লিভিং ইনসাইড

পরীক্ষার খারাপ ফল মানেই সব শেষ নয়

নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রকাশ: 18/07/2019


Thumbnail

তোমার কাছের বন্ধুরা বোর্ডসেরা রেজাল্ট করলো, আর তুমি কিনা সামান্য জিপিএ ৫ ই পেলে না। কেন, তোমাকে কি সুযোগ-সুবিধা কম দেওয়া হয়েছিল? তোমার ঘাটতিটা ছিল কোথায়? তুমি কেন এভাবে সবার কাছে ছোট করলে? তুমি কি বুঝেছো যে তোমাকে দিয়ে জীবনে আর কিছুই হবে না?

এই কথাগুলো শুনলে একজন সদ্য খারাপ ফলাফল করা কোমল মনের শিক্ষার্থীর মানসিকতা কোথায় গিয়ে ঠেকবে সেটা বোঝাই যায়। নিজের খারাপ ফলাফলে মন খারাপ, তারপর অভিভাবক, আশেপাশের সবাই যদি এমন কথাগুলো বলে তো মেনে নেওয়া যায় না। মনে হয় কোথাও চলে যাই, নিজেকে শেষই করে দেই। এই শেষ করে দেওয়ার ঘটনা ঘটছে প্রচুর।

খুব আয়োজন করে, ভালো ফলাফলের প্রত্যাশা বুকে বেধেই একজন শিক্ষার্থী জীবনের ছোটবড় একাডেমিক পরীক্ষাগুলোতে অংশ নেয়। লক্ষ্য জীবনে অনেক বড় হওয়া, সফল হওয়া, মানুষের মতো মানুষ হয়ে সমাজে প্রতিষ্ঠিত হওয়া। কিন্তু পরীক্ষা শব্দটা আমাদের কাছে কেমন যেন আতঙ্কের। একটু ফসকে গেলো ফলাফল তো খারাপ, সঙ্গে আত্মসম্মান আর ক্যারিয়ারের ভরাডুবি।

পরীক্ষায় খারাপ করলে বা ফেল করলে লোকজন তাকে খারাপ ভাবতে শুরু করে। পরিবার আর সমাজ ভাবতে থাকে যেন এদের দ্বারা কোনো কিছু করা সম্ভব নয়। এরা পরিবার, সমাজ ও রাষ্ট্রের বোঝা। এদের মেধা নেই, উন্নতি সম্ভব না তাদের দ্বারা।

আর যারা পরীক্ষায় সেইরকম চোখ ধাঁধানো ফল করলে তাদের নিয়ে রীতিমত হৈচৈ শুরু হয়ে যায়। তাদের কদর অনেক বেশি। পরিবার, সমাজ ও রাষ্ট্রের জন্য অমূল্য সম্পদ।

এখন প্রশ্ন হচ্ছে পরীক্ষায় পাশ-ফেলই কি জীবনের সবকিছু? আমাদের পরিবার আর সমাজ বোঝে না যে পরীক্ষার ফলাফলই জীবনের সবকিছু নয়। পরীক্ষায় খারাপ করেও পরবর্তীকালে চেষ্টা করলে অনেক ভালো কিছু করা যায়। এরকম হাজার হাজার উদাহরণ আছে। আমাদের সমাজের একটি দুর্বলতম দিক হলো মানুষকে তার পরীক্ষার রেজাল্ট দিয়ে বিচার করা হয়। এটাই সব মানদণ্ড নয়।

পরীক্ষায় কোনো কারণে খারাপ হতে পারে। তাই বলে আশা ছেড়ে দেওয়ার মতো কিছু হয়নি। লোকে কি বলবে সেটা ভেবে নিজেকে আড়াল করা বা শেষ করে দেওয়া তো সমাধান নয়। লোকে কিছুদিন বলে থেমে যাবে। নিজের ক্ষতি হলে বাবা-মা কষ্ট পাবে, তারা তাদের প্রিয়জনকে হারাবে।

মনে করতে হবে আমার দ্বারাও ভালো কিছু করা সম্ভব। এজন্য তাদের খুব শক্ত হতে হবে, করতে হবে আগের চেয়ে আরো বেশি কঠোর পরিশ্রম। পৃথিবীতে অসম্ভব বলে কোনো কিছু নেই। মানুষ ইচ্ছা করলে সব কিছুই করা সম্ভব। কোথায় কোন ঘাটতি ছিল আগে বের করতে হবে। তারপর বাকি প্রস্তুতি শুরু।

নিজে বসে দুর্বলতা খুঁজুন। সেগুলোর তালিকা তৈরি করে ফেলুন। যে শিক্ষকের কাছে পড়তেন তার শরনাপন্ন হন। তার কাছ থেকে নিজেকে ঝালাই করে নিন। নিজে নিজে বাড়িতে বসে চর্চা করুন। প্রয়োজনে অন্য সব অভ্যাসগুলো কিছুদিন দমিয়ে রাখুন। আগে ভালো ফলাফল হোক, তারপর সবকিছু। প্রয়োজনে বন্ধুবান্ধবের কাছ থেকে ভালো কোনো পরামর্শ নিন। হতাশা বা দুশ্চিন্তা না করে পরবর্তীতে ভালো ফলাফল করে উতরে যাওয়ার চেষ্টা করাই বুদ্ধিমানের কাজ।

তাই যাদের পরীক্ষার ফলাফল খারাপ এসেছে বা প্রত্যাশিত ফলাফল আসেনি, তাদের উদ্দেশ্যে একটাই কথা। পরীক্ষায় অকৃতকার্য হওয়া মানেই জীবন শেষ হওয়া নয়। এখান থেকেই নতুন করে শুরু করতে হবে। মন খারাপ না করে নতুন করে প্রতিজ্ঞা নিয়ে সামনের দিকে এগিয়ে যেতে হবে। হ্যাঁ, ফল খারাপ হয়েছে, মন খারাপ হবে, কান্না আসবে খুব স্বাভাবিকই। কিন্তু এই কষ্টটাকেই শক্তিতে রূপান্তর করা সম্ভব, সেটা মনে রাখতে হবে। সবার সঙ্গে প্রতিযোগীতায় না নেমে নিজের দ্বারা ভালো কিছু হোক, এটাই প্রত্যাশা হোক। নিজেকে নিজের কাছে বিস্ময়ের পাত্র করে গড়ে তুলতে হবে। তাই পরীক্ষায় খারাপ করেছি, এটা ভেবে বসে থাকলে চলবে না। ধৈর্য ধরে চেষ্টা চালিয়ে যেতে হবে। হতাশাকে শক্তিতে পরিণত করে নতুন উদ্যমে আবার শুরু করতে হবে।

আত্মবিশ্বাসের দৃঢ়তা থাকলে খুব সহজেই ঘুরে দাঁড়ানো সম্ভব। মনে রাখতে হবে পরীক্ষার ফলাফলের ভিত্তিতে জীবন চলে না। জীবন চলে আপন গতিতে, আপন নিয়মে।

অভিভাবকদেরও কিছু বিষয় মনে রাখতে হবে। সন্তানের ওপর খামোখাই বোঝা চাপিয়ে না দিয়ে তাদের সম্ভাবনাগুলোকে কাজে লাগানোর চেষ্টা করুন। সন্তানের পাশে থাকুন, তাদেরকে পর্যাপ্ত সাহস দিন। এখন খারাপ হযেছে তো পরে ভালো হবে, এটা তাকে বোঝান। অবজ্ঞা না করে, অমুক তমুকের মেধাবী ছেলেমেয়েদের সঙ্গে তুলনা না করে তার জায়গা থেকে সেরা করে তুলতে চেষ্টা করুন।

বাংলা ইনসাইডার/এসএইচ



প্রধান সম্পাদকঃ সৈয়দ বোরহান কবীর
ক্রিয়েটিভ মিডিয়া লিমিটেডের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান

বার্তা এবং বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ২/৩ , ব্লক - ডি , লালমাটিয়া , ঢাকা -১২০৭
নিবন্ধিত ঠিকানাঃ বাড়ি# ৪৩ (লেভেল-৫) , রোড#১৬ নতুন (পুরাতন ২৭) , ধানমন্ডি , ঢাকা- ১২০৯
ফোনঃ +৮৮-০২৯১২৩৬৭৭