ইনসাইড আর্টিকেল

ক্ষমতাসম্পন্ন অথচ অসহায় নারী হেলেন কেলারের জন্মদিন আজ

নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রকাশ: 27/06/2019


Thumbnail

কখনো ভেবে দেখেছেন একজন অন্ধ মানুষ সিনেমা বানাবে?

কিংবা একজন বধির মানুষ, গান শুনবে, বা সঙ্গীতপ্রেমে থাকবে?

অথবা এরকম কখনো ভেবেছেন যে, একজন বাকশক্তিহীন মানুষ রাজনীতি করবে?

ভাবেননি হয়তো, আমরা কেউই এই অসম্ভবকে ভাবিনা সাধারণত। কিন্তু এর চেয়ে বেশি অসম্ভবকেই সম্ভব করেছেন তিনি, যিনি একইসাথে শ্রবণ, দৃষ্টি এবং বাক প্রতিবন্ধি হওয়া সত্ত্বেও করেছেন রাজনীতি, সিনেমা তৈরি, গানশোনা, নোউকা চালানো, দাবা-তাস খেলা ইত্যাদি অসম্ভব কাজের সবগুলোই এবং আরো অনেককিছু।

এই অসম্ভবকে কোনো জলীল সম্ভব করেনি, করেছে আমেরিকান একজন নারী। আর এর পেছনে আছে এক মহাগল্প।

 

১৮৮০ সালের ২৭ জুন।

আমেরিকার অ্যালাবামা তাসকাম্বিয়া গ্রাম।

এই গ্রামের আর্থার কেলার ও কেটি অ্যাডামস কেলারের সংসারে এই দিনে জন্ম নিয়েছে একটি কন্যা সন্তান। বাবা-মা মেয়েটির নাম দিয়েছে হেলেন কেলার। হেসে খেলে সুন্দরভাবে বড় হচ্ছিল এই আমেরিকান শিশুটি। বয়স যখন ১৯মাস, হঠাৎ করে শিশুটির ভয়ংকর অসুস্থতা শুরু হলো। বাবা-মায়ের অক্লান্ত পরিশ্রম ও চেষ্টার ফলে ধীরে ধীরে সুস্থ্ হয়ে উঠলো শিশুটি।

কিন্তু এই ভয়ংকর ব্যাধি কেড়ে নিলো চিরতরে শিশুটির দৃষ্টি, শ্রবণ ও বাকশক্তি। বাবা-মায়ের জীবনে নেমে এলো ভীষণ অন্ধকার কন্যার সাথে সাথে। নানা চেষ্টা করেও যখন আর কন্যার দৃষ্টি, শ্রবণ এবং বাকশক্তি ফেরাতে পারলেন না এই কেলার দম্পত্তি, তখন তাঁরা তাকে নিয়ে যান  বিখ্যাত বিজ্ঞানী আলেকজান্ডার গ্রাহামবেল (টেলিফোনের আবিস্কারক) এর কাছে।

গ্রাহাম বেল হেলেন কেলারকে দেখেই বুঝতে পারেন যে অস্বাভাবিক ক্ষমতা নিয়ে জন্মেছে এই কেলার কন্যা, যাকে কোনো প্রতিবন্ধকতাই তাঁর জীবন থেকে ছিটকে ফেলতে পারবেনা। হয়েছেও তাই। গ্রাহাম বেলের পরামর্শমতো কেলার দম্পত্তি হেলেনকে একজন অন্ধশিক্ষিকা ‘এনি সুলিভান’এর মাধ্যমে লেখাপড়া শেখানো থেকে শুরু করে ধীরে ধীরে একজন শিক্ষিত এবং অত্যধিক প্রতিভাসম্পন্ন নারী হয়ে উঠতে সাহায্য করেন।

৮ বছর বয়সেই এনির সাহায্যে হাতের আঙ্গুল দিয়ে দাগ কেটে কেটে লিখতে শেখেন হেলেন। ১০ বছর বয়সে তিনি নরওয়েতে উদ্ভাবিত এক পদ্ধতি অনুসরণ করে কথা বলা শেখেন। ১৪ বছর বয়সে ভর্তি হন আমেরিকার নিউইয়র্কের ‘রাইট হুমাসন’ নামক বধিরস্কুলে। ১৯০০ সালে যখন তাঁর বয়স ২০, তখন উচ্চতর শিক্ষার জন্য তিনি রেডক্লিফ কলেজে ভর্তি হন। ১৯০৪ সালে হেলেন প্রথম দৃষ্টিপ্রতিবন্ধি হিসেবে স্নাতক ডিগ্রি লাভ করেন।

স্নাতক অর্জনকারী বাক, শ্রবণ ও দৃষ্টিশক্তিহীন হেলেন গান শুনতে ভালোবাসতেন। তিনি গান শুনতেন অনুভূতির মাধ্যমে। শিল্পীদের কণ্ঠ স্পর্শ করেই বলতে পারতেন কোন শিল্পী গান গাচ্ছে, এবং কী গান গাচ্ছে!

নৌকা চালাতে ভালোবাসতেন এই অনন্যসাধারণ নারী। তিনি দাদা, তাস সাঁতার ইত্যাদিতে ছিলেন স্বাভাবিক মানুষের তুলনায় অনেক বেশি স্বচ্ছন্দ ও পারদর্শী। বই পড়তে ভীষণ ভালোবাসতেন হেলেন। ১৯১৩ সালে, আমেরিকায় দৃষ্টি প্রতিবন্ধী ছাত্র-ছাত্রীদের লেখাপড়ার জন্য প্রতিষ্ঠিত হয় জাতীয় লাইব্রেরী। এখানে হেলেন বই পড়তেন নিয়মিত। টুয়েন্টি টুয়েন্টি ভিশন’ সম্পন্ন বহু ব্যক্তির চেয়েও বেশি বই তিনি পড়েছেন বলে জানা যায়।

রাজনীতিতেও ছিলো তাঁর সাহসী পদার্পণ। তিনি১৯০৯ সালে আমেরিকান স্যোসালিস্ট পার্টিতে  যোগদান করেন। তাঁর রাজনৈতিক অভিষ্ঠ ছিলো আয়ের সুষম বণ্টন প্রতিষ্ঠা করে পুঁজিবাদী সমাজ ব্যবস্থার অসমতার শেষ  করা।

মানুষের প্রতি তাঁর উপলব্ধি বা অনুভূতি ছিলো অত্যন্ত সংবেদনশীল। নিজের প্রতিবন্ধকতার কথা উপলব্ধি করে তিনি বাক-শ্রবণ ও দৃষ্টিপ্রতিবন্ধীদের উন্নয়নের জন্য গড়ে তুলেছেন বহু স্কুল এবং সমিতি। বই লিখেছেন নিজের ব্যক্তিগত জীবন নিয়ে ‘দ্যা স্টোরি অব মাই লাইফ’ যা তাঁর স্নাতক ডিগ্রি অর্জনের পূর্বেই প্রকাশিত হয়। বাক, শ্রবণ ও দৃষ্টি প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের উপর অনেকটা অটোবায়োগ্রাফিক্যাল সিনেমা ‘ডেলিভারেন্স’ (১৯১৯)নির্মাণ করেন। এই সিনামেয় তার নিজের ভূমিকায় তিনি নিজেই অভিনয় করেছেন।

বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর তাঁর নোবেল প্রাপ্তির পর এক সম্মেলনে বক্তৃতা দেয়ার সময় হেলেনের সাথে পরিচিত হন। তিনি হেলেনকে শান্তিনিকেতনে আহ্বান করেন।কিন্তু হেলেনের ভারতে আসার সুযোগ হয় রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের মৃত্যুর পর।

পৃথিবীকে অবাক করে দেয়া এই অসাধারণ প্রতিভা ও মানসিক ক্ষমতাসম্পন্ন নারী হেলেন কেলার ১৯৬৮ সালের ০১ জুন আরেকদফা বিস্ময়ে সবাইকে বিস্মিত করে চলে যান না ফেরার দেশে!

 



প্রধান সম্পাদকঃ সৈয়দ বোরহান কবীর
ক্রিয়েটিভ মিডিয়া লিমিটেডের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান

বার্তা এবং বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ২/৩ , ব্লক - ডি , লালমাটিয়া , ঢাকা -১২০৭
নিবন্ধিত ঠিকানাঃ বাড়ি# ৪৩ (লেভেল-৫) , রোড#১৬ নতুন (পুরাতন ২৭) , ধানমন্ডি , ঢাকা- ১২০৯
ফোনঃ +৮৮-০২৯১২৩৬৭৭