ইনসাইড বাংলাদেশ

নতুনের জয়গান

নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রকাশ: 21/05/2017


Thumbnail

তরুণ হলো মুক্ত আকাশে ডানা মেলা পাখির মতো। বিস্তর জায়গায় তার প্রতিভা বিকাশ করবে এটাই তো পরিবর্তিত যুগের মূল কল্প। তারুণ্যের জয়গান যখন সমগ্র বিশ্ব গাইছে, তখন আমাদের তরুণরাই পিছিয়ে থাকবেই বা কেন?

একটু বয়স্ক বা মধ্যবয়স্ক অনেকের ধারণা বর্তমান তরুণদের মধ্য ইতিবাচক দিকটির ঘাটতি আছে। একটু চোখ মেলে দেখুন তরুণ সমাজই কিন্তু নতুন কিছু করার মধ্য দিয়ে বিকশিত হচ্ছে।

এখন বাংলাদেশের ক্রিকেটে চলছে তারুণ্যের জয়গান। যে বাংলাদেশ ক্রিকেটকে একসময় বিশ্ব পাত্তাই দিত না। আজ বিশ্বে বাংলাদেশ টিম ওয়ানডেতে সাত নম্বর অবস্থানে। আজ বাইরের দেশের গ্যালারিতে ’বাংলাদেশ বাংলাদেশ ‘ প্রতিধ্বনিত হচ্ছে। সাব্বির, তাসকিন, মোস্তাফিজ, মোসাদ্দেক, নাজমুল হাসান এই তরুণ ক্রিকেটারদের ধারাবাহিক পারফরম্যান্সেই একের পর এক সাফল্যের সিঁড়ি পেরিয়ে স্বপ্নের পথে হাঁটছে দেশের ক্রিকেট। তারুণ্যে উড়ছে বাংলাদেশ, বাংলাদেশের ক্রিকেট।

বাংলাদেশের মুসা ইব্রাহীম প্রথম অ্যাভারেস্টশৃঙ্গ বিজয়ী হিসেবে ইতিহাসের পাতায় ঠাঁই করে নিয়েছেন এবং তিনি নিজের একটি স্বপ্ন পূরণ করেছেন। তারুণ্যের মধ্যে স্বপ্ন জাগরূক থাকে। তারুণ্যের ঐকান্তিক চেষ্টায় স্বপ্নগুলো পাপড়ি মেলতে শুরু করে।

বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত ব্রিটিশ তরুণ সাবিরুল ইসলাম যেন এক স্বপ্নের ফেরিওয়ালা। ২০১০ সালে পৃথিবীর ২৫ তরুণ শিল্পোদ্যোক্তার একজন নির্বাচিত হন সাবিরুল। যুক্তরাজ্যের প্রভাবশালী ১০০ ব্রিটিশ-বাংলাদেশির তালিকায় নাম এসেছে তার। তাঁর লেখা বই দ্য ওয়ার্ল্ড অ্যাট ইওর ফিট বিক্রি হয়েছে ৬০ হাজার কপি। ১০ লাখ তরুণের মধ্যে উদ্যোক্তা হওয়ার স্বপ্নের বীজ বুনে দিতে ২০১১ সালের মে মাসে সাবিরুল শুরু করেন ‘ইন্সপায়ার ওয়ান মিলিয়ন’ কর্মসূচি। যাত্রা শুরু করেছিলেন মালদ্বীপ থেকে। তারপর শ্রীলঙ্কা, ভারত, নাইজেরিয়া, দক্ষিণ আফ্রিকা, বতসোয়ানাসহ বিশ্বের ২৫টি দেশের আট লাখ ৮৫ হাজার মানুষের সঙ্গে কথা বলেছেন। ২৩ সেপ্টেম্বর ২৬তম দেশ হিসেবে তিনি মাতৃভূমি বাংলাদেশে আসেন। প্রায় ৫০০ তরুণের সামনে কথা বলেন সাবিরুল। সাফল্যের স্বপ্ন কীভাবে বুনতে হবে তার পথ দেখিয়ে গিয়েছিলেন তিনি।

মজার স্কুলের কথা শুনেছেন নিশ্চয়ই। রাস্তায় মাদুর বিছিয়ে পথ শিশুদের পড়াশোনার জন্য কিছু তরুণ এই স্কুলটি প্রতিষ্ঠা করেন। অদম্য বাংলাদেশ ফাউণ্ডেশনের উদ্যেগে চালু হওয়া কিছু তরুণদের নিয়ে এই সমাজসেবা কার্যক্রম অল্প দিনেই পথশিশুদের আস্থার মাধ্যম হয়ে ওঠে। সুবিধাবঞ্চিত শিশুদের এই স্কুলে আনার জন্য তাদের ভালোবাসার কমতি ছিল না। এই পথ শিশুদের ছিল অনেক আবদার। তরুণরা নিজেদের হাত খরচের টাকায় তাদের আবদার মেটাতেন। তারুণ্যের দ্বারাই সম্ভব জরাজীর্ণ পঙ্কিল পথ পরিষ্কার করে সব ক্ষেত্রে একটি সুন্দর আবহ তৈরি করা।

তারুণ্যের মাঝেই আছে সাফল্যের হাতছানি। মঙ্গল গ্রহের রোবটকে আরো ভালোভাবে কাজে লাগানোর উপায় বের করতে যুক্তরাষ্ট্রের সাউদার্ন উটাহর মার্স ডেজার্ট রিসার্চ স্টেশনে অনুষ্ঠিত হয় ইউনিভার্সিটি রোভার চ্যালেঞ্জ। বিশ্বের বিভিন্ন দেশের মত বাংলাদেশি শিক্ষার্থীদের দুটি দল এতে সাফল্য অর্জন করে। এতে বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) টিম ইন্টারপ্লানেটার পঞ্চম ও ইসলামিক ইউনিভার্সিটি অব টেকনোলজির রোবটিক ক্রু অষ্টম হয়েছে। তৃতীয় বিশ্বের দেশ থেকে অংশ নিয়ে এমন সফলতায় উন্নত দেশের প্রতিযোগিদের বিস্মিত করে।

তারুণ্য পারে না এমন কিছু কী আছে? তারাই পারে নতুনকে উদ্ভাবন করতে। শুধু আর্ন্তজাতিকভাবেও নয় দেশের জেলা পর্যায়ে তরুণদের সাফল্যই বা কম কিসে?

টাঙ্গাইলের কালিহাতী উপজেলার ইছাপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের তরুণদের সাফল্যের কথাই ধরুন। কজন জানেন তাদের কথা? সম্প্রতি এই স্কুলের ছাত্র আল-আমিন ডিজিটাল হাজিরা সফটওয়্যার উদ্ভাবন করে। ডিজিটাল অ্যাপ্লিকেশন হচ্ছে এমন একটি অ্যাপ্লিকেশন যার মাধ্যমে বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে হাজিরা গ্রহণ করা যায়। সফটওয়্যারটি ব্যবহারে শিক্ষক-শিক্ষিকাসহ প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা-কর্মচারিরা সঠিক সময় আসতে বাধ্য হয়। এতে ওই বিদ্যালয়ের প্রত্যেক শিক্ষক-শিক্ষিকাদের নাম উল্লেখ করে অ্যাপ্লিকেশন ইন্সটল করা হয়েছে এবং ফেস সট নিয়ে আপলোড করে হাজিরা করতে হয়। এতে এক জনের হাজিরা অন্য কেউ দিতে পারবে না।

এই যে অনলাইন ব্যবসা নিয়ে কথা হয়। তার মূলে তরুণদের একটা বড় অংশ জড়িত। তারুণদের অবদান উন্নত বিশ্বের দেশগুলোর মতো বাংলাদেশেও ই-কমার্সের প্রসার ঘটছে দ্রুতগতিতে।

তরুণ ব্লগার আর গণজাগরণ মঞ্চ সক্রিয় সামাজিক যোগাযোগ বাংলাদেশেও ব্লগিং বিষয়টি নতুন নয়। সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমগুলোতেও বাংলাদেশিদের পদচারণা ছিল শুরু থেকেই। তবে চলতি বছরে এসে সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমগুলো এবং ব্লগিং ভিন্ন এক মাত্রা পেয়েছে।

যেই যুদ্ধপরাধীদের বিচারে শাহবাগ আন্দোলনে ফেটে পড়েছিল, তার মূলে ছিল তরুণ সমাজ। এই তরুণদের সহজ, স্পৃহা দেখে সেদিন হাজারো মানুষ রাস্তায় নেমেছিলো রাজাকারের ফাঁসির দাবিতে।

নিশাত মজুমদার। মণিপুরী নৃত্যশিল্পী ও ছায়ানটের নৃত্যের প্রশিক্ষক ওয়ারদা রিহাব তার কোরিওগ্রাফিতে বেঙ্গল ক্লাসিক্যাল মিউজিক ফেস্ট দেশের বাইরের বিভিন্ন অনুষ্ঠানে তারুণ্যের মুখ উজ্জ্বল করেছেন।

আন্তর্জাতিক অঙ্গনে বাংলাদেশকে যাঁরা তুলে ধরেছেন তাঁদের মধ্যে নাফিস বিন জাফর একটি উল্লেখযোগ্য নাম। কারণ প্রথম কোনো বাংলাদেশি হিসেবে অস্কার জয় করেন তিনি। ২০০৭ সালে হলিউডের ‘পাইরেটস অব দ্য ক্যারিবিয়ান : অ্যাট ওয়ার্ল্ডস এন্ড’ চলচ্চিত্রে ফ্লুইড অ্যানিমেশনের জন্য সায়েন্টিফিক অ্যান্ড টেকনিক্যাল বিভাগে ডিজিটাল ডোমেইন নামে ভিজ্যুয়াল ইফেক্টস ডেভেলপার কোম্পানির হয়ে দুই সহকর্মী ডাগ রোবেল ও রিয়ো সাকাগুচিসহ নাফিস অস্কার জেতেন। এছাড়া সিনেমায় ব্যবহৃত ‘ড্রপ ডেস্ট্রাকশন টুলকিট’ প্রযুক্তি উদ্ভাবনের জন্য অস্কারের ‘সায়েন্টিফিক অ্যান্ড টেকনিক্যাল অ্যাওয়ার্ড’ ২০১৫ জেতেন এই বাংলাদেশি।

এমন তরুণদের সাফল্য গাঁথার গল্প রয়েছে অনেক। সাফল্যের বীজ তো তারাই বুনবে। আগামীর ভোর হবে অনাবিল অনুপম, যার আলো ছড়িয়ে যাবে অনেক দূর। শিশির কানে মাদল বাজাবে আগামীর সূর্য। যার আলোয় আলোকিত হবে বিশ্ব। আগামীর ডাকে সাড়া দিয়ে হেসে খেলে গড়ে উঠবে ভবিষ্যৎ প্রজন্ম।

বাংলা ইনসাইডার/টিআর


 



প্রধান সম্পাদকঃ সৈয়দ বোরহান কবীর
ক্রিয়েটিভ মিডিয়া লিমিটেডের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান

বার্তা এবং বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ২/৩ , ব্লক - ডি , লালমাটিয়া , ঢাকা -১২০৭
নিবন্ধিত ঠিকানাঃ বাড়ি# ৪৩ (লেভেল-৫) , রোড#১৬ নতুন (পুরাতন ২৭) , ধানমন্ডি , ঢাকা- ১২০৯
ফোনঃ +৮৮-০২৯১২৩৬৭৭