ইনসাইড পলিটিক্স

রুমিন বাংলার নব্য ঘসেটি বেগম

নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রকাশ: 23/06/2019


Thumbnail

আজকের দিনটি বাংলা ও বাঙালি জাতির জন্য খুব গুরুত্বপূর্ণ দিন। মীর জাফরদের বেঈমানিতে এই দিনে অর্থাৎ ২৩শে জুন ১৭৫৭ পলাশীর প্রান্তরে নবাব সিরাজউদ্দৌলার পতনের মাধ্যমে বাংলা তার স্বাধীনতা হারায়। এদিন পলাশীর প্রান্তরে বাংলার শেষ স্বাধীন নবাব সিরাজউদ্দৌলার সাথে ব্রিটিশ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির যুদ্ধে সিরাজউদ্দৌলা পরাজিত হন এবং ভারতবর্ষে ইংরেজ শাসন প্রতিষ্ঠার পথ সূচিত হয়। কিন্তু এর ঠিক ১৯২ বছর পরে ১৯৪৯ সালের ২৩শে জুন বাংলার স্বাধীনতা ফিরিয়ে আনার সুপ্ত বাসনা নিয়ে পুরনো ঢাকার ঐতিহ্যবাহী রোজ গার্ডেনে প্রতিষ্ঠিত মুক্তিযুদ্ধে নেতৃত্ব দানকারী, বাংলাদেশের স্বাধীনতা ও মুক্তিযুদ্ধসহ প্রতিটি গণতান্ত্রিক, রাজনৈতিক ও সামাজিক আন্দোলনে নেতৃত্ব দেওয়ার দল বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ। অন্য দিকে বাংলার উত্তরের মঙ্গা পীড়িত মানুষের অর্থনৈতিক চাকা সচল করতে ১৯৯৮ সালের ২৩ জুন বঙ্গবন্ধু যমুনা সেতু যান চলাচলের জন্য উন্মুক্ত করা হয়। একারণে আজকের দিনটি বাংলা ও বাঙ্গালীর জন্য খুব গুরুত্বপূর্ণ।

আজকে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ ও পলাশীর যুদ্ধ নিয়ে অনেক নিবন্ধ প্রকাশিত হবার কথা। কিন্তু নেংটি ইঁদুর ব্যবসায়ী রায় দুর্লভ, জগত শেঠ, খালা ঘষেটি বেগম বা মীর জাফরের বিশ্বাসঘাতকতার কথা তেমন করে লেখা হবার কথা না। আমরা বাঙ্গালীরা মানুষকে সরল বিশ্বাস করে এগিয়ে চলি পরে রায় দুর্লভ, জগত শেঠ, ঘষেটি বেগম বা মীর জাফরদের বিশ্বাসঘাতকতার কারণে আমরা স্বাধীনতা হারা হই। আমি আজ বর্তমান বাংলার এক নব্য ঘসেটি বেগমের কথা বলতে চাই।

প্রথমেই বঙ্গবন্ধু যমুনা সেতুর কথা বলি যা বাংলাদেশের উত্তরাঞ্চলে মানুষকে মঙ্গার হাত থেকে বাঁচাতে, নিজেদের উৎপাদিত পণ্য বিক্রিতে আর কর্মসংস্থানের মাধ্যমে বিরাট অবদান রেখেছে। বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের পক্ষে ১৯৫৪ সাল থেকেই নানা ফোরামে উত্তরাঞ্চলের অর্থনৈতিক উন্নয়নের জন্য যমুনা সেতুর উপর একটা সেতু তৈরির দাবি উত্থাপিত হতে থাকে। পরে ১৯৭০ সালে পাকিস্তানের সাধারণ নির্বাচনের প্রাক্কালে বেতার-টেলিভিশনে জাতির উদ্দেশে ভাষণদান কালে তৎকালীন আওয়ামী লীগ নেতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান তাঁর দলের নির্বাচনী ওয়াদা হিসেবে যমুনা সেতু নির্মাণের কথা উল্লেখ করেন। কিন্তু এ সকল প্রচেষ্টা তৎকালীন রাজনৈতিক অস্থিরতা এবং মুক্তিযুদ্ধের কারণে বাস্তবায়িত হতে পারে নি। স্বাধীনতার পর আওয়ামী লীগ সরকার ১৯৭২ সালে যমুনা নদীর উপর একটি সেতু নির্মাণের ঘোষণা দেয় এবং ১৯৭২-৭৩ সালের বাজেটে এজন্য বরাদ্দ রাখা হয়। বাংলাদেশ সরকারের আমন্ত্রণে জাপান আন্তর্জাতিক সহযোগিতা সংস্থা জাইকা ১৯৭৩ সালে যমুনা নদীর উপর একটি সড়ক-কাম-রেলসেতু নির্মাণের সম্ভাব্যতা-সমীক্ষা হাতে নেয়। ১৯৭৬ সালে জাপান তাদের সমীক্ষা শেষ করে। কিন্তু বঙ্গবন্ধুকে সপরিবারে হত্যার পরে বাংলার নব্য রায় দুর্লভ, জগত শেঠ, ঘষেটি বেগম বা মীর জাফরদের বিশ্বাসঘাতকতার কারণে বাংলার গণ মানুষের জীবন মান উন্নয়নে বঙ্গবন্ধুর কোন উন্নয়ন পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করা হয় না।

এটা শুনে অনেকেই অবাক হতে পারেন যে, বঙ্গবন্ধুর জন্মস্থান বৃহত্তর ফরিদপুর হবার কারণে ১৯৯৬ সাল পর্যন্ত বৃহত্তর ফরিদপুর ভেঙ্গে নবগঠিত কোন জেলাতেই অবকাঠামোগত উন্নয়ন তো দুরের কথা প্রায় সব ধরণের উন্নয়নের প্রকল্পের আওতা থেকে বাদ রাখা হয়। এলজিইডি ও সড়ক ও জনপথ বিভাগের সূত্রের দাবি এই যে, ১৯৯৬ সালের পূর্বে ফরিদপুর হয়ে মাগুরা সড়ক, আর ফরিদপুর শহরের মধ্যে যাবার সামান্য কিছু সড়ক, আর রাজবাড়ি হয়ে কুষ্টিয়ার যাবার জন্য সামান্য কিছু পাকা রাস্তা ছাড়া মাদারীপুর, শরিয়তপুর, গোপালগঞ্জ জেলা আর উপজেলা সদরে কিছু আধপাকা সড়ক ছিল। এমনভাবেই এই বৃহত্তর ফরিদপুরকে উন্নয়ন বঞ্চিত করা হয় কারণ সেটা বঙ্গবন্ধুর জন্মভূমি। তাই ১৯৯৬ সালের পরে শেখ হাসিনার সরকার ক্ষমতায় এলে প্রথমে এলজিইডির মাধ্যমে আর ডি পি ২৪ নামে একটি প্রকল্প, আর পরে স্মল স্কেল ওয়াটার ডেভেলপমেন্ট প্রকল্পের আওতায় কিছু উন্নয়ন কর্মকাণ্ড শুরু হয়। অন্য দিকে পদ্মা সেতুর কাজ শুরু হলে সড়ক ও জনপথ বিভাগের কিছু সড়ক ও ব্রিজ নির্মাণের কাজ শুরু হয় যা বৃহত্তর ফরিদপুর ছুঁয়ে যায়। গত দুই বছর আগে পদ্মা সেতু থেকে সোজা বেনাপোল যোগাযোগের জন্য কিছু কাল্ভারট আর কালনা ব্রিজ নির্মাণ প্রকল্প হাতে নেওয়া হয়। কারণ এর ফলে বেনাপোল থেকে সড়কপথে ঢাকার যোগাযোগে ১০০ কলমিটার পথ কমে যাবে। এসব জেনেই হালের ঘসেটি বেগম সাংসদ রুমিন ফারহানা বিভ্রান্তমূলক ১৯ জুন এক বক্তব্যে বলেছেন গোপালগঞ্জ জেলাতে উন্নয়ন বরাদ্দ ৫ গুণেরও বেশী। প্রায় দুই যুগের বঞ্চনার পরে যখন মিনিমাম উন্নয়নের ছোঁয়া দিয়ে যখন মাদারীপুর, শরিয়তপুর, গোপালগঞ্জ জেলার অবকাঠামোগত উন্নয়নকে অন্য জেলার কাছাকাছি আনার চেষ্টা হচ্ছে তখন নব্য ঘসেটি বেগম সাংসদ রুমিন ফারহানা বিভ্রান্তমূলক এই বক্তব্য দিচ্ছেন।

গত ২০শে জুন ২০১৯ তারিখে এই নব্য ঘসেটি বেগম সাংসদ রুমিন ফারহানা টেলিভিশনের এক টক শোতে বলেছেন বর্তমান সরকার কেন ‘জামায়াতকে নিষিদ্ধ করছে না’? হঠাৎ করে উনি জামায়ের বিরুদ্ধে কেন খেপলেন! এর সমীকরণ দুইটা হতে পারে। এক- বিভিন্ন পত্রিকা আর সোশ্যাল মিডিয়ায় সাংসদ রুমিন ফারহানা সম্পর্কে যা পাওয়া গেছে তাতে উনি যে জীবনযাপনে অভ্যস্ত তা জামায়াতের মূল নীতির সাথে প্রকাশ্যে মেলে না। জামায়াত সাংসদ রুমিন ফারহানার পক্ষ নিলে তাদের ১৯৭১ চরিত্র সামনে এসে যেতে পারে। সাংসদ রুমিন ফারহানার পাকিস্তানি আইএসআই কানেকশন এখন ওপেন সিক্রেট। লন্ডনে বসবাসরত এক আইএসআই অফিসারের ছেলে উনার জানি দোস্ত। তার মাধ্যমে আইএসআইএর অর্থায়নে তিনি এম পি সাহেবা নিয়মিত টকশোতে জ্বালাময়ী বক্তব্য দেন। এর সাথে জামাতের যোগসূত্র খুঁজে পাবেন সবাই। তার দল বিএনপি এখনো জামায়াতের সাথে গাঁঠছড়া বাঁধা অবস্থায় এমতাবস্থায় তার এই বক্তব্যের উদ্দেশ্য যে অসৎ তা বুঝতে ব্যারিস্টার হওয়া লাগে কি? দুই- জামায়াত নিষিদ্ধ হবার সাথে সাথে তাঁদের একটা বিরাট অংশ নিষিদ্ধ আইএস এ যোগ দিয়ে সারা দেশে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টিতে ঝাঁপিয়ে পড়তে পারে। তাতে দেশ আর সরকার বিপদে পড়বে, উন্নয়ন ব্যহত হবে। বিদেশী উন্নয়ন সহযোগীরা নিরাপত্তার অভাবে বাংলাদেশ ছেড়ে চলে যাবেন। তাঁদের আর্থিক ও প্রযুক্তিগত সহায়তা বন্ধ করে দিলে বাংলাদেশ হয়ে দাঁড়াবে ২য় পাকিস্তান। এটাই কি তার কামনা না লক্ষ্য!

রুমিন ফারহানা ঘোলা পানিতে মাছ শিকারে খুব আনন্দ পান তার প্রমাণ ইতোমধ্যে পাওয়া গেছে। রুমিন সংসদ সদস্য হিসেবে শপথ নেওয়ার একদিন আগে শনিবার (৮ জুন) বিকালে ‘কাবিখা’ কর্মসূচির (কাজের বিনিময়ে খাদ্য) ও গ্রামীণ অবকাঠামো রক্ষণাবেক্ষণ কর্মসূচির (টিআর) বরাদ্দ নেওয়াকে কেন্দ্র করে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার সরাইল উপজেলার শাহবাজপুরে ফাস্ট গেইট এলাকায় বিএনপির দু গ্রুপে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। স্থানীয়দের অভিযোগ, ব্রাহ্মণবাড়িয়া-২ (সরাইল-আশুগঞ্জ) আসনের সংসদ সদস্য ও বিএনপি চেয়ারপার্সনের উপদেষ্টা উকিল আবদুস সাত্তার ভূঁইয়ার সমর্থক এবং বিএনপির কেন্দ্রীয় সহ-আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক ও সংরক্ষিত নারী আসনের সংসদ সদস্য ব্যারিস্টার রুমিন ফারহানার সমর্থকদের মধ্যে ওই সংঘর্ষ ঘটে। উকিল আবদুস সাত্তার ভূঁইয়ার সাথে ভোটে হেরেছেন বটে কিন্তু এটা করেই উনি তার হারের প্রতিশোধ আর নির্বাচনের সময় যে খরচ হয়েছে তা উঠাতে আর্থিক ফায়দা আদায় করতে চান বলে ব্রাহ্মণবাড়িয়া এলাকার তার ঘনিষ্ঠজনেরা মন্তব্য করেন। তাঁরা বলেন যে, বাংলার নব্য এই ঘসেটি বেগমের দ্বারা সব সম্ভব।

বাংলা ইনসাইডার



প্রধান সম্পাদকঃ সৈয়দ বোরহান কবীর
ক্রিয়েটিভ মিডিয়া লিমিটেডের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান

বার্তা এবং বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ২/৩ , ব্লক - ডি , লালমাটিয়া , ঢাকা -১২০৭
নিবন্ধিত ঠিকানাঃ বাড়ি# ৪৩ (লেভেল-৫) , রোড#১৬ নতুন (পুরাতন ২৭) , ধানমন্ডি , ঢাকা- ১২০৯
ফোনঃ +৮৮-০২৯১২৩৬৭৭