ইনসাইড থট

বহুমুখী ঝুঁকিতে প্রধানমন্ত্রী

নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রকাশ: 20/06/2019


Thumbnail

বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ দেশের অন্যতম প্রাচীন রাজনৈতিক দল। কিন্তু ২০০৭-২০০৮ সালের আগে-পরে এই দলের মধ্যে বহু সুবিধাবাদী রাজনিতিক ঢুঁকে পড়েছেন। কিছু ভালো লোক আসেননি তা হয়, তবে তাঁদের সংখ্যা খুব কম। বিভিন্ন দল থেকে আসা এরা টাকা পয়সা খরচ করে দলে পদ বাগিয়ে নিয়েছেন, ক্ষমতাশালী হয়েছেন, সুবিধাবাদী আর আত্মীয়স্বজনদের নিয়ে একটা বলয় তৈরী করেছেন ত্যাগীদের সরিয়ে। অভিযোগ আছে যে, তারা আওয়ামী লীগ, যুবলীগ ও ছাত্রলীগের কমিটি নিজেদের মত করে নিতে অনেক টাকা খরচ করেছে কারণ কিছুদিন আগেই তারা ক্ষমতায় থেকে অনেক টাকা দুর্নীতির মাধ্যমে কামিয়েছে। এরা রঙ বদলিয়ে এখন খুব এক্টিভ। এর ফলে স্থানীয় নির্বাচনে মাঝে মাঝেই নৌকার বিরুদ্ধে বিদ্রোহ হচ্ছে। এটা হচ্ছে দুইভাবে। এক- স্থানীয় কমিটি দখল করা নব্যরা ভুল নমিনেশন দিতে কেন্দ্রকে প্রভাবিত করছে। দুই- ত্যাগীদের কেউ কেউ মনের দুঃখে প্ররোচিত হয়ে বিদ্রোহ করে নির্বাচনে জিতে আসছে। এমতবস্থায় ত্যাগীদের সামনে না আনলে দলের টেকসই অবস্থান ধরে রাখা যাবে না। নব্যরা দলের দুর্দিনের আভাস পেলেই সটকে পড়বে নতুন সুবিধার সন্ধানে।   

১৯৭৫ পরবর্তী ত্যাগী ছাত্রলীগাররা অধিকাংশই সৎ, নির্লোভ, কমিটেড এবং ভালো সংগঠক। ১৯৭২-১৯৭৫ সালের সরকার ও দলের যত সব নেগেটিভ ইমেজ তৈরী হয়েছিলো বিভিন্ন অপপ্রচারে, তা দূর করে মানুষের মাঝে মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ফিরিয়ে আনতে কী কষ্ট তারা করেছেন তা এখন অনুধাবন খুব কঠিন। কারণ এখন আইটির যুগ, এক আঙ্গুলের টোকা দিলে গুগল এ সব তথ্য পাওয়া যায়, তখন সেই সুবিধা ছিল না। কিন্তু বাম, বিশেষকরে চৈনিক বাম আর জামায়াতের লেখা ও প্রকাশিত বিভিন্ন বই, টেলিভিশন আর পত্রিকার অপপ্রচারে মুক্তুযুদ্ধের চেতনার মানুষের রাজনীতি করা তো দুরের কথা সমাজে টিকে থাকাই দুরহ ছিল। স্বাধীনতা বিরোধীরা জানে যে ভারত উপমহাদেশের মানুষ ছাপার অক্ষরে লেখাকে ধর্মগ্রন্থের পরেই বেশি বিশ্বাস করেন। যারা এই অপকর্মের বিরুদ্ধে লড়াই করেছেন সেই সব ছাত্রলীগ, যুবলীগ কর্মীদের, নেতাদের কোন মূল্যায়ন নেই যদিও তারা অধিকাংশই ছিলেন একেকজন সাচ্চা মুজিব সেনা। জনাব ওবায়দুল কাদের সাহেব তো নিজেই মোটাদাগে সারা দেশের ত্যাগী বঙ্গবন্ধু প্রেমিকদের সবাইকেই চেনেন, কারা ছিলেন সেই দুর্দিনে ছাত্রলীগের সাংগঠনিক জেলায়! এখনই সময় অভিমানে চুপ থাকা ওদের দলে ও সমাজে সম্মানের সাথে কাজে লাগানো।   

বিরোধীদলের মিথ্যাচার ও রাজনৈতিক কর্মসূচী মোকাবিলা করতে দরকার নিবেদিত প্রাণ ১৯৭৫ পরবর্তী ত্যাগী কর্মীর সমন্বয়ে গড়া মজবুত মূল ও সহযোগী সংগঠন। জামায়াতসহ ইসলামপন্থী দলের লোকেরা চুপ থেকে থেকে আওয়ামী লীগ বা জোটে ঢুঁকে যাচ্ছে। তারা কাল সাপ হয়ে ছোবল দেবে। বিতাড়িত কালসাপ ‘গোলমাল রনি’র সাম্প্রতিক ফেসবুকের স্ট্যাটাস দেখলে কিছুটা বুঝা যায়। ‘রাতের সব তারাই থাকে দিনের আলোর গভীরে’ কথাটা এখন মনে রাখা জরুরী। লুট ও দুর্নীতির টাকায় ১৯৭১ পরবর্তী ও বিএনপি জামায়াত আমলে বিদেশে যাওয়া একদল শিক্ষিত নষ্ট বাঙ্গালী, বিদেশে বসে বসে সোশ্যাল মিডিয়ায় নানা ফেক ডকুমেন্ট তৈরী করে অপপ্রচার করে, গুঁজব ছড়ায়। এতে উন্নত দেশে লোকেরা কিছুটা হলেও বিভ্রান্ত হয়। বার বার একই মিথ্যা নানাভাবে প্রচারে অনেক দেশের মানুষ, সরকার এমনকি নিজ দেশের মানুষও প্রথমে বিভ্রান্ত হয়ে পরে বিশ্বাস করতে শুরু করেন। এটাও একটা ঝুঁকি।     

আমলাদের সাথে বিশেষকরে আমলা পলিটিশিয়ান যারা উপদেষ্টা হয়েছেন তাঁদের বিরোধ চরমে উঠলেও সমস্যা কম। কারণ তাঁরাও ‘সাপুড়ে’, সাপ নিয়ে তারা খেলতে পারবেন। কিন্তু আমলাদের ক্ষমতা বেশী বাড়ালে নিরাপদ খাদ্য অভিযান, দুরনীতিবিরোধী অভিযান, ইত্যাদি মুখ থুবড়ে পড়বে। কর্মীদের চাপে বিভিন্ন আবেদনপত্রে মন্ত্রি এমপিদের সুপারিশ নেতাদের কাল হয়ে দাঁড়াতে পারে। এতে আমলাদের সাথে বিরোধের মাত্রা ছাড়িয়ে যাবে সারা দেশে, কারণ স্বার্থের বেলায় দুষ্টু আমলারা এক হয়ে সবাইকে লোভের ছিপে আটকাবে। বালিশ মাসুদরা বিভিন্ন উন্নয়ন প্রকল্পের খুব গুরুত্বপূর্ণ পদ ইতোমধ্যেই দখল করে নিয়েছে নষ্ট-ভ্রস্ট নব্য আওয়ামী লীগার আর তাদের সহযোগী আমলাদের সহায়তায়, কামিনী আর কাঞ্চন দিয়ে। সড়ক, ব্রীজ, রেলওয়ে, ইত্যাদি অবকাঠামোগত উন্নয়ন দপ্তরের গুরুত্বপূর্ণ পদের অধিকাংশই ‘হৃদয়ে বঙ্গবন্ধু বিরোধী’দের দখলে।  

দুর্নীতির বিরুদ্ধে অবস্থানের ঝুঁকিতে আছেন আমাদের প্রধানমন্ত্রী। তিনি জানেন যে শক্তি দুই প্রকার। এক- রাজনৈতিক শক্ত আর দ্বিতীয় হচ্ছে অর্থনৈতিক শক্তি। এক শক্তি আরেক শক্তিকে কিনে নিতে পারে যদি দলে তৃণমূল পর্যায় পর্যন্ত ত্যাগী কর্মীবাহিনীতে দুর্বলতা থাকে। এর একটা জলন্ত উদাহরণ হচ্ছে ১৯৯০ সালের গণভ্যুত্থানের পরে ১৯৯১ সালের জাতীয় সংসদ নির্বাচনে এরশাদের দল পেয়েছিল ৩৫টা আসন। এর মূলে ছিল এরশাদ সাহেবের দলের অর্থনৈতিক শক্তি। বিএনপি- জাম্যাতের কর্মীরা এখন ব্যবসায়ী সেজে বিভিন্ন উন্নয়ন প্রকল্পে মোটা অংকের কমিশন দিয়ে সাব-কন্ট্রাক্ট করছে দেদারছে, যেমনটি করেছিলো রাজাকাররা ১৯৭২ থেকে ১৯৭৫ পর্যন্ত। সাম্প্রতিক অভিযানেই তার প্রমাণ পাওয়া গেছে মঞ্জুর হাসান শাহরিয়ারের বদলি কেসে।    

ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে ট্যাক্স আদায় ও নতুন ফর্মুলায় ভ্যাট আদায়ে অসাধু ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে অভিযান চলছে। ব্যবসায়ীদের মাঝের অসন্তোষে প্রশাসনে লুকিয়ে থাকা সরকারবিরোধী আমলা ও ব্যবসায়ীরা কালো টাকা পাচারে বাঁধা পেয়ে নতুন সমস্যা তৈরী করবে। তারা কালো টাকা দিয়ে নিরাপদ সড়ক আন্দোলন বা কোটা বিরোধী আন্দোলনের মত আন্দোলনের জন্ম দিতে পারে অর্থের বিপুল অর্থের যোগান দিয়ে, যদিনা  দেশে মালয়েশিয়ার মত করে সৎ ব্যবসায়ী, সৎ আমলা আর সৎ রাজনীতিবিদগণের সমন্বয়ে একটা ‘ট্রাইএংগেল অফ হোপ’ তৈরী করা যায়।    

অষ্টাদশ শতকের মোগল আমলের সুবা বাংলায় গনতান্ত্রিক সরকার ছিল, এই সেই বাংলা যারা দুনিয়ার টোটাল জিডিপির ১২ শতাংশের অংশিদার ছিল একাই। যারা আমাদের শোষণ করে, আমাদের দেশের গন্তান্ত্রিক ব্যবস্থা, অর্থনৈতিক অবস্থা ধ্বংস করেছে তারা এখন আমাদের দেশের কিছু দালাল সুশীল, দুর্নীতির টাকায় নিয়োজিত আন্তর্জাতিক লবিস্ট দিয়ে নিজেদের লাভের কাজ করছে যা আমাদের জন্য কূটনৈতিক ঝুঁকি। ইইউ এর ঘাড়ে বন্দুক রেখে কয়েকদিন আগেই একটা দল আমাদের দেশে এসে সুশীলদের সুযোগ- সুবিধা দেওয়া, মানবাধিকার, মত প্রকাশের স্বাধীনতা, ইত্যাদি না বিষয়ে নসিহত করে গেছে। সাবধান হতেই হয় যখন দেখি বাংলাদেশে কোন সুসময় বা খারাপ সময়ে না থাকা বাংলাদেশের উন্নয়ন বিরোধী, গরীব শোষক ড. ইউনুস বাংলাদেশ ক্রিকেট টিমকে তাঁদের জয়ে প্রথমবারের মত অভিনন্দন জানান।    

ড্রাগ মাফিয়াদের বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থান সরকার তথা সরকার প্রধানের জন্য চরম ঝুঁকি, যদি তা সঠিকভাবে হ্যাণ্ডেল করা না হয়। ড্রাগের ব্যাবসায় এত লাভ যে অষ্টাদশ শতকের শেষের দিকে ব্রিটিশরা আফগানিস্তান থেকে আফিম নিয়ে গিয়ে চীনের বিক্রি শুরু করে। এসময় ব্রিটিশরা সারা দেশে আফিম বিক্রির অনুমতি চেয়ে জোর দাবি করে। কিন্তু কিছু দেশপ্রেমিক চীনা বিশেষ করে কমিশনার লী চরমভাবে এর বিরোধিতা করেন। ১৮৩৯ সালে তিনি অনেক ব্রিটিশ আফিম ব্যবসায়ীকে শাস্তি দেন এবং ২ লাখ কেস আফিম আগুনে পুড়িয়ে নষ্ট করে ফেলেন। ড্রাগ বিক্রির অনুমতির জন্য ব্রিটিশরা চীনের সাথে দুই দুইটা যুদ্ধে করে জয়ী হয়। ফরাসীদের মত সরাসরি না হলেও ইউরোপের অনেক দেশের তাতে সায় ছিল। কারণ এই ড্রাগ ব্যবসায় লাভ আকাশ্চুম্বী। নতুন নতুন সিন্থেটিক ড্রাগ শুরুতে তৈরী হয় উন্নত দেশে। তারা তৈরী করে আমাদের মত গরীব দেশে মাফিয়াদের মাধ্যমে বিক্রি করে। তাই ড্রাগ ব্যসায়ীদের শেকড় অনেক গভীরে বিধায় দেশের ড্রাগ ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে অভিযান আমাদের জন্য আরেকটা ঝুঁকি। এমন আরও অনেক খাতে মানে বহুমুখী ঝুঁকিতে আমাদের দেশ ও সরকার প্রধান।    

বাংলা ইনসাইডার          



প্রধান সম্পাদকঃ সৈয়দ বোরহান কবীর
ক্রিয়েটিভ মিডিয়া লিমিটেডের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান

বার্তা এবং বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ২/৩ , ব্লক - ডি , লালমাটিয়া , ঢাকা -১২০৭
নিবন্ধিত ঠিকানাঃ বাড়ি# ৪৩ (লেভেল-৫) , রোড#১৬ নতুন (পুরাতন ২৭) , ধানমন্ডি , ঢাকা- ১২০৯
ফোনঃ +৮৮-০২৯১২৩৬৭৭