ইনসাইড থট

এ.কে. খন্দকার ও নিমকহারামের গল্প

নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রকাশ: 03/06/2019


Thumbnail

যুক্তরাজ্যভিত্তিক সাময়িকী ইকোনমিস্ট জানাচ্ছে, অস্ট্রেলিয়ার বিজ্ঞানীরা গবেষণা করে জানতে পেরেছেন যে, কোনো জায়গায় সোনার খনি আছে কি না, থাকলেও তা কতটা বড়, তা নির্ধারণে খোঁড়াখুঁড়ির বদলে আগাম বার্তা পেতে এখন সংশ্লিষ্ট অঞ্চলের গাছের পাতা পরীক্ষাই যথেষ্ট। বিশেষত শুষ্ক অঞ্চলে এ পদ্ধতি বেশি কার্যকর। কারণ, শুষ্ক অঞ্চলের গাছগুলোকে পানি সংগ্রহের জন্য মাটির অনেক নিচ পর্যন্ত শিকড় বিস্তৃত করতে হয়। আর এই পানি সংগ্রহের সঙ্গেই তারা স্বর্ণ আহরণের কাজটি করে ফেলে। এ পদ্ধতিতে শুধু স্বর্ণই নয়, বিসমাথ, অ্যান্টিমনির মতো ধাতুর খনির জানানও পাওয়া যাবে। 

যুগের নিরীক্ষায় বাংলাদেশের মাটিতে জন্ম নেওয়া মানুষের রক্তে আবার অন্য গুণ ধরা পড়েছে। আদিকাল বাংলা ছিল সোনার বাংলা।  মোগল আমলে দুনিয়ার তাবৎ শিল্প উৎপাদনের ২৫% একাই উৎপাদন করে  গোটা দুনিয়ার ত্মধ্যে ভারত হয়ে যায় বিশ্ব অর্থনীতির মোড়ল। তখন বাংলা তথা ভারতবর্ষের উপর কুনজর পড়ে ইউরোপীয় বেনিয়াদের। পর্তুগীজ, ডাচ, ফরাসী, ড্যানিশ ও ইংরেজ মানে ব্রিটিশরা একে একে ভারতবর্ষে ব্যাবসার নামে আসে। পরে তাঁরা দখলে নেয় গোটা ভারত তথা বাংলার। বাংলা আর পাঞ্জাব ছিল কৃষির জন্য খুব উর্বর এলাকা, যা ভারতের অর্থনীতির অন্যতম ভরসা। ভারতবর্ষের দখল নীতে ১৯৭১ সালের মত তাঁরা ভারতীয়দের মধ্য থেকে বেছে বেছে বেঈমান বা নিমকহারাম তৈরিতে লিপ্ত হয়। যারা নিজের ব্যক্তিগত লাভের আশায় দেশের আর জনগনের ক্ষতি করে বিদেশী প্রভূদের লাভ করিয়ে দেয়। এই বেইমান্দের জন্য ভারতবর্ষ তথা এই বাংলাকেও প্রায় ২০০ বছরের গোলামীর শিকলে আবদ্ধ করে গটা ভারতবর্ষ তথা বাংলাকে।

১৯৪৭ সালে ভারতবর্ষ স্বাধীন হলেও এইসব বেঈমানদের বা নিমকহারামদের রক্তের নিশানা মুছতে পারে না তাই তো ১৯৭১ সালে যখন আমরা দেখি যে, টাকা আর শারীরিক কামনা বাসনার লোভে নেমকহারামরা পাকিস্তানী হানাদের খুন ধর্ষণ, অগ্নিকাণ্ডের মত মানবতা বিরোধী জঘন্য অপরাধে সহায়তা করেছে। বিজ্ঞানী Johann Gregor Mendel (১৮২২-১৮৮৪)এর ‘থিওরী অফ ইনহেরিটেন্স’ থেকে জানা যায় যে, ভালো হয়ার অব্যাহত প্রচেষ্টায় তিন জেনারেশন অতিবাহিত করা না গেলে রক্ত শুদ্ধ হয় না। সুযোগ পেলে অপরাধীর ছেলে-মেয়েরা অপরাধ করে। মোগল আমলে যারা ভারতবাসীর সাথে বেঈমানী করে বিদেশীদের এদেশে আধিপত্তের সুযোগ করে দিয়েছে, তাদের বংশধরেরাই মোটা দাগে ১৯৪৭ বা ১৯৭১ সালের অপকর্মে যুক্ত ছিল। সাথে নতুন কিছু যগ হয়েছে বটে কিন্তু ভালো হয়েছে খুব কম।                

বঙ্গবন্ধুর ডাকে ১৯৭১ সালে স্বাধীনতা যুদ্ধে অগ্রনী ভূমিকায় মূলতঃ ছিল তখনকার ছাত্র ও গ্রামীণ যুবকেরা। তাঁরা যখন আমাদের মহান মুক্তিসংগ্রামকে অনেকটাই এগিয়ে নিলেন তখন পর্যায়ক্রমে অনেকেই মুক্তি সংগ্রামে যগ দিয়েছেন, কেউ ইচ্ছায় কেউ বিদেশি প্রভূদের নির্দেশে। বিশেষকরে বামপন্থীরা অনেক পরে মস্কোর নির্দেশের পরে মুক্তি সংগ্রামে আসে বলে তাদের পার্টির দিলিলে দেখা যায়। অন্যদিকে চীনা পন্থীদের অনেকেই ছিলেন পাকিস্তানি হানাদারদের পক্ষে। চীনাপন্থী যারা যারা আমাদের মহান মুক্তিসংগ্রামে অংশ নেন তাঁরাও পরে তাদের পুরাতন নেতাদের সাথে মিশে যান। এর ফাঁকে জাতিরজনক বঙ্গবন্ধুর কাছ থেকে যত রকম সুবিধা নেওয়া যায় তা নিয়ে নেয়, মানে নুন-নিমক খেয়ে নেয়। এরাই এখন বাংলাদেশের অর্থনৈতিক সম্ভাবনাকে বিদেশীদের হাতে তুলে দিতে আবার নেমকহারামি শুরু করেছে, সেই খবর স্পষ্ট করলেন মুক্তিবাহিনীর ডেপুটি চিফ অব স্টাফ ও সাবেক মন্ত্রী অবসরপ্রাপ্ত এয়ার ভাইস মার্শাল এ কে খন্দকার (বীরউত্তম)। 

পত্রিকার খবরে জানা যায় যে, এ কে খন্দকার (বীরউত্তম) নিজের লেখা বইয়ের একটি অংশে ইতিহাস বিকৃতির অভিযোগ ওঠার পর সেই অংশটুকু প্রত্যাহার করে নিয়েছেন। গত শনিবার রাজধানীর ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটি মিলনায়তনে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এ কে খন্দকার তার লেখা ১৯৭১: ভেতরে বাইরে বইয়ের বিতর্কিত অংশটি প্রত্যাহারের ঘোষণা দেন। সেইসঙ্গে বইয়ে উল্লেখিত অসত্য তথ্যের জন্য জাতি ও বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের বিদেহি আত্মার কাছেও ক্ষমা চান তিনি।

সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য তিনি বলেন, ‘এই অংশটুকুর জন্য দেশপ্রেমিক অনেকেই কষ্ট পেয়েছেন বলে আমি বিশ্বাস করি। এই তথ্যটুকু যেভাবেই আমার বইতে আসুক না কেন, এই অসত্য তথ্যের দায়ভার আমার এবং বঙ্গবন্ধু ৭ই মাচের্র ভাষণে কখনোই `জয় পাকিস্তান` শব্দ দুটি বলেননি। আমি তাই আমার বইয়ের ৩২ নম্বর পৃষ্টার উল্লেখিত বিশেষ অংশ সম্বলিত পুরো অনুচ্ছেদটুকু প্রত্যাহার করে নিচ্ছি এবং একইসাথে আমি জাতির কাছে ও বঙ্গবন্ধুর বিদেহী আত্মার কাছে ক্ষমা চাচ্ছি’।

তিনি বক্তব্যের ইতি টেনে বলেন, আমার বয়স এখন ৯০ বছর। আমার সমগ্র জীবনে করা কোনো ভুলের মধ্যে এটিকেই আমি একটি বড় ভুল বলে মনে করি। গোধূলী বেলায় দাঁড়িয়ে পড়া সূযের্র মতো আমি আজ বিবেকের তাড়নায় দহন হয়ে বঙ্গবন্ধুর আত্মার কাছে ও জাতির কাছে ক্ষমাপ্রার্থী। আমাকে ক্ষমা করে দেবেন। আশা করি, প্রথমা প্রকাশনী আমার বইয়ের ৩২ পৃষ্ঠার বিতর্কিত অংশটুকু বাদ দিয়ে পুনঃমুদ্রণ করবেন। দেশপ্রেমিক সবার জীবনে সুখ, শান্তি ও সমৃদ্ধি কামনা করছি।

এরপর সাংবাদিকরা প্রশ্ন করতে শুরু করলে এ কে খন্দকারের অনুমতি নিয়ে তাঁর শারীরিক অসুস্থতার জন্য  তাঁর হয়ে প্রশ্নের উত্তর দেন উনার স্ত্রী ফরিদা খন্দকার। তার কাছে জানতে চাওয়া হয়, কী কারণে বইটি প্রকাশের পরপরই মিথ্যা তথ্যটি সংশোধনে সংবাদ সম্মেলন করলেন না। তখন ফরিদা খন্দকার বলেন, ‘এটা যে কিভাবে আসলো, আর আসার পরে আমরা চেষ্টা করেছিলাম সংশোধন করার। কিন্তু আমাদেরকে সংশোধন করতে দেওয়া হয় নাই।‘ প্রথমা প্রকাশনীর কর্ণধার, একদা মস্কপন্থী বাম নেতা, এর সাথেও তিনি যোগাযোগ করে তিনি সফল হতে পারেন নি। নিন্দুকেরা বলছেন এটা মোটা অংকের টাকার খেলা হয়েছে বলেই ‘স্বরচিত মুক্তিযুদ্ধের  ইতিহাস লেখার প্রকল্প’ হাতে নিয়েছিলো তাঁরা।      

৫ বছর পরে আপনাদের এই উপলব্ধিটা হলো কেন, এমন প্রশ্নের উত্তরে ফরিদা খন্দকার বলেন, ‘৫ বছর পরে না। এটা তখনই হয়েছে।’

কারা তখন সংবাদ সম্মেলন করতে দেয়নি জানতে চাইলে ফরিদা খন্দকার কিছুটা বিচলিত হয়ে ফরিদা খন্দকার নামগুলো প্রকাশের জন্য পাশে বসা এ কে খন্দকারের অনুমতি চান। এ খন্দকার বলেন, ‘বলে দাও’। এ পর্যায়ে ফরিদা খন্দকার বলেন, ‘মঈদুল হাসান মুক্তিযোদ্ধা ছিলেন। তাজউদ্দিন সাহেবের প্রেস সেক্রেটারি বা পিএস জাতীয় কিছু। মঈদুল হাসান এরপরে ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী...। ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরীকে আমি চিনতাম না, মঈদুল হাসানকে চিনতাম। এরপরে আরেকজন ওবায়েদ। আরো কে কে যেন ছিল। আমি নাম মনে করতে পারছি না। তারা কয়েকদিন ধরে আমাকে পাহারা দিয়ে রেখেছিল যেন এটা...। আমাদের বলা হলো `গুলি ছুড়ে দিয়েছো` এখন কি গুলির পেছনে দৌড়াবা?’ 

ফরিদা খন্দকার তার বক্তব্যে বার বার ভুলবশত ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরীর নাম কাজী জাফরউল্যাহ বলতে থাকেন। পরে সংবাদ সম্মেলন শেষে সাংবাদিকদের কাছে তার ভুল সংশোধন করেন। ফরিদা খন্দকার তার স্বামী এ কে খন্দকারের প্রসঙ্গে বলেন, ‘বইটা সংশোধন না করাতে উনি কিন্তু মানসিক রোগী হয়ে গেছেন। সিএমএইচে চিকিৎসা নিয়েছেন একেবারে উন্মাদ পাগল হিসেবে। এখনো তার চিকিৎসা চলছে।’

উপরের ঘটনা দেখে  বিজ্ঞানী Johann Gregor Mendel এর কথা মনে পড়ে যায়। রক্তে নিমকহারামি থাকলে তা যেতে বা শুদ্ধ হতে সময় লাগে তিন পুরুষ। একেই বলে শিকড়ের বা রক্তের দোষ।



প্রধান সম্পাদকঃ সৈয়দ বোরহান কবীর
ক্রিয়েটিভ মিডিয়া লিমিটেডের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান

বার্তা এবং বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ২/৩ , ব্লক - ডি , লালমাটিয়া , ঢাকা -১২০৭
নিবন্ধিত ঠিকানাঃ বাড়ি# ৪৩ (লেভেল-৫) , রোড#১৬ নতুন (পুরাতন ২৭) , ধানমন্ডি , ঢাকা- ১২০৯
ফোনঃ +৮৮-০২৯১২৩৬৭৭