ইনসাইড আর্টিকেল

জঙ্গি কি শুধু মুসলিমরাই?

নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রকাশ: 01/07/2019


Thumbnail

‘টেরর অ্যাটাক’, ‘সন্ত্রাসী হামলা’ কিংবা ‘জঙ্গি কর্মকাণ্ড’- এই শব্দগুলোর সঙ্গে আমরা সবাই পরিচিত। কিন্তু এই শব্দগুলোর মানেটা আসলে কী? শুধুমাত্র ইসলাম ধর্মের কেউ হামলা চালালেই কী সেটা সন্ত্রাসী হামলা বা টেরর অ্যাটাক? আর শেতাঙ্গ কোনো উগ্রপন্থী হামলা চালালে সেটা শুধুমাত্র ‘গুলি বর্ষণ বা শুটিং’?

যে কোনো সন্ত্রাসবাদী অমুসলিম হলে, বিশেষ করে সাদা চামড়ার হলে, গণমাধ্যম থেকে শুরু করে আন্তর্জাতিক মহল পর্যন্ত সর্বত্রই বেশ কিছু ছাড় পায়। প্রথমত, তাকে নিছকই বন্দুকবাজ বা হতাশাগ্রস্ত একজন অপরাধী হিসেবে দেখা হয়। তার সঙ্গে উগ্রবাদের কোনো সম্পর্ক না খুঁজে পারিবারিক অশান্তি বা অফিসে কাজের চাপ এমনকি ভিডিও গেম আসক্তিকেও হামলার কারণ হিসেবে চিত্রিত করা হয়। কিন্তু হামলাকারী কোনোভাবে মুসলিম হলেই আর কোনো কথা নেই। হামলার সঙ্গে জুড়ে যায়, জিহাদ, জঙ্গি, সন্ত্রাসবাদের মতো ট্যাগ।

শান্তির দেশ নিউজিল্যান্ডে গত মার্চে প্রার্থনারত নিরীহ মুসলিমদের নির্বিচারে গুলি করে হত্যা করা হলো। বিশ্বের বিভিন্ন দেশের নেতারা এর তীব্র নিন্দা জানিয়েছিলেন। শোক প্রকাশ করেছিলেন। আন্তর্জাতিক মিডিয়াগুলোতেও এই ঘটনাকে ভয়ানক হামলা হিসেবে অভিহিত করা হচ্ছিলো। কিন্তু আশ্চর্যের বিষয় হলো, শুরুর দিকে তেমন কেউই এই ঘটনাকে জঙ্গি হামলা বা টেরর অ্যাটাকের তকমা দেয় নি।

২০১১ এর জুলাইয়ে শ্বেতাঙ্গ নরওয়েজিয়ান অ্যান্ডার্স বেরিং ব্রেইভিক নরওয়েতে আরেক বর্বর হামলা চালিয়েছিল। তিনি উটোয়া দ্বীপে নরওয়েজিয়ান লেবার পার্টির গ্রীষ্মকালীন তরুণ ক্যাম্পে গুলিবর্ষণ করে ৭৭ জন নিরাপরাধ নাগরিককে হত্যা করেছিলেন। নিহতদের মধ্যে অনেকেই ছিল কিশোর। নৃশংস হত্যাকারী ব্রেইভিকের গায়েও তখন জঙ্গি তকমা লাগেনি। তাকে মানসিকভাবে অসুস্থ আখ্যা দিয়েছিলেন বিশ্বনেতারা। বর্তমানে নরওয়েতে ২১ বছরের কারাদণ্ড ভোগ করছেন ব্রেইভিক। বেশ আরামেই দিন কাটাচ্ছেন তিনি। তাকে মানসিক চিকিৎসার জন্য অ্যাসাইলামেও পাঠানো হয়েছিল। অথচ এই কাজটাই যদি কোনো স্বাধীনতাকামী ফিলিস্তিনি তরুণ করতো? ভাবুন তো একটু, তার কপালে কী জুটতো? কারাগারের অন্ধকার প্রকোষ্ঠ কিংবা নৃশংসভাবে বিচারহীন মৃত্যুদণ্ডই হয়তো মাথা পেতে বরণ করতে হতো তাকে।

মানুষ হত্যা বা সন্ত্রাসবাদ কারোরই কাম্য নয়। ধর্মের দোহাই দিয়ে যারা মানুষ হত্যা করে তাদের অবশ্যই সর্বোচ্চ শাস্তি প্রাপ্য। কিন্তু এই শাস্তিটাই সবার জন্য সমান হওয়াটা জরুরি নয় কি? একজন শ্বেতাঙ্গ বলে তাকে স্রেফ বন্দুকধারী আর একজন মুসলিম বলে তাকে সন্ত্রাসী বলে অভিহিত করাটা কি এক ধরণের অপরাধ নয়?

সারাবিশ্বে ঢালাওভাবে কেবল মুসলিমদেরই কেন জঙ্গি বানানো হচ্ছে? মুসলিমদেরই কেন বিপদজনক মনে করা হচ্ছে? শুধুমাত্র ব্যক্তি বা সংগঠনের ক্ষেত্রেই নয়, মুসলিম প্রধান দেশগুলোর গায়েও লাগানো হচ্ছে বিপদজনক বা জঙ্গি রাষ্ট্রের ট্যাগ। এই যেমন, ইরানের কথাই ধরা যাক। তারা পারমাণবিক অস্ত্র বানিয়ে বিশ্বকে হুমকির মুখে ফেলতে পারে, এই অভিযোগে যুক্তরাষ্ট্র ইরানের উপর একের পর এক নিষেধাজ্ঞা চাপাচ্ছে। অথচ উত্তর কোরিয়া বিপুল পরিমাণ পারমাণবিক অস্ত্র মজুদ করে রাখলেও মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প তাদের বিরুদ্ধে মোটেই কঠোর হচ্ছেন না। উল্টো তিনি উত্তর কোরিয়ার নেতা কিম জং উনের সঙ্গে একের পর এক বৈঠক করছেন। প্রটোকলকে পাত্তা না দিয়ে উত্তর কোরিয়ায় প্রবেশ করে কিমের সঙ্গে হাত মেলাচ্ছেন। শুধুমাত্র রাষ্ট্র ধর্মের কারণেই কি দুই দেশের ক্ষেত্রে দুই নীতি ট্রাম্পের? মুসলিম প্রধান দেশ বলেই কি ইরানকে বিশ্বশান্তির জন্য হুমকি হিসেবে দেখানো হচ্ছে? আর ভাব জমানো হচ্ছে উত্তর কোরিয়ার সঙ্গে? এই পক্ষপাতিত্বই কি বিশ্বে ঘৃণা বিস্তারের সবচেয়ে বড় কারণ নয়?

বাংলা ইনসাইডার/এএইচসি



প্রধান সম্পাদকঃ সৈয়দ বোরহান কবীর
ক্রিয়েটিভ মিডিয়া লিমিটেডের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান

বার্তা এবং বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ২/৩ , ব্লক - ডি , লালমাটিয়া , ঢাকা -১২০৭
নিবন্ধিত ঠিকানাঃ বাড়ি# ৪৩ (লেভেল-৫) , রোড#১৬ নতুন (পুরাতন ২৭) , ধানমন্ডি , ঢাকা- ১২০৯
ফোনঃ +৮৮-০২৯১২৩৬৭৭