ইনসাইড হেলথ

ডেঙ্গুজ্বরের খুঁটিনাটি

নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রকাশ: 11/06/2019


Thumbnail

এখন চলছে নিয়মিত-অনিয়মিত বৃষ্টির সময়। বৃষ্টি আশপাশ ধুয়ে দিয়ে যাচ্ছে ঠিকই, কিন্তু বৃষ্টির জমে থাকা পানিতে জন্ম নিচ্ছে অসংখ্য এডিস মশা। আমরা সবাই কমবেশি জানি যে এই এডিস মশা থেকেই বিস্তার লাভ করে মহামারী রোগ ডেঙ্গু। আমরা কেন যেন মশা কামড়ানো বা ডেঙ্গুকে খুব একটা গুরুত্ব দেই না, তাতেই বাধে বিপত্তি। তাই ডেঙ্গু নিয়ে থাকছে আজকের আলোচনা-

কখন যেতে হবে চিকিৎসকের কাছে

ডেঙ্গুজ্বরের নির্দিষ্ট চিকিৎসা নেই। এই জ্বর নিজেই ভালো হয়ে যায়। তাই উপসর্গ অনুযায়ী সাধারণ চিকিৎসা যথেষ্ট। তবে কিছুক্ষেত্রে চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়াই ভালো। যেমন:

* শরীরের যেকোনো অংশে রক্তপাত হলে

* প্লাটিলেটের মাত্রা কমে গেলে

* শ্বাসকষ্ট হলে বা পেট ফুলে পানি এলে

* প্রস্রাবের পরিমাণ কমে গেলে

* জন্ডিস দেখা দিলে

* অতিরিক্ত ক্লান্তি বা দুর্বলতা দেখা দিলে

* প্রচণ্ড পেটে ব্যথা বা বমি হলে।

লক্ষণগুলো কি

ডেঙ্গুতে জ্বরের তীব্রতা বেশি থাকে। সেই সঙ্গে শরীরে প্রচণ্ড ব্যথা হয়। জ্বর ১০৫ ফারেনহাইট পর্যন্ত হয়। হাড়, কোমর, পিঠসহ অস্থিসন্ধি ও মাংসপেশিতে তীব্র ব্যথা হয়। এছাড়া মাথাব্যথা ও চোখের পেছনে ব্যথা হয়।

জ্বর হওয়ার চার বা পাঁচদিনে শরীরে লালচে রং দেখা যায়, অনেকটা অ্যালার্জি বা ঘামাচির মতো। এর সঙ্গে বমি বমি ভাব এমনকি বমি হতে পারে। রোগী অতিরিক্ত ক্লান্তিবোধ করে এবং রুচি কমে যায়।

এই অবস্থা জটিল হতে পারে যখন তখন। শরীরের বিভিন্ন অংশ থেকে রক্ত পড়া শুরু হয়। যেমন: চামড়ার নিচে, নাক ও মুখ দিয়ে, মাড়ি ও দাঁত থেকে, কফের সঙ্গে, রক্ত বমি, পায়খানার সঙ্গে তাজা রক্ত বা কালো পায়খানা, চোখের মধ্যে ও চোখের বাইরে রক্ত পড়তে পারে।

এই রোগের বেলায় অনেক সময় বুকে পানি, পেটে পানি ইত্যাদি উপসর্গ দেখা দিতে পারে। অনেক সময় লিভার আক্রান্ত হয়ে রোগীর জন্ডিস,কিডনিতে আক্রান্ত হয়ে রেনাল ফেইলিউর ইত্যাদি জটিলতা দেখা দিতে পারে।

চিকিৎসা কি

ডেঙ্গুজ্বরে আক্রান্ত বেশিরভাগ রোগী সাধারণত ৫ থেকে ১০ দিনের মধ্যে নিজেই ভালো হয়ে যায়। এমনকি কোনো চিকিৎসা না করালেও। তবে রোগীকে অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়ে চলতে হবে। যাতে ডেঙ্গুজনিত কোনো মারাত্মক জটিলতা না হয়। ডেঙ্গুজ্বরটা যথেষ্ট গুরুতর রোগ, সাধারণত লক্ষণ বুঝেই চিকিৎসা দেওয়া হয়। চিকিৎসার পাশাপাশি নিজেকেও সাবধানে থাকতে হবে। যেমন-

* সম্পূর্ণ ভালো না হওয়া পর্যন্ত বিশ্রামে থাকতে হবে।

* প্রচুর পানি, শরবত, ডাবের পানি ও তরল-জাতীয় খাবার গ্রহণ করতে হবে।

* কিছু খেতে না পারলে প্রয়োজনে স্যালাইন পুশ করুন।

* জ্বর কমানোর জন্য শুধু প্যারাসিটামল-জাতীয় ব্যথার ওষুধই যথেষ্ট। এসপিরিন বা ডাইক্লোফেনাক-জাতীয় ব্যথার ওষুধ খাবেন না, এতে রক্তক্ষরণের ঝুঁকি থাকে।

* জ্বর কমানোর জন্য ভেজা কাপড় দিয়ে গা মুছে নিন।

প্রতিরোধ করবেন কীভাবে

ডেঙ্গুজ্বর প্রতিরোধের মূলমন্ত্র হলো এডিস মশার বিস্তার রোধ এবং এই মশা না কামড়ানোর তার ব্যবস্থা করা। স্বচ্ছ পরিষ্কার পানিতে এরা ডিম পাড়ে। ময়লা দুর্গন্ধযুক্ত ড্রেনের পানি এদের পছন্দসই নয়। তাই ডেঙ্গু প্রতিরোধে এডিস মশার ডিমপাড়ার উপযোগী স্থানগুলোকে পরিষ্কার রাখতে হবে এবং একই সঙ্গে মশা নিধনের জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে হবে। বাড়ির আশপাশের ঝোপঝাড়, জঙ্গল, জলাশয় ইত্যাদি পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখতে হবে।

যেহেতু এডিস মশা মূলত এমন বস্তুর মধ্যে ডিম পাড়ে, যেখানে স্বচ্ছপানি জমে থাকে। তাই ফুলদানি, অব্যবহৃত কৌটা, ডাবের খোলা, পরিত্যক্ত টায়ার ইত্যাদি সরিয়ে ফেলতে হবে। ঘরের বাথরুমে বা কোথাও জমানো পানি পাঁচদিনের বেশি যেন না থাকে। অ্যাকুরিয়াম, ফ্রিজ বা এয়ারকন্ডিশনারের নিচেও যেন পানি জমে না থাকে।

এডিস মশা সাধারণত সকালে ও সন্ধ্যায় কামড়ায়। তবে অন্য কোনো সময়ও কামড়াতে পারে। তাই দিনের বেলা শরীরে ভালোভাবে কাপড় দিয়ে ঢেকে বের হতে হবে, প্রয়োজনে মসকুইটো রিপেলেন্ট ব্যবহার করা যেতে পারে। ঘরের দরজা-জানালায় নেট লাগাতে হবে। দিনের বেলায় মশারি টানিয়ে অথবা কয়েল জ্বালিয়ে ঘুমাতে হবে।

বাচ্চাদের ফুল প্যান্ট পরিয়ে রাখবেন। মশা নিধনের স্প্রে, কয়েল, ম্যাট ব্যবহারের সঙ্গে সঙ্গে মশার কামড় থেকে বাঁচার জন্য দিনে ও রাতে মশারি ব্যবহার করতে হবে। ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগীকে অবশ্যই সবসময় মশারির মধ্যে রাখতে হবে যাতে আবার মশা না কামড়ায়।

বাংলা ইনসাইডার/এসএইচ



প্রধান সম্পাদকঃ সৈয়দ বোরহান কবীর
ক্রিয়েটিভ মিডিয়া লিমিটেডের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান

বার্তা এবং বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ২/৩ , ব্লক - ডি , লালমাটিয়া , ঢাকা -১২০৭
নিবন্ধিত ঠিকানাঃ বাড়ি# ৪৩ (লেভেল-৫) , রোড#১৬ নতুন (পুরাতন ২৭) , ধানমন্ডি , ঢাকা- ১২০৯
ফোনঃ +৮৮-০২৯১২৩৬৭৭