ইনসাইড থট

শিশু ধর্ষককে নপুংসক করার আইন আসছে!

নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রকাশ: 07/07/2019


Thumbnail

শিশু ও নারী ধর্ষণের পাশাপাশি ছেলে শিশুদের উপর বলাৎকার অনেকটাই মহামারী আকার ধারণ করেছে। গত কয়েকদিন পত্রিকা আর সোশ্যাল মিডিয়ায় যে খবর পাওয়া যাচ্ছে তাতে দেশে মেয়েশিশু আর নারী নির্যাতন চরম আকারে বেড়ে গেছে। অনেকে বলছেন মানসিক অসুস্থ মানুষের সংখ্যা চরম আকারে বেড়ে চলেছে দেশে। বিশ্ব, গ্রাম তথা গোটা দেশে এখন এক একটি ঘন বসতির গ্রাম, যারা একে অপরের খুব ঘনিষ্ঠভাবে থাকে। তাই আইটি’র এই যুগে অপকর্ম করে আগের মতো আর লুকানো সম্ভব হচ্ছে না। যেখানেই যা ঘটছে তা সাথে সাথেই চলে আসছে মিডিয়ায়, জানছে মানুষ, জানতে পারছেন সবাই কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই। তৈরি হচ্ছে জনমত, প্রচণ্ড ঘৃণা দেশের মানুষ, প্রশাসন ও সরকারের প্রতি। 

স্কুল, মাদ্রাসা, বাসা প্রায় সবখানেই শিশু ও নারী শিশু ধর্ষণের পাশাপাশি ছেলে শিশুদের উপর হচ্ছে বলাৎকার। এতে পুরো বাঙালি জাতি কলঙ্কিত হচ্ছে। নানাবিধ কারণে এটা হচ্ছে। কারণ অনুসন্ধানে নানা বিতর্ক তৈরি হলেও ধর্ষকদের কঠিন শাস্তির ব্যাপারে কিছু কুৎসিত মানসিকতার মানুষ ছাড়া সবাই একমত।

বাংলাদেশের মতো দেশ যেখানে প্রধানমন্ত্রী, বিরোধীদলীয় অন্যতম নেতা, স্পিকার আর সংসদের বাইরের প্রধান শক্তিশালী বিরোধীদলের নেতাও মহিলা। সেই দেশে নারী, মহিলা ও শিশুরা ধর্ষিত হয় অহরহ, তাও মিডিয়ায় খবর প্রকাশ পায়। সেই দেশে তেমন কোনো কার্যকর আইন নেই, যা আছে নেই তার প্রয়োগ। কি অভাগা দেশের মানুষ আমরা! আমরা শুধুই দৃশ্যমান উন্নতির জন্য কসরত করছি, দেশের আপামর জনগণের উন্নতির আশায়।

ধর্ষণ বন্ধ করতে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে নানা আইন-কানুন রয়েছে। কোনো কোনো দেশে সর্বোচ্চ শাস্তি মৃত্যুদণ্ডেরও বিধান রয়েছে। কিন্তু সম্প্রতি যুক্তরাষ্ট্রের আলাবামা অঙ্গরাজ্যে শিশু ধর্ষণ রুখতে এক ব্যতিক্রমী আইন পাস করা হয়েছে। এই আইনে বলা হয়েছে, ১৩ বছরের কম বয়সী কোনো মেয়েকে ধর্ষণ করলে ধর্ষককে ইনজেকশন দিয়ে বা ওষুধের মাধ্যমে নপুংসক করে দেওয়া হবে।

আইনটি মূলত শিশুদের ধর্ষণের হাত থেকে বাঁচাতেই করা হয়েছে। এই ইনজেকশন একবার পুশ করলে ধর্ষকের আর কারো সঙ্গে শারীরিক সম্পর্ক স্থানের সামর্থ্য থাকবে না। তাকে সারাজীবন এই পাপের শাস্তি বয়ে বেড়াতে হবে। আইন অনুযায়ী, কোনো অপরাধী যদি জেলে থাকেন, তাকে তখন ইনজেকশন দেওয়া হবে না। তবে প্যারোলে ছাড়া পাওয়ার পর তার শরীরে এটি পুশ করা হবে। আইনটিতে আরও বলা হয়েছে, কোনো কারণে ধর্ষক যদি ইনজেকশন নিতে রাজি না হন, তাহলে আজীবন তাকে জেলেই থাকতে হবে ৷ কখনোই বাইরে আসতে পারবেন না।

এশিয়ার দেশ ইন্দোনেশিয়ায় যৌন অপরাধ পুরোপুরি নির্মূল হতে পারে বলে ইন্দোনেশিয়ার প্রেসিডেন্ট জোকো উইদোদো মনে করেন। সম্প্রতি বিবিসি বাংলা এমন একটা খবর দিয়েছে।

বাংলাদেশে যেমন সবসময় খুনি, সন্ত্রাসী ও টাকাওয়ালা জঘন্য অপরাধীদের পক্ষ নেয়,  মানবাধিকার কর্মীরা ঠিক একইভাবে ইন্দোনেশিয়ায় মানবাধিকার কর্মীরা ধর্ষকদের পক্ষ নিয়েছিল। তাই সে দেশের প্রেসিডেন্ট বলেন, ‘মানবাধিকারকে সম্মান করে, তবে যেন নির্যাতনকারীদের শাস্তির বিষয়ে কোন আপোষ হতে পারে না’। ইন্দোনেশিয়ায় ১৪ বছর বয়সী এস কন্যাশিশুকে গণধর্ষণ ও হত্যার পরে ২০১৬ সালে মেয়েশিশু নির্যাতনকারীদের রাসায়নিকভাবে নপুংসক করার একটা আইন পাশ করে। যদিও তাদের সংসদে এটা নিয়ে তুমুল বিতর্ক হয়েছিলো। কিন্তু এই ঘটনার পরে ইন্দোনেশিয়ায় নারী ও শিশু নির্যাতনের হার অনেক কমে গেছে।

আমাদের মতো দেশে ধর্ষক ও তাদের সহযোগীরা ধর্ষণের যৌক্তিকতা তুলে ধরে তাদের অপকর্মকে বৈধ করতে নানা কারণ দেখান, সেখানে প্রয়োজনে ধর্মকে ব্যবহার করে। পোশাক নিয়ে কথা বলে তাদের অপকর্মকে বৈধতা দিতে চায়। দেশটাকে তারা ‘আইয়ামে জাহেলিয়াত’র যুগে নিয়ে যেতে চায়। ইসলামে চুরি-ডাকাতি-মদ্যপান-খুন-জখম-মানহানি-জেনা (এগুলো হুদুদ মামলা) যার প্রমাণ চারজন পুরুষ সাক্ষী লাগে, নারী সাক্ষ্য গ্রহণযোগ্য নয়। এছাড়া ‘হুদুদ মামলায় পারিপার্শ্বিক প্রমাণ চলিবে না।’ (চাক্ষুষ সাক্ষী থাকতে হবে)। ফলে ইসলামী আইনে বাংলাদেশে ধর্ষণের বিচার সম্ভব নয়। 

জানিনা আমাদের প্রধানমন্ত্রী, বিরোধীদলীয় বড় নেত্রী, স্পিকার আর ক্ষমতার বাইরে থাকা প্রধান শক্তিশালী বিরোধীদলের নেতা এটা নিয়ে কতটা চিন্তিত। মিডিয়ার খবর তাঁদের কাছে নিয়মিত পৌঁছে কি না। নারীর ক্ষমতায়ন যে সরকার ও দেশের অন্যতম প্রধান এজেন্ডা সেই দেশে নারী ও শিশুদের ধর্ষণ বলাৎকারের মত চরম অন্যায়ের হাত থেকে রক্ষা করার কোন পদক্ষেপ নেওয়া হবে কি না। এই সব পশুদের লালসায় লাগাম দিতে ফিলিপাইনের মতো এনকাউন্টার বা ক্রসফায়ার দিতে আমাদের দেশের একটা উচ্চশ্রেণীর খুব আপত্তি। আমাদের দেশের মহামান্য আদালত বিচার বহির্ভূত হত্যাকাণ্ডে (এনকাউন্টার নয়) তাইতো কয়েকদিন আগে বাংলাদেশ আওয়ামীগের সাধারণ সম্পাদক বলতে বাধ্য হয়েছেন আমরা বিচার বহির্ভূত হত্যাকাণ্ড সমর্থন করি না। কিন্তু দেশে যা হচ্ছে তা এনকাউন্টার।

এমতাবস্থায় যুক্তরাজ্য বা ইন্দোনেশিয়ার মতো ধর্ষকদের রাসায়নিকভাবে নপুংসক করার একটা আইন পাশ করার কথা সরকার ও বিরোধীদলের অনেকেই সিরিয়াসলি চিন্তা করছেন বলে সরকারের ঘনিষ্ঠ একটি সূত্র দাবি করেছে। আমরা শুধুই দৃশ্যমান উন্নতির জন্য দিন-রাত কসরত করছি, দেশের আপামর জনগণের উন্নতির আশায়। আমাদের জিডিপি উঠে দাঁড়িয়েছে কম বেশী ৭ এর উপরে। সামাজিক সচেতনতা বৃদ্ধির মাধ্যমে আমাদের মানসিকতার বা নৈতিকতার উন্নতি না হলে এই টাকা দিয়ে কি হবে? কি হবে উন্নত দেশ দিয়ে যদি দেশের মানুষের জীবন না বাঁচে, যদি সম্মানের সঙ্গে না বাঁচা যায়! যদি আমাদের প্রাণপ্রিয় সন্তানেরা সম্মানের সঙ্গে বেড়ে উঠতে না পারে!

বাংলা ইনসাইডার



প্রধান সম্পাদকঃ সৈয়দ বোরহান কবীর
ক্রিয়েটিভ মিডিয়া লিমিটেডের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান

বার্তা এবং বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ২/৩ , ব্লক - ডি , লালমাটিয়া , ঢাকা -১২০৭
নিবন্ধিত ঠিকানাঃ বাড়ি# ৪৩ (লেভেল-৫) , রোড#১৬ নতুন (পুরাতন ২৭) , ধানমন্ডি , ঢাকা- ১২০৯
ফোনঃ +৮৮-০২৯১২৩৬৭৭