লিভিং ইনসাইড

ডিভোর্সের আগে নিজেকে কিছু প্রশ্ন

নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রকাশ: 22/05/2019


Thumbnail

নাহ, সংসারটা টিকিয়ে রাখাই কঠিন হয়ে যাচ্ছে। সঙ্গীর সঙ্গে কিছুতেই মানিয়ে চলা যাচ্ছে না, সম্পর্ক দিন দিন তিক্ত হচ্ছেই। শান্তিতে যে সঙ্গীর সঙ্গে দুটো কথা শেয়ার করবেন তাও আপনি পারছেন না। সন্তান, পরিবার আর সমাজের জন্য বিচ্ছেদের সিদ্ধান্তও নিয়ে দোটানায় পড়েছেন আপনি। কিন্তু একসময় বিচ্ছেদের ব্যাপারে আপনি অটল হয়ে গেলেন। এই যে যত্নে গড়া সম্পর্কটা, সেটা খুটিনাটি সমস্যার কারণে তাকে বিসর্জন দিয়ে দেবেন- তার আগে কিছু ভেবে নেওয়া, নিজেকে কিছু প্রশ্ন করে নিলেই কিন্তু সমস্যার সমাধানও হয়ে যেতে পারে। প্রশ্নগুলো এমন হতে পারে-

এখনো ভালোবাসা লুকিয়ে আছে কিনা দেখুন

যাকে ছেড়ে দেবেন, তাকে নিয়েই স্বপ্ন বুনেছেন এতদিন। যাকে দেখলে অতীতের সব গ্লানি, যন্ত্রণা ঘুচতো, বেঁচে থাকার জীবনীশক্তি পেতেন সেই কিনা এখন চোখের বালি হয়ে গেছে। তার সঙ্গে থাকতে রাজি নন আপনি। কিন্তু আগে নিশ্চিত তো, তাকে আর ভালোবাসেন না? ডিভোর্স কিন্তু দাম্পত্য খুনসুটি নয় যে, যখন আপনি আবার বুঝতে পারবেন ওই মানুষটাকে ছাড়া আপনার চলছে না, তখন সবটা আবার আগের মতো হয়ে যাবে। তাই এত বড় সিদ্ধান্ত নেওয়ার আগে নিশ্চিত হন যে মানুষটার জন্য আপনার আর বিন্দুমাত্র মায়া বেঁচে আছে কি না। বিচ্ছেদ হয়ে গেলে কিন্তু লুকানো ভালোবাসা কষ্ট দেবে, পরের জীবনে সুখ খুঁজে পাবেন না।

সন্তানের কথা ভেবে নিন

ডিভোর্সের পর সব গুছিয়ে নিলেন যে যার মতো, কিন্তু আপনাদের সন্তান? তাকে ভাগ করবেন কীভাবে? অধিকারবোধের জায়গা থেকে সন্তানকে নিয়ে টানাটানিও শুরু হয়ে। এর মাশুল দিতে হয় সন্তানকেই। ডিভোর্সের সিদ্ধান্ত নিয়েছেন ভালো কথা, কিন্তু ডিভোর্সপরবর্তী সন্তানের স্বাভাবিক জীবন নিশ্চিত করার নিশ্চয়তা নিশ্চয়ই দিতে পারবেন না। বাবা-মা আলাদা হলে সন্তান যে ধাক্কা খাবে, সেটা সামাল দিয়ে স্বাভাবিক জীবনযাপন সম্ভব? ডিভোর্স পরবর্তী কোনো সম্পর্ককে সন্তান মেনে নিতে পারবে? মানসিক বিকাশ ঘটবে? এগুলো ভেবে তাড়াহুড়ো করে সিদ্ধান্ত নেওয়ার আগে আরেকবার ভাবুন ঠাণ্ডা মাথায়।

ডিভোর্সের যুক্তিপূর্ণ কারণটি কি?

বিবাহিত জীবনে মান-অভিমান খুব সাধারণ ইস্যু। স্বামী-স্ত্রী একসঙ্গে থাকলে মতবিরোধ, মন কষাকষি বা মনোমালিন্য হবেই। বিয়ে হলো দুটি সম্পূর্ণ আলাদা মানসিকতার মানুষ একই ছাদের নিচে বসবাস, সংগ্রাম করা বেঁচে থাকার জন্য। সেখানে সামান্য কিছু নিয়েও মতের অমিল নিয়ে ঝামেলা হবেই, সেটা সব সম্পর্কেই হয়। কিন্তু এই সূত্রেই ডিভোর্স করতে হবে, তাহলে ভুল করবেন। ডিভোর্সের সিদ্ধান্ত নেওয়ার আগে কেন ডিভোর্স চান সেটার যুক্তিপূর্ণ কারণ খুঁজে বের করুন। সামান্য কারণে বার বার ডিভোর্স শব্দটা টেনে আনলে একদিন সামান্য কারনেই এটা সত্যি হয়ে যাবে।

সিদ্ধান্তটা আবেগ নাকি বাস্তবের

আপনি ডিভোর্সের জন্য প্রস্তুত, অর্থাৎ আপনি আবেগের বশে কোনো সিদ্ধান্ত নেননি, ডিভোর্স আপনার সম্পূর্ণ বাস্তবমুখী সিদ্ধান্ত। কিন্তু ভাবুন এর মধ্যে কোনো আবেগ আছে কিনা। আবেগ আপনাকে নিয়ন্ত্রণ করার আগে আপনি আবেগের লাগাম টেনে ধরুন। একবার ডিভোর্স হয়ে গেলে জীবনটা পাল্টে যাবে, আশেপাশে সব বদলে যাবে। কিন্তু বিচ্ছেদ হয়ে গেলে তো সম্পর্কটা থাকছে না। সেসময় আপনার আশেপাশের লোকগুলোও যদি পাশে না থাকে তখন আর পাশে কেউ থাকবে না। তাই আবেগের বশে কিছু না করে ভুল সিদ্ধান্তকে এড়িয়ে চলতে হবে।

ডিভোর্স পরবর্তী পরিস্থিতি সামলাতে পারবেন কী?

আমাদের সামাজিক প্রেক্ষাপট বিচ্ছেদকে এখনো স্বাভাবিক চোখে দেখে না। আপনি ডিভোর্সি হলেই আপনার দিকে বাঁকাচোখে তাকাবে, বাঁকা কথা বলবে। পরিবার থেকে কর্মস্থল পর্যন্ত সব জায়গায় আপনাকে নিয়ে গুঞ্জন, গল্প আর সমালোচনা চলবেই। এগুলো মেনে নেওয়ার মতো মানসিকতা আপনার আছে কিনা ভাবুন। এর মাঝখানে যুদ্ধ করে জীবন চালাতে পারবেন তো? যদি মন থেকে দৃঢ় আত্মবিশ্বাস পান যে লোকের গুঞ্জন আপনার নতুন জীবনে কোনো প্রতিবন্ধকতা আনবে না, তবে সিদ্ধান্ত নেবেন। আর মনে ভয় থাকলে সংসার নিয়ে নতুন করে ভাবুন।

ডিভোর্সের পর আপনার করণীয় কী, ভাবুন

পুরনো সম্পর্কের টানাপোড়েন থেকে বেরিয়ে ডিভোর্স পরবর্তী জীবনটা সাজাবেন কীভাবে সেটা একবার ভাবুন। এই সমস্ত দায়দায়িত্ব কিন্তু আপনাকেই নিতে হবে।  আপনার বৈবাহিক জীবনের ইতির সিদ্ধান্তের সময়েই ভেবে ফেলুন বিবাহবিচ্ছেদ পরবর্তী করণীয় কী হবে। যা আছে কপালে তা-ই হবে, এই চিন্তা মাথা থেকে ঝেড়ে ফেলুন সবার আগে, মনে রাখবেন আপনার জীবন আপনাকেই গুছিয়ে নিতে হবে। আশেপাশে কতো কথাই তো হবে! আপনি যদি একটা গোছানো পরিকল্পনা করে ডিভোর্স পরবর্তী জীবনটা নিয়ে অগ্রসর হন, তাহলে আপনার সুন্দর ভবিষ্যৎ নিশ্চিত।

কিন্তু ভালোবাসা দিয়ে বুনে যে সম্পর্ক শুরু করেছিলেন, সংসারের ঘানি টেনেছিলেন একসঙ্গে- তাকে একেবারে দূর করে দেওয়ার আগে অনেকবার করে ভাবুন। একটি সম্পর্ক যখন ডিভোর্সের পর্যায়ে এসে দাঁড়ায়, তখন সে সম্পর্কে ঘৃণা, রাগ, ক্রোধ আর অন্ধ ইগো এত বেশি পরিমাণে বেড়ে যায় যে, মানুষ না চাইলেও এই সময়টায় অনেক ভুল কাজ করে ফেলে। যার ফলে ডিভোর্স পরবর্তী জীবন বিপর্যস্ত হয়ে পড়ে। তাই তাড়াহুড়ো করে অন্ধ আবেগ বা ইগোকে প্রশ্রয় না দিয়ে বাস্তবতা আর পারিপার্শ্বিক সবকিছু মিলিয়ে সিদ্ধান্ত নিন।

বাংলা ইনসাইডার/এসএইচ



প্রধান সম্পাদকঃ সৈয়দ বোরহান কবীর
ক্রিয়েটিভ মিডিয়া লিমিটেডের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান

বার্তা এবং বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ২/৩ , ব্লক - ডি , লালমাটিয়া , ঢাকা -১২০৭
নিবন্ধিত ঠিকানাঃ বাড়ি# ৪৩ (লেভেল-৫) , রোড#১৬ নতুন (পুরাতন ২৭) , ধানমন্ডি , ঢাকা- ১২০৯
ফোনঃ +৮৮-০২৯১২৩৬৭৭