ইনসাইড আর্টিকেল

বাংলা সাহিত্যের “ভোরের পাখি” ডেকেছিল আজ……

নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রকাশ: 21/05/2019


Thumbnail

“সে প্রত্যুষে অধিক লোক জাগে নাই এবং সাহিত্যকুঞ্জে বিচিত্র কলগীত কূজিত হইয়া উঠে নাই। সেই উষালোকে কেবল একটি ভোরের পাখি সুমিষ্ট সুন্দর সুরে গান ধরিয়াছিল। সে সুর তাহার নিজের”-  রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর।

বিহারীলাল চক্রবর্তীকে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের গুরু বলে মানা হয়, রবীন্দ্রনাথ নিজেই সেটা স্বীকার করে গেছেন নানান জায়গায়। তাছাড়াও ঠাকুর পরিবারের সঙ্গে এই কবির ছিলো বিশেষ সম্পর্ক। রবীন্দ্রনাথের অত্যন্ত প্রিয়ভাজন ঠাকুর পরিবারের নতুন বৌদি কাদম্বরী দেবীর প্রিয় কবি ছিলেন বিহারীলাল। এছাড়া জোতিরিন্দ্রনাথ ঠাকুরের সঙ্গেও বিহারীলালের সম্পর্ক বেশ ভালোই ছিলো। অনেকেরই ধারণা পারিবারিক সম্পর্কের কারণেই রবীন্দ্রনাথ বিহারীলাল দুর্বল কবি হওয়া সত্ত্বেও তাকে বেশি গুরুত্ব দিয়েছেন। আবার কেউ কেউ বলে, বিহারীলালের চেয়ে ঈশ্বরগুপ্তের অনেক বেশি অবদান থাকার পরেও রবীন্দ্রনাথের এই আত্মীয়কে বাংলা গীতিকবিতার প্রথম কবি বলা হয় কেবল রবীন্দ্রনাথের এই ভোরের পাখি উপাধির কারণেই।

রবীন্দ্রনাথ বিহারীলালে উদ্বেলিত হয়েছিলেন তার লেখালেখির একটা পর্যায়ে। তখনই তিনি বিহারীলালকে তার গুরু হিশেবে স্বীকার কএরন এবং তাকে ভোরের পাখি উপাধি দেন। বিহারীলাল চক্রবর্তীকে প্রকৃতই ভালোবাসতেন তিনি। এই ভালোবাসা থেকেই তিনি পরে বিহারীলালের ছেলে শরৎ এর সঙ্গে তাঁর বড় মেয়ে মাধুরীলতার বিয়ে দেন। কিন্তু সেই বিয়ের পর রবীন্দ্রনাথ যে জামাইয়ের ব্যাপারে খুব আরামে ছিলেন তা নয়। বরং অনেক বেশি অশ্রদ্ধা তিনি পেয়েছেন বিহারীলালের এই ছেলের কাছ থেকে। কিন্তু এটা তো একজন কবির কবিতার বিচার হতে পারেনা। কাব্যগুণেই কবির বিচার।

আধুনিক বাংলা কবিতার একেবারে শুরুর মুহূর্তে বাংলা কবিতায় বিহারীলালের আগমন। ১৮৩৫ সালের ২১ মে কলকাতায় তিনি জন্মগ্রহণ করেন। আজ তার জন্মদিন।

খুব বেশিদূর প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা না থাকলেও তিনি নিজ উদ্যোগেই শিখেছিলেন ইংরেজি ও সংস্কৃতি প্রভৃতি ভাষা। খুব ছোট বয়সে তিনি কাব্যচর্চা শুরু করেন এবং তার কাব্যে আপন মনের নিগুঢ়তা বেশি প্রকাশিত দেখা যায়।

কাব্যে একেবারেই নিজস্ব মনস্বিতা প্রকাশ এর আগে কোনো কবির কাব্যে খুব বেশি দেখা যায়নি, যেখানে বিহারীলালই প্রথম। কিন্তু ততোদিনে ইংরেজি সাহিত্যে কবিতার এই নির্মাণভঙ্গি খুব প্রচলিত ছিলো। যেকারণে বিহারীলালের কবিতায় ইংরেজি কবিতার অনেক প্রভাব লক্ষ্য করা যায়। তাছাড়া তার কবিতায় রূপ মানে ফর্ম বা আঙ্গিকের তুলনায় ভাবের বৈচিত্র বেশি। প্রকৃতি তার কবিতায় এসেছে অনেকটা অনবদ্য ভূমিকায়। এছাড়াও  রোম্যান্টিকতা, অনুভূতির সূক্ষ্মতা, গীতিময় ভাষার ব্যবহার এবং  তৎসম ও তদ্ভব শব্দের নিরন্তর ব্যবহারের কারণে তার কবিতা হয়ে উঠেছে কোমলতর।

এছাড়াও তিনি তার কাব্যে প্রকাশভঙ্গিতে একধরণের অভিনবত্ব দাঁড় করিয়েছেন যা তখন পর্যন্ত অন্য আর কোনো কবির কবিতায় দেখা যায়নি। আবার কবিতায় ছন্দ-অলঙ্কার ব্যবহারেও তাকে অভূতপূর্বই বলা যায়। তার রচনার মধ্যে সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য হলো- সারদামঙ্গল (১৮৭৯) ও বঙ্গসুন্দরী (১৮৭০)।

তার অন্যান্য রচনার মধ্যে রয়েছে- স্বপ্নদর্শন (১৮৫৮), সঙ্গীতশতক (১৮৬২) বন্ধুবিয়োগ (১৮৭০), প্রেমপ্রবাহিণী (১৮৭০), নিসর্গসন্দর্শন (১৮৭০), নিসর্গসঙ্গীত (১৮৮১), মায়াদেবী (১৮৮২), দেবরাণী (১৮৮২), বাউলবিংশতি (১৮৮৭), সাধের আসন (১৮৮৮-৮৯) এবং ধূমকেতু (১৮৯৯)ইত্যাদি।

এ তো গেলো তার কাব্যচর্চার ইতিহাস সংক্ষেপ, এছাড়াও তিনি আরেকটি কাজ খুব ভাল করতেন সেটা হল, পত্রিকা সম্পাদনা। বেশ কয়েকটি পত্রিকা তিনি সম্পাদনা করেছেন সেগুলো হলো: পূর্ণিমা, সাহিত্য-সংক্রান্তি, অবোধবন্ধু প্রভৃতি।

রবীন্দ্রনাথের এই ভোরের পাখি, বাংলা সাহিত্যের প্রথম গীতিকবি- কবি বিহারীলাল চক্রবর্তী ১৮৯৪ সালের ২৪ মে মৃত্যুবরণ করেন।

 

বাংলা ইনসাইডার

 



প্রধান সম্পাদকঃ সৈয়দ বোরহান কবীর
ক্রিয়েটিভ মিডিয়া লিমিটেডের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান

বার্তা এবং বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ২/৩ , ব্লক - ডি , লালমাটিয়া , ঢাকা -১২০৭
নিবন্ধিত ঠিকানাঃ বাড়ি# ৪৩ (লেভেল-৫) , রোড#১৬ নতুন (পুরাতন ২৭) , ধানমন্ডি , ঢাকা- ১২০৯
ফোনঃ +৮৮-০২৯১২৩৬৭৭