ইনসাইড বাংলাদেশ

চ্যানেল আইয়ে গৃহদাহ

নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রকাশ: 08/07/2019


Thumbnail

দেশের অন্যতম শীর্ষস্থানীয় ব্যবসায়ীক গ্রুপ ইমপ্রেসের মধ্যে গৃহদাহর খবর পাওয়া যাচ্ছে। ইমপ্রেস গ্রুপের অন্যতম অঙ্গ প্রতিষ্ঠান চ্যানেল আইয়ের কর্তৃত্ব, সম্পাদকীয় নীতি কৌশল এবং পরিচালনা পদ্বতি নিয়েই এই বিরোধের খবর পাওয়া গেছে। উল্লেখ্য যে, বাংলাদেশের ইতিহাসে আত্মীয়তার বন্ধন ছাড়া শুধুমাত্র বন্ধুত্বের ভিত্তিতে অত্যন্ত ক্ষুদ্র পরিসর থেকে বিশাল পরিসরে গড়ে ওঠা প্রতিষ্ঠান ইমপ্রেস গ্রুপ। যে ৫ বন্ধু মিলে এই প্রতিষ্ঠানটি গড়ে তুলেছিলেন, তাদের মধ্যে রয়েছেন; আব্দুর রশিদ মজুমদার, ফরিদুর রেজা সাগর, জহিরউদ্দীন মাহমুদ, আব্দুল মুকিত মজুমদার, রিয়াজ আহমেদ খান। অত্যন্ত ক্ষুদ্র পরিসরে ১৯৭৮ সালে গড়ে উঠা এই ইমপ্রেস গ্রুপ বর্তমানে ২৫৫০ কোটি টাকার সম্পত্তির মালিক এবং ২১ হাজারের বেশি লোক প্রতিষ্ঠানটিতে কাজ করেন। ইমপ্রেস গ্রুপের অন্যতম প্রতিষ্ঠান ইনসেপটা ফর্মাসিটিক্যাল দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম ওষুধ কোম্পানি। এছাড়া চ্যানেল আই দেশের শীর্ষস্থানীয় টিভি চ্যানেলের অন্যতম। কিন্তু চ্যানেল আইয়ের মাধ্যমেই ইমপ্রেস গ্রুপ পাদপ্রদীপে আসে। চ্যানেল আই প্রতিষ্ঠিত হওয়ার পরপরই ইমপ্রেস গ্রুপের ব্যাবসায়ীক সফলতা ও বাণিজ্যিক প্রসার ঘটা বিস্তৃত হয়।

উল্লেখ্য যে, চ্যানেল আইয়ের স্বপ্নদ্রষ্টা ছিলেন ফরিদুর রেজা সাগর। তার উদ্যোগেই ১৯৯৯ সালে চ্যানেল আই প্রতিষ্ঠিত হয়। চ্যানেল আইয়ের ফরিদুর রেজা সাগর ব্যবস্থাপনা পরিচালক হলেও ইমপ্রেসের এই ৫ জনের বাইরে শাইখ সিরাজ চ্যানেল আইয়ের একজন পরিচালক। শাইখ সিরাজের সঙ্গে প্রথম থেকেই ফরিদুর রেজা সাগরের সম্পাদকীয় নীতি নিয়ে মতবিরোধ ছিল কিন্তু সাম্প্রতিক সময় তা চুড়ান্ত আকার ধারণ করেছে। কিছুদিন আগে এক হেলিকপ্টার দুর্ঘটনায় ফরিদুর রেজা সাগর আহত হন। আহত হওয়ার পরে উন্নত চিকিৎসার জন্য তাকে সিঙ্গাপুরে নিয়ে যাওয়া হয়। সিঙ্গাপুরে যাওয়ার পরপরই ফরিদুর রেজা সাগরের অনুপস্থিতির সুযোগটি নেন শাইখ সিরাজ। ব্যবস্থাপনা পরিচালকের অনুপস্থিতিতেই পরিচালনা পরিষদের সভা আহ্বান করা হয়। এই সভায় সভাপতিত্ব করেন ইমপ্রেস টেলিফিল্মের চেয়ারম্যান আব্দুর রশিদ মজুমদার। ব্যবস্থাপনা পরিচালক ছাড়া অনুষ্ঠিত এই বোর্ডের সভায় ফরিদুর রেজা সাগরের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ হিসেবে পরিচিত বিভিন্ন কলাকুশলী, শিল্পীকে চ্যানেল আই থেকে আকস্মিকভাবে বাদ দেওয়া হয়। এমনকি তাদের ন্যূনতম আত্মপক্ষ সমর্থনের কোনো সুযোগ দেওয়া হয়নি। যাদেরকে বাদ দেওয়া হয়েছিল তাদের মধ্যে অন্যতম ছিলেন ফারজানা ব্রাউনিয়া। তিনি `স্বর্ণকিশোরী’ নামে একটি অনুষ্ঠান করতেন।

একাধিক গোয়েন্দা সূত্রের বরাতে জানা গেছে যে, শাইখ সিরাজ মূলত বিএনপিপন্থীদের কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠার জন্যই ফরিদুর রেজা সাগরপন্থীদের চ্যানেল আইতে কোনঠাসা করেন। প্রশ্ন হচ্ছে যে, ব্যবস্থাপনা পরিচালক ছাড়া কিভাবে একটি প্রতিষ্ঠান কিভাবে পরিচালক পর্ষদের সভা অনুষ্ঠিত করতে পারে? কিভাবে এরকম গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত নিতে পারে? অবশ্য চ্যানেল আইয়ের চেয়ারম্যান আব্দুল রশিদ মজুমদার বাংলা ইনসাইডারকে বলেছেন, ব্যবস্থাপনা পরিচালক ছাড়া বোর্ডের সভা করা যায়। ফরিদুর রেজা সাগর ফিরে আসার পরও এই বোর্ডের সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। কিন্তু গোয়েন্দাসংস্থাগুলো বলছে যে, এই বোর্ডের সভার আগে শাইখ সিরাজ একাধিক বিএনপির শীর্ষ নেতার সঙ্গে বৈঠক করেছেন। এবং বিএনপি নেতারা ফরিদুর রেজা সাগরকে ব্যবস্থাপনা পরিচালকের পদ থেকে সরিয়ে শাইখ সিরাজকে ব্যবস্থাপনা পরিচালকের পদে দেওয়ার জন্য লবিং করছেন বলে একাধিক সূত্রে জানা গেছে। এখানে বিএনপিপন্থী হিসেবে পরিচিত একজন টকশো উপস্থাপক শাইখ সিরাজকে ব্যবস্থাপনা পরিচালক করার জন্য বিরোধী দল এবং সরকারের মধ্যে লবিং করেছেন বলেও একাধিক গোয়েন্দা সূত্রের তথ্যে জানা গেছে।

ফরিদুর রেজা সাগরকে শুধু কোণঠাসা করা হয়নি বরং তিনি অসুস্থ এই অজুহাতে ব্যবস্থাপনা পরিচালক পরিবর্তনের পায়তারা চলছে বলেও একাধিক গোয়েন্দা সূত্রের তথ্যে নিশ্চিত হওয়া গেছে। চ্যানেল আইয়ে কর্মরত একজন জানিয়েছেন যেহেতু ফরিদুর রেজা সাগর চ্যানেল আইকে প্রতিষ্ঠা করেছেন এবং চ্যানেল আই যখন একটি প্রতিষ্ঠান হিসেবে দাঁড়িয়ে গেছে কাজেই এইখানে নানামহল সুবিধা আদায়ের জন্য নানারকম পায়তারা করছে। একটি সূত্র বলছে যে, আবদুল মুকিত মজুমদার চ্যানেল আইতে একটি অনুষ্ঠান উপস্থাপনা করেন তিনিও ব্যবস্থাপনা পরিচালকের পদ নিতে আগ্রহী। একারণেই চ্যানেল আইয়ের ভেতর তীব্র কোন্দল চলছে। তবে প্রতিষ্ঠানের চেয়ারম্যান আবদুল মুকিত মজুমদার স্কুল জীবন থেকেই শাইখ সিরাজের বন্ধু। এজন্য শাইখ সিরাজের দাপট চ্যানেল আইতে বেড়ে গেছে।

গোয়েন্দা সংস্থার খবরে বলা হচ্ছে যে, শাইখ সিরাজের সঙ্গে বিভিন্ন বিএনপি নেতৃবৃন্দের নিয়মিত যোগাযোগ হচ্ছে এবং চ্যানেল আইয়ের খবরসহ বিভিন্ন জিনিসকে নিরপেক্ষ করা এবং বিএনপি পন্থিদেরকে স্পেস দেয়ার বিষয়টি আলোচনা হয়েছে। তার অংশ হিসেবে রুমিন ফারহানা এমপি হওয়ার পরপরই চ্যানেল আইতে তার একান্ত সাক্ষাৎকার প্রচারিত হয়েছে। উল্লেখ্য যে, শাইখ সিরাজের উদ্যোগেই বিএনপি জামাত জোট সরকারের আমলে চ্যানেল আইতে তারেক জিয়ার একান্ত সাক্ষাৎকার প্রচারিত হয়েছিল। শুধু বাংলাদেশে নয় বিভিন্ন দেশে চ্যানেল আইয়ের নামে যা প্রচারিত হয় সেগুলো সরকার বিরোধী আলোচনায় পরিপূর্ণ। লন্ডন চ্যানেল আই নিয়মিতভাবে সরকারবিরোধী প্রোপাগান্ডায় লিপ্ত রয়েছে এবং লন্ডন চ্যানেল আই সরাসরি শাইখ সিরাজের নির্দেশনায় এবং পরামর্শে পরিচালিত হয় বলে অভিযোগ রয়েছে।

তবে এ সমস্ত অভিযোগের ব্যাপারে চ্যানেল আইয়ের চেয়ারম্যান আবদুল রশিদ মজুমদারের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন যে, চ্যানেল আই কখনই বিএনপিপন্থি নয়। শাইখ সিরাজের সঙ্গে বিভিন্ন নেতার বৈঠক প্রসঙ্গে বলেন, এ ব্যাপারে তার কাছে কোন তথ্য নাই। তবে তিনি বলেন যে, সরকার নিশ্চয়ই সবকিছু বিবেচনা করেই তাঁকে স্বাধীনতা পদক দিয়েছে। কাজেই এরকম কোনকিছু হলে সেটা সরকারের দৃষ্টিগোচর হবে। তবে চ্যানেল আইয়ের এই গৃহদাহ চ্যানেল আই পরিবারের মধ্যেও অস্থিরতা এবং অনিশ্চয়তা তৈরি করছে।

বাংলা ইনসাইডার



প্রধান সম্পাদকঃ সৈয়দ বোরহান কবীর
ক্রিয়েটিভ মিডিয়া লিমিটেডের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান

বার্তা এবং বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ২/৩ , ব্লক - ডি , লালমাটিয়া , ঢাকা -১২০৭
নিবন্ধিত ঠিকানাঃ বাড়ি# ৪৩ (লেভেল-৫) , রোড#১৬ নতুন (পুরাতন ২৭) , ধানমন্ডি , ঢাকা- ১২০৯
ফোনঃ +৮৮-০২৯১২৩৬৭৭