ইনসাইড থট

এমপি ফারহানা: এক অতৃপ্ত অভিশপ্ত আত্মার রূপ!

নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রকাশ: 17/06/2019


Thumbnail

সংসদে সংরক্ষিত নারী আসনে নির্বাচিত সাংসদ রুমিন ফারহানা আবার আলচনায় আসার নিজ পিতার পদাঙ্ক অনুসরণ করে চরম মিথ্যাচারের সমূদ্রে গা ভাসিয়েছেন। কে এই এমপি ফারহানা! তাঁর রক্তের ধারার অতীত রাজনৈতিক ইতিহাস না জানলে তাঁকে জানতে আমাদের অসুবিধা হতে পারে। তাই উনার এই অবিরাম মিথ্যাচারের পিছনে কী কী কারণ থাকতে পারে তার একটা হিসেব নেওয়া দরকার।     

সাংসদ ফারহানার পিতার নাম অলি আহাদ, যিনি ভাষা সৈনিক নামে পরিচিত। অলি আহাদ পাকিস্তান স্বাধীন হবার পরে মুসলীম লীগের যুবলীগ হয়ে, গণ আযাদী লীগ থেকে বঙ্গবন্ধুর সহচর্যে এসে আওয়ামী লীগে যোগ দিয়ে প্রথমে প্রচার সম্পাদক আর পরে সাংগঠনিক সম্পাদক নির্বাচিত হন। এর আগে তিনি ১৯৫২ সালের ভাষা আন্দলনে যোগ দিয়ে, সামসুল হক, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবর রহমানসহ অন্যদের সাথে জেলে যান। আওয়ামী লীগে থাকা অবস্থায় তিনি ১৯৫৪ সালের যুক্ত ফ্রন্টের নির্বাচনে যাবার ঘোর বিরধিতা করেন। নির্বাচন পরবর্তী তাঁর কার্যকলাপে ধারণা করা হয় যে তিনি পাকিস্তানি সরকারের এজেন্ট হয়েই এটা করেছিলেন। কারণ তিনি কাগ্মারী সম্মেলনে আওয়ামী লীগ ছেড়ে চলে যান মওলানা ভাসানীর সাথে। কিন্তু তিনি সেখানেও না থেকে আইয়ুব খানের পাণ্ডা হিসেবে ন্যাশনাল ডেমোক্রেটিক ফ্রন্ট গঠনে বিরাট অবদান রাখেন। উণসত্তরের গণঅভ্যুত্থানের পরে যখন বাঙ্গালীরা অধিকাংশই পশ্চিমাদের বিরুদ্ধে সোচ্চার ঠিক সেই সময় ১৯৭০ সালে তিনি গঠন করেন পাকিস্তান ন্যাশনাল লীগ, হন তার সভাপতি। এখানেও সুবিধা করতে না পেরে তিনি কাগুজে সংগঠন ডেমোক্রেটিক লীগ গঠন করে তার চেয়ারম্যান হন। স্বাধীনতা যুদ্ধে তাঁর অবদান কেমন হতে পারে উপরের ঘটনা থেকে তা সহজেই অনুমান করা যায়। তাই সদ্যস্বাধীন দেশ ও সরকারের বিরুদ্ধে নানা অপরাধ সংঘটনের ফলে ১৯৭৪ সালে অলি আহাদ গ্রেফতার হয়ে জেলে যান এবং বঙ্গবন্ধু নিহত হবার দিন তাঁকে জেল থেকে মুক্তি দেওয়া হয়।             

সাংসদ ফারহানার পিতা অলি আহাদের রাজনৈতিক জীবন পর্যালোচনা করলে দেখা যায় যে তিনি এক অভিশপ্ত, অতৃপ্ত আত্মার রাজনীতিক। নিজে নিজে বহুবার তিনি তাঁর রাজনৈতিক স্বত্বাকে হত্যা করেছেন যা তাঁর জন্য রাজনৈতিক আত্মহত্যার সামীল। শুধু ইসলামেই আত্মহত্যা নিসিদ্ধ বা পাপ কাজ নয়, হিন্দু শাস্ত্রমতে স্বাভাবিক মৃত্যু ও আত্মহত্যার মধ্যে বিস্তর ফারাক আছে। তাই এই দুই ক্ষেত্রে আত্মার ভাগ্যও বদলে যায়। আত্মহত্যা যেহেতু অস্বাভাবিক মৃত্যুর একটা চূড়ান্ত রূপ, নিজেই নিজেকে খুন করা, প্রকৃতির তৈরি স্বাভাবিক নিয়মকে লঙ্ঘন করা, তাই শাস্ত্রমতে আত্মহত্যাকে পাপকার্য হিসেবে দেখানো হয়েছে। তাই মৃত্যুর পরেও কিছু শাস্তি পেতে হয় আত্মঘাতীর আত্মাকে। যে ব্যক্তি আত্মহত্যা করেন, মৃত্যুর পরেও তার আত্মা পূর্ণ সচেতন থাকে। তাই আত্মহত্যাকারীর আত্মা শান্তির  জন্য হন্যে হয়ে দ্বারে দ্বারে ঘুরে ফেরে, একটু শান্তির আশায়। যেমন দ্বারে দ্বারে ঘুরে ফেরে বহুগামী পুরুষ ও নারীরা, একটু সুখ ও শান্তির আশায়, কিন্তু তারা তা পায় না। অলি আহাদের ক্ষেত্রেও সেই একই অবস্থা দেখা যায়। রক্তের উত্তরাধিকার হিসেবে সাংসদ ফারহানার কী সেই একই সমস্যার লক্ষণ দেখা যায়! তা না হলে তিনি সংসদে সংরক্ষিত নারী আসনের সাংসদ। তাঁকে নিয়ে বিভিন্ন প্রিন্ট মিডিয়ায় নানা কথা আর ছবি ছাপা হয় কেন!  

১৯৭২-এর সংবিধানে ৩০০ নির্বাচনী এলাকায় প্রত্যক্ষ নির্বাচনের মাধ্যমে ৩০০ সদস্য নির্বাচিত হওয়ার বিধান করা হয়। তখন একটি উপধারায় এ ঘোষণাও দেওয়া হয় যে ‘সংবিধান প্রবর্তন হইতে ১০ বৎসরকাল অতিবাহিত হওয়ার অব্যবহিত পরবর্তীকালে সংসদ’ ভেঙে না যাওয়া পর্যন্ত ১৫টি আসন কেবল নারী সদস্যদের জন্য সংরক্ষিত থাকবে এবং তাঁরা আইন অনুযায়ী পূর্বোক্ত সদস্যদের দ্বারা নির্বাচিত হবেন। ১৯৭৮ সালে নারীদের সংরক্ষিত আসনের সংখ্যা বাড়িয়ে করা হয় ৩০। পরে তা বাড়িয়ে প্রথমে ৪৫ এবং তাঁর পরে করা হয় ৫০ আসন।    

রুমিন বার বার বলেন এই সংসদ অবৈধ। তাঁর কথা শুনে মনে হয় তিনি মনে হয় সেই অবৈধ সংসদের একমাত্র বৈধ সাংসদ কারণ তিনি একমাত্র যিনি লণ্ডনে গিয়ে ‘লন্ডন রহমান ভাই’য়ের প্রত্যক্ষ ভোটে নির্বাচিত হয়েছেন। তা না হলে তিনি গতকাল সংসদে বলেছেন, সংবিধানের ৬৫ (২) ধারায় বলা আছে, জনগণের প্রত্যক্ষ ভোটে জনপ্রতিনিধি নির্বাচিত হতে হবে।... এখানে যারা আছেন তাঁরা কয়জন জনগণের প্রত্যক্ষ ভোটে নির্বাচিত হয়েছেন! আসলেই ‘যার মনে যা ফাল দিয়ে ওঠে তা’। তিনি তো সংবিধান অনুযায়ী ৩০০ নির্বাচিত সদস্যদের ভোটে নির্বাচিত হননি যেমন ঘটে রাষ্ট্রপতি নির্বাচন বা স্পিকার নির্বাচনের সময়। রুমিন সাহেবা এবং তাঁদের হালের জোট নেতা ড. কামাল হোসেন অনেকবার এমন ফালতু কথা বলেছেন, যিনি বঙ্গবন্ধুর দয়ায় বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় ২ বার বিনা ভোটে জাতীয় সংসদে সাংসদ নির্বাচিত হয়েছিলেন, মন্ত্রী হয়েছিলেন।   

ব্যারিস্টার ফারহানাকে বলি, দয়া করে বিএনপি’র গঠনতন্ত্র একবার পড়ে দেখুন আপনার মনোনয়ন বৈধ কি না। আপনি কী আওয়ামী লীগের কর্মীদের মামলা না করার নীতির বদৌলতে, দয়ায় এমপি হয়ে আপনার ভাষায় ‘অবৈধ সংসদের’ বৈধ সুযোগ সুবিধা নিচ্ছেন! নাকি আপনার বাবার অভিশপ্ত, অতৃপ্ত আত্মা উত্তরাধিকার সুত্রে আপনার উপর ভর করেছে! তার থেকে মুক্তির পথ খুঁজতে এমন আবোলতাবোল বকছেন!

বাংলা ইনসাইডার 



প্রধান সম্পাদকঃ সৈয়দ বোরহান কবীর
ক্রিয়েটিভ মিডিয়া লিমিটেডের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান

বার্তা এবং বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ২/৩ , ব্লক - ডি , লালমাটিয়া , ঢাকা -১২০৭
নিবন্ধিত ঠিকানাঃ বাড়ি# ৪৩ (লেভেল-৫) , রোড#১৬ নতুন (পুরাতন ২৭) , ধানমন্ডি , ঢাকা- ১২০৯
ফোনঃ +৮৮-০২৯১২৩৬৭৭