ইনসাইড বাংলাদেশ

এত স্বর্ণ যাচ্ছে কোথায়?

নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রকাশ: 20/05/2017


Thumbnail

কিছুদিন পরপরই সংবাদমাধ্যমে আসে শাহজালাল বিমানবন্দরে স্বর্ণ উদ্ধারের খবর। কয়েকটি বার থেকে শুরু করে শত কেজি পর্যন্ত স্বর্ণ উদ্ধার হয়েছে বিমানবন্দরে। উদ্ধার হওয়া এমন স্বর্ণের কী হয় এ নিয়ে আছে নানা প্রশ্ন।

১৯৮৫ সালে চোরাচালানের ৯৬ দশমিক ৫২৫ কেজি স্বর্ণ উদ্ধার করা হয়। ১৯৮৬ সালে উদ্ধার হয় ১২০ দশমিক ২২৫ কেজি স্বর্ণ। ওই সময় থেকে যত দিন গেছে স্বর্ণের চোরাচালান বেড়েছে। ২০১৪ সালে ১০৫ কেজি ওজনের সমপরিমাণ ৯০৪টি স্বর্ণের বারের একটি চালান আটক করা হয়।

শুল্ক গোয়েন্দা ও তদন্ত অধিদপ্তরের তথ্য মতে, ২০১৩ সালে সারা দেশে থেকে উদ্ধার করা হয় ১৫১ দশমিক ৫৪ কেজি স্বর্ণ যার দাম ৬৭ কোটি ৫৩ লাখ টাকা। ২০১৪ সালে উদ্ধার করা স্বর্ণের পরিমাণ ৬৪১ দশমিক ৯০৮কেজি, যার দাম ৩০১ কোটি ৪৫ লাখ টাকা। ২০১৫ সালে উদ্ধার করা স্বর্ণের পরিমাণ ২০৩ দশমিক ৫৪ কেজি, যার দাম ৯৮ কোটি ১ লাখ টাকা। ২০১৬ সালে উদ্ধার করা স্বর্ণের পরিমাণ ৬৯ দশমিক ২৪ কেজি, যার দাম ৩৪ কোটি ৫৭ লাখ টাকা। ২০১৭ সালের জানুয়ারি থেকে এপ্রিল পর্যন্ত উদ্ধারকৃত স্বর্ণের পরিমাণ ৮৫ দশমিক ৯৮ কেজি, যার দাম ১৯ কোটি এক লাখ টাকা।

গোয়েন্দা তথ্য সূত্রে জানা গেছে, গত চার বছরে শুল্ক গোয়েন্দা ও তদন্ত অধিদপ্তর উদ্ধার করেছে এক টনেরও বেশি স্বর্ণ। এসব স্বর্ণের দাম ৫২০ কোটি ৮৬ লাখ টাকা।

উদ্ধার করা এসব স্বর্ণ বাংলাদেশ ব্যাংকে জমা করা হয়। আর মামলা নিষ্পত্তির পর স্বর্ণ ব্যবসায়ীদের কাছে নিলামে বিক্রি করে দেওয়া হয়। তবে গত চার বছরে উদ্ধার হওয়া স্বর্ণের মধ্যে কী পরিমাণ স্বর্ণ নিলামে বিক্রি করা হয়েছে বা কী পরিমাণ স্বর্ণ এখনো বাংলাদেশ ব্যাংকে জমা আছে, সে তথ্য নেই শুল্ক গোয়েন্দা অধিদপ্তরের কাছে। তাহলে প্রশ্ন হোল এত স্বর্ণ যাচ্ছে কোথায়?

বাংলাদেশের আইন অনুযায়ী, একজন যাত্রী ২০০ গ্রাম স্বর্ণ এবং ১০০ গ্রাম বার ১০ ভরি স্বর্ণালংকার আনতে পারে ‘ডিউটি’ দিয়ে।

চোরাচালান হোক বা সঠিক পদ্ধতিতে হোক, স্বর্ণ বাংলাদেশে ঢুকছে। আমাদের স্বর্ণর খনি নেই, অথচ স্বর্ণর চাহিদা আছে। তবে সেই চাহিদা মেটানোর উপায় কী? দেশীয় চাহিদা আছে কী বিপুল পরিমাণ স্বর্ণ আসছে।
শুল্ক গোয়েন্দা ও তদন্ত অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা বলেন, শুল্ক গোয়েন্দা ও তদন্ত অধিদপ্তর বিভিন্ন বিমানবন্দর থেকে স্বর্ণ আটক করে। ওই স্বর্ণ ঢাকা কাস্টমস হাউজের মাধ্যমে বাংলাদেশ ব্যাংকে একটি জিআরও নম্বরের মাধ্যমে জমা দেওয়া হয়। ঢাকা কাস্টমস হাউস উদ্ধারকৃত ওই স্বর্ণের নিষ্পত্তি করে বাংলাদেশ ব্যাংকে।

উদ্ধারকৃত স্বর্ণের মালিকানা দাবি করে কেউ যদি ওই স্বর্ণ নির্ধারিত শুল্ক পরিশোধকরে তাহলে তারা তা নিয়ে যেতে পারে। তবে কেউ যদি দাবি না করে তখন বাংলাদেশ ব্যাংক ওই স্বর্ণ নিলাম করে। বাংলাদেশে জুয়েলারি ব্যবসায়ী সমিতির সদস্যরা ওই স্বর্ণ নিলামে কিনে নেয়। আর নিলামে বিক্রি করা ওই টাকা রাষ্ট্রীয় কোষাগারে জমা দেওয়া হয়।

তারমানে ঘুরেফিরে পাচারকৃত স্বর্ণ বাংলাদেশের স্বর্ণালংকার ব্যবসায়ীদের কাছেই যাচ্ছে। পাচারকালে ধরা না পড়া স্বর্ণও কী তাদের কাছেই যাচ্ছে? সম্প্রতি শুল্ক গোয়েন্দা বিভাগ দাবি করেছে, বাংলাদেশের স্বর্ণালংকার ব্যাবসা পুরোপুরি চোরাচালানের ওপরই নির্ভরশীল।

আবার অনেকের মতে, বাংলাদেশের বিমানবন্দর হয়ে ঢোকা বিপুল পরিমাণ স্বর্ণের একটি বড় অংশ স্থলসীমান্ত দিয়ে ভারতে প্রবেশ করে। আন্তর্জাতিক চোরাকারবারীরা একটি রুট হিসেবেও বাংলাদেশকে ব্যবহার করছে।

এখন প্রশ্ন হচ্ছে, বাংলাদেশের স্বর্ণালংকার ব্যবসায় চোরাচালান হওয়া স্বর্ণ ব্যবহার বন্ধে কী পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে? আর স্বর্ণ চোরাচালাকারী গডফাদারদের ধরতেই কতোটা উদ্যোগী বাংলাদেশের আইনশৃঙ্খলা বাহিনী?


বাংলা ইনসাইডার/আরএস




প্রধান সম্পাদকঃ সৈয়দ বোরহান কবীর
ক্রিয়েটিভ মিডিয়া লিমিটেডের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান

বার্তা এবং বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ২/৩ , ব্লক - ডি , লালমাটিয়া , ঢাকা -১২০৭
নিবন্ধিত ঠিকানাঃ বাড়ি# ৪৩ (লেভেল-৫) , রোড#১৬ নতুন (পুরাতন ২৭) , ধানমন্ডি , ঢাকা- ১২০৯
ফোনঃ +৮৮-০২৯১২৩৬৭৭