ওয়ার্ল্ড ইনসাইড

ভারতে গণতন্ত্রের পরাজয়?

নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রকাশ: 22/05/2019


Thumbnail

‘আমি ও আমার দল হেরে গেছি। কিন্তু জিতেছে ভারত। জয় হয়েছে ভারতের জনগণের।’ ২০০৪ সালে নির্বাচনে হেরে গিয়ে এমনটাই বলেছিলেন বিদায়ী প্রধানমন্ত্রী অটল বিহারি বাজপেয়ি। এটাই ছিল ভারতের গণতন্ত্রের মূল শক্তি। নির্বাচনের আগে দলগুলো হানাহানি-মারামারি কিছুই বাকি রাখতো না। কিন্তু নির্বাচন শেষ হতেই সব হানাহানি ভুলে চূড়ান্ত ফল মেনে নিত সবাই। এটাই ছিল ভারতীয় গণতন্ত্রের সৌন্দর্য। এতকাল ধরে ভারত তাদের এই গণতন্ত্র নিয়েই অহঙ্কার করে এসেছে। কিন্তু এবার লোকসভা নির্বাচনের পর তাদের সেই গর্বটাই ধুলিস্যাৎ হতে বসেছে।

অতীতে ভারতের নির্বাচনকে ঘিরে হানাহানি, মাস্তানি, কালো টাকার খেলা, ধর্মের অপব্যবহারসহ অনেককিছুই হয়েছে। কিন্তু দু’টো জিনিস তারা কখনোই করেনি। তা হলো, ঢালাওভাবে নির্বাচনে কারচুপির অভিযোগ আর নির্বাচন কমিশনের বিরুদ্ধে পক্ষপাতিত্বের অভিযোগ। কিন্তু এবার লোকসভা নির্বাচনে এই দুটোর কোনোটাই বাকি থাকলো না।

নির্বাচনের শুরু থেকেই সবগুলো বিরোধীদল ইভিএমে কারচুপির অভিযোগ তুলছে। ইভিএমের সঙ্গে ভোটের স্লিপ মিলিয়ে দেখার জন্য তারা কোর্টে পর্যন্ত গেছে। আর ভোট শেষ হতেই একযোগে ২২টি বিরোধী দল নির্বাচন কমিশনে গিয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে কারচুপির অভিযোগ জানিয়ে এসেছে। এর আগেও ইভিএমে কারচুপি হয়েছিল বলে দাবি করছে অনেকে। যদিও বিজেপি বলছে, ইভিএমে যদি তারা কারচুপিই করে থাকে তাহলে গত ডিসেম্বরে বিধানসভা নির্বাচনে তাদের ধস নেমেছিল কীভাবে? অভিযোগ পাল্টা অভিযোগ যা-ই করা হোক না কেন দিন শেষে এটা পরিষ্কার যে, ভারতের পুরো ভোটদান পদ্ধতিটাই এবার প্রশ্নবিদ্ধ হচ্ছে। যেটা আগে কখনো হয়নি।

এবারের লোকসভা নির্বাচনে ভারতের ইলেকশন কমিশনের বিরুদ্ধেও বারবার পক্ষপাতের অভিযোগ উঠেছে। যেটা এবারই প্রথম ঘটলো। ভারতের নির্বাচন কমিশনকে বলা হত স্বাধীন এবং সর্বময় ক্ষমতার অধিকারী, যারা কোনোভাবেই ক্ষমতাসীন দলের আজ্ঞাবহ ছিল না। কিন্তু এবার দেখা গেল, মোদির ভারতে ইলেকশন কমিশনের বিরুদ্ধেও ক্ষমতাসীন দলের পক্ষ নেওয়ার অভিযোগ উঠছে।  

বলা হয়, জনগণের রায় মেনে নেওয়ার সংস্কৃতির কারণেই ৭০ বছরের বেশি সময় ধরে ভারতের শাসনক্ষমতায় তৃতীয় কোনো পক্ষ হস্তক্ষেপ করতে পারেনি। তৃতীয় বিশ্বের দেশগুলোতে যেরকম, নির্বাচনে যা-ই হোক না কেন, হেরে যাওয়া দল ফল প্রত্যাখ্যান করে কারচুপির অভিযোগ তোলে। এই সুযোগে সেনাবাহিনী বা তৃতীয় কোনো পক্ষ ক্ষমতা দখল করে কিংবা পেছন থেকে কলকাঠি নাড়ে। কিন্তু রাজনৈতিক নানা টানাপোড়েন গেলেও ভারতে কখনোই এমনটা হয়নি। এবার কি ভারতের এই অহঙ্কারটাই চুরমার হতে বসেছে? লোকসভা নির্বাচনে ফলাফল কী হবে সেটার থেকে কারচুপিটাই এখন বড় ইস্যু হয়ে দাঁড়িয়েছে।

কারচুপির মূল তীরটাও মোদির দিকে। কংগ্রেস, তৃণমূলসহ অন্য বিরোধীদলগুলো বলছে যে, বিজেপি কারসাজি করে ইভিএমের ফল বদলে দিচ্ছে। ভারতে ভোটে জালিয়াতি না করার যে রীতি এবং মানুষের ভোটের অধিকারের স্বীকৃতি দেওয়ার যে সংষ্কৃতি এর সবই কি নষ্ট করে দিল এবারের নির্বাচন?

চূড়ান্ত ফলাফলে হয়তো বিজেপি জিতবে বা অন্যদল জিতবে। কিন্তু ভোটের যে বিশ্বাসযোগ্যতা ভারত ৭০ বছরেরও বেশি সময় ধরে বজায় রেখেছিল সেটাই এবার শেষ হতে বসেছে। দক্ষিণ এশিয়ার অন্য দেশগুলোতে যেকোনো নির্বাচনের পর দুটি পক্ষ দাঁড়িয়ে যায়। একটি পক্ষ ভোট সুষ্ঠু হয়েছে বলে গলা ফাটায়। অন্য পক্ষ কারচুপির অভিযোগে আন্দোলন শুরু করে। ভারতও কি সেই সংস্কৃতিতেই প্রবেশ করতে যাচ্ছে?

বাংলা ইনসাইডার/এএইচসি



প্রধান সম্পাদকঃ সৈয়দ বোরহান কবীর
ক্রিয়েটিভ মিডিয়া লিমিটেডের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান

বার্তা এবং বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ২/৩ , ব্লক - ডি , লালমাটিয়া , ঢাকা -১২০৭
নিবন্ধিত ঠিকানাঃ বাড়ি# ৪৩ (লেভেল-৫) , রোড#১৬ নতুন (পুরাতন ২৭) , ধানমন্ডি , ঢাকা- ১২০৯
ফোনঃ +৮৮-০২৯১২৩৬৭৭