ইনসাইড পলিটিক্স

কাদেরই সরকারের দ্বিতীয় ব্যক্তি

নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রকাশ: 08/07/2019


Thumbnail

আওয়ামী লীগ টানা তৃতীয় মেয়াদে এসে একটা বিষয় স্পষ্ট হয়েছে যে সরকারের দ্বিতীয় ব্যক্তিটি কে। যেকোনো সংসদীয় গণতন্ত্রে যেমন ছায়া মন্ত্রিসভা থাকে, সেরকম সরকারের একজন দ্বিতীয় ব্যক্তিও থাকে। যিনি সরকার প্রধান বা প্রধান নির্বাহীর অনেক নির্দেশনা পালন করেন। প্রধান নির্বাহীর অবর্তমানে সরকার এবং রাষ্ট্র পরিচালনার কাজটিও করে থাকেন। বাংলাদেশে মুক্তিযুদ্ধের সময়েও সরকারের দ্বিতীয় ব্যক্তির প্রচলন ছিল। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের অনুপস্থিতিতে তাজউদ্দিন আহমেদ প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছিলেন। কিন্তু ৭৫ এর ১৫ আগস্টের পর থেকে একক কর্তৃত্বে দেশ চলতে থাকে। সেখানে সরকার পরিচালনায় অবিশ্বাসেই বসবাস ছিল সবচেয়ে বেশি। যে জন্য জিয়াউর রহমান কাউকে বিশ্বাস করতেন না। তাই তার ক্ষমতা চলাকালে তিনি কোনো দ্বিতীয় ক্ষমতাধর ব্যক্তিকে রাখেননি। যাবতীয় ক্ষমতা তিনি নিজের কুক্ষিগত করে রেখেছিলেন। একই ঘটনা ঘটেছিল হুসেইন মুহাম্মদ এরশাদের ক্ষেত্রেও।

৯১ তে বেগম খালেদা জিয়া ক্ষমতায় আসার পরেও সরকারের মধ্যে অনেকে ক্ষমতাশালী হলেও সরকারের ঘোষিত বা দৃশ্যমান কোনো দ্বিতীয় ব্যক্তি খুঁজে পাওয়া যায়নি। কিন্তু এবারের আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় আসার পরে দ্বিতীয় ব্যক্তির নানামাত্রিক অবস্থান ছিল। যেমন সংসদে দ্বিতীয় ব্যক্তি হিসেবে সংসদ উপনেতা। আবার সরকার পরিচালনায় দ্বিতীয় ব্যক্তি হিসেবে মন্ত্রিসভায় প্রধানমন্ত্রীর পরে যিনি জ্যৈষ্ঠমন্ত্রী তিনি থাকতেন। আবার দলের মধ্যে দলের সাধারণ সম্পাদকই দ্বিতীয় ব্যক্তি হিসেবে পরিচিতি পেতেন। কিন্তু তৃতীয় মেয়াদে এসে সরকারের একজন দ্বিতীয় ব্যক্তি হিসেবে দৃশ্যমান হয়েছেন। তিনি হলেন ওবায়দুল কাদের। সংসদে আওয়ামী লীগের সংসদনেতা অবশ্যই শেখ হাসিনা। সংসদ উপনেতা হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন বেগম সৈয়দা সাজেদা চৌধুরী। বেগম সাজেদা চৌধুরী সংসদ উপনেতা হিসেবে যতটা না কার্যকর, বরং বয়ঃপ্রবীণ এবং সম্মান জানানোর জন্যই তাকে এই পদটি দেওয়া হয়েছে তা বুঝতে কোনো গবেষক হওয়ার প্রয়োজন হয় না। শারীরিকভাবে অসুস্থ এই শ্রদ্ধেয় নেতার সংসদ কার্যক্রমে তেমন উপস্থিতি চোখে পড়ে না। কাজেই সংসদ উপনেতার পদটি এখন আলংকারিক পদে পরিণত হয়েছে।

২০০৯ থেকে দেশ পরিচালনার দায়িত্ব পাওয়া আওয়ামী সরকারে প্রথম এবং দ্বিতীয় মেয়াদে যেমন আবুল মাল আব্দুল মুহিত যেমন স্পষ্টতই ছিলেন মন্ত্রিসভার দ্বিতীয় ক্ষমতাধর ব্যক্তি। মন্ত্রিসভার অনেক গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে তিনি প্রধানমন্ত্রীকে পরামর্শ দিতেন। আবার ২০০৯ সালের পরে কিছুদিন সরকারের দ্বিতীয় ব্যক্তি ছিলেন প্রধানমন্ত্রী তৎকালীন জনপ্রশাসন বিষয়ক উপদেষ্টা (বর্তমানে রাজনৈতিক উপদেষ্টা) এইচ টি ইমাম। পরবর্তীতে এইচ টি ইমামের ক্ষমতা খর্ব হয়েছিল। তখন দ্বিতীয় ব্যক্তি হিসেবে আবির্ভূত হয়েছিলেন বেগম মতিয়া চৌধুরী। কিন্তু এবার দেখা যাচ্ছে যে সংসদের কার্যক্রম, সংসদের বাইরে দল পরিচালনা এবং সরকার পরিচালনা- এই তিনটি ক্ষেত্রে ওবায়দুল কাদেরই দৃশ্যমান। তিনিই যে দ্বিতীয় ব্যক্তি তা ক্রমশ স্পষ্ট হচ্ছে। ওবায়দুল কাদের অসুস্থ হওয়ার পরে একটা দ্বিধাদ্বন্দ্ব ছিল, অসুস্থতা কাটিয়ে তিনি আবার স্বাভাবিক জীবনে ফিরে এসেছেন এবং দলের সকল কর্মকাণ্ডে তাকে নিয়মিত দেখা যাচ্ছে। অধিকাংশ ক্ষেত্রে তিনি সরকারের মূখপাত্র হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন।

উল্লেখ্য যে, দেশে যখন গ্যাসের দাম বৃদ্ধি করা হয় তখন প্রধানমন্ত্রী চীন সফরে গিয়েছিলেন। গ্যাসের দামবৃদ্ধি যে যৌক্তিক হয়েছে, তা সরকারের মূখপাত্র হিসেবে অর্থমন্ত্রী নয় বা জ্বালানী প্রতিমন্ত্রী বা উপদেষ্টা নয়, বরং দলের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরই সেই বিষয়ে কথা বলেছেন। রিফাত হত্যাকাণ্ড নিয়ে সরকারের মূখপাত্র হিসেবে কথা বলেছেন সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের। চীন সফ শেষে আজ যখন প্রধানমন্ত্রী সংবাদ সম্মেলন করলেন, সেখানে তিনজন ব্যক্তি মাত্র মঞ্চে ছিলেন। এদের মধ্যে প্রধানমন্ত্রীর পাশাপাশি পররাষ্ট্রমন্ত্রী থাকাটা অবশ্যই যৌক্তিক। আর প্রধানমন্ত্রীর আরেকপাশে ছিলেন ওবায়দুল কাদের। তাকে রাখার মধ্যে দিয়েই আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা স্পষ্ট করে দিলেন যে ওবায়দুল কাদেরই হলেন সরকারের দ্বিতীয় গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি। বর্তমানে বিভিন্ন মন্ত্রীরা তাদের মন্ত্রণালয়ের বিভিন্ন বিষয় নিয়ে ওবায়দুল কাদেরের সঙ্গেই কথা বলেন। প্রধানমন্ত্রী দেশের বাইরে গেলে সরকারের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে নির্দেশনা দেওয়া, প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে যোগসূত্র রক্ষা করা, প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে যোগাযোগ রক্ষা করে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় এবং বিভাগকে নির্দেশনা করা, বিভিন্ন ক্ষেত্রে সরকারের গুরুত্বপূর্ণ অবস্থানগুলোকে ব্যাখ্যা করা ওবায়দুল কাদেরেরই প্রধান কাজ। একই সঙ্গে তিনি দল পরিচালনা করছেন এবং দলের দ্বিতীয় ব্যক্তি হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হয়েছেন। সংসদে উপনেতা যেহেতু বয়ঃজ্যেষ্ঠ এবং অসুস্থ তাই সংসদে কখন কি বলতে হবে, কোন বিষয়কে কখন প্রাধান্য দিতে হবে সেগুলো বিষয়ে তিনিই পরামর্শদাতা। সংসদীয় গণতন্ত্রের এটাই নীতি যে, সবসময় একজন দ্বিতীয় ব্যক্তি দলে থাকেন যিনি প্রধানমন্ত্রীর অনুপস্থিতিতে সরকার এবং রাষ্ট্রপরিচালনার জন্য কর্তৃত্ববান হন। সেদিকেই আওয়ামী লীগ যাচ্ছে বলে রাজনৈতিক পর্যবেক্ষক মহল মনে করেন।

বাংলা ইনসাইডার/এসএইচ



প্রধান সম্পাদকঃ সৈয়দ বোরহান কবীর
ক্রিয়েটিভ মিডিয়া লিমিটেডের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান

বার্তা এবং বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ২/৩ , ব্লক - ডি , লালমাটিয়া , ঢাকা -১২০৭
নিবন্ধিত ঠিকানাঃ বাড়ি# ৪৩ (লেভেল-৫) , রোড#১৬ নতুন (পুরাতন ২৭) , ধানমন্ডি , ঢাকা- ১২০৯
ফোনঃ +৮৮-০২৯১২৩৬৭৭