লিভিং ইনসাইড

সঙ্গী কি সাইকোপ্যাথ?

নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রকাশ: 21/06/2019


Thumbnail

আপনি আপনার সঙ্গীকে পুরোটা বিশ্বাস করেন তো? হয়ত বলবেন করি, আবার আমতা আমতা করে বলতে পারেন পুরোটা ঠিক না করলেও বিশ্বাস করি, সম্পর্কের জন্য তো এটাই যথেষ্ট। কিন্তু বিশ্বাস নেই, উল্টো সঙ্গী যদি উঠতে বসতে খারাপ ব্যবহার করে, অধিকার খাটাতে যান, কথা না শুনলে মারধর শুরু করে তাহলে সেটা তো কোনো স্বাভাবিক সম্পর্ক হতে পারে না।

এমন অভিযোগই অনেকেই করেন যে সঙ্গী বেশি অত্যাচারী, গায়ে হাত তোলে, খুব বকাঝকা করে, সবার সামনে অপমান করে। যিনি এমন কাজটি করেন তিন কখনোই সুস্থ নয়, তিনি অবশ্যই সাইকোপ্যাথ। অর্থাৎ সাইকোলজি স্বাভাবিক নয়।

আপনি হয়ত বোঝেন না যে আসলে সাইকোপ্যাথ জিনিসটা কি। আজ জানবো আসলে সাইকোপ্যাথ কেমন হয়-

সম্পর্কের শুরুতে আকর্ষণীয়তা বেশি থাকে

সম্পর্কে কমবেশি সবাই আগ্রহী থাকবে। কিন্তু সঙ্গী যদি খুব বেশি আগ্রহী হয় তবে সেটা একটা সমস্যা। এই আগ্রহের কারণেই সে সঙ্গীকে সবসময় খুশি করতে চাইছে। সঙ্গীর কাছে নিজেকে আকর্ষণীয় ও ‘আলাদা’ হিসেবে তুলে ধরার কোনো চেষ্টাই সে বাদ দেয় না, সঙ্গীটি যদি একেবারে শুরু থেকে আপনার মন জয়ের জন্য একেবারে উঠেপড়ে লাগে- তাহলে একটু সাবধান হওয়া প্রয়োজন। এই এতো বেশি ভালো হওয়া খুব একটা ভালো লক্ষণ নয়।

তাদের মধ্যে বড্ড তাড়াহুড়া

এই সাইকোপ্যাথ ধরনের মানুষগুলো সময় নষ্ট করতে চান না সহজে। খুব অল্প সময়ের মধ্যেই সম্পর্কটাকে গভীর করে ফেলে এরা। এই ধরুন সম্পর্কের কয়দিন যেতে না যেতেই শুরু হয়ে বিয়ে নিয়ে চিন্তাভাবনা। তারা চায় সম্পর্কটাকে অনেক দ্রুত এগিয়ে নিয়ে যেতে। এমনকি সংসারের পরিকল্পনাও করে দিতে শুরু করে। এটা অনেকটা অসহিষ্ণুতা আর অস্থিরতার লক্ষণ।

তারা যা বলবে তাই শুনতে হবে

সম্পর্কে ভালোমত আবদ্ধ করে ফেললে এই সাইকোপ্যাথ ধরনের লোকগুলো সঙ্গীকে একেবারে নিজের নিয়ন্ত্রণে আসা শুরু করে। সে ভাবে, সে সবকিছুতেই একটু বেশি জানে এবং বোঝে। সব পরিস্থিতি সে নিয়ন্ত্রণ করতে পারে বিধায় সঙ্গীকে তার সব কথা মেনে চলতে হবে। আর সাইকোপ্যাথরা সঙ্গীকে খুব দ্রুত আবেগাপ্লুত করে ফেলতে পারে ফলে সঙ্গীর কাজকর্ম আর চিন্তাধারাও নিয়ন্ত্রণ শুরু করে। তারা বোঝাতে চেষ্টা করে যে সম্পর্কে সেই সেরা, অন্যজন তার থেকে অবুঝ। সে সঙ্গীর বৈশিষ্ট্যগুলো বদলানোর চেষ্টা করবে। সঙ্গী কখন কি করবে, কোথায় যাবে, কি পরবে, কি খাবে তার যাবতীয় হুকুম করতে থাকবে। মানে সঙ্গীর সব বৈশিষ্ট্যকে সে ধুয়েমুছে দিতে চাইবে।

সঙ্গীর জন্য আমরা নিজেদের কিছুটা হলেও বদলে ফেলি। অভ্যাসবশত বদলে যাওয়া দোষের নয়। কিন্তু সামান্য মতামতের গুরুত্ব না দিয়ে আপাদমস্তক বদলে ফেলতে চাওয়াটা অসুস্থতার লক্ষণ তো বটেই।

সঙ্গীকে ভোলানোর চেষ্টা থাকবে সবসময়

এই সাইকোপ্যাথরা কীভাবে যেন সঙ্গীকে নিজের মতো গড়ে নেবে। মানে তার সঙ্গীরা তার কথা মেনে চলবে। কীভাবে যেন সবকিছু নিজের আয়ত্ত্বে নিয়ে ফেলে। এটাকে সোজা কথায় মগজধোলাইও বলা যায়। এজন্য তাদের কিছু কৌশল আছে। তারা ভালোবাসা আর গুরুত্ব বেশি দিয়ে ফেলবে, বিশ্বাস জয় করবে। আর একবার তাদের প্রতি সম্পূর্ণ নির্ভরশীল হয়ে পড়লে তারা সম্পর্ক ছেড়ে চলে যাওয়ার ভয় দেখাবে। আর সঙ্গীর প্রতি বেশি নির্ভরশীল হয়ে পড়লে সেই ভয়ে সব মেনে নিতে হয়।

তাদের মধ্যে কোনো দায়িত্ববোধ বা অনুতাপ থাকে না

এই একজনকে নিজের মতো করে বদলে ফেলার জন্য তো আর কম কসরত করতে হয় না। এই যেমন জোরজুলুম, বকাঝকা, ব্লাকমেইল আবার কখনো মারামারি। এজন্য দুজনের মধ্যে খুব ঝগড়া, কথা-কাটাকাটি হয়। এই ঘটনায় সাইকোপ্যাথ ব্যক্তি বরং বিমলানন্দ পান। কারো সঙ্গে খারাপ ব্যবহার করে তার বিন্দুমাত্র খারাপও লাগে না। উল্টো দোষ সঙ্গীর ঘাড়ে চাপানোর চেষ্টা করে। এটা কোনো সুস্থ সম্পর্কের নমুনা হতে পারে না।

সম্পর্কের প্রতি টান কম

এই সম্পর্কগুলোতে যখনই মনোমালিন্যের কোনো শেষ থাকে না। সাইকোপ্যাথ ব্যক্তিটি নানা অজুহাতে রাগারাগির একপর্যায়ে সম্পর্ক শেষ করে দিতে পারে। আবার নিজ থেকেই সম্পর্ক ঠিক করতে এগিয়ে আসে। মানে হলো ইচ্ছে হলো থাকলাম আর ইচ্ছে হলো না বাদ দিয়ে দূরে সরিয়ে রাখলাম। এই সম্পর্কটা নিয়ে ভাবা দরকার।

শারীরিক নির্যাতন হলো আত্মরক্ষা কৌশল

একজন সাইকোপ্যাথ কোনো না কোনো সময় সঙ্গীর উপর শারীরিক নির্যাতন চালাবেই। প্রথমে শুরু হয় সিদ্ধান্ত চাপিয়ে দেওয়া, তারপর বকাঝকা। এরপর শাস্তি হয় কথা না বলে যোগাযোগ বন্ধ করে দেওয়া। একেবারে শেষপর্যায়ে শুরু হয় মারামারি। সঙ্গী বাধা দিলে মারধরের পরিমাণ আরও বেড়ে যায় যেন।

শারীরিক নির্যাতন একটি অসুস্থ সম্পর্কের প্রধান বৈশিষ্ট্য। সাইকোপ্যাথিক হোক না হোক, এটি কখনোই মেনে নেয়া উচিত না, সেই সম্পর্ক থেকে দ্রুত বেড়িয়ে আসা উচিত। তবে অনেক সাইকোপ্যাথ আছে, যারা হয়তো ইচ্ছা করে তাদের সঙ্গীকে অত্যাচার করে না বরং পরিস্থিতির কারণে নিজের রাগকে নিয়ন্ত্রণ করতে পারে না।

 

বাংলা ইনসাইডার/এসএইচ



প্রধান সম্পাদকঃ সৈয়দ বোরহান কবীর
ক্রিয়েটিভ মিডিয়া লিমিটেডের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান

বার্তা এবং বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ২/৩ , ব্লক - ডি , লালমাটিয়া , ঢাকা -১২০৭
নিবন্ধিত ঠিকানাঃ বাড়ি# ৪৩ (লেভেল-৫) , রোড#১৬ নতুন (পুরাতন ২৭) , ধানমন্ডি , ঢাকা- ১২০৯
ফোনঃ +৮৮-০২৯১২৩৬৭৭