ইনসাইড থট

দুধে এন্টিবায়োটিকের উপস্থিতি কেন?

নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রকাশ: 16/07/2019


Thumbnail

বাংলাদেশের বাজারে বিক্রি তরল পাস্তুরিত দুধের মান নিয়ে তুমুল হৈ চৈ চলছে। এসেছে মামলার হুমকি, ধামকি। বিভিন্ন খাদ্যের স্ট্যান্ডার্ড বা জাতীয় মান কি হবে তা নির্ধারিত না থাকায় এই বিতর্কের সূত্রপাত। তাই এই ফাঁকে মানুষের খাদ্যের পরিমিত উপাদানের মিনিমাম স্ট্যান্ডার্ড মেইনটেন না করার ফলে বহু পশুখাদ্য বাংলাদেশে এসে মানুষের খাদ্য হয়ে যায়। যা খেয়ে পুষ্টির অভাবে গরীব মানুষের পেট ফুলে মারা যান, আর ফিডকে ফুড বানানোর চক্রে জড়িতরা চরম অনৈতিক লাভ করে ব্যাংকে আর বিদেশের তাদের জমানো টাকার একাউন্ট ফুলে ফেঁপে মোটা তাজা হয়। এ সব কথা বলার আগে এর আগে মনে হয় আমাদের একটু জেনে নেওয়া দরকার ফুড আর ফিডের পার্থক্য কি?

একটা আইটেম নিয়ে যদি কথা বলি তাহলে খাদ্য কি সে সম্পর্কে আমাদের একটা পরিষ্কার ধারণা হতে পারে। বাংলাদেশের নিরিখে কোন খাদ্যের পরিমিত উপাদানের মিনিমাম স্ট্যান্ডার্ড নিরূপণ করে তা দেখভাল করার দায়িত্ব বিএসটিআই’এর। তারা অনুমোদন দিলে সেই সব উপাদান দিয়ে খাদ্য, পানীয় ইত্যাদি তৈরি হয়ে থাকে। অন্যদিকে খাদ্যের ব্যাপারে এটা নিরাপদ খাদ্য কি না তা দেখভাল করার জন্য আছে নিরাপদ খাদ্য অধিদপ্তর। আমরা নিকট অতীতে দেখেছি যে, বিএসটিআই ও নিরাপদ খাদ্য অধিদপ্তর পারস্পারিক সহায়তার মাধ্যমে কাজ করে থাকে। বাজারে বিক্রি হওয়া এনার্জি ড্রিংক্স তুলে নেওয়া এর বড় উদাহরণ। কারণ এতে ছিল ক্ষতিকর উপাদান, যা পান করলে মারাত্মক স্বাস্থ্যহানির নিশ্চিত সম্ভাবনা থাকায় এই পদক্ষেপ নিয়েছেন সরকারের এই দুটি সংস্থা বা সরকার। দুধে কত ভাগ প্রোটিন, ফ্যাট, ইত্যাদি থাকলে তা মানুষের খাদ্য হবে তা নির্ধারণের দায়িত্ব সরকারের বিএসটিআইয়ের। সব উন্নত দেশে এখন দুধে ভারী ধাতু, এন্টিবায়োটিক এবং কীটনাশক পরীক্ষা করা হয়।

উদাহরণস্বরূপ, ভারতে ২৩টি মান ও রাসায়নিক মানদণ্ড বিবেচনায় এবং ১৮টি রাসায়নিক দূষণ চিহ্নিতকরণের মাধ্যমে দুধ পরীক্ষা করা হয়। এর মাধ্যমে খাদ্যদ্রব্যের মধ্যে মিশ্রিত প্রায় ৩০০টি কীটনাশকের উপাদান সনাক্ত করা যায়। যেখানে সিঙ্গাপুর প্রায় ৫০০টি কীটনাশকের উপাদান সনাক্ত করতে পারে বলেও জানান তিনি।

বাংলাদেশ স্ট্যান্ডার্ডস অ্যান্ড টেস্টিং ইন্সটিটিউশন (বিএসটিআই) নয়টি মানদণ্ড ধরে দুধ পরীক্ষা করে থাকে। তাই তারা বলেছে দুধের মান ঠিক আছে তাদের নয়টি মানদণ্ডে পরীক্ষার আলোকে। বিএসটিআই দুধে প্রোটিন, ফ্যাট, ল্যাক্টিক এসিড, কলিফর্ম, ঘনত্ব, ইত্যাদির মত মোট ৯ টি বিষয় পরীক্ষা করে এই নয়টির মধ্যে এন্টিবায়োটিক অন্তর্ভুক্ত নয়। এখানেই হয়েছে বিপত্তি। জনস্বাস্থ্য ইন্সটিটিউটের পরীক্ষায় বাজারে সহজলভ্য প্যাকেটজাত দুধে এন্টিবায়োটিক, কীটনাশক এবং ভারী ধাতু পাওয়ার পর মান নিয়ন্ত্রণকারী হিসেবে বিএসটিআইএর ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন উঠে। আবার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের একদল গবেষক পরীক্ষাগারে প্রমাণ করেছেন যে বাজারে বিক্রি হওয়া দুধে ক্ষতিকর মাত্রায় এন্টিবায়োটিক আছে। বিএসটিআই বলছে এটা ঠিক না। কিন্তু আমরা জানি যে, ‘একটি গবেষণার ত্রুটি বের করতে হয় আরেকটি গবেষণা দিয়ে-এটা হচ্ছে নিয়ম৷ মন্ত্রণালয় এ ধরনের পরীক্ষা করেছে কিনা আমি জানি না৷ তারা যদি পরীক্ষা করে থাকেন তাহলে আমাদের ত্রুটিগুলো দেখাক৷ ত্রুটি থাকলে আমরা নিশ্চয়ই তা শুধরে নেব৷ কিন্তু যদুর জানি, আমাদের কাজে এখনো কোনও ত্রুটি খুঁজে পায়নি৷’ বিষয়টি শেষ পর্যন্ত আদালতের নজরে এসেছে, এসেছে নতুন নির্দেশ, দ্রুত সমাধানের।

কিছুদিন আগের একটি গবেষণায় দেখা গেছে, গরুর দুধের ৯৬টি নমুনার মধ্যে ৯ শতাংশ দুধে স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি কীটনাশক, ১৩ শতাংশে টেট্রাসাইক্লিন, ১৫ শতাংশে সহনীয় মাত্রার চেয়ে বেশি মাত্রায় সিসা রয়েছে। বিভিন্ন ধরনের অণুজীব রয়েছে ৯৬ শতাংশ দুধে। এদিকে প্যাকেটজাত দুধের ৩১টি নমুনায় ৩০ শতাংশে সহনীয় মাত্রার চেয়ে বেশি হারে পাওয়া গেছে টেট্রাসাইক্লিন। একটি নমুনায় রয়েছে সিসা।

দুধে ক্ষতিকর মাত্রায় এন্টিবায়োটিক, কীটনাশক, আর কাপড় ধোয়ার ডিটারজেন্ট কীভাবে আসে সেই জানার কৌতূহল শরের অনেক মানুষের যারা গ্রামে যান না। আসলে বড় বড় কোম্পানিগুলোর নিজস্ব কোন বড় খামার নেই। তারা গ্রাহকের কাছ থেকেই অধিকাংশ দুধ কিনে থাকে। চাষি পর্যায়ে দুধ বেশী পাওয়ার জন্য অন্যসব উপাদানের সাথে ঘাস খাওয়ান হয়। এসব ঘাস সংগ্রহ করা হয় ক্ষেত থেকে যেখানে অপরিমিত মাত্রায় কীটনাশক ব্যবহার করা হয় যা ঘাসের মধ্য দিয়ে গরুর শরীর হয়ে আসে দুধে।

অন্যদিকে ছোট ছোট খামারীর (চাষি) ৫/৭টা দুধেল গরু থাকলে সেখানে কারো না কারো অসুখ হয়। এমন অসুখ হলে অসুস্থ গরুকে পালের অন্য গরু থেকে আলাদা রাখার নিয়ম। কিন্তু জায়গার অভাবে তা খামারিরা তা করতে পারেন না। তখন কখনো অজ্ঞতা বশত বা বেশী সাবধানী হিসেবে সব খামারের বা গোয়ালের গরুকেই এন্টিবায়োটিক খাওয়ানো হয়ে থাকে অনেক জায়গায়। এর ফলে ঐ দুধেল গরুর মাধ্যমে দুধে এন্টিবায়োটিক চলে আসে।

এবার আসি ডিটারজেন্ট প্রসঙ্গে। আপনার বিভিন্ন মিডিয়ায় দেখেছেন যে, ডিটারজেন্ট, কিছু কেমিক্যাল মিশিয়ে, ছানার পানি মিশিয়ে ভেজাল দুধ তৈরি করা হয়। বিভিন্ন দুধ কোম্পানির কিছু অসাধু পারচেজ অফিসার এসব ভেজাল দুধ কিনে ভালো দুধের সাথে মিশিয়ে দেবার ফলেই দুধে ডিটারজেন্টের উপস্থিতি তৈরি হয়।

যা হউক, বর্তমান পরিস্থিতিতে দেশের সচেতন সাধারণ মানুষের মাঝে দুধ নিয়ে সৃষ্টি হয়ে চরম আতংক। বিশেষ করে শিশু আর বয়স্কদের স্বাস্থ্য নিয়ে, যাদের নিয়মিত দুধ খেতে হয়। সারা দেশের মানুষ বিভ্রান্ত, হতাশ। আমরা কি খাচ্ছি, তা দেখার কেউ কি নেই? আমরা কি ফুড খাচ্ছি না ফিড খাচ্ছি তা দেখার কে আছে? পশু খাদ্য সম্পর্কে বলা হয় যে, Feed can include “material from diseased animals” or “contamination by filth” or “contamination by industrial chemicals”. Food cannot.

বাংলাদেশে কেন দেখভাল ঠিকমত হয় না ফুড আর ফিডের পার্থক্য! আমাদের দেশের অন্যতম প্রধান সম্পদ হচ্ছে ডেমো-গ্রাফিক রিসোর্স মানে জন-সংখ্যা সম্পদ। তাই জনস্বাস্থ্যে সুরক্ষায় দরকার জরুরী কার্যকরী পদক্ষেপ ও তাঁর জবাবদিহিতার ব্যবস্থা। কিন্তু এই অবস্থার জন্য দায় কে, তাঁর জবাব কে দেবে? প্রধানমন্ত্রী বাদে সব মন্ত্রণালয় ও বিভাগের প্রশাসনিক ও একাউন্টিং চীফ হচ্ছে সচিব, তিনিই নিয়ন্ত্রণ করেন তাঁর মন্ত্রণালয়ের অধীনস্থ দপ্তরসমূহ। অবস্থা দৃষ্টে মনে হচ্ছে এখানেও প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ লাগবে। সব ক্ষেত্রেই যদি প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ লাগে তাহলে তো তাঁকে super woman হওয়া ছাড়া কোন বিকল্প নেই।

বাংলা ইনসাইডার/এমআরএইচ



প্রধান সম্পাদকঃ সৈয়দ বোরহান কবীর
ক্রিয়েটিভ মিডিয়া লিমিটেডের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান

বার্তা এবং বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ২/৩ , ব্লক - ডি , লালমাটিয়া , ঢাকা -১২০৭
নিবন্ধিত ঠিকানাঃ বাড়ি# ৪৩ (লেভেল-৫) , রোড#১৬ নতুন (পুরাতন ২৭) , ধানমন্ডি , ঢাকা- ১২০৯
ফোনঃ +৮৮-০২৯১২৩৬৭৭