নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: 27/05/2019
১৯৩৯সালে শুরু হয় দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ। ভারতীয়দেরকে এই যুদ্ধে অংশ নিতে বাধ্য করে ব্রিটিশ সরকার ব্রিটেনের পক্ষ নিয়ে। অনিচ্ছা সত্ত্বেও অনেক ভারতবাসী এই যুদ্ধে অংশ নেয়। ১৯৪০ সালের ৩১ অক্টোবর, শুরু হয় জোরপূর্বক এই যুদ্ধে অংশগ্রহণের বিপক্ষে আন্দোলন। এই আন্দোলনে একাত্মতা ঘোষণা করে জোরপূর্বক যুদ্ধে নেয়ার বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানিয়ে ব্যক্তিগত সত্যাগ্রহ শুরু করেন পণ্ডিত নেহরু। এর অপরাধে তাকে জেলে যেতে হয়। যদিও ১৯৪১ সালে অন্যান্য নেতাদের সঙ্গে তাঁকেও মুক্তি দেওয়া হয় জেল থেকে।
এরপর আর থেমে থাকেননি এই পণ্ডিত রাজনীতিবিদ জওহরলাল নেহরু। জেল থেকে বেরিয়েই ১৯৪২-এর ৭ আগস্ট বোম্বাইয়ের কংগ্রেস অধিবেশনে তিনি ঐতিহাসিক ভারত ছাড়ো আন্দোলনের প্রস্তাব উত্থাপন করেন। ইংরেজরা ততোদিনে অনেকটা নিশ্চিতই হয়ে গিয়েছিল যে তাদের ভারত শাসনের সময় আর সুদীর্ঘ নয়। তবুও যতোটুকু ক্ষমতা আছে তা দিয়েই এই নৈরাজ্যের শাসনব্যবস্থা টিকিয়ে রাখার চেষ্টা করেছে। এ চেষ্টার ফলস্বরূপ পরেরদিনই, অর্থাৎ ৮ আগস্ট অন্যান্য নেতাদের সঙ্গে ভারতছাড় আন্দোলনের অপরাধে গ্রেপ্তার করে আহমেদনগর দূর্গে নিয়ে যাওয়া হয় জওহরলাল নেহরুকে। তাঁর এই কারাবাসই তার জীবনের শেষ কারাবাস এবং এসময়ই তিনি তার জীবনের সবচেয়ে লম্বা সময় ধরে কারাবরণ করেছেন।
এতোক্ষণ যে পণ্ডিত নেহরুর গল্প শোনালাম, তিনি আর কেউ নন। তিনি স্বাধীন ভারতের প্রথম প্রধানমন্ত্রী এবং ভারতের স্বাধীনতা আন্দোলনের অন্যতম প্রধান নেতা! খুব সহজ ছিলোনা এই অর্জন। দেশমাতৃকাকে স্বাধীন করার জন্য সারা জীবনে তাঁকে জেলে যেতে হয়েছিল ন’বার।
জওহরলাল নেহরু ১৮৮৯ সালের ১৪ নভেম্বর এলাহাবাদে জন্মগ্রহণ করেন। জীবনের প্রাথমিক সব শাখার পাঠ চুকিয়ে পনেরো বছর বয়সে তিনি ইংল্যান্ডে যান পড়াশোনার জন্য। এ থেকেই বোঝা জায় জওহরলাল নেহরুর পরিবার ছিলো অত্যন্ত সম্ভ্রান্ত একটি পরিবার। ইংল্যান্ডে ক্যাম্ব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রকৃতি বিজ্ঞান নিয়ে পড়াশোনা শেষ করে তিনি ব্যারিস্টারি পড়া শুরু করেন।
ভারতে ফিরে আসেন ১৯১২সালে। দেশে ফিরে এসেই তিনি সরাসরি যোগ দেন রাজনীতিতে। কেননা সারাবিশ্বেই তখন ব্রিটিশ ঔপনিবেশিকতা অসহনীয় পর্যায়ে চলে গেছে। সকল ঔপনিবেশিক রাষ্ট্রই তখন ব্রিটিশদের বিরুদ্ধে ক্ষেপে উঠেছিল। এসব আন্দোলন থেকে অনুপ্রাণিত হয়েই জওহরলাল নেহরু ভারতে এসেই ভারতের স্বাধীনতা আন্দোলনে যোগ দেন।
১৯১৬ সালে অসহযোগ আদোলনের নেতা মহাত্মা গান্ধীর সঙ্গে তাঁর প্রথম দেখা হয়। গান্ধীর আদর্শ তাকে ভীষণ আন্দোলিত করে এবং লিপ্ত হয়ে পড়েন অসহযোগ আন্দোলনে। এভাবেই শুরু হয় তার স্বাধীনতা আন্দোলন সেখান থেকে দেশকে স্বাধীন না করে তিনি আর ঘরে ফেরেননি। দেশের মানুষও ভালোবেসে তাকেই বানিয়েছেন স্বাধীন ভারতের প্রথম প্রধানমন্ত্রী।
এইতো গেলো তার রাজনৈতিক ব্যক্তিত্বের গল্প। ব্যক্তি হিশেবেও জওহরলাল নেহেরু ছিলেন অত্যন্ত অসাধারণ একজন মানুষ। আর ব্যক্তিত্বের এই অসাধারণত্বই তাকে এতোটা মহান করে তুলেছে। তিনি নিজে মানুষ হিশেবে এবং রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব হিশেবে যেমন ছিলেন গবেষণাধর্মী তেমনি তাঁর কন্যা ইন্দিরা গান্ধীকেও ছোটবেলা থেকেই শিখিয়েছেন গবেষণা বা বিচার বিবেচনা! সমাজ রাষ্ট্র বিশ্ব সম্পর্কে তিনি নিজেই জানিয়েছেন তার এই কন্যাকে। বিচার করতে শিখিয়েছেন সমস্তকিছুকে। জওহরলাল নেহেরুর কন্যা ইন্দিরা প্রিয়দর্শিনী নেহেরুই পরে ভারতের বিখ্যাত প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধী হিশেবে সারাবিশ্বে পরিচিত হয়ে ওঠেন। বানলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধে ইন্দিরা গান্ধির সহযোগিতা ছিলো অনস্বীকার্য! হয়তোবা তাঁর বাবা জওহরলাল নেহরু বলেই তিনি অন্যায়ের সমর্থন করেননি শক্তিশালী ও ক্ষমতাশালী হয়েও।
এই পণ্ডিত ব্যক্তিত্ব, একজন অত্যন্ত গুণী রাজনীতিবিদ জওহরলাল নেহরু ২৭মে, ১৯৬৪ সালে তার নিজের কার্যালয়ে মৃত্যুবরণ করেন। আজ তার মৃত্যুদিন। তিনি যতোদিন বেঁচে ছিলেন ততোদিন ভারতের অন্যতম শত্রু রাষ্ট্র পাকিস্তানের সাথেও একধরণের শান্তিপূর্ণ সম্পর্ক বজায় ছিল!
বাংলা ইনসাইডার
প্রধান সম্পাদকঃ সৈয়দ বোরহান কবীর
ক্রিয়েটিভ মিডিয়া লিমিটেডের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান
বার্তা এবং বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ২/৩ , ব্লক - ডি , লালমাটিয়া , ঢাকা -১২০৭
নিবন্ধিত ঠিকানাঃ বাড়ি# ৪৩ (লেভেল-৫) , রোড#১৬ নতুন (পুরাতন ২৭) , ধানমন্ডি , ঢাকা- ১২০৯
ফোনঃ +৮৮-০২৯১২৩৬৭৭