ইনসাইড থট

প্রিয়া সাহার নতুন মিশন মিলিয়নিয়ার মাইগ্রেশন

নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রকাশ: 23/07/2019


Thumbnail

গত রোববার ইউটিউবে একটি সাক্ষাৎকার প্রকাশ করেছে ঢাকায় প্রিয়া সাহার এনজিও `সারি`। সেখানে প্রিয়া বলেছেন সরকারী পরিসংখ্যান থেকে তিনি এই তথ্য দিয়েছেন। নিজের অন্তরের কথা যে উনি লুকিয়েছেন তাঁর প্রমাণ তাঁর দেওয়া মার্কিন প্রেসিডেন্টের কাছে বক্তব্য আর পরবর্তী এই সাক্ষাৎকার শুনলেই বুঝা যাবে। তিনি দম্ভ করে বলেছেন যে, গ্রীন কার্ড পেতে অন্য আরও উপায় আছে। সহজ উপায় হচ্ছে মিলিয়নিয়ার মাইগ্রেশন, যা ইউরোপ আমেরিকার অনেক দেশেই এখন পপুলার কর্মসূচী।

বাংলাদেশে সাধারণত ১০ বছর পর পর জন সংখ্যা জরিপ হয়। ‘‘২০০১ সালের পরিসংখ্যানে সংখ্যালঘুদের ওপর একটি চ্যাপ্টার রয়েছে। আদম শুমারি অনুসারে দেশভাগের সময় বাংলাদেশে সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের সংখ্যা ছিল মোট জনসংখ্যার ২৯.৭ শতাংশ। এখন তা কমে ৯.৭ শতাংশ।" প্রিয়া দাবী করেন। বলেছেন সংখ্যালঘু কিন্তু হিসেব দিয়েছেন শুধু হিন্দু জনগোষ্ঠীর।

নিখোঁজ হওয়া বলতে তিনি কী বুঝিয়েছেন? - এই প্রশ্নে প্রিয়া সাহা বলেন, "সংখ্যালঘুদের শতকরা ভাগ যদি এখনও একই রকম থাকতো তাহলে বর্তমানে তাদের সংখ্যা ৩ কোটি ৭০ লাখ বেশি হতো। সেটাই আমি বলতে চেয়েছি" এখানে একটা তথ্য দিই “হিন্দু জনগোষ্ঠীর প্রজনন হার কম। ১৯০১ সাল থেকে হিন্দুদের প্রজনন হার মূলত ২-৫ শতাংশ। ১৯৪১ সালেই তা একবার ১০% এর উপরে উঠেছিল। মুসলমানদের প্রজনন হার ১৯৪৭ এর পর থেকেই ২০% এর উপরে। অবাক করা বিষয় হচ্ছে বাংলাদেশে খ্রিস্টান এবং বৌদ্ধ সম্প্রদায়ের সংখ্যা বাড়ছে। এমনকি শেষ সেনসাসে বৌদ্ধ জনগোষ্ঠী মুসলমানদের চাইতে প্রায় দ্বিগুণ বেড়েছে। ধর্মীয় নির্যাতনই যদি জনসংখ্যা কমার একমাত্র কারণ হতো তাহলে বৌদ্ধ এবং খ্রিষ্টান জনসংখ্যা বাড়ার কোন কারণ ছিলোনা”।

তিনি সাংঘাতিক যে কথাটি বলেছে তা হল, "মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর দ্বারা অনুপ্রাণিত হয়েই এসব কথা বলেছি। অন্যায়ের বিরুদ্ধে যে কোনো জায়গায় কথা বলা যায় - আমি তার কাছ থেকে শিখেছি।" তাজ্জব কথা তিনি দেশে আর লোক পেলেন না উনাকে পাঠালেন!

"২০০৪ সালে যখন আমার বাড়িতে আগুন দিয়েছিল তখন গ্রামের মুসলিম একটি ছেলে প্রথম টেলিফোন করে আমাকে তা জানায়। টেলিফোনে আমি তার কান্না থামাতে পারছিলাম না।" "কিছু দুষ্ট লোক এসব ঘটনা ঘটায় ... এরা সবসময় সরকারি দল, যখন যে দল ক্ষমতায় থাকে সেখানে গিয়ে ভেড়ে। "২০০৪ সালে বাংলাদেশে কোন দল ক্ষমতায় ছিল মিস প্রিয়া?

তিনি তাঁর তার সাক্ষাৎকারে একাধিকবার প্রিয়া সাহা বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবং তার সরকার বাংলাদেশে সাম্প্রদায়িক শক্তির বিরুদ্ধে লড়ছেন। তিনি এও বলেন তিনি মনে করেন, বাংলাদেশের ৯৯ ভাগ মুসলিমই অসাম্প্রদায়িক। তাহলে কী দাঁড়ায়!

বাংলাদেশে মোট মাইনোরিটি জনসংখ্যা ১,৮০,০০০০০ মানে মোট জনসংখ্যার ১০.৭% হিসেবে। তাহলে অংক দাঁড়ালো যে, মোট জনসংখ্যার ১০.৭% মাইনোরিটি জনসংখ্যা হলে দেশের মোট জনসংখ্যা হয় ১৬,৮২,২৪, ৩৯৯ জন এর মধ্যে মুসলমান হচ্ছে ১৫,০২,২৪, ৩৯৯ জন। প্রিয়া বলেছেন ৯৯% মুসলিম ভালো তাহলে ১৪,৮৭,২২,১৫৫ কোটি মুসলমানের মধ্যে ১৫,০২,২৪৪ জন মুসলমান খারাপ। তাঁর ভাষ্যে এরা মৌলবাদী। মৌলবাদী মুসলমান হিসেবে আমরা পাই জামায়াতে ইসলামী বাংলাদেশ কে। গত ২০১৮ নির্বাচনে তাদের প্রাপ্ত ভোট (২০১১ সালের নিরিখে) ছিল পোল্ড ভোটের শকরা ৪.২৮ ভাগ, ভোট পায় জামায়াত যখন ভোটার ছিল প্রায় সাড়ে ১০ কোটি। ৪,৯৪,০০০ জামায়াতী বা মৌলবাদী ৩ কোটি ৭০ লাক সংখ্যালঘুকে দেশ ছাড়া করেছে! বাকী সেকুলার বাম দলের নেতারা কি কাঠি লজেন্স খাচ্ছিলেন! এবার আসি আমার নিজের বক্তব্যে।

এই ‘‘সংখ্যালঘু” ব্যাপারটা কী তাঁর একটু নিকেশ করে নিতে পারি কারণ এতে আমাদের ব্যক্তিগত, গোষ্ঠীগত, রাজনৈতিক, ধর্ম, সাংস্কৃতিক তথা দেশের ভাবমূর্তি জড়িয়ে আছে। আমরা প্রচলিত ধারণার বাইরে গিয়েই কিছু আলোচনার চেষ্টা করতে পারি, যাতে আমাদের উপলব্ধিতে সুবিধা হয়।

সংখ্যালঘুদের অধিকার বিষয়ে জাতিসংঘ সনদে বলা হয়েছে– “জাতীয়, ধমীর্য় এবং জাতীয় সংখ্যালঘু”।

UN Special Rapporteur Francesco Capotorti এর মতে– ‘‘সংখ্যালঘু হচ্ছে কোনো একটি দেশের মোট জনসংখ্যার তুলনায় জাতিগত, ধর্মীয় অথবা ভাষাগত বৈশিষ্ট্যে সংখ্যালঘু দল বা গোত্র, যারা সুনিদির্ষ্টভাবে তাদের সংস্কৃতি, রীতি-নীতি, ধর্ম বা ভাষাগত বৈশিষ্ট্য সংরক্ষণে তৎপর।’’

ইউরোপীয় পরিষদ ১৯৯৩ অনুসারে– ‘‘সংখ্যালঘু হচ্ছে–রাষ্ট্রের একটি জনগোষ্ঠী যার-(ক) রাষ্ট্রের নাগরিক এবং রাষ্ট্রীয় সীমানায় বসবাস করে(খ) রাষ্ট্রের সঙ্গে দৃঢ় বন্ধনে আবদ্ধ(গ) সুনিদির্ষ্ট জাতিগত বৈশিষ্ট্য, সংস্কৃতি, ধর্ম বা ভাষাগত বৈশিষ্ট্য বিদ্যমান(ঘ) পর্যাপ্ত প্রতিনিধিত্বশীল, যদিও সংখ্যায় রাষ্ট্রের মোট জনসংখ্যার অথবা রাষ্ট্রের কোনো অঞ্চলের জনসংখ্যার তুলনায় সংখ্যালঘু(ঙ) তাদের সংস্কৃতি, রীতি-নীতি, ধর্ম বা ভাষা রাষ্ট্রের সংস্কৃতি, রীতি-নীতি, ভাষা বা ধর্মের সঙ্গে সংরক্ষণে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।’’

আমাদের মত গরীব দেশের মানুষ রুটি রুজির জন্য বিদেশে কাজে গিয়ে, কিংবা লেখাপড়া করতে গিয়ে বা অন্য কন কারণে বিদেশে থেকে যান সংখ্যা লঘূ হিসেবে। ১৯৪৭ আর ১৯৬৪ সালের দাঙ্গায় পূর্ব পাকিস্তান (বর্তমানে বাংলাদেশ) থেকে সরকারী আনুকূল্যে বহু হিন্দু সম্প্রদায়ের মানুষ ভারতে চলে যান বাধ্য হয়ে। স্কুল কলেজে পড়া তাদের সন্তানদের ক্রেডিট ট্রান্সফারের সুযোগ দেওয়া হয়। ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের মহান মুক্তিযুদ্ধের সময় বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ, ছাত্রলীগ ও হিন্দু সম্প্রদায়ের মানুষদের উপর আওয়ামী লীগ সমর্থক হিসেবে চরম অত্যাচার হয় কারণ তখন তারা হয়ে পড়ে রাজনৈতিক সংখ্যা লঘু। এর পরে ১৯৭২ সালে স্বাধীনতা বিরোধীরা রাজনৈতিক সংখ্যালঘু হয়ে দলে দলে দেশ ছাড়ে। একই ভাবে ১৯৭৫ সালের পরে আওয়ামী লীগের সাথে বহু হিন্দু দেশ ছাড়তে বাধ্য হন। এর পরে ১৯৯১, ২০০১, ২০০৬ সালে আওয়ামী লীগ কর্মী আর হিন্দুদের উপর নেমে আসে চরম অত্যাচার যার ফলে অনেক আওয়ামী লীগ কর্মী আর হিন্দু বাংলাদেশ ছেড়ে যান। ১৯৪৭, ১৯৬৪ বাদে ১৯৯১, ২০০৬, ২০১১ যারা নির্যাতিত হয়ে দেশ ছেড়ে গেছেন তারা তাদের একটা বিরাট অংশ তাদের সম্পত্তির জন্য এই হামলা শিকার হয়েছেন। যারে বিদেশে থেকে যান তাদের একটা বিরাট অংশের ছেলে মেয়েরা বিদেশে পড়তে গেলে আর ফেরেন নি, পারলে বাবা মা ভাইবোনদের নিয়ে গেছেন বিদেশে। এর সব দায় প্রিয়া সাহা বর্তমান বাংলাদেশের উপর চাপিয়েছেন। এটা কি ঠিক?

ইদানীং এশিয়া আর ইউরোপের বিভিন্ন দেশের পাসপোর্টধারী অসৎ কিন্তু ধনী মানুষ এখন উন্নত দেশের দ্বিতীয় পাসপোর্ট নিতে বিজি হয়ে পড়েছে। সাথে আছে গরীব দেশের কিছু অসৎ ব্যবসায়ী, আমলা, কামলা আর অসৎ ‘‘সংখ্যালঘু” যাচ্ছে উন্নত দেশে। বিভিন্ন দেশের ‘‘সংখ্যালঘু” যখন অবৈধভাবে অনেক টাকার মালিক হয়ে যাচ্ছে, তাঁরাও এই সুযোগ নিচ্ছেন। কারণ তাদের দেশে তেমন সামাজিক মর্যাদা নেই, বিভিন্ন কাজেও অসুবিধা হয়। অবৈধ টাকার জন্য বাংলাদেশের মত বিভিন্ন দেশের দুর্নীতি দমন ব্যুরো সক্রিয় হচ্ছে সুশাসনের জন্য। উন্নত দেশের সরকার আমাদের মর গরীব দেশে মানবাধিকার, গণতন্ত্র বা সুশাসন প্রতিষ্ঠার চাপের ফাঁকে আমাদের মত দেশ থেকে তাদের দেশে আমাদের দেশের মিলিয়নিয়ারদের নিয়ে যাচ্ছে তাদের দেশে বিনিয়োগ কোটায় নাগরিকত্ব দিয়ে। ২০১৭ সালের তুলনায় ২০১৮ সালে এই মিলিয়নিয়ার মাইগ্রেশনের হার বেড়েছে ১৪%। সবচেয়ে বেশি ১২ হাজার মিলিয়নিয়ার মাইগ্রেট করেছে তা হচ্ছে অস্ট্রেলিয়া, ১০ হাজার করেছে আমেরিকায়, ৪ হাজার গেছে কানাডায়। এছাড়া ইউএই , সুইজারল্যাণ্ডে ক্যারাবিয়ান দ্বীপে গেছে ২ হাজার মত, বাকী গ্রীস, পর্তুগাল, স্পেন, ইসরাইল, সিঙ্গাপুরে গেছে ১ হাজার করে। এর বাইরেও মালয়েশিয়ার মত দেশে মোটা অংকের বিনিয়োগ করে করেছে ২য় হোমের সুবিধা। সবচেয়ে অবাক হচ্ছে, সবচেয়ে বেশী মাইগ্রেট করছে চীন, সেটা ১৫ হাজার মিলিয়নিয়ার, ৭ হাজার রাশিয়া, ৫ হাজার ইন্ডিয়া, ৪ হাজার তুরস্ক, যুক্তরাজ্য, ফ্রান্স থেকে ৩ হাজার ব্রাজিল থেকে ২ হাজার, আর সুদি আরাবিয়া আর ইন্দোনেশিয়া থেকে ১ হাজার মিলিয়নিয়ার এসব দেশে পাড়ি জমিয়েছে উন্নত জীবনের আশায়।

আমাদের মত দেশে যারা অবৈধ উপায়ে টাকা কামিয়ে মিলিয়নিয়ার হচ্ছেন, তাদের একটা বিরাট অংশ ইউরোপ আমেরিকায় মাইগ্রেশন করছেন, টাকা লগ্নি করে, সুখের ও নিরাপদ জীবনের আশায়। তারা জানেন যে কোনভাবে ওইসব দেশে যেতে পারলে আর একবার কোনমতে প্রমাণ করতে পারলেই হবে যে, দেশে ফিরলে তাঁর শাস্তি পারে এমন কিছু একটা দেখালেই তাঁর সেদেশে থাকার পাক্কা বন্দোবস্ত হবে। টাকাও তো একটা বড় ফ্যাক্টর। তা না হলে “দুর্নীতির বরপুত্র” কী লন্ডনে থাকেন! বঙ্গবন্ধুর খুনিরা উন্নত দেশে থাকে। তাদের ফেরত পাঠানো হয় না, মানবাধিকার লঙ্ঘিত হবে বলে। কথা শুনে মনে হয়- শেখ হাসিনা আর শেখ রেহানার কন মানবাধিকার নেই, বাদবাকি টাকাওয়ালা, খুনি, দুর্নীতিবাজদের মানবাধিকারের খুঁটি খুব শক্ত। প্রিয়া সাহার দম্ভোক্তি দেখে মনে হচ্ছে দুর্নীতির টাকায় উনি মিলিয়নিয়ার কোটায় আমেরিকায় থাকবেন। তা না হলে কীভাবে বলেন যে, গ্রীন কার্ড পেতে শুধু কী পলিটিক্যাল এসাইলাম একমাত্র উপায়?

বাংলাদেশে সংখ্যালঘুরা পূজা- পার্বণের ছুটি পান। ২০১৭ সালের এক জরিপে দেখা যায় মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে ৩.৪৫ মিলিয়ন মুসলমান বসবাস করেন। মুসলমানরা কিন্তু ঈদের ছুটি পায় না। আমি দেশপ্রেমিক প্রিয়া সাহাকে বলি দয়া করে একবার প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের সামনে দাবি তুলুন যে, আমেরিকার মুসলিম সংখ্যালঘুদের ঈদের ছুটি দিতে হবে, ম্যাকডোনাল্ড গরুর মাংস বিক্রি বন্ধ করতে হবে, গরু হিন্দুদের মা। পারবেন কি?


বাংলা ইনসাইডার/এমআরএইচ



প্রধান সম্পাদকঃ সৈয়দ বোরহান কবীর
ক্রিয়েটিভ মিডিয়া লিমিটেডের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান

বার্তা এবং বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ২/৩ , ব্লক - ডি , লালমাটিয়া , ঢাকা -১২০৭
নিবন্ধিত ঠিকানাঃ বাড়ি# ৪৩ (লেভেল-৫) , রোড#১৬ নতুন (পুরাতন ২৭) , ধানমন্ডি , ঢাকা- ১২০৯
ফোনঃ +৮৮-০২৯১২৩৬৭৭