ইনসাইড থট

তারেক জিয়াকে দেশে পাঠানো হবে কখন!

নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রকাশ: 09/06/2019


Thumbnail

অবৈধ ধনে ধনবান তারেক জিয়ার অন্যতম ঘনিষ্ঠ পাকিস্তানি বংশোদ্ভূত ব্রিটিশ স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সাজিদ জাভেদ সে দেশের প্রধানমন্ত্রী হচ্ছেন তা প্রায় নিশ্চিত। ব্রিটিশ রাজনৈতিক মহলে জল্পনা, প্রধানমন্ত্রী টেরিজা মে’র উত্তরসূরি হতে চলেছেন সাজিদ জাভেদ। এতে বাংলাদেশে বিভিন্ন অপরাধে দণ্ডিত তারেক জিয়াকে দেশে ফেরত আনা প্রায় অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে। ব্রিটিশ সরকারের সংশ্লিষ্ট দপ্তর সূত্রেও এমন আভাস দেওয়া হয়েছে বাংলাদেশ সরকারকে।  অন্য একটি খবরে বলা হয়েছে যে, ব্রিটিশ সরকার ছাত্রদের শিক্ষা গ্রহণ সংক্রান্ত ভিসা পদ্ধতি সহজ করে দেবে, যাতে অনেক বিদেশী ছাত্র ‘বিলেতি’ ডিগ্রী নিতে পারে।

Peter Moss এর লেখা Oxford University Press প্রকাশিত The Oxford University Project বইতে ব্রিটিশ সরকারের অর্থলিপ্সার বেশ কিছু প্রমান প্রকাশিত হয়েছে। এর আগে বাংলা ইনসাইডারে প্রকাশিত খবরে সন্দেহ প্রকাশ করা হয়েছিলো যে, তারেকের অবৈধ টাকার লোভে ব্রিটেন নানা অজুহাতে দুর্নীতির বরপুত্র তারেক জিয়াকে বাংলাদেশে ফেরত পাঠাবে কী না তাতে সন্দেহ আছে। অবশেষে বাংলা ইনসাইডারে সেই অনুমান কি সত্য হতে চলেছে!

উপনিবেশ আমলে শুধু টাকার জন্য বেআইনিভাবে পশ্চিম বাংলার অন্যতম ব্যবসায়ী রাজা নন্দ কুমারকে জুডিশিয়াল ক্যুর মাধ্যমে ফাঁসি দিয়েই ক্ষান্ত হয়নি ব্রিটিশরা। ভারতে ব্রিটিশ উপনিবেশকালে গরীব চাষিদের কাছ থেকে খাজনা আদায়ে ব্রিটিশ পুলিশকে এমন ক্ষমতা দেওয়া হয়েছিল যে তারা খাজনা আদায়ের জন্য গরীব কৃষককে পিটিয়ে হত্যা করলেও বিচার করা হতো না। বাংলার নিরীহ গরীব চাষিদের নীল চাষে বাধ্য করার জন্য যে অমানুষিক নির্যাতন করা হতো তার কথা সবার না হলেও বয়স্ক অনেকের জানার কথা। শুধু টাকা আয়ের জন্য চীনের জনগনের সাথে তারা কী করেছে তার কিছু নমুনা The Oxford University Project বই থেকেই তুলে ধরা যায়।         

অষ্টাদশ শতকের শেষের দিকে ব্রিটিশরা অবিভক্ত ভারত থেকে (আফগানিস্তান) আফিম নিয়ে গিয়ে চীনে বিক্রি শুরু করে। আস্তে আস্তে গুয়াংজুর আশেপাশের মানুষেরা আফিমের নেশায় বুদ হয়ে পড়ে। জনস্বাস্থ্য হুমকির মুখে পড়ে। এসময় ব্রিটিশরা সারাদেশে আফিম বিক্রির অনুমতি চেয়ে জোর দাবি করে। কিন্তু কিছু দেশপ্রেমিক চীনা বিশেষ করে কমিশনার লী চরমভাবে এর বিরোধিতা করেন। কারণ এই আফিম খেয়ে কর্মঠ চীনারা ধ্বংসের দিকে ধাবিত হচ্ছিলো। ১৮৩৯ সালে কমিশনার লী অনেক ব্রিটিশ আফিম ব্যবসায়ীকে শাস্তি দেন এবং ২ লাখ কেস আফিম আগুনে পুড়িয়ে নষ্ট করে ফেলেন। এটা নিয়েই ব্রিটিশরা চীনের সাথে যুদ্ধে লিপ্ত হয়। চীনা যুদ্ধ জাহাজ ছিল কাঠের আর ব্রটিশ যুদ্ধ জাহাজ ছিল ইস্পাতের তৈরী। সঙ্গত কারনেই চীন পরাজিত হয়ে ব্রিটিশদের চীনে আফিম বিক্রির দাবী মেনে নিয়ে গোটা চীনের ৫টি শহরে তাদের আফিম ব্যবসা করতে দিতে বাধ্য হয়। তা চলে ১৮৪২-৪৩ পর্যন্ত। এতেও ব্রিটিশরা খুশি হতে পারেনি। তাই সারা চীন জুড়ে আফিম ব্যবসার অনুমতির দাবিতে ১৮৫৮ সালে দ্বিতীয়বার ব্রিটিশরা ফরাসীদের সাথে নিয়ে যুদ্ধে জড়ায়। চীনকে আবার পরিজিত করে ১৮৬০ সালে নতুন চুক্তি করে সারা দেশে ব্যবসার অনুমতি পায়। এই ব্যবসার মূল ছিল আফিম ব্যবসা, এতে লাভ ছিল আকাশ্চুম্বী, তাই।

ব্রিটিশ সরকারের অর্থলোভের কথা বলে শেষ করা যাবে না। সেখানে ভালো মানুষ নেই তা বলি না, বরং তাদের সংখ্যা অনেক দেশের চেয়ে বেশি। কিন্তু এই ভালো মানুষগুলো রাজনীতি তথা দেশ শাসনে অংশ নিতে চান না অজানা কারণে। কিন্তু যারা রাষ্ট্র ক্ষমতায় থাকেন তাদের কাছে টাকাই ভগবান। এবার আসি ব্রিটিশদের সাম্প্রতিককালের শিক্ষা বাণিজ্য নিয়ে। একাবিংশ শতকের গোঁড়ার দিকে। ব্যাঙের ছাতার মত ২ বা ৩ রুমের অনেক স্কুল আর কলেজ খোলার অনুমতি দেয় ব্রিটেন। এখানে ভর্তি হতে ইংরেজী ভাষা জানার দরকার হতো না। ইংলিশ ল্যাংগুয়েজ কোর্সের নামে প্রথমে ভর্তি হলেই ব্রিটিশ ভিসা প্রাপ্তি নিশ্চিত, এটাই ছিল ব্রিটিশ সরকারের নীতি। ভাষাশিক্ষার পরে অন্য ডিগ্রি কোর্সে পড়ার সুযোগ পাওয়া যাবে ইত্যাদি সব কথামালা বলা হতো ‘বিলেতি ডিগ্রী’ প্রত্যাশীদের। কিন্তু বাস্তবতা ভিন্ন। উন্নত জীবনের স্বপ্নে বিভোর আমাদের মত গরীব গ্রাম বা মফঃস্বলের উঠতি বড়লোক বা সচ্ছল পরিবারের ছেলেরা (কিছু মেয়েরাও) ব্রিটেনে গিয়ে না পেরেছে লেখাপড়া শিখতে, না পেরেছে সেখানে থেকে ‘অড জব’ করে টাকা আয় করতে। তারা বেশিরভাগই ২ বা ৩ বছর পরে ৫০ লাখ থেকে কোটি টাকা শেষ করে শূন্যহাতে ফিরেছে নিজ দেশে। বাবামায়ের টেনশন কত কোটি টাকার হয়েছে তার হিসেব নাই বা দিলাম। এইসব ছেলেদের বেশিরভাগই হতাশ হয়ে পরে নষ্ট হয়ে গেছে। বাংলাদেশে শহর এলাকায় (গ্রামে কম) এদের সংখ্যা খুব কম নয়, প্রতি মহল্লাতেই একাধিক পাবেন এমন শিক্ষার্থী। মেয়েদের অনেকেই ফিরে এসেছে আর বাকীরা সেখানে আদিম ব্যবসায় নেমেছে যা ব্রিটিশ পত্রিকায় খবরে এসেছে। এতে লাভ হয়েছে ব্রিটিশ সরকারের। পত্র পত্রিকায় এ নিয়ে চরম সমালোচনা হলে ৪/৫ বছর আগে এসব ২ বা ৩ রুমের স্কুল কলেজগুলো প্রায় সবই বন্ধ করে দেওয়া হয় নানান কৌশলে। শিক্ষা বাণিজ্যের নামে চিটিং করে টাকা আয় কী ব্রিটেনে আবার শুরু হবে? ছাত্রদের শিক্ষা ভিসা সহজ করার কথা শুনলে তো নীতি বহির্ভূত টাকা আয়ের সেই ভয়াবহ অবস্থার কথাই মনে পড়ে অনেকের।

নাগরিক অধিকার ও সুশাসনের পক্ষে এবং জঙ্গিবাদ ও দুর্নীতির বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থানে থাকে ব্রিটিশরা। বাস্তবে তার চিত্র কিন্তু পুরাই উল্টা। পাকিস্তান, ভারত বাংলাদেশের নামকরা দুর্নীতিবাজ, সাবেক সরকার প্রধান বা রাজনীতিকগণের শেষ আশ্রয় হয় ব্রিটেনে, যারা কাড়ি কাড়ি অবৈধ টাকার মালিক। জঙ্গীবাদের প্রমাণিত মদদদাতা পাকিস্তানি বা বাংলাদেশের রাজনৈতিক ও ধর্মীয় নেতাদের বিরাট অংশের শেষ নিরাপদ আশ্রয় ব্রিটেন। ১৯৭১ সালের আমাদের স্বাধীনতা সংগ্রামের সময় মানবতাবিরোধী অপরাধে দণ্ডিতদের শেষ আশ্রয় প্রশ্রয়ও ব্রিটেনে। মানবাধিকার নিয়ে খুব উচ্চ কন্ঠ এই ব্রিটেনে নিরাপদ আশ্রয়ে আছেন ২১ শে আগস্টে গ্রেনেড হামলার দণ্ডিত আসামীরা। ২১ আগস্ট যারা নিহত হয়েছে সেই সব মানুষরূপীদের সম্ভবত কোনো মানবাধিকার নেই। কিন্তু বাংলাদেশে সমাজের জনশত্রু যারা পেশাদার খুনি নামে প্রমাণিত কিন্তু আইনের ফাঁকফোঁকর গলে জেল থেকে বার বার বেরিয়ে খুনখারাবী করে তারা ক্রসফায়ারে মারা গেলে উনাদের মানবাধিকার ‘চাগান’ দিয়ে ওঠে। কারণ তারা নিয়মিতই তাদের দেশের বড় বড় মানবাধিকার সংগঠনকে মোটা অংকের টাকা ডোনেট বা দান করেন তাদের পক্ষে উকালতি বা প্রোপাগান্ডা চালানোর জন্য। কোটি কোটি টাকার মালিক জামায়াত নেতাদের ফাঁসি মওকুফে মানবাধিকার সংগঠনগুলোতে বিবৃতির বন্যা বয়ে গিয়েছিলো। কিন্তু টাকা কম এমন মানবতাবিরোধী অপরাধীদের বেলায় তারা কোন বিবৃতি দেননি, কেন? ১৯৭৫ সালে ১৫ আগস্ট সপরিবারে বঙ্গবন্ধু নিহত হবার পরে কিন্তু কোন মানবাধিকার সংগঠন তেমন কিছুই বলেনি, যেমন করে তারা বলছেন এখন। ভাবটা এমন যে বঙ্গবন্ধু বা শেখ হাসিনা, শেখ রেহানার কোনো মানবাধিকার নেই।               

গল্প আছে যে, মদে মাতালারা মদ খাবার বাহানা তৈরী করে। কড়া রোদের দিন বলে, ‘দোস্ত আজ খুব গরম, গরম দিয়ে গরম কাটাতে আজকে দুই পেগ খেতেই হবে’। মেঘলা দিনে তাঁর বাহানা হল, ‘এই মেঘলা দিনে সুরা আর সাকি ছাড়া একলা থাকা কি সম্ভব’! বৃষ্টিভেজা রাতে তারা নেশা করে বৃষ্টির গান শোনে। জ্যোৎস্না রাতে মদের নেশায় বুদ হয়ে প্রেমের কবিতা লিখলে নাকি সেরা কবিতাটি বেরিয়ে আসে। একই ভাবে বর্তমান ব্রিটিশ সরকার নানা বাহানায় বাংলাদেশের দুর্নীতির বরপুত্র, জঙ্গিবাদের মদদদাতা, নাগরিক অধিকারহরণকারী তারেক জিয়াকে তার নিজ দেশে ফেরত পাঠাবে না যতক্ষণ না তারেক জিয়ার কাছে টাকার বস্তা ভর্তি আছে। টাকা ফুরালে অন্য সুরে হবে নতুন গান, ফেরত পাঠানো হবে তারেক জিয়াকে তাঁর নিজ দেশে।

বাংলা ইনসাইডার



প্রধান সম্পাদকঃ সৈয়দ বোরহান কবীর
ক্রিয়েটিভ মিডিয়া লিমিটেডের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান

বার্তা এবং বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ২/৩ , ব্লক - ডি , লালমাটিয়া , ঢাকা -১২০৭
নিবন্ধিত ঠিকানাঃ বাড়ি# ৪৩ (লেভেল-৫) , রোড#১৬ নতুন (পুরাতন ২৭) , ধানমন্ডি , ঢাকা- ১২০৯
ফোনঃ +৮৮-০২৯১২৩৬৭৭