ইনসাইড আর্টিকেল

বাবাকে কেন অপরাধী করি?

নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রকাশ: 16/06/2019


Thumbnail

রহমান সাহেব সকাল ৯টায় অফিসে গেলেন। রোজ যেমন তিনি সময় মতো যান। কিন্তু অফিসে উপস্থিত হতেই সবাই কেমন যেন ম্রিয়মাণ হয়ে গেলেন।কেউ এগিয়ে এসে কথাও বলছেন না। সবাই যেন এড়িয়ে এড়িয়ে চলছেন। কারণটা হচ্ছে তার পুত্র ফাহাদ। চাঞ্চল্যকর অপরাধের দায়ে অভিযুক্ত হয়েছে ফাহাদ।পত্রপত্রিকা, টিভি চ্যানেল, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম সবখানে ফাহাদ আর পরিবারের ছবি প্রকাশিত হয়েছে।ফাহাদকে ধরিয়ে দিতে পুরস্কার ঘোষণা করা হয়েছে। সে এখন পলাতক। রহমান সাহেব সাংবাদিকদের ডেকে বলেছিলেন তিনি ফাহাদের কোনো খবর জানেন না, ফাহাদের সঙ্গে তিনি সব সামাজিক সম্পর্ক ছিন্ন করেছেন। কিন্তু ঘটনার পর থেকেই ফাহাদের কারণে তার মা-বাবাকে বাইরে বের হলেই বিব্রতকর পরিস্থিতির মুখোমুখি হতে হচ্ছে।বাবা বাইরে একটু বেশি বের হন বলে তাকে একটু বেশিই সইতে হচ্ছে এসব। তাইতো অফিস থেকে কিছুদিন ছুটিও নিয়েছিলেন।

সন্তান যদি কোনো অপরাধ করে তখন নানাভাবে মা-বাবাকে দায়ী করা হয়। বেশির ভাগ সময় এই অপরাধের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট না থেকেও মা-বাবারা সামাজিকভাবে কিছুটা একঘরে হয়ে পড়েন। গণমাধ্যম তাঁদের নিয়ে বিভিন্ন সংবাদ পরিবেশন করে। একদিকে সন্তানের অপরাধের কারণে তাঁরা বিব্রত-লজ্জিত, প্রিয় সন্তানের অনিশ্চিত ভবিষ্যৎ আর শাস্তি নিয়ে তাঁরা শঙ্কিত। অন্যদিকে আশপাশের মানুষ যখন তাঁদের এড়িয়ে চলছেন, তখন তাঁরা মানসিকভাবে খুব বিপর্যস্ত। অপরাধী যেই হোক তার অপরাধের মূল দায়টুকু তারই। কারও অপরাধের কার্যকারণ খুঁজে বিশ্লেষণ করা বা অপরাধী হওয়ার পথ খুঁজে দেখা বিশেষজ্ঞের দায়িত্ব। সমাজের প্রত্যেক ব্যক্তি কিন্তু এই ভূমিকা নিতে পারেন না। কারও সন্তান মাদকাসক্ত হয়ে পড়েছে বা মাদকসহ গ্রেপ্তার হয়েছে, কারও সন্তান স্ত্রী নির্যাতনের দায়ে অভিযুক্ত, অনৈতিক অসামাজিক কাজে জড়িয়ে পড়েছে, হত্যা মামলার আসামি হিসেবে চিহ্নিত হয়েছে—সে ক্ষেত্রে সেই পরিবারের চারপাশের মানুষেরা প্রায় সব সময় বিচারিক দায়িত্ব পালন করে ফেলে।

বৈজ্ঞানিক বিশ্লেষণের তোয়াক্কা না করে ‘বাবার জন্যই ছেলের এই অবস্থা;’ অথবা ‘যেমন বাবা তেমন সন্তান’-এই ধরনের সরলীকরণ করে ফেলেন কেউ কেউ। হ্যাঁ সন্তানের বেড়ে ওঠায়, তার মনোজগৎ তৈরিতে, তার নৈতিকতার শিক্ষায় মা-বাবা বা পরিবারের গুরুত্ব অপরিসীম কিন্তু পরিবারই একমাত্র বিষয় নয়। একটি সুসংগঠিত পরিবার সন্তানের আদর্শ মনোজগৎ গড়ে তুলতে পারে কিন্তু কখনো কখনো পরিবারকে ছাপিয়ে পরিবেশ আর সমবয়সীদের প্রভাবও পড়তে পারে। একটা সাধারণ ধ্রুব সত্য বিশ্বাস করতে হবে যে মা-বাবা কখনোই সন্তানের অমঙ্গল চান না। কখনো তাঁদের ভালো করতে চাওয়ার প্রক্রিয়ায় ভুল থাকার কারণে সন্তান বিপথগামী হতে পারে। আবার সঙ্গদোষে সে জড়িয়ে পড়তে পারে অপরাধে, কোনো মানসিক সমস্যার কারণে সন্তানের মনোবিকাশ বাধাগ্রস্ত হতে পারে। এমনকি কোনো বিশেষ গোষ্ঠী উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে এই কোমলমতি তরুণদের মধ্যে অন্ধকারের বীজ রোপণ করে দিতে পারে।

সন্তান যখন এমন কোনো একটি অন্ধকারের পথে নিরুদ্দেশ যাত্রা শুরু করে একসময় তা সবার গোচরে চলে আসে। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী, সংবাদকর্মী, স্বজন, প্রতিবেশী, সাধারণ মানুষ সবাই তখন বিষয়টি নিয়ে নিজ নিজ অবস্থানে থেকে প্রতিক্রিয়া দেখানো শুরু করে দেয়। এ সময় মা-বাবারা একধরনের তীব্র মানসিক চাপের মুখোমুখি হন। এই চাপ পরে দীর্ঘমেয়াদি হলে মা-বাবার মধ্যে উদ্বিগ্নতা, হতাশা, বিষণ্নতা, অস্বাভাবিক আচরণসহ নানা মানসিক সমস্যা দেখা দিতে পারে। এই অবস্থা থেকে বের হতে সবার সহযোগিতা প্রয়োজন। মনে রাখবেন প্রত্যেকের অপরাধ স্বতন্ত্র। মা-বাবা যদি প্রত্যক্ষভাবে সন্তানের অপরাধের সঙ্গে জড়িত না থাকেন, তবে কোনোভাবেই তাঁদের দায়ী করা যাবে না। আর সন্তান এবং মা-বাবার মধ্যে যে বন্ধন থাকে তা অপার্থিব। সন্তানের অপরাধ তা যতই গুরুতর হোক, কোনোভাবেই এই বন্ধনকে ছিন্ন করতে পারে না।

অধিকাংশ সময় মায়েরা ঘরে থাকেন। কিন্তু বাবারা বাইরে থাকেন। তাদেরই বেশি সহ্য করতে হয় সন্তানের অপরাধের বোঝা।

বাংলা ইনসাইডার

 



প্রধান সম্পাদকঃ সৈয়দ বোরহান কবীর
ক্রিয়েটিভ মিডিয়া লিমিটেডের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান

বার্তা এবং বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ২/৩ , ব্লক - ডি , লালমাটিয়া , ঢাকা -১২০৭
নিবন্ধিত ঠিকানাঃ বাড়ি# ৪৩ (লেভেল-৫) , রোড#১৬ নতুন (পুরাতন ২৭) , ধানমন্ডি , ঢাকা- ১২০৯
ফোনঃ +৮৮-০২৯১২৩৬৭৭