লিভিং ইনসাইড

আপনি যদি ভালো বাবা হতে চান…

নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রকাশ: 16/06/2019


Thumbnail

ছেলেটিকে নিয়ে বহুদিন কোথাও বের হওয়া হয়নি, সন্তানদের পড়াশুনা নিয়েও বসতে পারেন না সময়মতো। আবার তাদের ব্যক্তিগত শখ বা ইচ্ছা নিয়েও কখনো কথা হয় না, বরং তাদের ওপরে নিজের সিদ্ধান্তগুলো চাপিয়ে দিয়েই আপনি ক্ষান্ত দেন। বাবা হিসেবে শুধু এগুলোই কি আপনার কর্তব্য? অবশ্যই না। আপনার কর্তব্য সর্বক্ষণে তাদের পাশে থাকা। আর তা না হলে আপনি ভালো বা আদর্শ বাবা হয়ে উঠবেন কীভাবে?

ভালো বাবা হতে চান তো? আবার ভাবতে পারেন বাবার খারাপ বা ভালো হয় নাকি আবার। আছে, আদর্শ বাবা তো হওয়া যায়। তাই জেনে নিন এই বিষয়গুলো-

১. সবার আগে সন্তানের সঙ্গে দূরত্ব কমান। অনেক পরিবারেই সন্তানের কাছে বাবা বেশ দূরের, বাবাকে তারা ঠিকমতো কাছেও পায় না। তাদের শুধু খরচ দিলেই তো দায়িত্ব শেষ হয় না, ভালো বাবা হয়ে ওঠার প্রথম ধাপ হল ছেলেমেয়ের কাছের লোক হওয়া। তাই কাজে যতই ব্যস্ত থাকুন, সন্তানকে নিয়মিত সময় দিন। পড়াশোনায় সাহায্য করুন, বেড়াতে নিয়ে যান, ছুটির দিনে একসঙ্গে খেলা বা বাড়ির কাজ করতে করতে তাদের ভালো বন্ধু হয়ে উঠুন।

২. বাবামায়ের সম্পর্ক সন্তানের শৈশবকে প্রভাবিত করে। বাবামায়ের মধ্যে টানা অশান্তি, ঝগড়া, দোষারোপগুলো শিশুর মনে জটিল নিরাপত্তাহীনতা সৃষ্টি করতে পারে। শিশুরা মায়ের কাছাকাছি থাকে বলে বাবামায়ের ঝগড়ার সময় শিশুরা মায়ের পক্ষে যায়। ফলে বাবা তাদের কাছে খারাপ হয়ে যেতে পারে। স্বামী-স্ত্রীর মতের অমিল হলেও সেটার খারাপ দিকটি কখনোই সন্তানের সামনে আনবেন না। আর বাবাদের উচিৎ না ছেলেমেয়েদের সামনে মায়ের নানা দোষগুণ নিয়ে মজা করেন। এর ফলে দুজনের প্রতিই খারাপ ধারণা তৈরি হয়।

৩. সংসারের কাজকর্ম, সন্তানদের দায়িত্ব বেশিরভাগই স্ত্রীর ঘাড়ে চাপানো থাকে। বাবাদের এই বিষয়ে আগ্রহ একটু কমই থাকে। এতে করে সন্তানেরা ভেবে নিতেই থাকে যে বাবারা বুঝি সংসার, তাদের আর তার মাকে নিয়ে খুব একটা ভাবেন না। তাদের মনে ধারণাই হয় এটা বাবার দায়িত্বহীনতা। সে হয়ত বাইরের জগৎটা নিয়েই বেশি ব্যস্ত।

তাই একেবারে শুরু থেকেই বাড়ির এবং বাইরের কাজ সমানভাবে ভাগ করে নিন স্ত্রীর সঙ্গে। ছেলেমেয়েরা বড় হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে ওদের উপরেও দায়িত্ব দিতে শুরু করুন।

৪. সাধারণত সন্তানের জীবনে বাবামায়ের ভূমিকা ভিন্ন হয়। সেক্ষেত্রে আপাতদৃষ্টিতে  মায়ের ভূমিকাটাই বেশি থাকে। কারণ সন্তান মায়ের সঙ্গেই বেশি সময় কাটায়। তাই বাবা হয়ে যদি মাঝে মাঝে মায়ের দায়িত্বগুলো পালন করতে পারেন, তাহলে সন্তান আপনাকে আরও কাছে পাবে, আপনাদের বন্ধন আরও মজবুত হয়ে উঠবে।

৫.আপনার যে দক্ষতাগুলো ভালো রয়েছে সেগুলো ধীরে ধীরে আপনার সন্তানকে শিখিয়ে দিন। এই ধরুন, সংসারের হিসাবনিকাশটা আপনি ভালো বোঝেন, কীভাবে কোথায় খরচ করতে হবে বা কোথায় কীভাবে খরচ করতে হবে সেটা তাদের বোঝান। আপনার খেলাধুলার প্রতি ঝোঁক থাকলে সেগুলোর প্রতি সন্তানকে উৎসাহী করুন। এতে সে আপনাকে আলাদা করে চিনবে, ঘনিষ্ঠতা বাড়বে।

৬. সন্তানদের বিভিন্ন শখ এবং সৃজনশীল কাজে উৎসাহ দিন। এতে নিজেকেই নিজের ছেলেবেলায় ফিরে পাবেন। সন্তানের স্কুল বা কলেজ প্রোজেক্টের কাজগুলোতে নিজ থেকে সাহায্য করুন। গানের রিহার্সেলে পারলে নিজেও গলা মেলান। কোনো অ্যাসাইনমেন্ট থাকলে সেটা একটু এগিয়ে দিতে চেষ্টা করুন যতই ব্যস্ত থাকেন না কেন। দেখবেন সন্তানের কাছে আপনার একটা কদর থাকবে।

৭. সন্তানের কাছে কোনো কথা দিলে সেটা রাখার চেষ্টা করবেন। আপনার শত ব্যস্ততা থাকলেও সন্তানের ছোট ছোট চাওয়াকে প্রাধান্য দিতে চেষ্টা করবেন। সে যদি আপনার সাধ্যের মধ্যে চায় তো সেটা পূরণ করবেন। মাঝেমাঝে পারিবারিক কোনো সিদ্ধান্তে তার মতামত নিতে চেষ্টা করবেন। ওর স্কুলের কলেজের খোঁজ নেবেন, মাঝেমাঝে তাকে সেখান থেকে আনা-নেওয়া করবেন। সন্তানের বন্ধুদের সঙ্গেও সখ্যতা রাখবেন। এগুলোতে ওর আত্মবিশ্বাস বাড়বে।

৮. আপনি বাবা, পরিবারে আপনার কথা সবাই মেনে চলবে- এটা কখনো সন্তানের ওপর চাপিয়ে দেবেন না। সন্তানকে নিজের মতো বড় হতে দিন। নিজের অপূর্ণ ইচ্ছা সন্তানের ওপর চাপিয়ে দেওয়ার ভুলটি করতে যাবেন না। আপনি যা হতে পারেননি, তা তাদেরকে হতে হবে এমনটাও নয়। সন্তান কি চায় আগে সেটা তাকে প্রশ্ন করুন। নিজের মতামত চাপিয়ে দিলে সন্তানের নিজের শৈশব বলে কিছু থাকবে না। আর সন্তানকে শাসন বা নিয়ন্ত্রণ করুন নমনীয়ভাবে। তার কোনটা করণীয়, কোনটা করণীয় নয় সেটা তাকে বুঝান। মারধোর, বকা, অপমান, শাস্তি কোনো দীর্ঘস্তায়ী সমাধান হতে পারে না।

বাংলা ইনসাইডার/এসএইচ

 



প্রধান সম্পাদকঃ সৈয়দ বোরহান কবীর
ক্রিয়েটিভ মিডিয়া লিমিটেডের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান

বার্তা এবং বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ২/৩ , ব্লক - ডি , লালমাটিয়া , ঢাকা -১২০৭
নিবন্ধিত ঠিকানাঃ বাড়ি# ৪৩ (লেভেল-৫) , রোড#১৬ নতুন (পুরাতন ২৭) , ধানমন্ডি , ঢাকা- ১২০৯
ফোনঃ +৮৮-০২৯১২৩৬৭৭