ইনসাইড থট

নেংটি ইঁদুরের ত্রাস শেখ হাসিনা

নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রকাশ: 13/06/2019


Thumbnail

মহান জাতীয় সংসদে গত বুধবার প্রধানমন্ত্রীর একটা বক্তব্যে জন আকাঙ্ক্ষার প্রতিফলন ঘটেছে। ফলে দেশের সকল পেশার দুর্নীতিবাজদের মধ্যে চাপা আতংকের সৃষ্টি হয়েছে। আমাদের দেশের অন্যতম প্রধান সমস্যা  তিনি চিহ্নিত করে তাঁর বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থান নিয়েছেন। এতে দেশের আপামর জনগণ যেমন চরম আশাবাদী হয়ে উঠেছেন, ঠিক তেমনি একটা বিরাট সংখ্যক দেশ প্রেমিক মানুষের মাঝে অজানা শংকার জন্ম দিয়েছে। কারণ মাইনাস টু ফর্মুলার কুশীলবরা কি এখন শুধু এ কে খন্দকার, এস কে সিনহা বা সিরাজুল আলম খানকে দিয়ে ইতিহাস বিক্রিত করেই চুপ থাকবে? নাকি প্রদীপ নেভার আগে যেমন দাউ দাউ করে জ্বলে, তেমনি তারা মরণ কামড় দেবে! ভাবাটা বোকামি হবে না। কারণ তাদের হাতে আছে অঢেল টাকা। তারা প্রায় মাইনাস হবার পথে। তাই তারা তাদের কূমতলবের শেষ আলো জ্বালাতে চেষ্টার ত্রুটি করবে না তার প্রমান হালের সিরাজুল আলম খানের লেখা মুক্তি সংগ্রামের বিকৃত ইতিহাসের বই।     

ইউরোপের শিল্প বিপ্লবের পরে থেকেই দেখা গেছে যে, উন্নয়ন আর দুর্নীতি সহোদর ভাইয়ের মত পাশাপাশি চলে, কিন্তু শেষ দৌড়ে উন্নয়ন এগিয়ে যায় আর দুর্নীতি পড়ে পিছিয়ে, নির্মূল হয়না যদিও। তাই এখন দেশ  যখন উন্নয়নের মহাসড়কে উঠে পড়েছে তখন সারা দেশে দুর্নীতির মাত্রাটাও বেড়ে গেছে। সক্রিয় সোশ্যাল মিডিয়ার কল্যাণে তার প্রচার-প্রকাশ ও হচ্ছে প্রতিনিয়ত। এসব দেখে শুনে ভোক্তা  অধিকার রক্ষায় ম্যাজিস্ট্রেট মনজুর শাহরিয়ারকে স্বপদে থেকে অভিযান চালিয়ে যাওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন আমাদের প্রধানমন্ত্রী। গত বুধবার  জাতীয় সংসদে প্রশ্নোত্তর পর্বে দেয়া ভাষণে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এসব কথা বলেন। তিনি বলেন, ‘বিদেশে থাকা অবস্থায় আমি শুনেছি এই ঘটনা। বড় কোন জায়গায় যেন হাতই  দেওয়া যাবে না। ছোটখাটো জায়গায় অভিযান চালিয়ে দুর্নীতি রোধ করা যাবে না। বড় জায়গার দুর্নীতিও শেষ করতে হবে।’    

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘বর্তমান সরকার টানা তৃতীয়বার দায়িত্ব গ্রহণের পর দেশের জনগণের কল্যাণে এবং দুর্নীতিমুক্ত দেশ গড়ার লক্ষ্যে দুর্নীতির বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স নীতি গ্রহণ করেছে। তাছাড়া দুর্নীতি প্রতিরোধে দুর্নীতি দমন কমিশনকে (দুদক) শক্তিশালী করা, জনসচেতনতামূলক কার্যক্রম জোরদার এবং আধুনিক তথ্যপ্রযুক্তি ব্যবহারের মাধ্যমে দুর্নীতি প্রায় শূন্যের কোঠায় নামিয়ে আনার বিশেষ পরিকল্পনা আমাদের রয়েছে।  এর মাধ্যমে সরকার দুর্নীতির বিষবৃক্ষ সম্পূর্ণ উপড়ে ফেলে দেশের প্রকৃত আর্থ-সামাজিক উন্নয়ন ও জনকল্যাণে একটি সুশাসনভিত্তিক প্রশাসনিক কাঠামো ও কল্যাণমূলক রাষ্ট্র গঠন করতে বদ্ধপরিকর’, বলেন তিনি। তিনি আরও বলেন, ‘দুদকের কার্যক্রমের ফলে বিভিন্ন মন্ত্রণালয় বা দফতরে দুর্নীতির মাত্রা ক্রমান্বয়ে হ্রাস পাচ্ছে’। প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন, ‘কমিশন দুর্নীতি প্রতিরোধে কর্মকৌশল প্রণয়ন করেছে। এ কর্মকৌশলের আওতায় দুর্নীতি প্রতিরোধে জনসচেতনতা গড়ে তোলার লক্ষ্যে গণশুনানি আয়োজন করা হচ্ছে। পাশাপাশি সমাজের সৎ ও স্বচ্ছ ব্যক্তিদের নিয়ে দেশের প্রতিটি জেলা-উপজেলায় ‘দুর্নীতি প্রতিরোধ কমিটি; ‘স্কুল-কলেজের সততা সংঘ’ গঠন এবং ‘সততা স্টোর’ স্থাপন করা হয়েছে, হচ্ছে । এসব ইতিবাচক কার্যক্রমের ফলে সাধারণ জনগণ দুর্নীতির বিরুদ্ধে সোচ্চার হচ্ছে। স্কুল-কলেজের কোমলমতি শিক্ষার্থীদের মধ্যে দুর্নীতিবিরোধী মনোভাব সৃষ্টি হচ্ছে’। 

কেন তিনি এতো কঠোর অবস্থানে গেলেন তার পোস্ট মর্টেম করলে জানা যায় যে- জোট সরকার ও তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে ম্যাজিস্ট্রেট রোকনউদ্দোউলা মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করে খাদ্যে ভেজাল,জালিয়াতিসহ সিন্ডিকেটবাজদের রাতের ঘুম হারাম করে দিয়েছিলেন। বাংলাদেশের দুর্নীতিবাজ মাফিয়ারা ও তাদের মিডিয়া দোসরেরা মিলে ম্যাজিস্ট্রেট রোকনউদ্দোউলাকে ও এস ডি করে ছাড়ে, ফলে একটা জনপ্রত্যাশার অপমৃত্যু হয়।   

এছাড়া বানসুরি মো. ইউসুফ ছিলেন ঢাকার এয়ারপোর্ট ম্যাজিস্ট্রেট। দায়িত্বে অবহেলার শাস্তি বই পড়া, যেখানে সেখানে না ফেলে পানির বোতল জায়গামত ফেরত দিয়ে পাঁচ টাকা মূল্য ফেরতের মত অসাধারণ প্র্যাকটিসগুলো তাঁর প্রবর্তন করা ছিল। বিশ্বের অন্যতম নোংরা এয়ারপোর্টটাকে তিনি পরিচ্ছন্ন করে তোলার কাজ শুরু করেছিলেন। তাকেও সরিয়ে দেওয়া হয় উল্লেখিত মাফিয়াদের তদ্বিরে। জনশ্রুতি আছে যে, এয়ারপোর্টের বিভিন্ন সিন্ডিকেট দু কোটি টাকা একাট্টা করে উপর মহলে হাদিয়া দিয়ে বানসুরি মো. ইউসুফকে বদলি করে স্বর্ণ চোরাচালান সহ নানা অপকর্মে ব্যবহারে এয়ারপোর্টকে নিজেদের দখলে নেয়।

নিরাপদ খাদ্যে অধিদপ্তরের মাহবুব কবির মিলনকে প্রতি পদে পদে আটকে দেওয়া হতো তাঁর কাজে।  তিনিও বাংলাদেশ প্রশাসনেরই একজন সৎ আমলা। মেরুদন্ডহীন প্রশাসনের মেঝে মেরুদণ্ডওয়ালা কয়েকজন আমলার মাঝে নিরাপদ খাদ্যের মাহবুব কবির মিলন নিজের দপ্তরের গন্ডি পেরিয়ে রেলওয়ে, খাদ্য, ভোক্তা অধিকারসহ বিভিন্নখাতে স্বপ্রণোদিত হয়ে কাজ করছেন।  উনার প্রচেষ্টায় বহু রাঘব বোয়াল এ্যাম্বুলেন্সে চড়ে আদালতে এসে ক্ষতিপূরণ দিয়ে ভেজাল খদ্য প্রস্তুত না করার মুচলেকা দিয়েছেন।  

মঞ্জুর হাসান শাহরিয়ার, নান্দোসে পঁচা মুরগী, পারসোনার নকল প্রসাধনী থেকে শুরু করে পরিবহনে অতিরিক্ত ভাড়া আদায়সহ একের পর মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করে গত কয়েকদিনে গোটা দেশ কাপিয়ে দেওয়া এ লোকটি ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক। উত্তরা আড়ংয়ে ৭০০ টাকার পোশাক ১৩০০ টাকায় বিক্রির অভিযোগে সাড়ে চার লাখ টাকা জরিমানাসহ প্রতিষ্ঠানটি সিল করে দিয়েছিলেন এই দেশপ্রেমিক মানুষটি। তাই তাঁকে বদলি করা হয়, কিন্তু প্রধান্মন্ত্রীর হস্তক্ষেপে তা রোধ হয়।

ডিজিটাল বাংলা নিয়ে টিটকারী মারা দুর্নীতির বরপুত্র এখন লণ্ডনে পলাতক। কিন্তু তাঁর অনুসারী আর তাঁর দ্বারা বিভিন্নভাবে আর্থিক সুবিধালাভকারীরা দেশের মধ্যে এখনো সক্রিয়। এই দলে আছে বাংলাদেশের কিছু নষ্ট মিডিয়া, যারা বিজ্ঞাপনের ফর্মে টাকা নেয়। তারা নিজেদের ফরমায়েশী লেখা বই আর রিপোর্ট থেকে বানোয়াট, অসত্য, তথ্য এখন ছড়াবে দেশে বিদেশের মিডিয়ায়, সোশ্যাল মিডিয়ায়। কারণ এদের সাথে আছে কিছু টাকার কুমির অসৎ ব্যবসায়ী, কিছু অসৎ আমলা, ক্ষমতালোভী তথাকথিত পল্টিবাজ রাজনিতিক। এরা কিন্তু নেংটি ইঁদুরের মত, মানুষ দেখলে ভয় পায়। কিন্তু তলে তলে মাটিকেটে মাঠের ফসল নষ্ট করে মানুষের অনিষ্ঠ করে। কিন্তু লাঠি হাতে কাউকে দেখলেই গর্তে ঢুঁকে পড়ে। এরা সংখায় খুব বেশি না, কিন্তু তলে তলে খুব সংগবদ্ধ। এক দুই জন সন্ত্রাসী যেমন একটা পুরা এলাকায় ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করে জণঅধিকার হরণ করে, ঠিক তেমনি এক বা দুজন অসৎ আমলা, ব্যবসায়ী অসৎ মিডিয়ার সহায়তায় নষ্ট ব্যবসায়ী রাজনীতিবিদ তাদেরর সংশ্লিষ্ট গোটা সেক্টরকে দুর্নীতির আখড়া বানায়। কিন্তু আপনার মত দেশপ্রেমিক মানুষের লাঠি দেখলেই ইঁদুরের মত গর্তে ঢুঁকে যায়।         

আপনার ভয় নেই প্রধানমন্ত্রী। কারণ আপনার সাথে আছেন বহুল পরিক্ষিত সেই গোপালগঞ্জের ডিসি ইকবাল মাহমুদ এখন দুদুকের চেয়ারম্যান হিসেবে, আছেন মাহবুব কবির মিলন, আছেন মনজুর শাহরিয়ার, আর রোকনউদ্দোউলার মত অসংখ্য সরকারী কর্মকর্তা। আছেন একঝাঁক প্রিন্ট আর এলেক্ট্রনিক মিডিয়ার কর্মী, আছেন নিউজ পোর্টাল আর সোশ্যাল মিডিয়ায় সক্রিয় লক্ষ লক্ষ কর্মী আর কোটি কোটি সাধারণ আমজনতা। ‘নেমেছেন দুর্নীতিমুক্ত দেশ গড়ার রণে, তাই এখন ভয় কী দেশপ্রেমিকের মরণে!’ দরকার হলে আপনার নিজের দপ্তরে দুর্নীতির অভিযোগ বাক্স খুলুন। আপনাকে যারা ভালোবাসেন, শ্রদ্ধা কারেন তাঁদের দোয়া নিয়ে একটা একটা সেক্টর ধরে দুর্নীতিমুক্ত করে এগুতে থাকুন, সবগুল একসাথে ধরা লাগবে না। বাংলার জনতা আপনার সাথে আছে। নেংটি ইঁদুরের দল গর্ত থেকে বেরুনোর পথ পাবে না।

বাংলা ইনসাইডার



প্রধান সম্পাদকঃ সৈয়দ বোরহান কবীর
ক্রিয়েটিভ মিডিয়া লিমিটেডের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান

বার্তা এবং বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ২/৩ , ব্লক - ডি , লালমাটিয়া , ঢাকা -১২০৭
নিবন্ধিত ঠিকানাঃ বাড়ি# ৪৩ (লেভেল-৫) , রোড#১৬ নতুন (পুরাতন ২৭) , ধানমন্ডি , ঢাকা- ১২০৯
ফোনঃ +৮৮-০২৯১২৩৬৭৭