ইনসাইড বাংলাদেশ

যাত্রীবাহী বাস আটকে ট্রাকপার করছে পাটুরিয়া ঘাট প্রশাসন!

নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রকাশ: 16/07/2019


Thumbnail

দক্ষিণবঙ্গের ২১ জেলার মানুষের প্রবেশদ্বার হিসেবেখ্যাত মানিকগঞ্জের শিবালয় উপজেলার পাটুরিয়া- দৌলতদিয়া নৌরুটের পাটুরিয়া ফেরি ঘাট। অভিযোগ উঠেছে, এই ঘাটে যাত্রীবাহী বাস ঘন্টার পর ঘন্টা সিরিয়ালে আটকে রেখে সাধারণ পন্যবাহী ট্রাক অগ্রধিকার ভিত্তিতে পার করা হচ্ছে। সংশ্লিষ্ট কতৃপক্ষের বিরুদ্ধে মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগও করছেন যাত্রীরা।

এ নৌরুট  দিয়ে গড়ে প্রতিদিন সাড়ে তিন থেকে চার হাজার যানবাহন পারাপার হয়ে থাকে। অগ্রাধিকার ভিত্তিতে যাত্রীবাহী বাস, রোগীবাহী এম্বুলেন্স, লাশের গাড়ি কাচামালের গাড়ি , ওষুধের গাড়ি ও  পারাপারের কথা থাকলেও সরেজমিনে সংবাদ - সংগ্রহ করতে গিয়ে জানা যায়, সবচেয়ে বেশী অগ্রাধিকার ভিত্তিতে যাত্রীবাহী বাস পারাপারের কথা থাকলেও ট্রাক, কভার্ড ভ্যান   অগ্রাধিকার ভিত্তিতে পার করা হচ্ছে। এছাড়া ঘাটের তিন নম্বর ঘাটের প্রবেশমুখ, চার নম্বর ঘাট এবং পাচ নম্বর ঘাট গুলোতেও সবার আগে  সিরিয়ালে থাকে পন্যবাহী এ ট্রাকগুলো আর বাসে থাকা যাত্রীদের ঘন্টার পর ঘন্টা অপেক্ষা করতে হয় পারের জন্য। এছাড়া দিনের বেলায় বাসট্রাকের সাড়ির   মাঝের ফাকা জায়গা দিয়ে পন্যবাহী ট্রাক ঘাট প্রশাসন ও টিসির কিছু অসাধু কর্মকর্তাদের   ম্যানেজ করে রাজাবাবুর মতোন ফেরিতে উঠে যাচ্ছে। আর রাতের বেলায় যানবাহন পারাপারের  দৃশ্যপটই পালটে ফেলে ঘাট প্রশাসন ও টিসির কর্মকর্তারা। রাতে বাসের যাত্রীদের অসহায়েত্বের সুযোগ নিয়ে ভিআইপি, বি-ভিআইপি, এবং ঘাটে সক্রিয় দালাল সিন্ডিকেটের সহায়তায় অহরহ ট্রাক পারেপারে মেতে উঠেন সংশ্লিষ্ট কতৃপক্ষ। রাতের বেলায় ফেরিতে শুধু ট্রাক আর ট্রাক পার হয় নামমাত্র দুই একটি বাস দেওয়া হয় ফেরিতে। অথচ নিয়মানুযায়ী  সকলের আগে যাত্রীবাহী বাস  পার হওয়ার কথা থাকলেও ফেরিতে সাধারণ পন্যবাহী ট্রাক পারাপারে ব্যস্ত সংশ্লিষ্ট কতৃপক্ষ। 

ঢাকা থেকে খুলনাগামী সোহাগ পরিবহনের যাত্রী তরিকুল ইসলাম জানান, বিকেল পাচটার দিকে ঘাটে পৌছেছি এখন রাত আটটা বাজে। তিন ঘন্টা অপেক্ষার পরও ফেরিতে উঠতে পারিনি আমরা। আর ফেরিতে কিভাবেই বা উঠবো আমরা  যাত্রীবাহী বাস আটকে রেখে  পুলিশ কন্ট্রোল রুমের সামনে থেকে শুধ ট্রাক আর ট্রাক ছাড়ছে তারা। এ কেমন দেশে বাস করছি ভাই আমরা দক্ষিণ- বঙ্গের মানুষ ঘাট দিয়ে পারাপার হতে এত দুর্ভোগ  পোহাচ্ছে অথচ কারো নজরেই পড়েনা এগুলো। 

ঢাকা- রাজবাড়ির জামালপুরগামী রাবেয়া পরিবহনের যাত্রী সুমাইয়া আক্তার জানান, সন্ধ্যার  পরপর আমরা ঘাটে এসে পৌছেছি ঘাটে এখন রাত নয়টার উপরে বাজে  এখনো ফেরি পায়নি আমাদের গাড়িটি। আর কখন ফেরি পাবে তাও জানিনা। পুলিশ শুধু ট্রাক আর ট্রাক ছাড়ছে কন্ট্রোল রুমের সামনে থেকে কিন্তু বাস পার করার নামে কোন খবর নেই। কন্ট্রোল রুমের সামনে দ্বায়িত্বরত পুলিশের কাছে বিষয়টি জানতে চাইলে তিনি বললেন সবকিছু নিয়মমাফিকই ফেরি পারাপার হয়ে যাচ্ছে। উপরের যেমন নির্দেশনা সেভাবেই গাড়ি ছাড়ছি আমরা। আপনার কিছু জানার থাকলে বা বলার থাকলে কন্ট্রোল রুমে অফিসার আছে উনার সাথে কথা বলুন। 

ঢাকা- সাতক্ষীরাগামী কে লাইন পরিবহনের যাত্রী আছিয়া খাতুন বলেন, ঘাটে চারঘন্টার উপরে ফেরি পারাপারের অপেক্ষায় বসে আছি ভাই। এখনো ফেরি পাইনি আর কখন ফেরি পাবো তাও জানিনা। শিশু বাচ্চা নিয়ে খুবই সমস্যা হচ্ছে বাচ্চা- কান্নাকাটি করতে করতে অসুস্থ হয়ে পড়েছে। প্রতিনিয়ত অনাকাঙ্ক্ষিত এ যাত্রী দুর্ভোগের অবসান চাই আমরা ভাই। এ দুর্ভোগ লাঘবে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ কামনা করছি।

ঢাকা-কুমারখালীগামী এসবি পরিবহনের যাত্রী জোবায়ের হোসেন  জানান, সন্ধ্যা ছয়টার দিকে ঘাটে পৌছেছি আমরা ভাই। প্রায় দেড় ঘন্টার উপরে ঘাটে বসে আছি। অথচ আমাদের সাথে একই সময়ে ছেড়ে আসা অন্য একটি পরিবহনের এসিবাস ঘাটের চৌরাস্তা থেকে বাইপাস সড়ক ব্যবহার করে ৫ নম্বর ফেরি ঘাট দিয়ে পার হয়ে গেছে। আর একই রুটের গাড়ি হয়েও আমরা যানজটের কবলে পড়ে আছি।  ঘাট প্রশাসনের এটা কেমন বিচার। শুনেছি ওই গাড়িটি প্রতিনিয়তই রাস্তাটি ব্যবহার করে ঘাট দিয়ে পারাপার হয়। আর আমরা ঘন্টার পর ঘন্টা সিরিয়ালে পরে আছি ফেরি পারে অপেক্ষায় অথচ এখানে যাত্রীবাহী বাস পারনা করে ফেরিতে ট্রাক পারপারের ব্যস্ততায় মগ্ন ঘাটের প্রশাসন ও পারাপার সংশ্লিষ্ট কতৃপক্ষ। এরাতো রাষ্ট্রের নাগরিকের অধিকার খর্ব করছেন মানবাধিকার লঙ্ঘন করছেন এরা। মানবাধিকার লঙ্ঘনের দায়ে এদেরকে রাষ্ট্রের উচিত বিচারের মুখোমুখি করার। 

এ বিষয়ে পাটুরিয়া ঘাটের বিআইডব্লিউটিসির (বানিজ্যিক) শাখার ব্যবস্থাপক সালাহউদ্দিন আহাম্মেদ জানান, বর্ষা মৌসুম নদীতে পানি বৃদ্ধি আর স্রোতের কারনে ফেরি পারাপারে সময় বেশী লাগে। যে কারনে ফেরির ট্রিপ সংখ্যা কমে গিয়েছে। বর্তমানে ১৫ টি ফেরির সাহায্যে যাত্রী ও যানবাহন পারাপার করা হচ্ছে। 

আর যানবাহন পারাপারে অগ্রাধিকারের বিষয়ে তিনি জানান, লাশবাহী গাড়ি, যাত্রীবাহী বাস, ওষুধের গাড়ি, সরকারি পন্যবাহী যানবাহন, পচনশীল পন্যবাহী যানবাহন, একদিনের মুরগীর বাচ্চাবাহী যানবাহন ও কুরিয়ারের গাড়ি অগ্রাধিকার ভিত্তিতে পারাপার করা হয়। তবে ঘাটের পরিবেশ পরিস্থিতি বিবেচনা করে সবসময় লাশবাহী গাড়ি, রোগীবাহী এম্বুলেন্স, যাত্রীবাহী বাসের টিকিট অগ্রআধিকার ভিত্তিতে দেওয়া হয়, অন্যান্য জরুরি পন্যবাহী যানবাহন ও সাধারণ ট্রাকের টিকিট বিবেচনাধীন দেওয়া হয়। আমাদের কাজ মুলত টিকিট দেওয়া লোড- আনলোড পয়েন্ট ক্লিয়ার করে যানবাহন ফেরিতে  পারাপার করা। কন্ট্রোল রুমের সামনে থেকে ঘাট প্রশাসন যে যাববাহন গুলো পারাপারে জন্য পাঠায় সেইগুলোই পার করে থাকি আমরা। পারাপারের ক্ষেত্রে কোন অনিয়ম দুর্নীতি হলে সে দায়ভার ঘাট প্রশাসন এবং ঘাটের প্রশাসনিক ইনচার্জে যিনি থাকেন তার। কারন টিকিট দেওয়ার পর গাড়ির সিরিয়াল মেন্টেন করা, ঘাটের শৃঙ্খলা রক্ষাসহ যানবাহন ফেরিতে উঠার পুর্বমুহুর্ত পর্যন্ত দ্বায়িত্বটা ঘাটের প্রশাসনই পালন করে থাকেন। এক্ষেত্রে কোন অনিয়ম ও দুর্নীতির দায় কোনমতেই বিআইডব্লিউটিসি কতৃপক্ষ নিতে পারেনা। 

নাম প্রকাশে অনইচ্ছুক ঘাটের এক পুলিশ কর্মকর্তা বলেন, ভাই আমরা হুকুমুরের গোলাম আমাকে যেমন নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে আমি ঠিক তেমনভাবেই আমার দ্বায়িত্ব পালন করছি। আমরা প্রতক্ষ্য ভাবে মাঠে কাজ করি তাই সকল দোষ আমাদের উপরে বর্তায়। মাঝে মধ্যে ক্লোজ করা হয় আবার বদলি করা হয়েছে অনেককে। আপনাদের বোঝা উচিত ঘাটের ইনচার্জে যিনি আছেন তার নির্দেশনা মোতাবেকই আমরা যানবাহন গুলো ফেরি পারাপারের জন্য ছাড়ছি। যখন যেমন নির্দেশ দেওয়া হয় ঠিক সেভাবেই দ্বায়িত্ব পালন করে থাকি আমরা। ছোট পদে চাকুরী করি আমরা তাই সকল দোষ আমাদের উপরে বর্তায়। 

তবে এ বিষয়ে পাটুরিয়া ঘাটের ট্রাফিক পুলিশের  ইনচার্জ  টিআই রাসেল আরাফাতের মুঠোফোন বার বার যোগাযোগ করা হলেও ফোনটি রিসিভ না করাতে এর বিস্তারিত কারন জানা যায়নি। আর এখানার স্থানীয় মানবাধিকার কর্মীরা ঘাটে ফেরি পারাপারের যাত্রী দুর্ভোগের বিষয়টি মানবাধিকার লঙ্ঘনের শামিল উল্লেখ করে বলেন, ঘাটে যাত্রীবাহী বাস পারাপারের ক্ষেত্রে বৈষম্য ও প্রতিনিয়ত ফেরি পারাপারে যাত্রীদের ভোগান্তি লাঘবে উর্দ্ধতন কতৃপক্ষের কঠোর নজরদারিসহ  যাত্রী ও যানবাহন পারাপারে দুর্ভোগ সৃষ্টিকারী মহলকে আইনের আওতায় এনে বিচারের মুখোমুখি করার আহবান জানান। 



প্রধান সম্পাদকঃ সৈয়দ বোরহান কবীর
ক্রিয়েটিভ মিডিয়া লিমিটেডের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান

বার্তা এবং বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ২/৩ , ব্লক - ডি , লালমাটিয়া , ঢাকা -১২০৭
নিবন্ধিত ঠিকানাঃ বাড়ি# ৪৩ (লেভেল-৫) , রোড#১৬ নতুন (পুরাতন ২৭) , ধানমন্ডি , ঢাকা- ১২০৯
ফোনঃ +৮৮-০২৯১২৩৬৭৭