ওয়ার্ল্ড ইনসাইড

সাধারণ শিক্ষক থেকে মোস্ট ওয়ান্টেড জঙ্গি

নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রকাশ: 20/07/2019


Thumbnail

খুব সাধারণ পরিবারে জন্ম তার। অন্য দশটা নিম্নমধ্যবিত্ত বাবা-মায়ের সন্তানের মতো তাকেও টানাটানির মধ্যে পড়াশুনা চালিয়ে যেতে হয়েছিল। পাকিস্তানের পাঞ্জাব ইউনিভার্সিটি থেকে দু’টি এম এ ডিগ্রি লাভের পর শিক্ষকতা পেশায় যোগ দিয়েছিলেন তিনি। সেই তিনিই আজ মোস্ট ওয়ান্টেড জঙ্গি। বলছি, জঙ্গি সংগঠন লস্কর ই তৈয়েবার নেতা হাফিজ সাইদের কথা। 

২০০১ সালে ভারতে সংসদ ভবনে হামলা। ২০০৬ সালে মুম্বাইয়ে ট্রেনে বিস্ফোরণ। ২০০৮ সালে মুম্বাইয়ে সিরিজ হামলা। এই তিনটি ঘটনারই মূল হোতা হাফিজ সাইদ। সাধারণ একজন শিক্ষক থেকে কীভাবে এতো ভয়ঙ্কর জঙ্গি হয়ে উঠলেন তিনি?

হাফিজের অতীত ইতিহাস থেকে জানা যায়, হাফিজের উন্নতি শুরু হয় জেনারেল জিয়াউল হকের আমলে। তিনি হাফিজকে সরকার নিয়ন্ত্রিত কাউন্সিল অব ইসলামিক আইডিওলজির সদস্য হিসেবে নিয়োগ দেন। আটের দশকের শুরুর দিকে সেই কাউন্সিল তাকে সৌদি আরবে পাঠায়। সেখানে তিনি আফগানিস্তানের মুজাহিদিনের সংস্পর্শে আসেন এবং জিহাদি মতাদর্শে দীক্ষিত হন। ১৯৮৭ সালে হাফিজ মারকাজ দাওয়া ওয়াল ইরশাদ নামে একটি সংগঠন তৈরি করেন। সেই সংগঠনই নব্বইয়ের দশকের গোড়ায় লস্কর ই তৈয়েবার জন্ম দেয়।

বিশ্লেষকরা বলেন, হাফিজের মধ্যে তীব্র ভারতবিদ্বেষ কাজ করে। এর পেছনে তার পারিবারিক ইতিহাসের প্রভাব থাকতে পারে। হাফিজের পরিবার ভারতের সিমলার বাসিন্দা ছিল। দেশভাগের সময় তারা পাকিস্তানের পাঞ্জাব প্রদেশে চলে আসে। এই সময়টাতে ভারতীয়দের দ্বারা তার পরিবার আক্রান্ত হয়েছিল বলে জানা যায়। এতে বেশ কয়েকজন মারাও গিয়েছিল। যদিও এসব ঘটনার সময় হাফিজের জন্মই হয়নি।

দেশভাগের বছর তিনেক পরে অর্থাৎ ১৯৫০ সালে হাফিজের জন্ম হয়। তবে পরিবারের সদস্যদের কাছ থেকেই হয়তো ভারতীয়দের নিষ্ঠুরতার কাহিনীগুলো হাফিজের মনে গেঁথে গিয়েছিল। এজন্য শৈশব থেকেই তীব্র ভারতবিদ্বেষী হয়ে ওঠে হাফিজ। বড় হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে একের পর একের ভারতবিরোধী পরিকল্পনাও সাজাতে থাকে সে। পরবর্তীকালে এই পরিকল্পনাগুলোই বাস্তবে রূপ দেয় ভয়ঙ্কর জঙ্গিনেতা হাফিজ। 

২০০১ সালে ভারতের সংসদ ভবনে হামলার পরে দিল্লির চাপের মুখে পাকিস্তানে হাফিজকে আটক করা হয়। ২০০২ সালের ৩১ মার্চ মুক্তি পান তিনি। এপ্রিলে যুক্তরাষ্ট্র হাফিজের মাথার দাম ঘোষণা করে এক কোটি ডলার। ওই বছরেরই ১৫ মে তাকে আবারও গ্রেপ্তার করে পাঞ্জাব পুলিশ। এ ঘটনায় তার স্ত্রী মাইমুনা বেগম পাঞ্জাব প্রদেশ ও পাকিস্তানের ফেডারেল গভর্নমেন্টের বিরুদ্ধে মামলা করেন। তার অভিযোগ, হাফিজকে বেআইনিভাবে আটকে রাখা হয়েছে। ২০০২ সালের ৩১ অক্টোবর থেকে তাকে গৃহবন্দি রাখা হয়।

২০০৬ সালের ১১ জুলাই মুম্বাইয়ে ট্রেনে বিস্ফোরণ হয়। এরপর আবারও দিল্লির দাবির মুখে পাঞ্জাব পুলিশ ৯ অগাস্ট তাকে গ্রেপ্তার করে। জেলে না নিয়ে সেবারও তাকে গৃহবন্দি করা হয়। তবে হাইকোর্টের নির্দেশে ২৮ অগাস্ট ছাড়া পেয়ে যান তিনি।

২০০৮ সালে মুম্বাই হামলার পর ভারত আবারও হাফিজের গ্রেপ্তারের দাবিতে সোচ্চার হয়। ২০০৯ সালের ২৫ অগাস্ট ইন্টারপোল হাফিজের বিরুদ্ধে রেড কর্নার নোটিস জারি করে। কিন্তু লাহোর হাইকোর্ট তার বিরুদ্ধে অপরাধমূলক ষড়যন্ত্রের অভিযোগ খারিজ করে দেয়। ২০১৬তে হাফিজ ও জামাত উদ দাওয়াকে আন্তর্জাতিক সন্ত্রাসবাদী বলে ঘোষণা করা হয়। এরপরে আরও বেশ কয়েকবার হাফিজকে গ্রেপ্তার এবং মুক্তি দিয়েছে পাঞ্জাব।

আন্তর্জাতিক চাপের মুখে গত সপ্তাহে আবারও হাফিজকে গ্রেপ্তার করেছে পাকিস্তান। ভারত বলছে, এটা একটা আই ওয়াশ ছাড়া আর কিছুই নয়। হাফিজের কোনো বিচার না করেই তাকে আবারও ছেড়ে দেবে পাকিস্তান সরকার। মোস্ট ওয়ান্টেড এই জঙ্গীকে নিয়ে ইমরান খানের সরকার এবার ‘আই ওয়াশ’ কৌশল থেকে বের হয়ে আসতে পারে কিনা সেটাই দেখার বিষয়।

বাংলা ইনসাইডার/এএইচসি



প্রধান সম্পাদকঃ সৈয়দ বোরহান কবীর
ক্রিয়েটিভ মিডিয়া লিমিটেডের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান

বার্তা এবং বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ২/৩ , ব্লক - ডি , লালমাটিয়া , ঢাকা -১২০৭
নিবন্ধিত ঠিকানাঃ বাড়ি# ৪৩ (লেভেল-৫) , রোড#১৬ নতুন (পুরাতন ২৭) , ধানমন্ডি , ঢাকা- ১২০৯
ফোনঃ +৮৮-০২৯১২৩৬৭৭