ইনসাইড থট

দুর্নীতি ও অঞ্জু ঘোষ

নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রকাশ: 11/06/2019


Thumbnail

বিশ্বের অন্যতম বৃহৎ ‘ব’ দ্বীপ আমাদের এই প্রিয় জন্মভূমি বাংলাদেশে ঋণখেলাপীর সংখ্যা নিয়ে তুলকালাম কাণ্ড ঘটে গেছে। পলিমাটি পড়ে পড়ে এই দেশের জন্ম তাই প্রাচীন কালে এটি বিশ্বের অত্যতম উর্বরভূমি হিসেবে গন্য করা হতো। এখানে চা, চিনি, ধান, কাউন, মশলা, ইত্যাদি নানা কৃষি পণ্যের উৎপাদন গোটা দুনিয়ার বুকে ছিল ঈর্ষণীয়। ১৭০০ সালের দিকে অবিভক্ত ভারত যে গোটা দুনিয়ার ২৫% জিডিপির মালিক ছিল তাঁর অন্যতম কারণ কৃষি, হস্তশিল্প, ইত্যাদি। সেই কারণেই এই বাংলা মায়া হরিণীর মত আমরা পৃথিবীর অন্যান্য দেশের শত্রুতে পরিনত হয়।     

উর্বর পলিবিধৌত এই বাংলায় একটা নতুন করে তৈরী করা জমিতে আপনি যদি বাগান করেন তাহলে মজার একটা বিষয় লক্ষ্য করতে পারেন। বাগানে আপনি আম, জাম, কলা, কাঠাল, লীচু,পেয়ারা, সবেদা, তাল-নারকেলের পাশাপাশি একটা তেতুল গাছ লাগান। পারলে বাগানের একপাশে লাউ, কূমড়া, ঝিঙ্গা, করলা গাছেও লাগাতে পারেন। একই জমিতে আপনি যেমন মিস্টি আম -কাঠাল পাবেন তেমনি পাবেন টক তেতুল। পাবেন মিস্টি কূমড়ার মত ফল আবার চরম তিতা করলা। মাটি বা জমি ইন্তু একটাই সেখান থেকে আপনি যা পেতে চান তাই পাচ্ছেন, পছন্দ মত চাষ করে।   

শেখ হাসিনার শাসনামলের এই বাংলায় আমরা বিচিত্র সব ঘটনা ইদানিং লক্ষ্য করছি সাজানো বাগানের মত। ‘তলাবিহীন ঝুড়ি বা দুরনীতগ্রস্থ দেশ’ বলে আমাদের টিটকার যারা দেন, দিতেন তাঁদের কাছ থেকেই আমাদের অর্জন কিন্তু কম নয়। এই দেশের পক্ষে শেখ হাসিনা ২০১৫ সালে জলবায়ু পরিবর্তনে ঝুকি মোকাবেলায় জাতিসংঘের পক্ষ থেকে চ্যাম্পিয়ন অব দ্যা আর্থ পুরস্কার, গঠন ও তথ্য প্রযুক্তির উন্নয়নে বিশেষ অবদানের জন্য ITU (International Telecom Union) Award, রাজনীতিতে নারী পুরুষের বৈষম্য কমানোর ক্ষেত্রে দক্ষিন ও দক্ষিন পূর্ব এশিয়ায় নেতৃস্থানীয় ভুমিকা পালনের জন্য WIP (Women in Parliament) Global Award পুরস্কার পান। বাংলাদেশের কৃষির উন্নয়নে অব্যাহত সমর্থন, খাদ্য উৎপাদনে সয়ম্ভরতা অর্জন এবং বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির উন্নয়নে অবদানের জন্য আমেরিকার কর্নেল বিশ্ববিদ্যালয় ২০১৫ সালে তাকে সম্মাননা সনদ প্রদান করে শেখ হাসিনা তথা বাংলাদেশকে। 

২০১৪  সালে নারী ও শিশু শিক্ষা ও উন্নয়নে বিশেষ অবদানের জন্য ইউনেস্কোর পক্ষ থেকে শান্তিবৃক্ষ পদক Peace Tree Award, খাদ্য উৎপাদন ও তথ্য প্রযুক্তি ক্ষেত্রে অভূতপূর্ব সাফল্যের জন্য এবছরই যুক্তরাষ্ট্রের কর্নেল ইউনিভারসিটি মাননীয় প্রধানমন্ত্রীকে মানে বাংলাদেশেকে এই সম্মাননা সার্টিফিকেট প্রদান করে।

২০১৩ সালে খাদ্য নিরাপত্তা এবং ক্ষুধা ও দারিদ্র্য বিমোচনে বিশেষ অবদানের জন্য জাতিসংঘের ইন্টারন্যাশনাল অর্গানাইজেশন ফর সাউথ সাউথ কো অপেরাশন এর পক্ষ থেকে  South South Award, “একটি বাড়ি ও একটি খামার প্রকল্প’ ভারতের নয়াদিল্লিতে অনুষ্ঠিতব্য তথ্য-প্রযুক্তি মেলায় ২৩ সেপ্টেম্বর সাউথ এশিয়া ও এশিয়া প্যাসিফিক “ Manthan Award” ২০১৩ পদকে ভূষিত হন। এছাড়া  জাতিসংঘ খাদ্য ও কৃষি সংস্থা (এফএও) দারিদ্রতা, অপুষ্টি দূর করার ক্ষেত্রে উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি অর্জন করায় বাংলাদেশকে “Diploma Award“ পদকে ভূষিত করে বাংলাদেশকে, আমাদের প্রধানমন্ত্রীকে।

একইভাবে ২০১২ সালে বাংলাদেশের সাংস্কৃতিক বৈচিত্র্য রক্ষা এবং সাংস্কৃতিক কার্যক্রম এগিয়ে নিতে বিশেষ অবদানের জন্য UNESCO মাননীয় প্রধানমন্ত্রীকে “Cultural Diversity“ পদকে ভূষিত করে। ২০১১ সালে ইংল্যান্ডের হাউস অব কমন্সের স্পিকার Jhon Bercow MP বাংলাদেশের মাননীয় প্রধানমন্ত্রীকে গনতন্র পুনুরদ্ধারে দূরদর্শী নেতৃত্ব, সুশাসন, মানবাধিকার রক্ষা, আঞ্চলিক শান্তি ও জলবায়ু পরিবর্তনের চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় সচেতনতা বৃদ্ধিতে তার অনবদ্য অবদানের জন্য Global Diversity Award প্রদান করেন।

South South Award পান তিনি স্বাস্থ্যখাতে তথ্য প্রযুক্তির ব্যবহারের মাধ্যমে নারী ও শিশু মৃত্যুর হার কমানোর ক্ষেত্রে বিশেষ অবদানের জন্য International Telecommunication union (ITU) South South News, এবং জাতিসংঘের আফ্রিকা সংক্রান্ত অর্থনৈতিক কমিশন যৌথভাবে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে South South Award 2011: Digital Development Health এই পুরস্কারে ভূষিত করে।২০১০ সালে শিশু মৃত্যুর হ্রাস সংক্রান্ত MDG-4 অর্জনের স্বীকৃতি স্বরূপ জাতিসংঘ MDG (Millennium Devolopment Goal) Award পুরস্কার প্রদান করে। একই বছর আন্তর্জাতিক উন্নয়নে অসমান্য অবদানের জন্য St.Petrsburg University প্রধানমন্ত্রীকে সম্মানসূচক ডক্টরেট প্রদান করেন। সেই বছরেই তিনি বিশ্বখ্যাত “ইন্দিরা গান্ধী শান্তি পদক-২০০৯”এ ভূষিত হন।

শেখ হাসিনার হাত ধরেই বাংলাদেশে গত ১০ বছরে বিদ্যুৎ উৎপাদন ক্ষমতা ৪ গুণ বৃদ্ধি পেয়ে এখন দাঁড়িয়েছে বর্তমানে বিদ্যুতের উৎপাদন ক্ষমতা বৃদ্ধি পেয়ে ক্যাপটিভসহ ১৮ হাজার ৩৫৩ মেগাওয়াট। এমন অনেক খাতের উন্নয়নের কথা বলা যাবে তাতে এই লেখার কলেবর বৃদ্ধি পাবে মাত্র। যেমন গত দশ বছরে বাংলাদেশের মানুষের গড় মাথাপিছু আয় বেড়েছে ১৪৯ শতাংশ। দেশে শিক্ষার হার বেড়েছে, মানুষের গড় আয়ু বেড়েছে, শিশুমৃত্যুর হার কমেছে, নিরাপদ খাবার পানি, স্যানিটেশনে আমরা অঙ্ক এগিয়ে আশেপাশের দেশ থেকে, ইত্যাদি। কিন্তু অন্যদিকে খেলাপি ঋণের পরিমাণ এবছরে বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১,১০, ৮৭৩ কোটি টাকায়। ব্যাপক উন্নয়নের ফলে বিভিন্ন উন্নয়ন প্রকল্পের কাজের পাশাপাশি দুর্নীতি চরম আকার ধারণ করেছে।

২০১৮ সালে একুশে টেলিভিশনকে দেয়া এক সাক্ষাত্কার বাংলার অভিনেত্রী অঞ্জু ঘোষ জানান যে তিনি ১৯৫৬ সালে ফরিদপুরের ভাঙ্গায় জন্মগ্রহণ করেন ও মুক্তিযুদ্ধ শুরু হওয়ার আগে তিনি এবং তার পরিবার চট্টগ্রামে চলে আসেন। সেখানকার কৃষ্ণকুমারী বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ে পড়াশুনা করেন। এদিকে নতুন খবর হচ্ছে ২০১৯ সালের ৫ জুন তিনি ভারতের রাজনৈতিক দল বিজেপিতে যোগ দিয়েছেন। বিজেপি দলের তরফ থেকে দাবি করা হয় তিনি ভারতের নাগরিক, তাঁর কাছে ভারতের পাসপোর্ট আছে। পশ্চিমবঙ্গের বিজেপির সভাপতি দিলীপ ঘোষ ২০০৩ সালে কলকাতা পৌরসংস্থা কর্তৃক জারি করা তার জন্ম সার্টিফিকেট প্রকাশ করেন। প্রশংসাপত্র অনুসারে অঞ্জু ঘোষ ১৭ সেপ্টেম্বর ১৯৬৬ সালে কলকাতার ইস্ট এন্ড নার্সিং হোমে জন্মগ্রহণ করেন; তার বাবার নাম সুধন্য ঘোষ ও মায়ের নাম বীণাপানি ঘোষ। অঞ্জু ঘোষের ভারতীয় নাগরিকত্ব পাওয়ায় যে ‘কামিনী বা কাঞ্চনের খেলা’ আছে তা বুঝার জন্য মহা পন্ডিত হবার কোন প্রয়োজন বাংলার মানুষের নেই। ঠিক একইভাবে ‘কামিনী বা কাঞ্চনের’ বদৌলতে ব্যাংকের টাকা লুট, খেলাপি ঋণের পরিমাণ বাড়া, বিভিন্ন অপরাধ করেও পার পেয়ে যাওয়া, মিথ্যা বা আংশিক সত্য খবর প্রকাশ করে দেশে অস্থিরতা তৈরী করা, সোশ্যাল মিডিয়ায় ঝড় তোলা, মিথ্যা বা আধা সত্য তথ্য দিয়ে বই লিখে প্রকাশ সবখানেই ‘কামিনী বা কাঞ্চনের’ যোগ আছে তা অনুমান করলে অন্যায় করা হবে না।

সারা দুনিয়ায় যখন সন্ত্রাসের রাজত্বে ত্রাহি ত্রাহি অবস্থা সেখানে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী বলতে গেলে একা তাঁর কিছু অনুগামীদের নিয়ে ধর্মীয় ও অন্যান্য সন্ত্রাসে লাগাম টেনে ধরেছেন, মাদকের বিরুদ্ধে সাঁড়াশি অভিযানে দেশি-বিদেশি মানবাধিকার সংগঠন ও তাঁদের মুরুব্বীরা এখন চরম নাখোশ। একটা একটা করে আস্তে ধীরে রয়ে সয়ে শেখ হাসিনা এবার ব্যাংক খাতে শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনতে আর দুর্নীতি দমনে হাত দিয়েছেন। বেঁচে থাকলে সহসাই তিনি সফলতার মুখ দেখাবেন দেশবাসীকে সে বিশ্বাস অনেকের। তাই হাউ কাউ না করে আসুন দেশ আমার, সরকার আমাদের সবার, তাই দেশের স্বার্থে সরকারকে সহযোগিতা করি। দেশ ধ্বংস করলে ক্ষতি আমাদের সবার। অঞ্জু ঘোষেদের মত ‘কামিনী বা কাঞ্চনের’ কারবারিদের চিহ্নিত করতে সরকারকে সহযোগিতা করি নিজের স্বার্থেই। আমরা যেন ভুলে না যায় যে, বাংলার মাটিতে শুধু করলা চাষ হয় না সাথে পাকা আম চাষ হয়, প্রচুর।



প্রধান সম্পাদকঃ সৈয়দ বোরহান কবীর
ক্রিয়েটিভ মিডিয়া লিমিটেডের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান

বার্তা এবং বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ২/৩ , ব্লক - ডি , লালমাটিয়া , ঢাকা -১২০৭
নিবন্ধিত ঠিকানাঃ বাড়ি# ৪৩ (লেভেল-৫) , রোড#১৬ নতুন (পুরাতন ২৭) , ধানমন্ডি , ঢাকা- ১২০৯
ফোনঃ +৮৮-০২৯১২৩৬৭৭