ইনসাইড বাংলাদেশ

কারিগরি শিক্ষার সুযোগ সুবিধা সম্ভাবনা

নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রকাশ: 09/05/2017


Thumbnail

‘এই রেজাল্ট দিয়ে কী হবে? কোথায় ভর্তি হবি? কোন কলেজ তোকে ভর্তি করবে না। জীবনে কিচ্ছু করতে পারবি না।’

সম্প্রতি প্রকাশিত এসএসসি ও সমমান-২০১৭ এর ফলাফলের পর অনেককেই বাবা-মার কাছ থেকে এমন কথা শুনতে হয়েছে। এতো গেলো পরক্ষায় আশানুরুপ ফল না হওয়ার প্রতিক্রিয়া। জীবনের পরীক্ষাতো রয়েই গেছে। অনার্স-মাস্টার্স সম্পন্ন করেও অনেকেরই আশানুরুপ চাকরি জোটে না। আবার বেকার থাকতে হয় অনেককে। এই জীবনের গ্লানি শুধুই তারাই জানে।

এমন সব সমস্যার সমাধান হতে পারে কারিগরি শিক্ষা। পরীক্ষায় ফলাফলের চিন্তা না করে, কলেজে ভর্তি ইঁদুর দৌড় এড়িয়ে কর্মমুখী শিক্ষায় শিক্ষিত হয়ে যেমন দ্রুত পেশাজীবনে ঢোকা সম্ভব। আবার প্রচুর কর্মক্ষেত্রের সুযোগ থাকায় কারিগরি শিক্ষা সম্পন্ন করে বেকার থাকারও আশঙ্কা নেই।

হাতে কলমে বাস্তবধর্মী শিক্ষাই হলো কারিগরি শিক্ষা। তাত্ত্বিক জ্ঞান থেকে হাতে কলমে প্রশিক্ষিত জ্ঞানই বেশি সমাদৃত। তাই কারিগরি শিক্ষার গুরত্বও বেশি।

‘কারিগরি শিক্ষা নিলে বিশ্ব জুড়ে কর্ম মিলে’- কারিগরি শিক্ষা বোর্ডের প্রতিপাদ্য বিষয়ের মধ্যে এটি হল একটি। বর্তমানে দেশে ৪৯টি সরকারি পলিটেকনিক ইনস্টিটিউট আছে। এর মধ্যে পুরোনো ইনস্টিটিউটের সংখ্যা ২০, যেগুলো পুরোপুরি সরকারি। নতুন রাজস্বভুক্ত ইনস্টিটিউটের সংখ্যা পাঁচ, মনোটেকনিক ইনস্টিটিউট তিন, প্রকল্পভুক্ত ১৮ ও মহিলা পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটের সংখ্যা তিন। ২০০৪ সাল থেকে পর্যায়ক্রমে দেশের ৪৯টি পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটে প্রথম ও দ্বিতীয় পালায় পাঠদান কার্যক্রম শুরু হয়েছে।

২০০৯ সালের আগে কারিগরি শিক্ষাব্যবস্থার তেমন গুরুত্ব ছিল না। তবে জাতীয় শিক্ষানীতি ২০১০-এ বাংলাদেশের কারিগরি শিক্ষাব্যবস্থা বেশ গুরুত্ব পেয়েছে। বাংলাদেশ কারিগরি শিক্ষা বোর্ডের এক প্রতিবেদনে দেখা গেছে—ডিপ্লোমা, ভোকেশনাল ও জাতীয় দক্ষতার মান বেসিকসহ বিভিন্ন শিক্ষাক্রমে ২০০৮ সালের পর প্রায় দুই লাখ শিক্ষার্থী বেড়েছে, প্রতিষ্ঠান বেড়েছে দুই হাজারেরও বেশি। এই বৃদ্ধির কারণে কারিগরিতে মোট শিক্ষার্থীর হার প্রায় ৮ শতাংশে পৌঁছেছে। বর্তমানে সারাদেশে ডিপ্লোমা পর্যায়ে ৫১টি সরকারি প্রতিষ্ঠান ও ৩৭৪টি বেসরকারি প্রতিষ্ঠান রয়েছে। এইচএসসি ভোকেশনাল শিক্ষা প্রদান করছে ১ হাজার ৭০০ বেসরকারি প্রতিষ্ঠান ও ৬৮টি সরকারি প্রতিষ্ঠান। এসএসসি ভোকেশনালের ক্ষেত্রে ২ হাজার ৩০২টি বেসরকারি প্রতিষ্ঠান ও ১৪১টি সরকারি প্রতিষ্ঠান শিক্ষা কার্যক্রম পরিচালনা করছে।

কারিগরি ও বৃত্তিমূলক শিক্ষায় উন্নত দেশগুলো অনেক এগিয়ে গেছে। সেই তুলনায় বলা যায়, বাংলাদেশ পিছিয়ে রয়েছে বহু দিক থেকেই।

উল্লিখিত ইনস্টিটিউটগুলোতে নিজের পছন্দের বিষয়ে ডিপ্লোমা কোর্স করা যেতে পারে। তবে বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে ভর্তি হওয়ার আগে ভাল করে খোঁজ নিতে হবে। প্রাতিষ্ঠানিক নিবন্ধন, পড়াশুনার মান সম্পর্কে জানতে হবে। কারিগরি শিক্ষার সবচেয়ে বড় সুযোগ হলো, দেশ-বিদেশে বিভিন্ন খ্যাতনামা সরকারি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে উচ্চশিক্ষা গ্রহণ করা যাবে। বিএসসি ইন ইঞ্জিনিয়ারিং ডিগ্রিও পাওয়া যাবে।

এই শিক্ষার মূল লক্ষ্য দক্ষ জনশক্তি তৈরি করা। সরকারি চাকরিতে উপ-প্রকৌশলী থেকে প্রধান প্রকৌশলী পর্যন্ত। পাওয়ারহাউজ, বিদ্যুৎ বিতরণ কোম্পানি, টেক্সটাইল, সিরামিক, বিভিন্ন কলকারখানা, টেলিকমিউনিকেশন কোম্পানিতে চাকরির সুযোগ রয়েছে। শুরুতে বেতন হতে পারে ৮ থেকে ২৫ হাজার টাকা পর্যন্ত। এছাড়াও নিবন্ধনের মাধ্যমে প্রাইমারি ও হাইস্কুলে শিক্ষকতাও করা যাবে। দেশের বাইরে গিয়েও ভাল চাকরি করে ৩০ হাজার থেকে প্রায় ১ লাখ পর্যন্ত আয় করা সম্ভব। দক্ষতার উপর নির্ভর করবে বেতনের পরিসীমা।

এত সুযোগ সুবিধা থাকার পরও, কারিগরি শিক্ষায় ভর্তির হার কমেছে। বর্তমানে কারিগরি ও বৃত্তিমূলক শিক্ষায় মোট ৮ লাখ ৭২ হাজার ৬৫৮ জন শিক্ষার্থীর মধ্যে মেয়েদের সংখ্যা ২ লাখ ৮ হাজার ৮৭০। সরকারের জেন্ডার বাজেট প্রতিবেদনে (২০১৬-১৭) এ তথ্য দেওয়া হয়েছে। তবে ২০২০ সালের মধ্যে কারিগরি শিক্ষায় ২০ লাখ শিক্ষার্থী ভর্তি করতে চায় শিক্ষামন্ত্রণালয়। এ লক্ষ্যে শিক্ষার্থীদের উত্সাহিত করতে বিভিন্ন কর্মসূচি নেয়া হচ্ছে। শিক্ষকদের পর্যাপ্ত প্রশিক্ষণ দেওয়া হচ্ছে।


বাংলা ইনসাইডার/আরএস




প্রধান সম্পাদকঃ সৈয়দ বোরহান কবীর
ক্রিয়েটিভ মিডিয়া লিমিটেডের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান

বার্তা এবং বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ২/৩ , ব্লক - ডি , লালমাটিয়া , ঢাকা -১২০৭
নিবন্ধিত ঠিকানাঃ বাড়ি# ৪৩ (লেভেল-৫) , রোড#১৬ নতুন (পুরাতন ২৭) , ধানমন্ডি , ঢাকা- ১২০৯
ফোনঃ +৮৮-০২৯১২৩৬৭৭