ইনসাইড পলিটিক্স

খালেদার মুক্তির জন্য ‘নওয়াজ’ ফর্মূলা?

নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রকাশ: 31/05/2019


Thumbnail

জাপানের রাষ্ট্রীয় সফর শেষ করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এখন সৌদি আরবে। সৌদি আরবে তার ব্যস্ত কর্মসূচি রয়েছে। সেখানে তিনি ওমরাহ পালন করবেন, ওআইসি শীর্ষ সম্মেলনে যোগ দেবেন। একাধিক কূটনৈতিক সূত্র নিশ্চিত করেছে, এর ফাকে সৌদি প্রশাসন থেকে বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তি সংক্রান্ত একটি প্রস্তাব প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে দেওয়া হবে। এই প্রস্তাব নিয়ে দুই পক্ষের মধ্যে আলোচনা হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।

যদি আওয়ামী লীগ সভাপতি এবং প্রধানমন্ত্রী বার বার বলেছেন যে, খালেদা জিয়াকে আটক করা বা তার মুক্তির বিষয়টি তার হাতে নেই। এটি সম্পূর্ণ আদালতের এখতিয়ারাধীন বিষয়। খালেদা জিয়াকে তিনি আটক করেননি, আদালতের রায়েই তিনি গ্রেপ্তার হয়েছেন। আদালতে রায়ের মাধ্যমেই তার শাস্তি হয়েছে, এখানে সরকারের কিছু করার নেই।

কিন্তু সৌদি আরবের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তির ব্যাপারে গত ৩ মাস ধরেই সৌদি সরকার তৎপরতা গ্রহণ করেছে। বেগম জিয়াকে সৌদি আরবে নিয়ে গিয়ে স্থায়ীভাবে রাখার একটি প্রস্তাব ইতিমধ্যেই আওয়ামী লীগ সরকারের কাছে দেওয়া হয়েছে। ধারণা করা হচ্ছে যে, এবারেও প্রধানমন্ত্রীর সফরে এই প্রস্তাবটি নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা হতে পারে। সরকার যদি শেষপর্যন্ত রাজি হয় তাহলে খালেদা জিয়ার মুক্তির একটি পথ তৈরি হতে পারে। কূটনৈতিক মহল এই প্রস্তাবকে ‘পারভেজ মুশাররফ’ ফর্মূলা বলে মনে করছে। পাকিস্তানের রাজনীতির পট পরিবর্তনের পরে পারভেজ মুশাররফকেও সৌদি আরব নিয়ে এসেছিল এবং তাকে স্থায়ীভাবে থাকার অনুমতি দিয়েছিল এবং পাকিস্তানের সরকারের সঙ্গে সৌদি সরকারের সমঝোতার ভিত্তিতে পারভেজ মুশাররফের বিরুদ্ধে কোনো মামলা বা অন্য পদক্ষেপগুলো নেওয়া হয়নি। যদিও পরবর্তীতে পারভেজ মুশাররফ পাকিস্তানে গিয়েছিলেন এবং তিনি ঐ চুক্তি ভঙ্গ করায় তার বিরুদ্ধে মামলাপ্রক্রিয়া শুরু হয়েছিল।

বিভিন্ন সূত্র থেকে প্রাপ্ত খবরে জানা গেছে, সৌদি সরকার বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তি এবং তার চিকিৎসার জন্য সরকারের কাছে ৫ দফা সুপারিশ পেশ করতে যাচ্ছে।

এর প্রথম দফাটি হলো, বেগম খালেদা জিয়াকে প্যারোলে মুক্তি দেওয়া হবে এবং মুক্তি পেয়ে তিনি সরাসরি সৌদি আরবে আসবেন। সেখানে তিনি চিকিৎসার জন্য অবস্থান করবেন।

দ্বিতীয় দফায় বলা হচ্ছে যে, সৌদি আরব এলে তিনি কোনো রাজনৈতিক তৎপরতায় যুক্ত হবেন না, কোনো রাজনৈতিক বক্তৃতা বা বিবৃতি দেবেন না।

তৃতীয় দফায় বলা হচ্ছে যে, সৌদি আরবে আসার আগে তিনি বিএনপির চেয়ারপারসনের পদ থেকে পদত্যাগ করবেন, সমস্ত রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড থেকে তিনি অবসরের ঘোষণা দেবেন।

চতুর্থ দফায় বলা হচ্ছে, বেগম জিয়ার বিরুদ্ধে যে মামলাগুলো রয়েছে, সেগুলো স্থবির হয়ে যাবে এবং মামলার কার্যক্রম বন্ধ করা হবে। যে মামলাগুলোতে তিনি দণ্ডিত রয়েছেন সেগুলো স্থিতাবস্থায় থাকবে।

পঞ্চম দফাটি হলো বেগম খালেদা জিয়া ভবিষ্যতে বাংলাদেশে এসে রাষ্ট্র এবং সরকারবিরোধী কোনো তৎপরতায় অংশগ্রহণ করবেন না।

কিন্তু সরকারের দায়িত্বশীল সূত্রগুলো বলছে যে, সরকার বিশ্বাস করতে পারছে না যে বেগম খালেদা জিয়া এই শর্তগুলো মেনে সৌদি আরবে যাবেন। কারণ বেগম খালেদা জিয়া এর আগেও বহুবার সমঝোতা প্রস্তাবে প্রথমে সায় দিলেও তিনি নিজেই পরে সেখান থেকে সরে দাড়িয়েছিলেন। আবার শেষ পর্যন্ত যদি বেগম খালেদা জিয়া সৌদি আরবে যান, যাওয়ার পর যদি তিনি আবার রাজনৈতিক তৎপরতায় নিজেকে যুক্ত করেন বা সরকারের বিরুদ্ধে বিবৃতি দেন- তাহলে বিষয়টি সরকারের নিয়ন্ত্রণে থাকবে না। আগে পাকিস্তানের পারভেজ মুশাররফ এবং নওয়াজ শরীফের ক্ষেত্রে একই ঘটনা ঘটেছিল। কূটনৈতিক সূত্রে জানা গেছে যে, সৌদি আরবে বেগম খালেদা জিয়ার অনেকগুলো আর্থিক সম্পর্ক রয়েছে। বিভিন্ন ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানে তার বিনিয়োগও রয়েছে। এ কারণে সৌদি সরকার বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তি এবং তাকে সৌদি আরবে নিয়ে আসার ব্যাপারে উৎসাহী। তবে এই আলোচনা শেষপর্যন্ত কতদূর গড়াবে এবং এর পরিণতি কি হবে তা বোঝা যাবে প্রধানমন্ত্রীর মনোভাবের ওপর। প্রধানমন্ত্রী এ ব্যাপারে তার আগে যে অবস্থানে ছিল, সেই অবস্থানে খুব বড় একটা পরিবর্তন না করেন তাহলে খালেদা জিয়ার মুক্তির পথ বন্ধই হয়ে যাবে।

বাংলা ইনসাইডার/এসএইচ



প্রধান সম্পাদকঃ সৈয়দ বোরহান কবীর
ক্রিয়েটিভ মিডিয়া লিমিটেডের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান

বার্তা এবং বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ২/৩ , ব্লক - ডি , লালমাটিয়া , ঢাকা -১২০৭
নিবন্ধিত ঠিকানাঃ বাড়ি# ৪৩ (লেভেল-৫) , রোড#১৬ নতুন (পুরাতন ২৭) , ধানমন্ডি , ঢাকা- ১২০৯
ফোনঃ +৮৮-০২৯১২৩৬৭৭