়াও কলম্বাসের বিরুদ্ধে রয়েছে আমেরিকান আদিবাসীদের উপর চরম অত্যাচার-নির্যাতনের অভিযোগ। তার সাথে সমুদ্র-অভিযানে যাওয়া ব্যক্তিবর্গের লিখিত বিভিন্ন বই, বিভিন্ন নথি বর্তমান আমেরিকাকে এসব যুক্তির সাথে পরিচয় ঘটিয়ে দিচ্ছে।

কলম্বাস ইতালির জেনোয়া শহরের একজন তন্তুবায়ের ছেলে। ১৪৫১ সালের ৩১ অক্টোবরের আগেই তার জন্ম হয় বলে ধারণা করা হয়। তার বাবার নাম ডোমেনিকো কলম্বো আর মায়ের নাম ছিল সুজানা ফনটানারোজা

সে সময় ইউরোপের লোকজন প্রচুর পরিমাণে দ্রব্য আমদানি করতেন প্রাচ্য তথা ভারত ও চীন থেকে। কাপড়, মশলা, চীনা মাটির তৈজসপত্র প্রভৃতি আরো অনেক জিনিস তাদেরকে চড়া মূল্যে কিনে নিতে হতো এই অঞ্চল থেকে। এমনকি ইউরোপে তখন প্রচলিত ছিলো এশিয়া মহাদেশের এই অঞ্চলে মানে ভারতের দিকটায় সোনা-দানা-মণি-মুক্তা রাস্তায় পড়ে থাকে যা ইন্ডিয়ানদের কাছে মূল্যহীন। কেননা তাদের অভাব নেই।

এই সোনাদানার লোভেই কলম্বাসের প্রথম সমুদ্রযাত্রায় ভারতে পৌঁছানোর পরিকল্পনা মাথায় আসে। কিন্তু সে গরীব এবং নিজেই শ্বশুরবাড়িতে স্ত্রীর সঙ্গে বসবাস করেন। তাই তার পরিকল্পনা সফল করার জন্য তিনি বিভিন্ন রাজ দরবারে নিজের পরিকল্পনার কথা জানান এবং সাহায্য চান। তিনি সম্রাটদেরকে লোভ দেখান যে তিনি প্রচুর সোনাদানা নিয়ে আসবেন।

শুরুতে কেউ তাকে বিশ্বাস করলোনা, কিন্তু পরে স্পেনের রাণী ইসাবেলা তার কথা বিশ্বাস করেন এবং সম্রাটকে বোঝান যে, নতুন দেশ আবিষ্কারের সাথে সাথে বহু মানুষকে খ্রিষ্টানধর্মে দীক্ষিত করার পুণ্য অর্জন করা যাবে। এই সুবিধার কথা বললে সম্রাট ফার্দিনান্দ কলম্বাসের প্রস্তাবে রাজী হন।

শুরু হয় কলম্বাসের সমুদ্রযাত্রা। ১৪৯২ সালের ৩ অগাস্ট কলম্বাস যাত্রা শুরু করেন।

দীর্ঘ সমুদ্রযাত্রা শেষে তার নিয়ে যাওয়া তিনটি জাহাজ- সান্তা মারিয়া, পিন্টা ও নিনার মধ্যে পিন্টার নাবিক প্রথম সমুদ্রের মধ্যে আলো দেখতে পায় এবং অন্য জাহাজকে জানায়। কিন্তু এই অভিযান শেষে স্পেনে ফিরে যেয়ে কলম্বাস দাবি করেন সে-ই প্রথম আলো দেখেছে এবং দ্বীপের আবিষ্কার করেছে। তাই সে-ই পুরষ্কার পায় স্পেনের সম্রাটের কাছ থেকে।

এরপর আরো চারবার সমুদ্র যাত্রার মাধ্যমে কলম্বাস বিভিন্ন দ্বীপ আবিষ্কার করেন। কিন্তু তিনি ও তার সঙ্গীরা মনে করেন তারা কোনো ভারতীয় দ্বীপে এসে পৌঁছেছেন। তারা হন্যে হয়ে সোনাদানা মূল্যবান বস্তু খুঁজতে থাকেন। এমনকি সেখানকার আদিবাসীদেরকেও সোনাদানা খোঁজার কাজে বাধ্য করেন। তাদের এই ইন্ডিয়ান দ্বীপ খুঁজে পাওয়ার ভ্রান্ত ধারণা থেকেই এখনো আমেরিকান আদিবাসীদেরকে রেড ইন্ডিয়ান বলে ডাকা হয়।

সোনাদানা খুঁজে না পেয়ে কলম্বাস সেখানকার আদিবাসীদেরকে স্পেনে দাস হিসেবে নিয়ে আসেন। ধারণা করা হয় তিনিই ইউরোপে দাস প্রথার চালু করেন। কলম্বাসের বিরুদ্ধে আরো অভিযোগ আছে যে তিনি এসব দ্বীপগুলোতে বসবাসরত আদিবাসীদের নারী-শিশুদের উপর অত্যাচার নির্যাতন করেছেন এবং পুরুষদেরকে দাস করেছেন। কলম্বাস তার সাথে থাকা স্পেনিশ সহযোগীদেরকে পুরস্কারস্বরূপ আদিবাসী নারীদেরকে উপহার দিতেন বলেও জানা যায়।

কিন্তু ধীরে ধীরে তার অত্যাচার নির্যাতনের নির্মমতায় কলম্বাসের সহযোগীরাও ক্ষুদ্ধ হয়ে উঠে। সম্রাটের কাছে তার বিরুদ্ধে অভিযোগ দেয় তারা যে, কলম্বাস স্বাধীন রাজ্য গড়ে তোলার চেষ্টা করছে। এই অভিযোগ শুনে রাজা ফার্দিনান্দ, ফ্রান্সিসক্যে দ্য বোবদিলা নামে একজন রাজকর্মচারীকে সৈন্য সামন্ত দিয়ে পাঠালেন কলম্বাসের বিরুদ্ধে তদন্ত করার জন্য। ফ্রান্সিস্ক্যে কয়েকেদিন ধরে অনুসন্ধান করলো কলম্বাসের আবিষ্কৃত দ্বীপে। কিন্তু রাজ্য স্থাপনের কোন অভিযোগ সত্য প্রমাণিত হলো না। তবে কলম্বাসের বিরুদ্ধে নির্বুদ্ধিতার অভিযোগ আনা হয় ফ্রান্সিস্ক্যের মাধ্যমে। কারণ তারা ততোদিনে জেনে যায় কলম্বাস কোন সম্পদশালী দেশ আবিষ্কার করার বদলে সম্পদহীন দেশ আবিষ্কার করেছে। যার জন্য সম্রাটের লাভ হওয়ার বদলে বিরাট পরিমাণ অর্থ অপচয় হয়েছে।

এই অভিযোগে কলম্বাসের পুত্র, ভাই ও কলম্বাসকে স্পেনে ফিরিয়ে এনে বন্দি করা হয়। কিন্তু এতো সহজে ছাড়ার পাত্র নয় কলম্বাস। সে নির্জন বন্দিশালায় বসে রাণী ইসাবেলাকে চিঠি লেখেন। সেই চিঠি পড়ে রাণীর মনে দয়া হয়, রাণী তার জন্য সুপারিশ করেন। মুক্ত হন কলম্বাস।

তখন তার বয়স প্রায় পঞ্চাশ। শরীরে তেমন জোর নেই কিন্তু মনের অদম্য ইচ্ছাশক্তি তাকে আবার প্রণোদনা দেয়। তাই শুনে চতুর্থ বারের জন্য সমুদ্রে যাত্রার আবেদন করলেন কলম্বাস পঞ্চাশোর্ধ বয়সে। রাজাও মেনে নিলেন। এভাবে কলম্বাস চারচারবার সমুদ্র অভিযানের মাধ্যমে আমেরিকা মহাদেশ আবিষ্কার করেছেন বলে ইতালিয়রা বিশ্বাস করেন। কিন্তু বর্তমান আমেরিকানরা আর তা বিশ্বাস করছেন না। তারা বরং কলম্বাসকে তাদের ইতিহাস ঐতিহ্য এবং সংস্কৃতির হন্তারক হিসেবে বিবেচনা করছেন বর্তমানে।

এই বিতর্কিত আমেরিকা আবিষ্কারক কলম্বাস ১৫০৬ সালের ২০মে ভ্যাসাডোলিড শহরে মৃত্যুবরণ করেন। মৃত্যুর সময় তিনি খুব বেশি ভালো অবস্থায় ছিলেন না। জীর্ণশীর্ণ এক কুটিরে তার মৃত্যু হয়।

 



প্রধান সম্পাদকঃ সৈয়দ বোরহান কবীর
ক্রিয়েটিভ মিডিয়া লিমিটেডের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান

বার্তা এবং বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ২/৩ , ব্লক - ডি , লালমাটিয়া , ঢাকা -১২০৭
নিবন্ধিত ঠিকানাঃ বাড়ি# ৪৩ (লেভেল-৫) , রোড#১৬ নতুন (পুরাতন ২৭) , ধানমন্ডি , ঢাকা- ১২০৯
ফোনঃ +৮৮-০২৯১২৩৬৭৭