ইনসাইড আর্টিকেল

হুমায়ুন যেভাবে কাজল হলেন

নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রকাশ: 19/07/2019


Thumbnail

‘ছয়-সাত বছরের একটি বালক জানালার শিক ধরে দাঁড়িয়ে আছে। সে বৃষ্টি দেখছে। সিলেটের বিখ্যাত বৃষ্টি। ফিনফিনে ইলশেগুঁড়ি না, ঝুম বৃষ্টি। এই বৃষ্টি এক নাগাড়ে সাতদিন পর্যন্ত চলতে পারে। ছেলেটি বৃষ্টি দেখছে তবে তার দৃষ্টিতে মুগ্ধতা নেই, বিস্ময়বোধ নেই, আছে দুঃখবোধ এবং হতাশা। তাকে সারাদিনের জন্যে আটকে রাখা হয়েছে। আজ সে ঘর থেকে বের হতে পারবে না। সে একটি গুরুতর অপরাধ করেছে।’

বৃষ্টি দেখা পুঁচকে এই ছেলেটিই শৈশবের হুমায়ূন আহমেদ। হুমায়ূন নিজেই তার শৈশবের কথা এভাবে লিখেছেন।  তার বহু লেখায় বারবার ঘুরেফিরে এসেছে নিজের ছেলেবেলা। হুমায়ূনের লেখাগুলো যেমন নাটকীয়তায় ভরপুর, তার জীবনটাও ঠিক সেরকমই। এমনকি তার নামের সঙ্গেও জড়িয়ে আছে চমকপ্রদ কাহিনী। হুমায়ূন সম্পর্কে যারা মোটামুটি পড়েন তাদের সবারই জানা যে, তার ডাক নাম ছিল কাজল। কিন্তু এই নামটা দেওয়ার পেছনে ছিল আরেক কাহিনী। 

১৯৪৮ সালের ১৩ নভেম্বর নানাবাড়িতে জন্ম হুমায়ূন আহমেদের। ঘরে ছেলে সন্তান জন্ম হওয়াতে হুমায়ূন আহমদের নানা খুব খুশি হয়েছিলেন। সেসময়ই তার হুমায়ূন আহমেদ নাম দেওয়া হয়েছিল বলে জানা যায়। হুমায়ূনের সিলেটে কর্মরত পুলিশ বাবা প্রত্যাশা করেছিলেন কন্যা সন্তান। অনাগত কন্যার জন্য জামা-কাপড়, এমনকি পায়ের রুপার মলও কিনে রেখেছিলেন তিনি। ছেলে সন্তান হওয়ার খবর শোনার পর তিনি মনে মনে একটু অখুশিই হয়েছিলেন। হুমায়ূনের মা আয়েশা ফয়েজ স্বামীর মন রাখতে হুমায়ুনকে সেই মেয়েদের ফ্রকই পড়াতেন মাঝে মাঝে। এমনকি মাথায় মেয়েদের মতো ঝুঁটিও করে দিতেন!

সেই শিশুবেলাতেই হুমায়ূনের জীবনে আসে ভীতিকর একটা সময়। তার মা টাইফয়েড জ্বরে আক্রান্ত হয়ে পড়েন। এতে তার স্মৃতি নষ্ট হয় এবং তিনি তখন হুমায়ূনকে চিনতে পারতেন না। হুমায়ূনকে ময়মনসিংহের মোহনগঞ্জে তার নানীর কাছে পাঠিয়ে দেওয়া হয়। নানীর বুকের দুধ খেয়ে শিশু হুমায়ূন বড় হতে থাকেন। তার বয়স যখন দুই বছর, তখন তার মা আবার স্বাভাবিক হতে শুরু করেন। এরপর হুমায়ূন সিলেটে এসে আবার বাবা-মা’র সাথে থাকতে শুরু করেন। কিন্তু আবারও তার মা টাইফয়েডে আক্রান্ত হয়ে পড়েন। সেসময় দ্বিতীয়বার টাইফয়েডে আক্রান্ত হলে বাঁচার সম্ভাবনা ছিল খুব ক্ষীণ। ডাক্তার হুমায়ূনের বাবাকে তার মায়ের আসন্ন মৃত্যুর জন্য মানসিকভাবে প্রস্তুত হতেও বলেছিলেন। এ সময় হুমায়ূনের বাবা তার নাম রেখে দেন কাজল। কারণ বিভূতিভূষণের পথের পাঁচালীতে অপুর স্ত্রীর মৃত্যু হয়েছিলো। আর অপুর ছেলের নাম ছিলো কাজল। ফয়জুর রহমান ধরেই নিয়েছিলেন যে তার স্ত্রীর মৃত্যু হবে। হুমায়ুনকেও তিনি বিভূতিভূষণের সৃষ্টি মাতৃহারা কাজলের মতো করেই ভাবতে শুরু করেছিলেন। শেষ পর্যন্ত আয়েশা ফয়েজ মৃত্যুর মুখ থেকে ফিরে এসেছিলেন। কিন্তু হুমায়ূনের নামটা তাতে বদলে যায়নি। আয়শা ফয়েজও কাজল নামটাকে পছন্দ করেছিলেন। সেই থেকে পরিবার ও আত্মীয় স্বজনদের কাছে হুমায়ূন হয়ে যান কাজল।

বাংলা ইনসাইডার/এএইচসি



প্রধান সম্পাদকঃ সৈয়দ বোরহান কবীর
ক্রিয়েটিভ মিডিয়া লিমিটেডের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান

বার্তা এবং বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ২/৩ , ব্লক - ডি , লালমাটিয়া , ঢাকা -১২০৭
নিবন্ধিত ঠিকানাঃ বাড়ি# ৪৩ (লেভেল-৫) , রোড#১৬ নতুন (পুরাতন ২৭) , ধানমন্ডি , ঢাকা- ১২০৯
ফোনঃ +৮৮-০২৯১২৩৬৭৭