ইনসাইড পলিটিক্স

এরশাদের পর কে?

নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রকাশ: 15/07/2019


Thumbnail

বাংলাদেশের রাজনীতিতে দীর্ঘকাল ধরে শাসন করা তিনজনের একজন চলে গেলেন। যদিও বাংলাদেশের রাজনীতির মূল আলোচিত হলেন দুইজন। তাঁরা হলেন- সর্বকালের শ্রেষ্ঠ বাঙালি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। যিনি বাংলাদেশের স্বাধীনতা ও মুক্তিযুদ্ধের পথপ্রদর্শক। যার নেতৃত্বে বাংলাদেশ স্বাধীন হয়েছিল, যিনি বাংলাদেশকে মুক্তির পথ দেখিয়েছিল। অন্যজন হলেন বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা স্বৈরাচারী একনায়ক জিয়াউর রহমান। যিনি বাংলাদেশের স্বাধীনতাবিরোধী ধারা পুনঃপ্রতিষ্ঠা করেছিলেন।

আমরা মানি না মানি, বাংলাদেশের রাজনীতি দুটি ধারায় বিভক্ত। একটি আওয়ামী লীগ এবং আরেকটি আওয়ামী বিরোধী। কাজেই আওয়ামী লীগের প্রধান আদর্শিক নেতা নিঃসন্দেহে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। আর আওয়ামী বিরোধী ধারার প্রধান নেতা একনায়ক জিয়াউর রহমান। কিন্তু এই দুজনের দ্বারা রাজনীতি চালিত হলেও বাংলাদেশে তিনজন দীর্ঘসময় ধরে সরকার পরিচালনা করেছেন, দেশ শাসন করেছেন। এরা হলেন বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, বেগম খালেদা জিয়া এবং হুসেইন মুহাম্মদ এরশাদ। বেগম খালেদা জিয়া মোট ১০ বছর ক্ষমতায় ছিলেন। বর্তমান প্রধানমন্ত্রী দীর্ঘ ১৫ বছর দায়িত্ব পালন করে এবার ১৬ বছরে পা দিয়েছেন। আর হুসেইন মুহাম্মদ এরশাদ ৯ বছর দায়িত্ব পালন করেছিলেন।

বাংলাদেশে আশির দশকের রাজনীতি মানেই হলো শেখ হাসিনা, বেগম খালেদা জিয়া এবং হুসেইন মুহাম্মদ এরশাদের দ্বৈরথ। ৯০’ এ এরশাদের পতন হলেও এরশাদের রাজনীতি শেষ হয়ে যায়নি, বরং এরশাদ বাংলাদেশের রাজনীতিতে এক্স-ফ্যাক্টর হয়ে ছিলেন। তার সমর্থন প্রভাবের ওপর নির্ভর করতো কে ক্ষমতায় আসবে না আসবে।

এরশাদের এই অধ্যায়ের ফলে বাংলাদেশের রাজনীতিতে তিনটি বিষয় স্পষ্ট হয়ে গেল। একটা হলো- বাংলাদেশে যে ত্রিদলীয় রাজনীতির যে সম্ভাবনা সেটা অবদমিত হয়ে গেলো। বাংলাদেশের রাজনীতিতে তৃতীয় শক্তি বলে আর কিছু থাকলো না। এরশাদের অনুপস্থিতিতে জাতীয় পার্টি কবে নিঃশেষিত হবে সেটাই এখন দেখার বিষয়। জাতীয় পার্টি যে তৃতীয়শক্তি হিসেবে আর রাজনীতিতে থাকবে না তা বলাই বাহুল্য।

এরশাদের এই তিরোধানের মাধ্যমে দ্বিতীয় বিষয় হলো, স্বাধীনতা বিরোধী এবং আওয়ামী লীগ বিরোধী যে শক্তি তা আবার সংঘবদ্ধ হওয়ার সুযোগ পেল। কারণ এরশাদের কারণে স্বাধীনতা বিরোধী, আওয়ামী লীগ বিরোধী, মুক্তিযুদ্ধ বিরোধী শক্তিরা বিভক্ত হয়েছিল, যারা কিছু জাতীয় পার্টি এবং বিএনপির সমর্থনে ছিল। এরশাদের নেতৃত্বে জাতীয় পার্টি যখন আওয়ামী লীগের সঙ্গে গাটছাড়া বেঁধেছিল তখন স্বাভাবিকভাবেই আওয়ামী লীগ বিরোধী বা স্বাধীনতা বিরোধী এই অংশটি দুর্বল হয়ে পড়েছিল। এরফলে কি বাংলাদেশে স্বাধীনতা বিরোধী শক্তিরা ক্ষমতাশালী হবে?

তৃতীয় যে বিষয়টি ছিল, এরশাদের দল যতই ছোট থাক না কেন রাজনীতিতে তার একটা বড় প্রভাব ছিল। বাংলাদেশের তিনজন প্রভাব বিস্তারকারী নেতার মধ্যে এরশাদ একজন ছিলেন। এরশাদের মৃত্যুর আগেই বাংলাদেশের রাজনীতিতে খালেদা জিয়ার প্রভাবও খর্বচ্যুত হয়েছে। খালেদা জিয়া গত দেড় বছর ধরে কারান্তরীণ অবস্থায় রয়েছেন। এরশাদের মৃত্যুর পর সবচেয়ে বড় প্রশ্ন উঠেছে যে, বাংলাদেশের রাজনীতিতে কেউ কি এরশাদের শূন্যস্থানকে পূরণ করতে পারবেন? বা রাজনীতিতে বিরোধী পক্ষ হিসেবে কেউ থাকবেন কিনা? কারণ রাজনৈতিক দল হিসেবে বিএনপি এখন নিঃশেষিত প্রায় এবং খালেদা জিয়া যে নতুন করে রাজনৈতিক অঙ্গনে এসে একটা কিছু করবেন সে সম্ভাবনাও বিএনপির নেতারা বিশ্বাস করেনা।

এরকম একটি বাস্তবতায় প্রশ্ন উঠতেই পারে, তাহলে এরশাদের পর কে? এরশাদের তিরোধানের পর জিএম কাদের বা রওশন এরশাদ যে একই কারিশমা নিয়ে রাজনীতিতে আসতে পারবেন না তা বুঝার জন্য কোনো রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞ হওয়ার দরকার নেই। এরফলে যে রাজনীতিতে ৮০’র দশকের শুরু থেকে তিন নেতার লড়াই শুরু হয়েছিল সে লড়াইয়ের অবসান ঘটলো। এখন রাজনীতির ময়দান যুদ্ধহীন, লড়াইহীন হয়ে পড়ল। কারণ বেগম খালেদা জিয়া জেলে।  তার প্রবল রাজনীতিক প্রতিপক্ষ টানা তৃতীয়বারের মত ক্ষমতায়। এরশাদ চলে গেলেন। তাহলে বাংলাদেশের রাজনীতিতে যে বিরোধী দলের ক্ষয়িষ্ণু ধারা, সেই ক্ষয়িষ্ণু ধারার পথে কি আরেক পা এগুলো এরশাদের মৃত্যুর মাধ্যমে? সেই প্রশ্নই আজ রাজনৈতিক অঙ্গনে। 

বাংলা ইনসাইডার



প্রধান সম্পাদকঃ সৈয়দ বোরহান কবীর
ক্রিয়েটিভ মিডিয়া লিমিটেডের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান

বার্তা এবং বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ২/৩ , ব্লক - ডি , লালমাটিয়া , ঢাকা -১২০৭
নিবন্ধিত ঠিকানাঃ বাড়ি# ৪৩ (লেভেল-৫) , রোড#১৬ নতুন (পুরাতন ২৭) , ধানমন্ডি , ঢাকা- ১২০৯
ফোনঃ +৮৮-০২৯১২৩৬৭৭