লিভিং ইনসাইড

বেপরোয়া কৈশোর, কিন্তু কেন?

নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রকাশ: 17/07/2019


Thumbnail

মা তার কৈশোর পার করা ছেলেটিকে নিয়ে বেশ গর্ব করেই বলছিলো- আমার ছেলে বেশ চুপচাপ থাকে। সারাদিন ফোন, গেম আর পড়াশুনার বাইরে তার কোনো জগৎ নেই। আজকাল অবশ্য বড় হয়েছে। কিছু কথা এড়িয়েও যায়, বাইরে কোথাও ঘুরতেও যায়। এলাকার আরেকজনই এসময় বলে বসলো, আপনার ছেলে তো দেখি বিশাল এক দলের সঙ্গে ঘোরে আজকাল। সেই দল আবার কুকর্ম করতে বেশ পারদর্শী বলেও শুনেছি। একথা শুনে স্বভাবতই মায়ের মুখ ফ্যাকাশে। আসলেই তো, ছেলে কোথায় কার সঙ্গে যায় তা তো সে জানে না!

সময় পাল্টেছে এটা নিশ্চিত। এখনকার পরিবেশ, পরিস্থিতি আগের মতো নেই। সামাজিক অবক্ষয়, পারিবারিক বিপর্যয় এবং প্রযুক্তির নেতিবাচক ব্যবহারের প্রভাবে কিশোরদের স্বপ্নের জগৎটা এখন জটিল হয়ে গেছে। এই কিশোররা যেন হুট করেই কখন বড় হয়ে যায়। বয়ঃসন্ধিকালে এরা জীবনের জড়তার মুখোমুখি হওয়ার পরিবর্তে যেন একটু বেশি পরিণত হয়ে যায়।

বর্তমানে শহর বা গ্রাম যাই হোক না কেন, সবখানেই কিশোররা নিজেদের একটু বড় হিসেবেই জাহির করতে পছন্দ করে। একটি কিশোর চটপটে, জ্ঞানী, মেধাবী, সামাজিক এবং সৃজনশীল হবে সেটাই তো অভিভাবকেরা চায়। কিন্তু সন্তানটি বাবা-মায়ের অবাধ্য হবে, ভবিষ্যত না ভেবে বখে যাবে এটা তো কোনো অভিভাবকই চাইবে না।

এখনকার কিশোররা অনেকেই কেমন যেন রুক্ষ হয়ে যাচ্ছে। মুচকি হাসি, মাঠে গিয়ে খেলা, ছুটোছুটির বদলে গম্ভীর হয়ে গোপনীয়তার পথ বেছে নিচ্ছে। বেপরোয়া হয়ে উঠেছ, বিভিন্ন অপকর্ম করতে দ্বিধা করছে না। বাস্তব প্রমাণ তো গণমাধ্যমের সমসাময়িক কিছু ঘটনাতেই রয়েছে।

শহরাঞ্চলে অনেক বাবা-মা উভয়েই চাকরি করেন। ছেলেটি কি করছে বা কোথায় যাচ্ছে তা খোঁজ রাখতে পারছে না। সাধারণ অবস্থায় আজকাল কিশোরদের দিন কাটে ব্যস্ততায়। স্কুল আর প্রাইভেট পড়া, টিভিতে কোনো খেলা দেখা, অ্যাকশনে ভরা কোনো সিনেমা দেখা তো আছেই। অ্যাকশন মুভি, ভূতের মুভি দেখতে খুব মজা লাহে, আবার অপরাধমূলক বিভিন্ন টিভি সিরিয়ালগুলোতো মনের মধ্যে একটা ভয়াবহ জগৎ তৈরি করে দিতে ওস্তাদ।

এবার আসি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম, ইউটিউবের কথায়। সারাদিনের কতটা সময় যে ফেসবুকে কাটানো হয় তার তো কোনো হিসাবই নেই। সেখানে জানা অজানা কতো বন্ধু, কত ছবি, কত স্ট্যাটাস, কত সুখ আর কত দুঃখ একেবারে মিলেমিশে গেছে যেন। ঠিকমত চ্যাটিং না করলে তো ঘুমই আসে না। এই সামাজিক মাধ্যমের ব্যস্ততার মধ্যে নিজেকে বিকশিত করার সময়টা তারা পাচ্ছে না। এর মাঝে বই পড়া বা খেলাধুলার সময় কই! খবর দেখা, পত্রিকা পড়লেও চোখ আটকে যাচ্ছে হানাহানি, সাংঘর্ষিক খবরে।

আর এভাবেই আদবকায়দা থেকে দূরে যাচ্ছে তারা। কোমলতা শেখা বা চর্চার সুযোগ পাচ্ছে না। ফলে তৈরি হচ্ছে রুক্ষতা। সব কিশোরদের ক্ষেত্রেই আবার এমনটা তো নয়।

এবার অন্যভাবে ভাবি। পরিবারে যাদের কিছুটা কষ্ট করে চলতে হয়, তাদের মনে না পাওয়ার যন্ত্রণা থাকে। অমুকের মতো ফোন নেই, ঘুরতে যাওয়ার সাধ্য নেই, সাইকেল বা গিটারটা কিনতে পারলাম না- এমন হাজারো না পাওয়ায় মন বিগড়ে যাবে। অন্যদের মতো হতে গিয়ে কখন সে কুপথে চলে যায় বোঝার সাধ্য নেই। পরিবারের সঙ্গে মতবিরোধ হবে। বাইরের পরিবেশ তখন ভালো লাগবে। বাইরে সমবয়সীদের সঙ্গে বিভিন্ন দলাদলি শুরু করবে। ফলাফল হবে ভয়ানক।

আবার গ্রামাঞ্চলে কিছু কিশোরশ্রেণী রয়েছে যারা পরিবারের প্রতি বাধ্য কম হয়। পড়াশুনার প্রতি মনোযোগ কম থাকে। তাই কিছুটা বখে যেতে খুব সময় লাগে না। এরা আধুনিকভাবে চলতে গিয়ে অনেক ধরনের নিষিদ্ধ জিনিসের প্রতি আকৃষ্ট হয়ে পড়ে। মাদকাসক্ত হতেও সময় লাগে না একেবারে। জড়িয়ে পড়ে বিভিন্ন অপরাধকর্মে।

পরিবার, সমাজ আর প্রযুক্তির অপব্যবহারে কৈশোরকাল বদলে গেছে। উগ্রতা, হতাশা, বেপরোয়া মনোভাব ঠেলে দিচ্ছে অপরাধের দিকে। তারা দল গড়ে, সেই দলের পরিধি বাড়ে। খুব তাড়াতাড়ি বড় হতে চায়। আড্ডা, হৈহুল্লোড়ে মেতে থাকে। বড়দের সম্মান দিতে চায় না। ধীরে ধীরে তারা ছোটখাটো অপরাধে জড়ায়। কখনো রাজনীতিতে জড়ায়, ইভটিজিং, চাঁদাবাজি, মাদক ব্যবসা শুরু করে। খুনখারাপিও বাদ যায় না।

পারিবারিক আর সামাজিক শিক্ষাও যেন কমে গেছে। একে অন্যের প্রতি শ্রদ্ধা কমে যাচ্ছে, পারিবারিব বন্ধন ক্রমেই হালকা হচ্ছে। বড়দের মধ্যেই যদি শিষ্টাচার না থাকে তো ছোটরা সেটা কীভাবে শিখবে! এজন্য শ্রদ্ধা নেই, জবাবদিহিতার ভয় নেই। আর কিশোর অপরাধের তেমন কার্যকর আইন নেই, তাই অপরাধে তেমন কোনো বাধা নেই।

তাই সমস্যাগুলো বুঝুন, কেন কৈশোর বেপরোয়া হয়ে অপরাধকর্ম করছে তা বুঝুন। কৈশোর থেকে যৌবনে পা দিতে না দিতেই জীবন এমন বিষিয়ে তোলার কোনো মানেই হয় না। এই কিশোরেরাই দেশের সম্পদ। তাদের চলাফেরায় লাগাম টেনে ধরতে পারে সমাজ আর অভিভাবকেরাই। এজন্য প্রয়োজন সচেতন হওয়া এবং সেটা এখনি।

 

বাংলা ইনসাইডার/এসএইচ



প্রধান সম্পাদকঃ সৈয়দ বোরহান কবীর
ক্রিয়েটিভ মিডিয়া লিমিটেডের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান

বার্তা এবং বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ২/৩ , ব্লক - ডি , লালমাটিয়া , ঢাকা -১২০৭
নিবন্ধিত ঠিকানাঃ বাড়ি# ৪৩ (লেভেল-৫) , রোড#১৬ নতুন (পুরাতন ২৭) , ধানমন্ডি , ঢাকা- ১২০৯
ফোনঃ +৮৮-০২৯১২৩৬৭৭