কালার ইনসাইড

‘স্পর্শিয়াকে চিনি না, বুবলীর তো শুরু’

নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রকাশ: 22/05/2019


Thumbnail

আসছে ঈদে মুক্তি পাচ্ছে চিত্রনায়িকা ববি অভিনীত ছবি ‘নোলক’। সাকিব সনেটের পরিচালনায় এতে তার সঙ্গে জুটি বেঁধেছেন ঢালিউড কিং শাকিব খান। এরই মধ্যে শুরু হয়েছে ছবির প্রচারণা। ছবি ও সমসাময়িক বিষয় নিয়ে কথা বলেছেন চিত্রনায়িকা ববি…

‘নোলক’র প্রচারণায় শাকিব নেই। কিভাবে দেখছেন ব্যাপারটা?

শাকিব কিন্তু প্রচারণা নিয়ে খুব একটা চিন্তিতও নয়। তার সিনেমায় সে প্রচারণা করে না বললেই চলে। যেটা বাইরের সুপারস্টাররাও করে। শাকিবের বিশ্বাস তার দর্শকশ্রেনী আছেন, তারা শাকিবের সিনেমা দেখবেই। শাকিবের হোম প্রডাকশন থেকে একটা সিনেমা রিলিজ হচ্ছে। সেটার প্রতি টানটা তো একটু বেশি থাকবেই। তাছাড়া শাকিব কিন্তু কোন জায়গায় বলেনি যে এই ছবিটা দেখবে ওইটা দেখবে না। শাকিব নিজেও এই সিনেমাটি নিয়ে অনেক আশাবাদি। আরেকটি কথা এখনি এই ছবিটা রিলিজ দেওয়া কেন? আমাদের দেশের সবচেয়ে বড় উৎসব ঈদ। আর এই সিনেমাটি এমনই বাজেটের সিনেমা যেটা ঈদ ছাড়া রিলিজ দেওয়া ঠিক হবে না বলেই বিবেচনা করেছি প্রযোজনা প্রতিষ্ঠানটি। ঈদের জন্য এই সিনেমাটি একদম পারফেক্ট একটা সময়। আর দুরকম শাকিবকেই মানুষ দেখবে। আমিও বলছি না এটা দেখবেন ওটা দেখবেন না।  দর্শক বিবেচনা করবে কোন ছবিটি দেখবে। আর শাকিবের ছবি কোন ঈদে একটি আসছে, এটা কিন্তু খুব কমই হয়েছে। চারটি পাঁচটি সিনেমাও আসছে।

নোলক নিয়ে সবচেয়ে যে আলোচিত বিষয় ছিলো পরিচালক রাশেদ রাহা ও পরিচালক- প্রযোজক সাকিব সনেটের দ্বন্দ্ব। সেখানে আপনি শুরু থেকেই সাকিব সনেটের পক্ষে কথা বলতে দেখা গেছে। তার কারণ কী?

আমি কারো পক্ষে না। আমি নোলকের পক্ষে। নোলক এমন একটি সিনেমা, আমি কিন্তু ডিরেক্টর আর্টিস্ট। আমি ডিরেক্টরকে সবচেয়ে বেশি বুঝতে চাই। ডিরেক্টর আমার কাছে অনেক বড় একটি বিষয়। কিন্তু তার ডিরেক্টর হতে হবে। তার সেই যোগ্যতা থাকতে হবে। রাশেদ রাহার মতো ডিরেক্টর যদি চলচ্চিত্রে আসে, এমনিতেও অবস্থা খুব ভালো নয়। তাহলে আমরা ভবিষ্যত ঘোর অন্ধকার হয়ে যাচ্ছে বলবো। তাদের যদি আমরা ডিরেক্টর আখ্যা দেই। তাহলে চলচ্চিত্র ধ্বংস ছাড়া আর কোন উপায় নেই। নোলক প্রথম থেকে যে ডিরেকশন দিয়েছে। নোলককে যে বাচিয়ে রেখেছে আমি তারই পক্ষে। নোলককে যে মুক্তি দিতে সামর্থ্য হয়েছে এত ঝড় ঝঞ্জাটের পর। আমি তারই পক্ষে। রাশেদ রাহার কোন কিছু নিয়েই লিগ্যাল কোন ডকুমেন্ট নেই। তারপরও সে ভুলভাল অনেক কাগজপত্র দিয়ে হ্যারাসমেন্ট করার চেষ্টা করেছে নোলককে। আর আমি একা নই। তারিক আনাম খান আঙ্কেল, মৌসুমী আপু,  ওমর সানী ভাইয়া, রেবেকা আন্টি, নিমা আন্টি, শহীদুল আলম সাচ্চুদের মতো আমাদের সিনিয়র গুনীজনরাও কিন্তু সাকিব সনেটের পক্ষে। কারণ তারাও সত্যিটা জানে।  একটা সিনেমা নিয়ে অন্যায়ের লিমিট ক্রস করেছে। 

সিনেমাটির স্ক্রিপ্ট কেন পছন্দ করা?

সিনেমাটির গল্প আসার সঙ্গে সঙ্গে লুফে নিয়েছিলাম। যে কেউ নিতেন বলে নায়িকার মত। এটা একটা মৌলিক গল্প। আমাদের সবারই মৌলিক গল্পের প্রতি একটা ক্ষুধা থাকে। কিন্তু সেটা তো সবসময় পাওয়া হয় না। গল্পটা এতটাই ইনোসেন্ট যে কারো ভালো লাগবে। স্ক্রিপ্টটা পড়েই মনে হয়েছিল, একটা পারফেক্ট সিনেমার প্রায় সবগুলো গুনাগুনই আছে স্ক্রিপ্টে। যদি সুন্দরভাবে প্রেজেন্ট হয়। তাহলেই সেটা একটা পারফেক্ট মুভি হবে। গল্পটা শুনেই আমার ওরকম ফিল হয়েছিল। প্রত্যেকটা আর্টিস্টের কাজ করার জায়গা আছে।

নোলক’র চরিত্রটা নিয়ে কিছু বলুন…

কাজলা। খুব চঞ্চল স্বভাবের মেয়ে। খুব কমপিটিটিভ নারীবাদী। ফ্যামিলির ব্যাপারে খুব প্রটেকটিভ। আবার খুব ছেলেমানুষ। গ্রামের প্রভাবশালী কারো মেয়ে। আবার এরকম নয় যে সে প্রভাব খাটিয়ে কিছু করে। এই কাজলা রুপে ঈদে দর্শকের সামনে আসছি। এতদিন পোস্টার আর টিজারে দর্শক প্রশংসা করেছে ছবির।

কাজলা চরিত্রটা করার জন্য কি কোন পূর্ব প্রস্তুতি ছিল?

গেট আপটাও এমন, আমার ক্যারিয়ারে যত সিনেমা করেছি এরকম ক্যারেক্টার এখন পর্যন্ত প্লে করিনি। এই ক্যারেক্টারের সঙ্গে আমার আগে যে ছবিগুলো তার কোন মিল নেই। এটা করতে গিয়ে যেটা হয়েছে কথা বলার ঢংটা একটু ডিফারেন্ট করতে হয়েছে। মেকাপ-গেটআপ অভিনয় সবকিছুই এই ছবিতে চেইঞ্জ হয়ে গেছে। তবে এখানে প্রস্তুতিরও অনেক ব্যাপার ছিল। কিন্তু তারপরও যতটকু সময় পেয়েছি সেটা কাজে লাগিয়েছি এই সিনেমার জন্য। আমাদের দেশে তো সাধারণত এমন হয় না যে অনেক সময় দেওয়া হয় প্রস্তুতির জন্য।

শুটিং চলাকালীন সময়কার কোন মজার ঘটনা মনে আছে?

কাজলা চরিত্রটা করতে গিয়ে কম বেগ পেতে হয়নি। এই সিনেমার জন্য প্রথম আমি ঘোড়ার গাড়ি চালিয়েছি। আমাদের শুটিং ছিল হায়দরাবাদে। ওই ঘোড়ার গাড়ি যখন আসছে, ওর সঙ্গে যে ট্রেইনার। ও বলছে এটা কিন্তু বাহুবলির ঘোড়া। বাহুবলির শুটিং করেছে। ওর কিন্তু একটু পরপর রেস্ট নিতে হয়। ওর বিস্কুট লাগে। এগুলা বলছিলো আমাদের। এক তো আমি আগে চালাইনি। একটা ভয় ছিল নিজের মধ্যে। যখন ঘোড়ায় উঠলাম, দেখলাম না ঠিক আছে। দৃশ্যটা যখন ধারণ হবে, আমি ঘোড়ার গাড়িতে। অনেক দূর থেকে ক্যামেরা ও ক্ররা। শর্টে তো তারা থাকতে পারবে না। ওটা একটা জঙ্গল টাইপের জায়গা। দৃশ্যটা এমন, আমি ঘোড়া চালিয়ে ক্যামেরার সামনে থেকে ক্রস করে যাবো। সেটা না করে ঘোড়াটি হঠাৎ করে জঙ্গলের ভিতর ছুটলো। একটা পর্যায়ে সে দাড়ালো। আমি মাথা নিচু না করলে বিপদ হতে পারতো। জঙ্গলের ডালপালা আমার বিপদ ঘটিয়ে দিতো। ওটা যখন দাড়ালো, সবাই তো ছুটে আসলো। ট্রেনারটা এসে বললো, ম্যাডাম বললাম না ওর বিস্কুট লাগবে, রেস্ট লাগবে। সেটা মনে হয় ঠিকমতো হয়নি। তখন বললাম যে, আসলেই তো এটা বাহুবলির ঘোড়া। তো সে পুরো সিনেমায় নবাবের মতো ব্যবহার করেছেন আমাদের সঙ্গে। আর তার মতো করে আমাদের শর্ট নিতে হয়েছে।

সিনেমায় অনেক সিনিয়র অভিনয়শিল্পী ছিলেন, তাদের সঙ্গে কাজের অভিজ্ঞতা কী?

আমাদের সিনেমায় যেটা এখন হয়। সাপোর্টিং ক্যারেক্টারগুলোতে ভালো অভিনয়শিল্পী নেওয়া হয় না। যেটা একটা সময় আমরা খুব উপভোগ করতাম। সাপোর্টিং রোলগুলোর জন্যও অনেক সময় সিনেমা ভালো লাগতো। স্কিনটা খুব ভারী লাগে সাপোর্টিং ক্যারেক্টারগুলো যদি জনপ্রিয় মুখ হয়। শুধু এক বা দুইজন দিয়ে সিনেমার মজাটা থাকে না। এই সিনেমায় পারিবারিক একটা আবহ পাবে। ড্রামা, ইমোশন, কমেডি- সবকিছুতে পূর্ন একটি সিনেমা। আমার যেটা অ্যাকশন সিনেমা। সেটা বলেই দেই যে এটা অ্যাকশন সিনেমা। সেক্ষেত্রে বলবো এটা ফুল প্যাকেজের সিনেমা। যারা বলে যে পরিবার নিয়ে সিনেমা হলে যাওয়া যায় না। এন্টারটেইনমেন্টের কন্টেন্ট নেই। তাদের জন্য এই সিনেমাটি একটা সুযোগ বলবো। সিনিয়রদের সঙ্গে কাজ করলে যেটা হয়। অনেক কিছু শেখা যায়।

শাকিব খানের সঙ্গে কেমিস্টি কেমন হলো?  

শাকিব খানের সঙ্গে ৫ নাম্বার সিনেমা। এর আগের সবগুলো সিনেমাই ছিল ব্যাবসাসফল। সেসব সিনেমা এখনো মানুষ দেখেন। উপভোগ করে তার গান। এটা যেমন আমার কাছে খুব স্পেশাল একটা সিনেমা। তেমনি শাকিবেরও খুব স্পেশাল একটি সিনেমা বলবো। শাকিব তো অনেক বেশি সময় ধরে অনেক ভালো ভালো কাজ করেছেন। আমি নিজে তার অনেক সিনেমা দেখেছি। আমি বলবো তার মধ্যে অন্যতম সেরা কাজ হবে এটি। একটা সময়ে যদি তার কাছে ক্যারিয়ারের উল্লেখযোগ্য কয়েকটি সিনেমার নাম বলতে বলা হয়। সে এই সিনেমাটির নাম বলবে বলে আমি মনে করি।

শাকিব কিভাবে দেখবে দর্শক?

এই সিনেমায় অন্য শাকিবকে দেখতে পাওয়া যাবে। সবাই বলে না যে শাকিব মানে সিনেমাতেও শাকিব একটা ব্যাপার হয়ে থাকে। কিন্তু এখানে বলবো শাকিব খানের আগে মনে হবে শাওন। খুব ইনোসেন্ট ক্যারেক্টার প্লে করেছেন।

শাকিব-ববি হিট জুটি হলেও একসঙ্গে খুব একটা দেখা যায়নি কেন?

শাকিব- অপু তো একটা লম্বা সময়ের জুটি। তারা টানা একটা লম্বা সময় কাজ করেছেন। তার মধ্যে অন্যকারো সঙ্গে শাকিবকে তেমন দেখা যায়নি। যেমন তার মধ্যে আমি মাত্র চারটা ছবি তার সঙ্গে করতে পেরেছি। যা সবগুলোই হিট ছিল। তারপরও কিছু পলিটিক্সের কারণে মাত্র এই চারটি সিনেমাই হয়েছে। এটা দেখে দর্শকরা খুব মজা পাবে। ওর আর আমার যে খুঁনসুটি। সারাক্ষন যে দুজনার একটা কম্পিটিশন চলে সেটা দর্শক খুব উপভোগ করবে। আর এটা একদম ইনোসেন্ট একটা প্রেমের গল্প তো। সেখানে আমাদের ক্যারেক্টারগুলোও তেমন ছিল। বিশেষ করে আমার আর শাকিবের। আর একটা অবাক ব্যাপার। আমাদের কেমিস্টিও যতটকুই গান বা অন্য যেভাবেই বের হয়েছে। সবগুলো থেকেই পজিটিভ ফিডব্যাক পাচ্ছি। যেটা সাধারণত হয় না।

শাকিবের সঙ্গে শুটিং অভিজ্ঞতা কেমন ছিল?

শুটিং করতে গিয়ে হয়েছে নানা অভিজ্ঞতা। শাকিবের সঙ্গে করতে হয়েছে আগুনের মধ্যে অভিনয়। একটা দৃশ্য তিনি জীবনেও ভুলবো না। ওর সঙ্গে কয়েকটা দৃশ্যই শুটিং শেষে এখনো রেশ কাটেনি আমার মধ্য থেকে। যেমন ও ঘোড়া চালিয়েছে আর আমি বসে ছিলাম। সেটা অনেক সুন্দর একটি দৃশ্য। পাহাড়ের উপর দুজনে জড়িয়ে ধরে ইমোশন একটা দৃশ্য আছে। আমার সবচেয়ে মনে পড়ছে একটা বড় পার্ট আমরা ক্লাইমেক্সের জন্য আগুনে কাছে শুট করেছিলাম। আগুনের মধ্যে রোমান্স করতে হবে। সেখানে যেমন আগুনের তাপ আছে শরীরে। ওর মধ্যে আমরা হাসছি, রোমান্স করছি। সেটা আসলে খুব কঠিনই ছিল। তবে কঠিনটা সহজ হয়ে গেছে যে কো আর্টিস্টের সঙ্গে ভালো একটা কেমিস্ট্রি আছে। ও তখন আমাকে খুব সাহস দিয়েছে।

‘নোলক’র সঙ্গে ‘পাসওয়ার্ড’ ও ‘আবার বসন্ত’ রিলিজ হচ্ছে। সেখানে নায়িকা বুবলি আর স্পর্শিয়া আছেন। তাদের সঙ্গে প্রতিযোগিতা কেমন দেখছেন?

স্পর্শিয়া কে চিনি না। কেউ একটা সিনেমা করলো অমনি নায়িকা হয়ে গেল বলে আমি মনে করি না। সেই ২০১০ সাল থেকে এই ইন্ডাস্ট্রির ভালো জন্য কাজ করে যাচ্ছি। নায়িকা হওয়াটা এত সোজা নয় বলে আমি মনে করি। আর বুবলির তো সবে শুরু। তাছাড়া আমি কাউকে প্রতিযোগি মনে করি না। আমি আমার প্রতিযোগি। আমার কাজের সঙ্গে আমার প্রতিযোগিতা হয়।

নোলক’র পর কি কি সিনেমা আসছে?

‘নোলক’র পরে ‘বেপরোয়া’, ‘বৃদ্ধাশ্রম’ মুক্তির অপেক্ষায় আছে। কলকাতার জয়দ্বীপ মুখার্জির ছবি ‘রক্তমুখী নীলা’র অল্প কিছু কাজ বাকি আছে। কলকাতায় আরেকটি ছবি হওয়ার কথা। সিনেমাজ নামে নতুন একটি প্রযোজনা প্রতিষ্ঠানের তিনটি ছবির স্ক্রিপ্ট আছে হাতে। ছবি পেলেই তো সাইন করি না। এত খারাপ সময়েও যে ছবিগুলো আছে তা নিয়ে আমি আশাবাদি।


বাংলা ইনসাইডার/এমআরএইচ



প্রধান সম্পাদকঃ সৈয়দ বোরহান কবীর
ক্রিয়েটিভ মিডিয়া লিমিটেডের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান

বার্তা এবং বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ২/৩ , ব্লক - ডি , লালমাটিয়া , ঢাকা -১২০৭
নিবন্ধিত ঠিকানাঃ বাড়ি# ৪৩ (লেভেল-৫) , রোড#১৬ নতুন (পুরাতন ২৭) , ধানমন্ডি , ঢাকা- ১২০৯
ফোনঃ +৮৮-০২৯১২৩৬৭৭