ইনসাইড আর্টিকেল

রবীন্দ্রযুগেও যিনি নিজস্ব ঘরানায় বাংলা গান লিখেছেন!

নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রকাশ: 10/06/2019


Thumbnail

"মোদের গরব, মোদের আশা, আ মরি বাংলা ভাষা!

তোমার কোলে, তোমার বোলে, কতই শান্তি ভালবাসা!"

কবিতাটি বাংলা ভাষার মহিমা প্রকাশে একজন অত্যন্ত মহিমান্বিত কবির কলমে রচিত! এটি বাংলা ভাষার প্রতি শ্রদ্ধাজ্ঞাপনমূলক অন্যতম বিখ্যাত একটি কবিতা যার কবি হলেন বিখ্যাত কবি ও গীতিকার অতুল প্রসাদ সেন।
উনিশ শতকের শেষ থেকে বিশ শতকের মাঝামাঝি সময়ে সাহিত্য চর্চায় নিবিষ্ট ছিলেন এ কবি। এসময়টিকে মূলত রাবীন্দ্রিক সময় বলা হয়। কেননা এ সময় রবীন্দ্রনাথ ছাড়া আর যেসকল সাহিত্যিক সাহিত্যচর্চা করতেন তারা সকলেই রবীন্দ্রনাথের আদর্শ, ফর্ম, দর্শনকেই অনুকরণ করে লিখতেন। মোটকথা, বিশ শতকের মাঝামাঝি সময় পর্যন্ত রবীন্দ্র প্রতিভার প্রভাববলয়ের বাইরে যেয়ে সাহিত্যে নিজস্বতা দেখাতে পেরেছেন খুব কম সাহিত্যিকই। আর এই অল্পকিছু সাহিত্যিকদের মধ্যেই রয়েছেন অতুল প্রসাদ সেন। তিনি বাংলা কাব্যগীতি রচনায় নিজের বিশেষত্ব প্রকাশ করতে সক্ষম হন রবীন্দ্রবলয়ের ভেতরে থেকেও।

তিনি বাংলা গানের সুর-তালের বৈশিষ্ট্য অক্ষুন্ন রেখেই বাংলা গানে হিন্দুস্তানি রীতির প্রয়োগ করতেন। হিন্দুস্তানি সুর সংযোজনের ফলে বাংলা গানের কাব্যিক মর্যাদা ক্ষুন্ন হয়েছে বলে সংগীত বিশেষজ্ঞদের অনেকই নাক সিটকেছেন তার এই ধাঁচকে! কিন্তু হিদুস্তানি রীতির অনুকরণ করা হলেও অতুল প্রসাদের গানে যে স্বতঃফুর্ত গীতিময়তা রয়েছে তা সুর সঙ্গীতের মাধুর্য নিয়ে কথার ভাবকে ছাড়িয়ে গিয়েছে। আর এখানেই অতুল প্রসাদের সার্থকতা। তিনি ঠুংরি ও দাদরা ভঙ্গির অনেক গানও রচনা করেছেন যেসব গান শৈল্পিক শ্রেষ্ঠত্বের দাবি রাখে!
বাংলা গানে এই সংমিশ্রণ, অনেকক্ষেত্রে বলা চলে বাংলা গানে তার যেই আধুনিকায়নের চেষ্টা বাংলা গানে যেমন নতুনত্ব এনেছে তেমনি গান নিয়ে গবেষণার পথ বাতলে দিয়েছে উত্তরপ্রজন্মকে। আর তাতে বাংলা গানের জগতে এক বন্ধনহীন শৈল্পিক আবহ চলে এসেছে যা শিল্পের চিরাচরিত বৈশিষ্ট্য - বাউন্ডারিলেস আর্ট!

এই প্রতিভাবান কবি অতুল প্রসাদ সেন ছিলেন একাধারে কবি, গীতিকার এবং গায়ক। তিনি ১৮৭১ সালের ২০ অক্টোবর শরীয়তপুর জেলার নড়িয়া উপজেলার মগর গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন।
বাল্য কালেই তাঁর পিতা রামপ্রসাদ সেন পৃথিবীতে তাকে একা করে চলে যান অন্যপৃথিবীতে। এই পিতৃহীন স্নেহবুবুক্ষ কবি অতুল প্রসাদ পরে প্রতিপালিত হন ভগবদ্ভক্ত, সুকণ্ঠগায়ক ও ভক্তিগীতিরচয়িতা মাতামহ কালীনারায়ণ গুপ্তের আশ্রয়ে । আর মাতামহের এসমস্ত প্রতিভাই তাঁকে করে তুলেছে আজকের এই অতুল প্রসাদ সেন।

১৮৯০ সালে প্রবেশিকা পাশের পর অতুল প্রসাদ সেন কলকাতার প্রেসিডেন্সি কলেজে ভর্তি হন, সেখানে কিছুদিন অধ্যয়ন করেই তিনি বিলেত চলে যান। বিলেত থেকে ব্যারিস্টারি পাশ করে তিনি কলকাতা ফেরত আসেন এবং পরে তিনি কলকাতা ও রংপুরে আইন ব্যবসা শুরু করেন।

বর্তমান সময়েও অতুল প্রসাদের লেখালেখি এবং গান যতোটা জনপ্রিয় সে পরিমাণ লেখালেখি তিনি করেনইনি। তার সমস্ত জীবনে তিনি যা লিখেছেন বা গেয়েছেন সমকালীন গীতিকার সুরকার তথা শিল্পীদের তুলনায় তাঁর সংখ্যা খুবই সীমিত। তবুও অতুল প্রসাদের গানে কবিতায় সমস্ত রচনায় এমন মৌলিকত্ব পরিলক্ষিত হয় যা তাকে এই আধুনিক যুগেও জনপ্রিয়তার সর্বাগ্রে অবস্থান দিচ্ছে। তিনি বাংলা সংগীত জগতে এক স্বতন্ত্র আসন লাভ করে আছেন। তাঁর লিখিত, সুর করা এবং গাওয়া গানগুলো অতুল প্রসাদের গান নামে বিশেষ ভাবে প্রতিষ্ঠিত।

মাত্র ৫০-৬০টি গান গীত হিসেবে প্রাধান্য পেলেও তিনি রচনা করেছেন সর্বমোট ২০৬টি গান। সাহানা দেবী নামে অতুল প্রসাদের একজন মামাতো বোন ছিলেন, যিনি নিজে অতুল প্রসাদের ৭১টি গান স্বরলিপিসহ ‘কাকালি’ (১৯৩০) নামে দুই খণ্ডে প্রকাশ করেছেন নিজস্ব সম্পাদনায়। তাঁর অপর গানগুলিও `গীতিপুঞ্জ` এবং `কয়েকটি গান` নামে দুটি পৃথক গ্রন্থে প্রকাশিত হয়।
তার এই মামাতো বোন সাহানা দেবী ছিলেন সমকালীন একজন স্বনামধন্য গায়িকা। ১৯২২-২৩ সালের দিকে এই সাহানা দেবীর কণ্ঠেই কলকাতা থেকে প্রথম অতুল প্রসাদের গানের রেকর্ড বের হয় যেখানে সহশিল্পী হিসেবে কণ্ঠ দিয়েছেন সমকালীন আরেকজন শিল্পী হরেন চট্রোপাধ্যায়।
বাংলা সাহিত্যে অতুল প্রসাদই প্রথম ঠুংরির গানের প্রচলন করেন। এছাড়া রাগ প্রধান ঢঙ্গে বাংলা গান বা নোটের আলোকে বাংলা গান রচনা তিনিই প্রথম শুরু করেন।
উত্তর ভারতে তিনি জীবনের প্রায় অর্ধেকটা সময় কাটান। একারণেই তার গানে এসমস্ত প্রভাব কিছুটা লক্ষ্য করা যায় তবে তা বাংলা গানকে সমৃদ্ধই করেছে। হিন্দুস্তানি লঘু-ঠুংরি-খেয়াল-টপ্পা প্রভৃতি গান তাকে নাড়া দিয়েছিলো! তার এরকমই একটি গান হলো-
"কি আর চাহিব বলো (ভৈরবী/টপ খেয়াল),
ওগো নিঠুর দরদী (মিশ্র আশাবরী-দাদরা),
যাব না যাব না ঘরে (ঠুংরি)!

বাংলা ভাষার, বাংলা গানের এবং বাংলা কবিতার অহংকার এই শিল্পী অতুল প্রসাদ সেন ১৯৩৪ সালের ২৬ আগষ্ট লক্ষ্ণৌয়ে মৃত্যুবরণ করেন।

বাংলা ইনসাইডার/জেএফ

 



প্রধান সম্পাদকঃ সৈয়দ বোরহান কবীর
ক্রিয়েটিভ মিডিয়া লিমিটেডের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান

বার্তা এবং বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ২/৩ , ব্লক - ডি , লালমাটিয়া , ঢাকা -১২০৭
নিবন্ধিত ঠিকানাঃ বাড়ি# ৪৩ (লেভেল-৫) , রোড#১৬ নতুন (পুরাতন ২৭) , ধানমন্ডি , ঢাকা- ১২০৯
ফোনঃ +৮৮-০২৯১২৩৬৭৭